প্যালেস্টাইনঃ গাজায় প্রথমবারের মত প্যালফেস্ট নামক সাহিত্য উৎসব

এই বছর প্রথমবারের মত গাজায় ফিলিস্তিনি সাহিত্য উৎসব বা প্যালফেস্ট অনুষ্ঠিত হল,২০০৮ সালে স্থাপিত হওয়া এই উৎসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক লেখকদের একত্রিত করা, এই উৎসবের দিনগুলোতে সন্ধ্যায় সাধারণের জন্য অনুষ্ঠান এবং দিনের বেলায় ছাত্রদের জন্য সৃষ্টিশীল রচনার জন্য বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল।

এই উৎসবের প্রতিষ্ঠাতা মিশরীয় উপন্যাসিক আহদাফ সঊয়াফি-এর মতে, শুরু থেকে এর একমাত্র লক্ষ্য ছিল গাজায় একটি উৎসবের আয়োজন করা। কিন্তু লেখকদের এই উৎসবে যোগদানের অনুমতি পেতে দারুণ সমস্যায় পড়তে হয় বিশেষ করে রাফা সীমান্ত পার হয়ে গাজা প্রবেশের অনুমতি পেতে। অবশেষে তারা এ বছর সফল হয়েছে এবং প্রায় ৪০ জন মিশরীয়, তিউনিশীয়, সুদানি এবং ফিলিস্তিনি এবং লেখক, শিল্পী এবং একটিভিস্ট নাগরিক, গাজা ভ্রমণ এবং ৫ থেকে ১০ মে ২০১২ –এ প্যালফেস্ট-এ অংশগ্রহণের অনুমতি লাভ করেছে।

প্যালফেস্ট গাজা উৎসবে বই দান করা হচ্ছে, ছবি ফ্লিকারের প্যালফেস্ট-এর পাতা থেকে নেওয়া (সিসি বাই-এনসি-এস ২.০)

কর্মশালা

এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ৬ মে তারিখে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মশালা পরিচালনা করা হয়, আল আকসা, আল আজহার এবং ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়। যেমনটা নাদের এল খুজুনদার বর্ণনা করেছে:

এই অনুষ্ঠানের শুরু আল আজহার এবং গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে আরবী এবং ইংরেজী দুটি ভাষায় লেখা এবং ব্লগিং কর্মশালার আয়োজন করা হয়। প্যালফেস্ট ২০১২-এর লেখকরা এই কর্মশালায় অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা জেনে বিস্মিত। এবং তারা এই তথ্য জেনে আরো বিস্মিত যে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যাই বেশী।

ফিলিস্তিনি ব্লগার এবং টুইটারকারীরাও প্যালফেস্টে অংশ গ্রহণ করেছে। ছবি @তামের_পিএস-এর এবং ছবি পোস্ট করেছে @ ওলানান।

সঙ্গীত এবং কবিতা

পরের দিন ৭ মে তারিখে প্যালফেস্টের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ছিল/ বিষয় ছিল ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণ। রাশাদ আল শাওয়া সংস্কৃতি থিয়েটারে তিনটি ফিলিস্তিনি দল এবং মিশরীয় দল এসকান্দেরেল্লা মিলে চার ঘণ্টার এক কনসার্টের আয়োজন করেছিল।

প্যালেস্টাইনের রোবা সালিবা লিখেছে:

@RobaSalibi: فرقة اسكندريلا اشي خيالي وفوق الوصف. كتير انبسطت باغانيهم وكل اشي فيهم في غزة اليوم . نفسي اروح احضنهم كلهم
এসকান্দেরেল্লা দারুণ এবং তাদের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমরা তাদের সবকটি গান উপভোগ করেছি এবং আজ গাজার জন্য যা করেছে তার জন্য, “আমি তাদের সবাইকে আলিঙ্গন করতে চাই”।

যদিও নীচের এই ভিডিওটি প্যালফাস্ট আপলোড করেছে, মিশরীয় কবি আমিন হাদ্দাহ একটি কবিতা আবৃতি করেছেন এবং এসকান্দেরেল্লা “ইয়া ফালেসতানিয়া” ( “ও প্যালেস্টাইন”), নামক গানটি গেয়েছে:

মিশর এবং ফিলিস্তিন এক সাথে

প্যালফেস্ট চলাকালীন সময়ে ফিলিস্তিনি এবং মিশরীয় নাগরিকদের মাঝে এক দারুণ ঐক্য দেখা দেয়, ফিলিস্তিনি তামের হামাম মন্তব্য করেছেন:

@tamer_ps: نفس الأشخاص .. نفس الحناجر .. نفس الأصوات .. نفس القوة .. نفس الإيمان .. هتفت غزة مبارح .. يسقط حكم العسكر .. يسقط الإحتلال
সেই একই লোক, সেই একই কণ্ঠ, সেই একই আওয়াজ, সেই একই ক্ষমতা, সেই একই দোষারোপ, গতকাল গাজা উচ্চারণ করেছে, “সামরিক শাসন নিপাত যাক, দখলদারিত্ব নিপাত যাক”।

নুর আবদে লিখেছেন:

@NourGaza: الحماس مش راضي يهدى! ومع الهتاف لمصر وفلسطين الواحد وكأنو احنا بميدان التحرير!
উৎসাহ মোটেও স্থিমিত হবার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না! এবং আমাদের সাথে মিশর ও প্যালেস্টাইনের জন্য স্লোগান দিন, আপনি অনুভব করবেন যেন আপনি তাহরির স্কোয়ারেই আছেন।

# প্যালহাঙ্গার

এখানকার অংশগ্রহণকারীর ফিলিস্তিনী বন্দীদের এক গণ অনশন ধর্মঘটের কথা ভুলে যায়নি। মিশরীয় সামিয়া জাহিন টুইট করেছে:

@samjaheen: رحنا اعتصام أهالي الأسرى المضربين عن الطعام. واحدة منهم حكيتلنا انها متبنية أسير مصري في سجون الصهاينة. غزة رمز العزة فعلا
বন্দীদের পরিবারগুলো যেখানে অবস্থান ধর্মঘট করছে, আমরা সেই এলাকা পরিদর্শন করি, এদের মধ্যে এক মিশরীয় বন্দী বলল যে সে ইজরায়েল-এর জেলে বন্দী একজনের স্পন্সর করছে। গাজা সত্যিকার অর্থে মর্যাদার এক প্রতীক হয়ে উঠেছে।

ফিলিস্তিনি ব্লগার মাতার লিখেছেন:

“زار غزة قبل أيام وفد بالفست تحت عنوان “احتفالية فلسطين للأدب”، كنتُ مشغولاً ومنهمكاً بقضية الأسرى، وعندما قالت ليّ صديقتي أنهم آتون، قلتُ لها: ربما الوقت ليس مناسباً، قضية الأسرى هي أولويتنا. اليوم حين ودّعناهم أدركتُ كم كنتُ مخطئاً ، كيف كنتُ أفكر بهذه الطريقة؟”
কয়েকদিন আগে, ফিলিস্তিনি সাহিত্য উৎসবের জন্য প্যালফেস্ট-এর প্রতিনিধিরা গাজা ভ্রমণ করে গেছেন। সে সময় আমি বন্দীদের কারণ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বন যখন আমার এক বন্ধু আমাকে তাদের গাজায় বেড়াতে আসার কথা বলল। আমি বললাম হয়ত এটা হয়ত সঠিক সময় নয়। আমাদের গুরুত্ব এখন রাজবন্দীদের কারণসমূহের উপর। আজ যখন বিদায় সম্ভাষণ বিনিময় করলাম, তখন আমি উপলব্ধি করলাম আমি কি ভুলি না করেছিলাম, আর কি ভুল ভাবনাই না ভেবেছিলাম।

ফিলিস্তিনি মাহমোদ ওমার একই আবেগ প্রতিধ্বনিত করেছে:

@_ মাহমোদ:নোট # প্যালফাস্টগাজা সম্পূর্ণভাবে #প্যালহাঙ্গারগাজার সাথে একীভূত, একে ভিন্নভাবে দেখার কোন অবকাশ নেই।

#প্যালহাঙ্গার নামক অবস্থান ধর্মঘটের মিশরীয় উপন্যাসিক আহদাফ সঊয়ফি। ছবি ফ্লিকারে প্যালফেস্টের পাতা থেকে নেওয়া (সিসি-বাই-এনসি ২.০) ।

অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া

যদিও এই উৎসবের অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তারপরেও প্যালফেস্ট হামাস সরকারে একদল সদস্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। নাদের এল খুজুনদার সেখানে কি ঘটেছিল তার বর্ণনা করেছিল:

প্যালফেস্ট-এর শেষ দিনে পুরোনো গাজা সিটির কাসর আল বাসহা নামক এলাকায় একই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, এই অধিবেশনে এসকানদেরেল্লার বিদায় সম্ভাষণ সঙ্গীত পরিবেশন করে, একই সাথে এখানে প্যালফেস্টের লেখকরা ভাষণ, উপস্থাপন এবং পাঠ করে। এই অনুষ্ঠান রাজনৈতিক [আলোচনায়] পরিণত হয়, এবং হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সকলেই ধারনা করে যে বিদ্যুত- চলে যাবার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, বিশেষ করে গাজা যার মধ্যে দিয়ে বছরের পর বছর বাস করে আসছে, যার ফলে আয়োজকরা উৎসব চালিয়ে যেতে থাকে। পাঁচ মিনিট পরে হলের প্রবেশ পথে একটা রহস্যজনক চলাফেরা খেয়াল করা হয়, পুলিশ ঝড়ের বেগে হলে প্রবেশ করে, তারা একটি মেয়ের ক্যামেরা জব্দ করে ফেলে কারণ সে এই অনুষ্ঠানের ছবি তুলছিল, এবং পুলিশ এই অনুষ্ঠানের জন্য সরকারী অনুমতি গ্রহণ করা হয়নি, এই অভিযোগে বন্ধ করতে বলে […] তিন ঘণ্টা পরে, পুলিশের প্রধান, তাঁর ডেপুটি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্নেল হোটেল পরিদর্শনে আসেন। তারা অনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তারা একে ব্যক্তিগত এক ভুল বলে অভিহিত করেন, এবং যা ঘটেছে, সেই বিষয়ে তারা এক তদন্ত শুরু করেছেন। তারা বিবৃতি প্রদান করেছেন যে গাজায় প্যালফেস্টকে সব সময় স্বাগত জানানো হবে।

তবে হামাসের এক নিরাপত্তা সদস্য স্বীকার করেছে যে কর্তৃপক্ষ প্যালফেস্ট এর প্রতিনিধিদের টুইট সমূহ এবং সংবাদপত্র বিবৃতি পাঠ করেছেন, এবং তারা এই অভিযোগে ক্ষুব্ধ যে গাজার বাক স্বাধীনতা খর্ব করছে।

প্যালেস্টাইনের সাইফ আল ইয়াজরি লিখেছে:

@SaifYazori: رغم اسفي من الي حصل في دار الباشا ولكني سعيد لان الوفد المصري ﻻمس الامر على حقيقته ولربما تكون بذرة تغيير ‎‪
যদিও আমি দার এল বাশহায় যা ঘটেছে তাতে দুঃখিত, তবে আমি আনন্দিত যে মিশরীয় প্রতিনিধিরা সেই অনুভূতি লাভ করেছে যা সত্যিকারের , হয়ত এটাই এক পরিবর্তনের বীজ বপন করবে।

ব্লগার নালান সারাজ লিখেছে:

প্যালফেস্ট-এর সদস্যদের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি, কিন্তু এটা আমার দোষ নয়, আমাদের সরকারি কর্তৃপক্ষ [হামাস] ভুলে গেছে কি ভাবে প্যালেস্টাইনকে ভালোবাসতে হয়।

ডঃ হায়দার ঈদ প্যালফেস্টের সমাপনি রাতের অনুষ্ঠানের সূচনা করছে। ছবি ফ্লিকারের প্যালফেস্টের (সিসি বাই-এনসি-এসএ ২.০)।

বিদায়

ফিলিস্তিনি এবা রাজেক প্যালফেস্টের পরিসমাপ্তি দেখে বেদনার্ত: :

@Gazanism: مش مستوعبة إني ودّعت الوفد من شوي!!! يا ريت في كلمة أحسن وأبلغ من كلمة شكراً تنحكى إلهم..شكراً من القلب.
আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি এইমাত্র প্রতিনিধি দলকে বিদায় জানিয়েছি! আমি আশা করি যে “ধন্যবাদ” জানানোর চেয়ে উত্তম কোন শব্দ আছে…আপনাদের হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানানো।

মিশরীয় নারিমান লিখেছে :

@nariology: بعد شهور من الاحساس بالعجز، يوم واحد في غزة أعاد لي ضرورة الإيمان بالمستحيل..
মাসের পর মাস অসহায় বোধ করা অবস্থায়, একদিন গাজা আমাকে অসম্ভবের বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তার মানসিকতা ফিরিয়ে দিয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .