কাতার: শপিং মল এ প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড

২৮ মে তারিখে দোহা’র ভিলাজিও মল এ একটি  ছড়িয়ে পড়া অগ্নিকান্ডে উনিশ জন মারা যান যাদের মধ্যে তের জন শিশু। এ ছাড়াও সতের জন আহত হন।

শিশুরা মলটির একটি নার্সারীতে আটকা পড়ে এবং চারজন শিক্ষকসহ তারা ধোঁয়াতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। দু’জন অগ্নিনির্বাপণকর্মী তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে মারা যান

নিহতদের মধ্যে ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সাউথ আফ্রিকা এবং স্পেন সহ বিভিন্ন দেশের লোক রয়েছে।

কি ঘটেছিল?

কাতারের স্বরাষ্ট্র  মন্ত্রণালয় বলেন :

@এম ও আই_ কাতার এন:  মন্ত্রী বলেন, উদ্ধারকারী পুলিশ খবর পাওয়ার এক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং সিভিল ডিফেন্স টীম দুই মিনিট পর পৌঁছায়।

@এম ও আই_ কাতার এন: কিন্তু ভিলাজিও এর ফ্লোর গুলো পরিকল্পিত না হওয়ায় ঘন ধোঁয়া ও তাপ এবং পানির স্প্রিংকলার সিস্টেম ঠিকমত কাজ না করায় উদ্ধার কাজ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়।

@এম ও আই_ কাতার এন: শিশুরা যে ভেতরে আটকা পড়েছে এটা অনেক পরে জানানো হয় এবং শেষ পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা সিলিং দিয়ে সেখানে যেতে চেয়েছিল।

ভিলাজিও মল থেকে আগুন আসছে এরকম একটি ছবি পোস্ট করেন @লিভিং দোহা

দোহা অধিবাসী ক্রিস্টি রাইস তার ব্লগে বিস্তারিত বর্ণনা করেন:

আজকের দিনটি দোহা’র একটি কালো দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের জন্য যারা বন্ধু ও পরিবারের কাছে বলত যে শিশু লালন পালনের জন্য দোহা নিরাপদ স্থান, সম্ভবত আজকের দিনটি এই নির্ভরযোগ্যতা হারানোর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরাও এই সম্প্রদায়েরই যেমন আমার বন্ধু ইরিকা বলছিল আমরা আজ “বিষাদে অসাড়”। […] তের শিশু নার্সারীতে আটকা পড়েছিল, আগুনের তাপে তাদের বের হওয়ার সিঁড়ি ধ্বসে পড়ে। ঠিক কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত তা এখন নিশ্চিত হওয়া গেছে। নার্সারীটি ছিল মলের ভিতরে, এমন একটা করিডোর দিয়ে সেখানে যেতে হয় যেন একটা খরগোশের গর্ত। আমার যেটা মনে হয়, অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা যখন সেখানে পৌঁছায় তারা ধারণা করে এটা প্রবেশযোগ্য নয় এবং প্রবেশ বিপদজনক। তারা অন্য উপায়ে সিলিং দিয়ে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যখন গর্ত কাটা হয় তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, তারা আর নেই। তেরটি সুন্দর শিশু, চারজন শিক্ষক এবং দু’জন অগ্নিনির্বাপণকর্মী, শ্বাসরুদ্ধকর ধোঁয়া বিল্ডিং এর মধ্যে তাদের ছোট শরীরকে আত্মাশুণ্য করে দেয়।

এই  ভিডিও তে সাংবাদিকতার ছাত্র উসামা অ্যালোনি(উসামাহ২২৯০) প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন এবং উদ্ধার তৎপরতা চিত্রায়ন করেন (হৃদয়বিদারক চিত্র):

নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে?

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান ভিলাজিও মলে কোন ফায়ার অ্যালার্ম কিংবা স্প্রিংকলার ছিল না।

ন্যানো তার বিস্ময় প্রকাশ করেন এভাবে:

@ফারমরেনো : এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য ভিলাজিও’র মত লাক্সারী শপ কল্পনাই করা যেত না, কিন্তু এখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কাজ করে নি #ভিলাজিও #কাতার

রায়েদ আল এমাদি রাগান্বিত হয়ে টুইট করেন:

@রা_এদ : আমি একজন কাতারী এবং স্বার্থপর ব্যবসায়ী যে ভোক্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। #কাতার #ভিলাজিও

ভ্যানিশ ফরএভার এর করা নিচের ভিডিওতে তিনি একজন রেষ্টুরেন্ট কর্মীর সাক্ষাৎকার নেন, যেখানে সে বলে যে সে চার বছর ধরে ভিলাজিও তে কাজ করছে কিন্তু কখনোই কোন ফায়ার ড্রিল বা প্রশিক্ষণের আহবান পায়নি।

http://www.youtube.com/watch?v=8kRQ2bLtsTg

স্থানীয় মিডিয়া কোথায় ছিল?

দোহার অধিবাসীরা স্থানীয় মিডিয়ার উপর ক্রোধান্বিত। কারন  তারা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে গুরুত্ব দেয়নি এবং আপডেট পরিবেশন করেনি।

সাউথ আফ্রিকান বিলাল রেন্ডারি কভারেজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্থানীয় রেডিওর সমালোচনা করে বলেন:

@হালাল কমেডি: ভিলাজিও অগ্নিকান্ডের সময় জ্যামে আটকে পড়ায় কিউবিএস রেডিও স্বামী স্ত্রীকে চুম্বন করছে এইসব শুনতে বাধ্য করে।#অকুপাইকিউবিএস

লিবিয়া থেকে হামিদ আল জাজিরার কাতার নেটওয়ার্ক সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেন:

@২০১১ফেব১৭: ও প্রিয়, সারা বিশ্বে হাজারো রিপোর্টার আছেন আল জাজিরার তাদের একজনকে দোহায় নিয়োগ করতে ভুলে গেছেন? #ভিলাজিও অগ্নিকাণ্ডের খবর নিষ্প্রদীপ!

আল   জাজিরা ইংরেজি অনলাইনের প্রযোজক বেন পিভেব অন্যদের মত ব্লগ, দোহা নিউজ কে কভারেজের জন্য ধন্যবাদ দেন ।

@বেনপিভেন: #ভিলাজিও অগ্নিকাণ্ডের তথ্যের একমাত্র বিশ্বস্ত সূত্র @ দোহানিউজ। বৃহৎ মলের অগ্নিকাণ্ডে জনগনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার খবর কভারেজ দিতে স্থানীয় মিডিয়া ব্যর্থ হয়েছে।

কাতারের সংবাদপত্র পেনিনসুলা অগ্নিকান্ডের খবর মিডিয়া রিপোর্ট করতে ব্যর্থ হওয়ার কথা স্বীকার করে  “New media trumps the traditional” শীর্ষক একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন।

#দোহার একক  কম্যুনিটি হিসেবে শোক প্রকাশ

কাতারে বসবাসকারী বিদেশী নাগরিক যারা ভিলাজিও অগ্নিকাণ্ডে নিহত তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে এস্পায়ার পার্কে গণ জমায়েতের উদ্যোগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কাতারীরা দ্রুত সে বিষয়ে তাঁদের সমর্থন জানান।

টুইটার ব্যবহারকারী কাতারিয়া ৭৮ টুইট করেন:

@কাতারিয়া ৭৮ : শুভ সকাল, একটি দিন চলে গেছে কিন্তু তোমরা সব সময় আমাদের মনে ছিলে, তোমাদের চলে যাওয়ার ব্যাথা মা’রা অনুভব করছেন। #ভিলাজিও #ভিলাজিও অগ্নিকাণ্ড

আবদুল্লাহ আলী আলমান্নাই জিজ্ঞেস করেন:

@আব্দুল্লাহ আল্মান্নাই: যদি আপনি জানেন কিভাবে স্বজনহারা পরিবারের কাছে পৌঁছাতে হয় তাহলে দয়া করে বলবেন কাতারের জনগণ তাদের কাছে যেতে চায়।

এফ কুয়ারী টুইট করেন:

@এফকুয়ারি: এই ভূ-খন্ডের প্রত্যেক আত্মাই আমাদের একজন। কাতারী কিংবা কাতারী নন আমরা প্রত্যেকেই একই সমাজের। আরআইপি # ভিলাজিও অগ্নিকাণ্ডের বলি

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .