চীনা ইন্টারনেটে খবর ছড়িয়েছে, ৩১শে মার্চ, ২০১২ শনিবারে যারা আগে ঘুম থেকে উঠে জেনেছেন: সরকারী সংবাদ সংস্থা জিনহুয়ার রিপোর্ট অনুসারে চীনের জাতীয় ইন্টারনেট তথ্য দপ্তর (এসআইআইও) এবং বেইজিং পুলিশের মতে “অনলাইনে গুজব তৈরী এবং ছড়ানোর জন্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার এবং ১৬টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
একই রিপোর্টে বলা হয় মাইক্রোব্লগিং সাইট সিনা ওয়েইবো এবং টেনসেন্ট ওয়েইবো-এর মতো জনপ্রিয় টুইটারে তথা-কথিত গুজবগুলো এবং “যথাযথভাবেই সমালোচিত এবং শাস্তিপ্রাপ্ত” হয়েছে। কিন্তু শাস্তিতে কী আছে তা জানার কোন উপায় নেই, কিন্তু চীনা জনগণ তাড়াতাড়ি তার ফলাফল প্রত্যক্ষ করেছে: দু’টি মাইক্রোব্লগিং সাইটে শনিবার ৩১শে মার্চ থেকে মঙ্গলবার ৩রা এপ্রিল পর্যন্ত তাদের ব্যবহারকারীদের মন্তব্য পাঠানো বন্ধ। বিভিন্ন বিদেশী মিডিয়া যেমন বিবিসি, দি ওয়াল স্ট্রীট জার্ণাল, আল জাজিরা অথবা ফর্বস কাহিনীটি লুফে নিয়েছে।
একেবারে নতুন ব্লগ সংশোধিত.নাম পোস্ট করেছে:
গত সপ্তাহের শুরুর দিকে চীনা মাইক্রোব্লগগুলোতে কথিত রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মাঝে ফাটলের উত্তেজনাপূর্ণ গুজবের একটি বন্যা বয়ে যায়। গত রাতে, গুজবগুলো চাপা দেয়ার জন্যে যথেষ্ট জোরালোভাবে কাজ না করার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর চীনের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাইক্রোব্লগ করার মঞ্চ সিনা ওয়েইবো এবং টেনসেন্ট ওয়েইবো অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ে।
জিনহুয়া’র উদ্বৃতি অনুসারে একজন এসআইআইও মুখপাত্র দাবি করেন এই গুজবগুলো (সরকারের সমালোচনার ক্ষেত্রে বহুলব্যবহৃত শ্রুতিমধুর শব্দ) “বেইজিং-এ সামরিক যানবাহন প্রবেশ করছে এবং বেইজিং-এ কিছু একটা সমস্যা চলছে” জাতীয়। এগুলো শীর্ষ কর্মকর্তা বো জিয়ালাইকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর কল্পিত উৎখাত প্রচেষ্টা এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টি’র (সিসিপি) মধ্যে ক্ষমতার লড়াই প্রসঙ্গে ইন্টারনেট আলাপের প্রতি নির্দেশ করে। সামাজিক মিডিয়া থেকে বো জিয়ালাই এবং কল্পিত ক্যু-দেতা’র উপর মন্তব্যগুলো এমাসের প্রথমদিকে সেন্সর করা হয়েছিল।
তোফু মন্ত্রণালয় থেকে জিং গাও লিখেছেন:
৩১শে মার্চ সকালে সিনা ওয়েইবো ব্যবহারকারী একটি মন্তব্য ফেলে রাখতে চাইলে সিস্টেম থেকে ভুলের বার্তা পান:
“সাম্প্রতিককালে সমস্ত ওয়েইবো ব্যবহারকারীদের উপর মাইক্রোব্লগারদের মন্তব্যগুলো গুজবসহ অনেক বেশি করে অবৈধ এবং ক্ষতিকর তথ্যে ভরে যাচ্ছিল। এগুলোকে এক ধাক্কায় পরিষ্কার করার জন্যে সিনা ওয়েইবো’র মন্তব্য অংশটি সাময়িকভাবে ৩১শে মার্চ সকাল ৮টা থেকে ৩রা এপ্রিল সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিষ্কার হয়ে গেলেই মন্তব্য অংশটি খুলে দেয়া হবে। তথ্যের প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা সবাইকে যোগাযোগের জন্যে একটি সুবিধাজনক পরিবেশ প্রদান করবে। আমরা আশা করি আপনারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন এবং মেনে নিবেন। আপনাদের সহযোগিতার জন্যে ধন্যবাদ।”
জিনহুয়া উদ্বৃত এসআইআইও মুখপাত্র আরেকটি বক্তব্য অনুসারে অজানা সংখ্যক জনগণকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে “সতর্ক এবং শিক্ষিত” করা হয়েছে, যারা “অনুতপ্ত হওয়ার ইচ্ছা” প্রদর্শন করেছেন। জিনহুয়া অনুসারে বেইজিং পুলিশ বলেছে যে গুজবগুলো “জনগণের শৃঙ্খলাকে গুরুতরভাবে বিঘ্নিত, সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং শাস্তির যোগ্য”।
টেচায়নাশিয়া থেকে সি. কাস্টার বলেছেন:
গুজবগুলো সমাজের উপর “অশুভ প্রভাব” ফেলছে, এবং যারা এগুলো ছড়াচ্ছে তারা “আইন ভঙ্গকারী” এবং তারা “নোংরা মনোভাব নিয়ে” “বিনা কারণে” করেছে বলে নির্দেশ করা হয়েছে। জিনহুয়া চীনের সরকারী বার্তা সংস্থা এবং এই শব্দগুলো সম্ভবতঃ যত্ন করে বাছাই করা।
রিপোর্টটি শেষ হয়েছে এই বাক্যটি দিয়ে: কোম্পানী দু’টি [সিনা এবং টেনসেন্ট] বলেছে যে তারা প্রাসঙ্গিক সমস্ত প্রবিধান পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবে, নিজেদেরকে সংস্কার করার পদক্ষেপ নিবে এবং তাদের [উপাদানের উপর] তত্ত্বাবধান বাড়াবেন।” এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষকরে যদি আপনি একজন ওয়েইবো ব্যবহারকারী হন।
যুক্তিসঙ্গতভাবেই চীনের কাছে চীনের মহা অগ্নিপ্রাচীর নামের বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ইন্টারনেট সেন্সরকারী ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরও অনেকে সামাজিক মিডিয়া, বিশেষকরে মাইক্রোব্লগগুলোকে সরকারের তথ্য নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করা একুশ শতকের হাতিয়ার বিবেচনা করেন।
কমিউনিস্ট পার্টি সামাজিক মিডিয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। আরব বসন্ত পর্বগুলো সরকার উৎখাতের হাতিয়ার হিসেবে টুইটার এবং ফেসবুককে পাদপ্রদীপের আলোর নিচে নিয়ে এলে, গতবছর থেকে চীনা কর্তৃপক্ষগুলো অনলাইন তথ্য নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা বাড়িয়ে দেয়। গত ডিসেম্বরে চীনা কর্তৃপক্ষগুলো বিভিন্ন নতুন পদক্ষেপ নেয়ার ফলে মাইক্রোব্লগাররা প্রকৃত নাম ব্যবহার (সাইন আপ) করতে বাধ্য হয়। তারপরও সবার মাঝে একটা অনুভূতি রয়েছে যে চীনা ইন্টারনেট কোম্পানীগুলো সরকারকে মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং ক্ষমতাবান। তাহলে প্রশ্ন হলো: চীনের কেউ কী কমিউনিস্ট পার্টিকে বোকা বানাতে পারেন?
টেচায়নাশিয়া থেকে সি. কাস্টার তার পোস্টের শেষে বলেছেন:
ওয়েইবো’কে সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রতি সত্যিকারের হুমকি বিবেচনা করলে তারা একে বন্ধ করে দিতে দ্বিধা বোধ করবেন না।
কিন্তু তা কখনো হবে না, কারণ সিনা এবং টেনসেন্টরা এতো বোকা নন। তারা হয়তো তাদের প্রকৃত নাম রেগুলেশনের নীতি হাল্কাভাবে নিলেও তারা উভয়েই বুঝেন যে চীনে ব্যবসা করার একমাত্র উপায় হলো নিয়ন্ত্রকদের নিয়ম মেনে চলা। (আমাকে বিশ্বাস না হলে, গুগলকে জিজ্ঞেস করুন।) সুতরাং আপনি ওয়েইবো ব্যবহারকারী হয়ে থাকলে সামনের কয়েকমাসে বড়রকম পরিবর্তন দেখতে পাওয়ার কথা ভেবে রাখেন (এবং স্থানীয় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এজেন্টদের সাথে আরেকটু বেশি পরিচিত হতে না চাইলে হয়তো অভ্যূত্থানের সেই গুজবগুলো আর পুণঃটুইট করবেন না)। প্রকৃত নামে নিবন্ধন এখনো তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে চীনা মাইক্রোব্লগগুলোকে প্রভাবিত করেনি, কিন্তু আমার একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে যে গান থামতে যাচ্ছে প্রায়।
ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ চীনের জন্যে একটা বড় বিষয়। সামাজিক মিডিয়ার সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ভাষা দেয়ার ক্ষমতা সিসিপি’র অরওয়েলীয় সম্প্রীতি এবং স্থিতিশীলতার প্রতি একটি সরাসরি হুমকি প্রদর্শন করছে। শীতল হয়ে আসা অর্থনীতি এবং নেতৃত্বের পরিবর্তনের মাঝে সিসিপি হয়তো ইন্টারনেটে অভিযান চালানোকেই ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার সবচেয়ে ভাল উপায় বিবেচনা করছে।.