বাংলাদেশ: নির্বাচিত ব্লগার জিএমবি আকাশের সাথে এক ছবি যাত্রা

“ফটোগ্রাফি আমার নিঃশ্বাস। ফটোগ্রাফি ছাড়া আমার কোন অস্তিত্ব নেই”-জিএমবি আকাশ

সেই দিনগুলো এখন অতীত যে দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে নিয়মিত ভাবে বাংলাদেশের কেবল রাজনৈতিক সংঘর্ষ বা প্রকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি প্রকাশ পেত। এর নতুন এই অবস্থানের জন্য বাংলাদেশের কয়েকজন তরুণ প্রতিভাবান অপেশাদার এবং পেশাদার ফটোগ্রাফারকে ধন্যবাদ, যাদের কারণে আপনারা বাংলাদেশের অনলাইনে হাজার হাজার ছবি দেখতে পাবেন, বিশেষ করে ছবি প্রদর্শনীর সাইট ফ্লিকার এবং পিকাসোতে। এই সমস্ত ছবি বাংলাদেশের অন্য সব দিক তুলে ধরছে। এছাড়াও বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন ফোটোব্লগার উঠে এসেছে যারা, তাদের কাজ এবং ছবি রচনা সবার সামনে তুলে ধরছে।

আমি আপনাদের এ রকমই একজন ফোটগ্রাফার এবং ব্লগার এর কাজ সম্বন্ধে পরিচয় করিয়ে দেব, যিনি ছবির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এক উন্নত ধারণা তৈরী করেছেন। জিএমবি আকাশের ছবির প্রতি আগ্রহ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। তিনি রাজধানী ঢাকায় ওয়ার্ল্ড প্রেস ফোটগ্রাফির তিন বছরের এক সেমিনারের অংশ নেন এবং ঢাকার সাউথ এশিয়ান ফটোগ্রাফি ইনিস্টিটিউট, যার নাম পাঠশালা, সেখান থেকে গ্রাজুয়েশন করেন।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তিনি প্রায় ৪০ টির মত আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন এবং তার কাজ ৫০টির মত আন্তর্জাতিক সংবাদ এবং প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ওয়ার্ল্ড প্রেস ফোটো পুরস্কার (২০০৬) এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল ফটোগ্রাফ অফ দি ইয়ার পুরস্কার (২০০৯) লাভ করেছেন। তার সম্বন্ধে আরো জানতে চাইলে টিফিনবক্সে প্রদান করা তার সাক্ষাৎকার পড়তে পারেন।

তিনি তার নিজের ছবি সম্বন্ধে লিখেছেন:

এই সমস্ত ছবিগুলো আমার নিজের অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি। আমার জীবনে আমি যা দেখেছি আমি তার এক সংক্ষিপ্ত চিত্র। জীবন্ত অনেক চরিত্র এই সমস্ত যাত্রায় মিশে গেছে। কখনো আমি দৌড়েছি, কখনো আমি ট্রেনের ছাদে চড়েছি, আমি বন্যায় ভেসে যাওয়া মেঝেতে ঘুমিয়েছি, আমি সাঁতার কেটেছি, আমি ঝুলে থেকেছি, আমি লম্বা সময় বস্তিতে কাটিয়েছি এবং এভাবেই আমি এই সমস্ত আত্মার সাথে সাক্ষাৎ করেছি। কিছু সময়ের জন্য তাদের একজনে পরিণত হয়েছি। এই সমস্ত অভিযান ছিল বিপদসংকুল। কিন্তু ওই সমস্ত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছার পর, তাদের দরজায় প্রবেশের সুযোগ লাভের পর এবং যখন তারা আমাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে, তখন আমার সকল কঠিন পরিশ্রম এবং ঝুঁকি গ্রহণ স্বার্থক হয়ে ওঠে। আমি এভাবে চলতেই থাকব, আমি আমার লেন্সে যে সমস্ত মুখ ধরা পড়বে তাদের ছুঁয়ে যাব। আমি বিশ্বকে যন্ত্রণার এই সব অজানা কাহিনী প্রদর্শন করব। আর যদি এতে কোন একটি হাতও তাদের উপর ছায়া প্রদান করতে এগিয়ে আসে, তাহলে আমার ঘাম ঝরানো স্বার্থক হবে।

ট্রেনের উপর চড়ে যাত্রা @ জিএমবিআকাশ/ www.gmb-akash.com

তার উদাহরণ সৃষ্টিকারী কাজের মধ্যে রয়েছে হিজড়াদের (যারা শারিরীক ভাবে পুরুষ, কিন্তু লিঙ্গীয় পরিচয়ে নারী ) উপর তোলা ছবি। হিজড়াদের উপর লেখা তার ব্লগপোস্টের কিছু সারাংশ এখানে তুলে ধরা হল:

১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মত আমি উপলব্ধি করি যে অসহায় সম্প্রদায়ের দিকে আমার নজর দেওয়া উচিত। এ অনুভূতির পেছনে একটা কাহিনী আছে। ছেলেবেলায় প্রায়ই আমি ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দুরে আমার চাচার বাড়ী নারায়ণগঞ্জে যেতাম। আমার চাচার ওখানে আসত এক বৃহন্নলা, স্থানীয়ভাবে যাকে হিজড়া বলা হয়। তার নাম ছিল “খুশী” –মানে আনন্দ, আসলে আনন্দ তাঁর জীবনে ছিল না বললেই চলে।

এক হিজড়া জীবন। @জিএম বি আকাশ/ www.gmb-akash.com

জনগণের মধ্যে হিজড়া সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে; মধ্যবিত্তরা হিজড়াদের অভিশাপ বলে মনে করে, আর বিশ্বাস করে যে সকাল বেলায় হিজড়া দর্শনে তাদের সারা দিনটি মাটি হবে। আর নিম্নবর্গের মানুষেরা মনে করে হিজড়াদের মধ্যে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা রয়েছে, সাধারণ জীবনের আনন্দ বঞ্চিত এ মানুষগুলোর প্রার্থনা কবুল হয়।

টাঙ্গাইলের এক যৌনপল্লীতে জিএমবি আকাশ তাঁর এক বোনের সঙ্গে বসে আছেন। তাদের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরী করে তাদের কষ্টের কাহিনী তিনি বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন। ছবি জিএম বি আকাশ এর সৌজন্যে।

তার ফটোব্লগ, বাংলাদেশের দেহাতী মানুষের আনন্দ, বেদনা আশা- আকাঙ্ক্ষার উপাখ্যান। জন্মই কাজের জন্য –শিরোনামে তার ছবি রচনায় তিনি শিশু শ্রমের মত বিষয়কে উপস্থাপন করেছেন:

জন্মই কাজের জন্য। @জিএমবিআকাশ/ www.gmb-akash.com

শিলু, বালি ও পাথর আলাদা করার কাজ করে। পিয়াইন নদীর তীরবর্তী ভোলার ঘাটে ২,৫০০ নারী, ১,০০০ শিশুসহ কমপক্ষে ১০,০০০ মানুষ বালি ও পাথর সংগ্রহে নিয়োজিত। বালি ও পাথরের মত নির্মাণসামগ্রী, বালি ও পাথর থেকে তৈরি সিমেন্ট এর সরবরাহ বাংলাদেশে কম, কাজেই নির্মাতাদের কাছে এগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গড় আয় প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টাকা (২ ডলারের কম)। জাফলং, সিলেট।

পর্তুগালে অনুষ্ঠিত টেডেক্স’ও পোর্টো২০১১ এ টেডেক্স বক্তৃতায় তিনি তাঁর দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প ‘সারভাইভরস’ এর কাজ সম্পর্কে জানান। বিস্তারিত বোঝাপড়া ও প্রণোদন প্রক্রিয়া এ কাজের পেছনের শক্তি হিসেবে কাজ করছে। সারভাইভরসঃ “ দি ইনভিন্সিবিলিটি অব হিউম্যান ডিটারমিনেশন টু স্ট্রাগল আ্যন্ড সারভাইভ এগেইন্সট অল অডস” নামের বইটি গ্যালেরিয়া দি পেপিস কর্তৃক লিখিত আর এর ছবিগুলো জিএমবি আকাশের তোলা।

আপনি জিএমবি আকাশকে, তার ওয়েবসাইট, ব্লগ , ফেসবুক, ফ্লিকার এবং টুইটার একাউন্টের মাধ্যমে অনুসরণ করতে পারেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .