সিঙ্গাপুর: ট্রেন-সমস্যা জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে

এক সময়ের গর্ব এবং উন্নয়নের প্রতীক সিঙ্গাপুরের দ্রুতগামী গণপরিবহনে  (এমআরটি) [মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট] এখন একটি সতর্কবার্তা দেয়া হয়: আপনার নিজ ঝুঁকিতে আরোহণ করুন। গত সপ্তাহে চারবার বিঘ্ন  এবং নানাপ্রকার বিলম্ব অনেক প্রতিদিনের যাত্রীদেরকে (কমিউটারদেরকে) স্থবির, কাজ এবং পরীক্ষার জন্যে দেরি করে দিয়েছে।

লাকি ত্যান বৃত্তাকার রেলপথে আটকে থাকার বর্ণনা দেন:

আমি একটি বৃত্তাকার লাইনের ট্রেনে ছিলাম যখন এটা নষ্ট হয়। আমার ট্রেনটিতে খুব ভিড় ছিল এবং এটা একটা স্টেশনে থেমে গিয়েছিল। এসময় ট্রেনটির বিলম্বের কথা ঘোষণা করা হলো। ২০-৩০ মিনিট পরে আমাদেরকে বৃত্তাকার লাইনটি বন্ধ করে দেয়ার কথা বলা হলো এবং আমরা সবাই আটকে গেলাম। আমি একটি বাসে (জরুরী নয়, স্বাভাবিক পরিষেবা) চড়ে একটি শহরতলিতে গিয়ে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে একটি ভাড়া-গাড়ী পাওয়ার চেষ্টা করলাম। আধাঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করার পর আমি একটা পেয়ে গেলাম। সবাই ট্যাক্সি পেতে চেষ্টা করায় ট্রেন ব্যর্থতার ধারাবাহিক প্রভাব ট্যাক্সি ব্যবস্থার উপর পড়েছিল। প্রাপ্যতা শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছিল। আমি কমফোর্ট-ডেলেগ্রোতে ফোন করলে ব্যবস্থাটি ২০মিনিটে কোন বরাদ্দ দিতে পারে নি। ফলে প্রায় ১ঘন্টা ১৫মিনিট দেরীতে কাজে গিয়েছিলাম।

একটি ট্রেন স্টেশনে অতিরিক্ত ভীড়।

একটি ট্রেন স্টেশনে অতিরিক্ত ভীড়। অনলাইন নাগরিক ওয়েবসাইট থেকে কারস্টেন হ্যানের পাঠানো ছবি

অনেক বেশি মানুষ বিলম্ব আক্রান্ত হওয়ার ফলে এসএমআরটি ট্রেন বিলম্বের চিরকুট জারি শুরু করে:

@সোক্রিস: খুব কষ্টকর #এসএমআরটি ট্রেন বিশৃঙ্খলায় ফেঁসে যাওয়া প্রতিদিনের যাত্রীদের জন্যে সময়-চিরকুট জারি করছি! বিশ্বের আর কোথায় আপনি এটা পাবেন?


@ফেকএসএমআরটি্সিইও ট্রেনে চড়াকে বর্তমানে খুব সফল হাঙ্গার গেমসের সঙ্গে তুলনা করেছেন:

@এসএমআরটিসিইও: আমি #এসএমআরটি‘র স্লোগান “মানুষ স্থানান্তর, জীবনের বৃদ্ধি” থেকে বদলে “অমঙ্গল যেন আপনার সব সময় আপনার পক্ষে থাকে” করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এছাড়াও অনেক সিঙ্গাপুরবাসী ভূমি পরিবহন মন্ত্রী লুই টাক ইউয়ের নাম নিয়ে একটি শ্লেষ বানিয়ে কৌতুক করতে শুরু করেছে:

@দিজনিবয়: লুই স্টাক (আটকে গিয়েছে) ইউ #বৃত্তাকারলাইনবন্ধ #এসএমআরটি

মন্ত্রী আরো ঘোষণা করেছেন রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন করার জন্যে এখন থেকে ছুটির দিনে ট্রেন পরিষেবা বিঘ্নিত হবে। কর্তৃপক্ষ এই নির্ধারিত বন্ধ মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও অ্যালেক্স অউ মনে করেন যে আমাদের এর বিকল্প সমাধান খোঁজা উচিৎ:

আমি বলছি না যে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা উচিৎ নয়। আমাদের অন্যান্য শহরগুলোর অভিজ্ঞতা বলে যে এগুলো অপরিহার্য। অথবা আমি বলছি না যে ব্রিজিং পরিষেবা সমাধানের অংশ নয়: নিশ্চিতভাবে সেগুলো তো অবশ্যই হতে হবে। তবে আমি ব্যবহারকারী-বান্ধব বলে ব্রিজিং পরিষেবার উপর অতিমাত্রায় নির্ভরতার বিরুদ্ধে সতর্ক করছি কারণ এগুলো বেশি যাত্রীর চাপ সামলাতে সক্ষম নয়।

তিনি প্রস্তাব উত্থাপন করেন যে বাস এবং ট্রেনের একই রুটের আরও বেশি বেশি পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিৎ:

… যুক্তিসঙ্গতভাবে খরচ এবং মুনাফা বিবেচনা করে এধরনের বাহুল্য সৃষ্টির সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি দিয়ে বাস এবং ট্রেন পরিষেবা চালানো। বাস কোম্পানিকেই একই যাত্রীদের জন্যে ট্রেন রুটের পুনরাবৃত্তি করার খরচ কত তা বিচার করতে দেয়া হোক। সবচেয়ে বাজে ফলাফল আসার সম্ভাবনা একই করিডোরে ট্রেন এবং বাস উভয় রুট চালানো একটি কোম্পানীকে সেটা হিসেব করতে দিলে। ফলাফল হিসেবে বাস পরিষেবা কমিয়ে  জন্যে একটি সংকল্প থেকে কাটা দূরে দ্বারা ট্রেনে বাড়তি চাপ বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিবে। এটা কোম্পানিটির মুনাফা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক ঝুঁকিও বাড়াবে।

সর্বশেষ ট্রেন বিঘ্নের ঘটনাগুলো এমন সময় ঘটছে যখন গাড়ি কেনার অনুমতি পাওয়ার জন্যে যোগ্যতা সনদের (সিইও- সার্টিফিকেট অব এনটাইটেলমেন্ট) নিলাম সর্বকালীন উচ্চতা ৯২,০০০ মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে। এটি একটি গাড়ি কেনাকে সিঙ্গাপুরী মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যে একেবারে ব্যয়বহুল একটি ব্যাপারে পরিণত করেছে।

লাকি ত্যান মনে করেন সিইও’র জন্যে নিলাম ব্যবস্থা ধনীদের পক্ষে চলে গিয়েছে:

সিইও ব্যবস্থার প্রধান সমস্যা হলো এটি ব্যক্তির প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে নয় বরং তার সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে একটি দুর্লভ সম্পদের বরাদ্দ দেয়। স্কুল থেকে তার সন্তানদের এবং হাসপাতাল থেকে তার পিতা-মাতাকে আনা-নেয়া করা দরকার এমন মধ্য আয়ের পিতা-মাতা, সহজেই প্রেমিকার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ আর ক্লাবে যাওয়ার জন্যে গাড়ি কিনতে আসা কোটিপতির সন্তানদের কাছে নিলামে হেরে যাবে। এধরনের ব্যবস্থার অসুবিধা হল এটা যাদের একটি গাড়ির প্রয়োজন তাদের মধ্যে অতৃপ্ত চাহিদার একটি চিরপ্রসারণশীল ব্যবধান তৈরী করে দেয়। সিঙ্গাপুরে আয়ের এত বেশি যে সময়ের সাথে সাথে যাদের সেটা বেশি প্রয়োজন তাদের কাছে নয় বরং সিইওগুলো শুধুই ধনীদের হাতে চলে যাবে।

স্ট্রেইট টাইমস ফোরা্মের কাছে লেখা চিঠিতে চ্যান তাউ চৌ একমত হয়ে বিকল্প হিসেবে ব্যালট ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করেন:

গাড়ি বিক্রির সংখ্যা সিইও’র মূল্য নির্বিশেষে সবচেয়ে বেশি মিলে যাওয়া সিইও’র উপর নির্ভর করে। তার মানে হলো ব্যবস্থাটি চালানোর জন্যে প্রশাসনিক ফির বাইরে অন্য কোন মূল্য অপ্রয়োজনীয় – যা আসলে রাজস্ব সৃষ্টির পরিবর্তে গাড়ির মালিকানাকেই নিয়ন্ত্রণ করে।

যদি হাউজিং এবং শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ব্যালটিং হতে পারে, তবে নিশ্চয়ই গাড়ির জন্যে একটি ব্যালট ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা যেতে পারে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .