কম্বোডিয়া: নারীদের নিয়ে একটি ব্লগ যা অন্য নারীদের উৎসাহিত করে

এই পোস্টটি বৈশ্বিক উন্নয়ন ২০১১ সংক্রান্ত আমাদের বিশেষ প্রতিবেদনের অংশ।

কম্বোডিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ২০ বছর বয়সী শ্রীনিথ পুল যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছেন এবং ‘অনুপ্রেরণা যোগানো কম্বোডিয়ার নারী‘দের কথা তার ব্লগে তুলে ধরছেন। বর্তমানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার রেডল্যান্ডস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়ন করছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন যে কম্বোডিয়ান নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াবেন এবং তাদের কথাগুলো বলবেন।

রান্না ঘরই মেয়েদের সঠিক জায়গা এ প্রচলিত ধারণাটির সাথে ‘অনুপ্রেরণা যোগানো কম্বোডিয়ার নারী‘ নামক টাম্বলার ব্লগটি দ্বিমত পোষন করে। আমার সুযোগ হয়েছিল ইমেইলের মাধ্যমে শ্রীনিথ পুলের সাক্ষাৎকার নেয়ার, তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম কি তাকে ব্লগিং'এ আসার পেছনে উৎসাহিত করেছিল।

গ্লোবাল ভয়েসেস (জিভি): অনুগ্রহ করে আপনার শিক্ষা জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে আমাদের কিছু বলুন।

শ্রীনিথ পুল

শ্রীনিথ পুল

শ্রীনিথ পুল (এসপি): নম পেন এ আমার জন্ম হয়, সেখানেই আমি বেড়ে উঠি। আমার মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের আগে আমি সা চাস (পুরোনো বাজার) এলাকায় থাকতাম। তখন আমি নরোডোম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চাকতোমক মাধ্যমিক/উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তাম। ২০০০ সালে যখন আমার মায়ের পুনরায় বিয়ে হল আমি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অফ নম পেন'এ (আইএসপিপি) ভর্তি হলাম। ২০০৫ সালে পরিবার সহ নিউইয়র্কে চলে আসার আগ পর্যন্ত আমি সে স্কুলেই পড়েছি। নিউইয়র্ক থেকে উচ্চ বিদ্যালয়ের ডিগ্রী নেয়ার পর ক্যালিফোর্নিয়ার রেডল্যান্ডস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণীতে অধ্যয়নের জন্য আমি ক্যালিফোর্নিয়ার রেডল্যান্ডস এ চলে আসি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ‘দ্যা জন্সটন সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেইটিভ স্টাডিজ’ কর্মসূচিটি বেছে নেই। এই শিক্ষা কর্মসূচীতে আমার পড়াশোনার মূল বিষয়টি বেছে নেবার সুযোগ ছিল। আমার মূল পাঠ্য ছিল “আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আর এশিয়ান স্টাডিজ এর দৃষ্টিতে রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে বাস করা”। অর্থাৎ বিষয়টি মূলত: কম্বোডিয়ায় ৩০ বছরেরও পূর্বে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার উপর ভিত্তি করে গঠিত।

জিভি: এই প্রকল্প শুরু করার ব্যাপারে আপনাকে কি উৎসাহিত করেছে? ‘অনুপ্রেরণা যোগানো কম্বোডিয়ার নারী’ ব্লগটির লক্ষ্য কি ছিল?

এসপি: কম্বোডিয়ার নারী এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সরকারী চাকুরীতে তাদের উপর বৈষম্য নিয়ে আমি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম একটি ক্লাসের জন্য, এবং ধারণাটি সেখান থেকে পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার পর আমি একটি সিদ্ধান্তে আসি যে কম্বোডিয়ান নারীদের জন্য অনুকরনীয় চরিত্র প্রয়োজন এবং একজন আমাকে একটি ওয়েব সাইট তৈরির পরামর্শ দিল, তখন থেকেই আমার ব্লগ লেখা শুরু। আমি যেমন আমার ব্লগে লিখেছিলাম, ‘ইন্সপায়ারিং কম্বোডিয়ান উইমেন’ (অনুপ্রেরণা যোগানো কম্বোডিয়ার নারী) নামক ব্লগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বকে, বিশেষ করে কম্বোডিয়ার নারীদের অনুপ্রেরণা দেবার আশা জাগানো, তারা যাতে দাড়িয়ে নিজেদের কথাগুলো বলতে পারে, এবং তাদের নিজস্ব কমিউনিটিতে বা বৈশ্বিকভাবে সচল হয়।

জিভি: কিভাবে আপনি অনুকরনীয় কম্বোডিয়ান নারীদের উপর প্রতিবেদন তৈরী শুরু করলেন? ব্লগে আপনি যেসব নারীদের নিয়ে লিখেছেন কোন মানদণ্ড অনুযায়ী তাদের বাছাই করেছেন?

এসপি: যখন ‘ইন্সপায়ারিং কম্বোডিয়ান উইমেন’ ব্লগে আমি প্রথম পোস্ট লিখি তখন থেকেই ভাবছিলাম। শুরুতেই আমার পোস্টের এতো পাঠক হবে এটা আমি আশা করিনি। আমি চিন্তা করলাম আমার ব্যক্তিগত পছন্দের বীর নারীদের নিয়ে লিখব। এমন কয়েকজন নারী হলেন মু সচুয়া, চহম নিমল এবং লউং উং। আমার বাবাও এমন কয়েকজন নারীর ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছেন। এক সময় দেখলাম আর কোন নারীই আমার অনুসন্ধানের জন্য বাদ রইল না, সবাইকে নিয়ে ব্লগ লিখে ফেলেছি। আমার মনে হল আমার প্রকল্প শেষ হয়েছে! এভাবেই আমি আরও কম্বোডিয়ার নারীদের নিয়ে লেখার জন্য অনুসন্ধান করতে চাইলাম। আমি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য এবং এর বক্তব্যগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পাঠাতে লাগলাম। এভাবে ব্লগটির পাঠক সংখ্যা আরও বাড়তে লাগল এবং আমি পাঠকদের কাছ থেকে তাদের দেখা হিরোইনদের নিয়ে লেখার জন্য অনুরোধ পেতে লাগলাম। যে বিচারে কম্বোডিয়ান নারীদের আমি বীর নারী হিসেবে তুলে ধরি আমার পাঠকদের অনুরোধগুলোও সেরকমই ছিল। এই ব্লগটি লেখা আমার জন্য একটি চমৎকার শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। আমি জানি না যে আরও কত সাহসী ও বিস্ময়কর কম্বোডিয়ান নারীরা আমাদের চারপাশেই রয়েছেন, যারা সকল অনিয়মের বিপক্ষে, যারা তাদের বিশ্বাস ও আশা নিয়ে লড়াই করছেন সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য। প্রতিবার যখন আমি তাদের উপর অনুসন্ধান করতে যাই আমি আরও বেশি অনুপ্রাণিত হই।

জিভি: আপনার ‘ইন্সপায়ারিং কম্বোডিয়ান উইমেন’ ব্লগে কোন চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা উচিৎ বলে মনে করেন?

এসপি: প্রথম প্রতিবন্ধকতা যেটি আমি মনে করি ব্লগটিকে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত করানো, বিশেষ করে দেশে এবং বিদেশে বাস করা কম্বোডিয়ানদের কাছে। আমি জানি এটি একটি প্রতিবন্ধকতা কারণ সবার ইন্টারনেট সুবিধা নেই। আমার ব্লগের কথাগুলো শুধুমাত্র তাদের কাছেই পৌঁছায় যাদের কাছে ইন্টারনেট রয়েছে।

দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতা হল আমার ব্লগটির ভাষাগত সমস্যা। আমি চেয়েছিলাম আমার ব্লগটি খেমার এবং ইংরেজি দুটো ভাষাতেই পড়ার সুবিধা থাকবে। কিন্তু আমি খেমার ভাষা তেমন ভাল লিখতে পারিনা, এ বিষয়ে আমি আমার আন্টির সাথে কাজ করছি ব্লগটিকে খেমার ভাষায় লেখার জন্য। কিন্তু এতে অনেক সময় লাগবে। সবগুলো পোস্ট খেমার ভাষায় অনুবাদ করা আমার একটি লক্ষ্য যা আশা করছি খুব শীঘ্রই সম্ভব হবে।

তৃতীয় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে স্থানীয় কম্বোডিয়ান নারীদের কাজগুলো তুলে ধরার বিষয়টি। বিদেশে থেকে এ কাজটি করা খুব সহজ নয়। নিকট ভবিষ্যতে যখন আমি কম্বোডিয়ায় ফিরে যাব আশা করছি তখন কম্বোডিয়ান নারীদের সম্বন্ধে আরও জানতে পারবো, তাদের নিয়ে লেখার জন্য যারা তাদের সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

জিভি: শেষ প্রশ্ন, পাঠকদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?

এসপি:আমার পাঠক হচ্ছে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কম্বোডিয়ার নারীরা যারা তাদের সমাজে একটি ধনাত্মক শক্তি হিসেবে পরিণত হতে চায়। আমি চাই এই সব নারীদের উপস্থাপন করতে যাতে তারা অনুকরনীয় চরিত্র হয়ে উঠতে পারেন। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য আপনার প্রয়োজন সমাজবদ্ধ হওয়া, কোন বড় প্রকল্প শুরু করার দরকার নেই। এটি যে কোনো কিছু হতে পারে যা আপনি হতে চান। খুঁজে বের করুন যে বিষয়ে আপনার প্রবল আগ্রহ রয়েছে, সেটি হতে পারে লেখালেখি, গান করা অথবা কোন খেলাধুলা বা অন্যকিছু। আপনার পথের বাঁধাগুলো জয় করার চেষ্টা করুন। সমাজের যেইসব বিষয়ে আপনার সত্যিকারের আগ্রহ রয়েছে সেই সব দিয়েই আপনি পরিবর্তন আনতে পারেন।

এই পোস্টটি বৈশ্বিক উন্নয়ন ২০১১ সংক্রান্ত আমাদের বিশেষ প্রতিবেদনের অংশ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .