ভারত, বাংলাদেশঃ এক সাইবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া

সম্প্রতি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশী একদল হ্যাকার সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর ওয়েবসাইট অকার্যকর করে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এক সাইবার যুদ্ধ যুদ্ধ শুরু হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১২-এ যখন বাংলাদেশী প্রচার মাধ্যমে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে, এর প্রতিশোধ হিসেবে ভারতীয় হ্যাকার গ্রুপ ইন্ডিশেল এবং হিন্দুস্তান সাইবার আর্মি, বাংলাদেশ সরকারের পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট হ্যাক করে নিয়েছে, তখন তাদের বাংলাদেশী প্রতিপক্ষ, বাংলাদেশ ব্লাক হ্যাট হ্যাকারস (বিবিএইচএইচ), বাংলাদেশী সাইবার আর্মি (বিসিএ) এবং থ্রিএক্সপিওয়ানআরথ্রি (থ্রিসিএ) লড়াইয়ের এই উন্মাদনায় যোগ দেয়। সংবাদে দাবী করা হয় যে, ১১- ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভারতীয় হ্যাকাররা ৪০০ বাংলাদেশী ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে, অন্যদিকে বাংলাদেশী হ্যাকাররা হাজার হাজার ভারতীয় ওয়েবসাইট হ্যাক করে ফেলে, যেগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে তারা অকার্যকর করে ফেলে।

“স্ক্রিনশট”অনুপ সাদির সৌজন্যে

অনুপ সাদি জানাচ্ছেন:

৮ফেব্রুয়ারি তারিখে বাংলাদেশী হ্যাকাররা ভারতের বিরুদ্ধে এক সাইবার যুদ্ধ শুরু করে। হ্যাকাররা ঘোষণা করে যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে অবশ্যই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।

সেবাস্টিয়ান মার্ডক-গিবসন সংবাদ প্রদান করেছে:

ব্লাক হ্যাট এবং বাংলাদেশ সাইবার আর্মি নামক দলের সাথে যুক্ত তরুণ হ্যাকাররা ভারতীয় বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট সমূহ হ্যাক করতে শুরু করে। এই সমস্ত হ্যাকারদের দল দাবী করে যে তারা ভারতীয় বাণিজ্যিক সাইটে সমূহকে লক্ষ্য করে ক্রমাগত আঘাত করে গেছে। এর মধ্যে ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জের কয়েকটি সাইটও রয়েছে।

হ্যাকার সম্প্রদায়ের যুদ্ধংদেহী ভাষাকে মাথায় রেখে, ভারতের “ইন্ডিশেল’ এবং “সাইবার আর্মি”, পাল্টা আঘাত হিসেবে বাংলাদেশের ওয়েবসাইট সমূহের উপর হামলা চালায়।

বাংলাদেশী হ্যাকার, যারা এই হামলা চালিয়েছে, তারা সকল প্রকারে এতে সফলতা অর্জনের দাবী করে, যাদের সাথে জনপ্রিয় একই রকম “হ্যাকাটিভিস্ট” দল অ্যানোনিমাস যোগ দেয়। এই ঘটনায় বাংলাদেশী হ্যাকাররা সাধারণত ওয়েবসাইট সমূহ অকার্যকর করে ফেলে, তারা ওয়েবসাইটের উপাদান সরিয়ে, সেখানে বাংলাদেশের পতাকা এবং বাংলাদেশী নাগরিকদের উপর বিএসএফ-এর নির্যাতনের ছবি রেখে দেয়।

এই ঘটনা প্রচার মাধ্যমে বেশ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং এমনকি স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেল, মুখোশ পড়া এক হ্যাকারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।

নেটনাগরিকরাও এই বিষয়ে তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরে।

সচলায়তনে, অনার্য সঙ্গীত লিখেছে [বাংলা ভাষায়]:

সব মিলিয়ে জানতে পারলাম ভারতীয় ১৫ হাজারেরও বেশিসাইট হ্যাক করেছে বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশের পক্ষে অন্য দেশের হ্যাকাররা। ভারতীয় হ্যাকারদের দল ইন্ডিশেল বলেছে, রবিবার রাতের মধ্যে বাংলাদেশীদের এই হ্যাকিং বন্ধ না হলে তারা বাংলাদেশের গুরুদ্বপূর্ণ সব ওয়েব সাইট গুঁড়িয়ে দেবে। তাতে অবশ্য বাংলাদেশের হ্যাকাররা থেমে নেই। বরং দেখতে পাচ্ছি ব্লগে-ফেসবুকে সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে হ্যাকিংয়ে সম্পৃক্ত করছে হ্যাকাররা।

বাংলাদেশের হ্যাকারদের ক্ষোভ এবং আবেগের সততায় কোনো সন্দেহ পোষণ করছি না আমি। বিএসএফ-এর কর্মকাণ্ড ঘৃণ্য তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর প্রতিবাদ করা দরকার। প্রতিবাদ যাঁরা করছেন তাঁদেরকে অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশের হ্যাকারদের কর্মকাণ্ডও প্রতিবাদ। অবশ্যই যৌক্তিক প্রতিবাদ। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিবাদের পদ্ধতিটি কতটুকু গ্রহনযোগ্য। অথবা যে পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করা হচ্ছে তাতে কী ফলাফল আশা করতে পারি আমরা?

ব্লগার একই সাথে বলছে যে, এই ঘটনা বাংলাদেশ সরকারের জন্যও এক শিক্ষণীয় বিষয়, যাদের সরকারি ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন।

ভারতীয় হ্যাকারদের প্রদান করা বার্তার স্ক্রিনশট

উপরের পোস্টে দিগন্ত মন্তব্য করেছে [বাংলা ভাষায়] :

ওয়েবসাইট হ্যাকিং করা সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু বলে মনে হয় না।

ব্লগার কৌশিক, কিছু রাজনৈতিক উপাদানের বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছে [বাংলা ভাষায়], বিশেষ করে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল জামাত-এ-ইসলাম¸ ভারতের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য সাইবার যুদ্ধকে ব্যবহার করেছে। তিনি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে দেন, যেন তারা এই রাজনৈতিক দলের ফাঁদে না পড়ে।

হ্যাকিং-এর এই হিড়িক খতম হয় তখন, যখন উভয় দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, হ্যাকারদের ধরতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ব্লগার কাওসার আলম সংবাদ প্রদান করেছেন [বাংলা ভাষায়] যে ২৭ ফেব্রুয়ারিতে, বাংলাদেশী হ্যাকার গ্রুপ তাদের ফেসবুকের পাতায় এই যুদ্ধে নিজেদের বিজয় দাবী করে যুদ্ধ শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা প্রদান করে ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .