হংকং: চীন থেকে সন্তান জন্ম দিতে আসা পর্যটকদের কি ভাবে ঠেকানো যায়?

চীনের সাথে হংকং-এর অন্যতম এক দ্বন্দ্বের কারণ হচ্ছে বার্থ টুরিজম, যা ক্রমশ পাকিয়ে উঠছে। হংকং-এর সরকারি পরিসংখ্যানের হিসেব অনুসারে ২০১১ সালে হংকং-এ ৯৫, ৩৩৭ টি শিশু জন্ম গ্রহণ করেছে এবং এর মধ্যে ৪০ শতাংশ শিশুর বাবা মা মূল চীনা ভূখণ্ডের নাগরিক, যারা বার্থ টুরিজম বা সন্তান জন্ম দিতে আসার জন্য হংকং পর্যটনকারী।

হংকং-এর মূল আইন, যা কিনা হংকং এর এক ক্ষুদ্র সংবিধান, হংকং-এর মূল আইন অনুসারে, যদি মূল চীনা ভূখণ্ডের কোন পিতামাতার সন্তান-এর জন্ম হংকং-এ হয়, তাহলে সেই সন্তান এখানকার পূর্ণ বাসিন্দা এবং নাগরিকত্বের অধিকার ভোগ করবে, এমনকি যদিও তার বাবা মার কেউ এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা নয়। যার ফলে এক সন্তান নীতি এড়ানো এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায়, মূল ভূখণ্ড থেকে বিপুল সংখ্যক চীনা গর্ভবতী মহিল সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য হংকং-এ চলে আসে।

The profile picture of Facebook group “Say No to Mainland pregnant women giving birth in Hong Kong!”

২০০৯ সাল থেকে হংকং-এর বেসরকারি হাসপাতালসমূহের প্রসূতি বিভাগে জায়গা খালি না থাকার বিষয়টি স্থানীয় মায়েদের শঙ্কিত করে তুলেছে। জনতার ক্ষোভ তখন বিস্ফোরিত হয়, যখন স্থানীয় এক পত্রিকা ২০১১-এর শেষ পর্যায়ে সংবাদ প্রদান করে যে ওই সমস্ত হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের সব কটি শয্যা ২০১২-এর অক্টোবর পর্যন্ত অগ্রিম ভাড়া হয়ে গেছে। এই বাস্তবতার বিপরীতে ফেসবুক গ্রুপ “ মূল চীনা ভূখণ্ডের গর্ভবতী নারীদের হংকং-এ এসে সন্তান প্রসবকে না বলুন”। [যা ২০১১-এর জুলাই-এ তৈরী করা হয়] তা ছয় মাসের মধ্যে ১১২,০০০ অনুসারী লাভ করেছে।

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় মায়েরা, হংকং-এর মাতৃসেবা ব্যবস্থার ক্রমশ অবনতির জন্য বানের স্রোতের মত চীন থেকে আসা গর্ভবতী মায়েদের অভিযুক্ত করেছে। নীচে সদ্য মা হওয়া নারী, প্রসূতি বিভাগে তার অভিজ্ঞতা ফেসবুকে তুলে ধরছে।
[সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়া এই লেখার লিঙ্ক প্রদান করা যাচ্ছে না কারণ তার ইউজার প্রোফাইল সবার জন্য উন্মুক্ত নয়]:

1月中我係瑪麗開刀,在產前房看見有位普通話婦穿水入院,醫生問她國內做產檢等問題,她答了很多次不知道。我開刀那天,看到醫生的schedule,只是一個上午,她已有5個手術,怪不得公立好多資深醫生都離職。

產後房有很非本地孕婦,那三日兩夜的住院,我間大房有兩個普通話人對醫護呼呼喝喝,其中一個話有小孩在深圳要她照顧,想兒科醫生盡快簽出院紙,但醫護回覆兒科ICU好爆,醫生正忙。但佢繼續嘈,我忍唔住鬧佢不要再煩姑娘,之後姑娘幫我洗傷口時訴苦,說她們日日受雙非氣,天天講普通話如在大陸工作……又話我好彩早了一天開刀,因第二日又有高危雙非衝急症,要緊急做手術,令全部預約了手術的媽媽要改時間改期!

জানুয়ারির মাঝামঝি সময়ে কুইন মেরী হাসপাতালে আমি একটি সন্তানের জন্ম দেই। ওয়েটিং রুমে আমি আরেকজন মাকে দেখতে পেলাম যে কিনা ম্যান্ডারিন ভাষায় তার ওয়াটার ব্রোকেন (গর্ভবতী মায়েদের প্রসবের সময় শরীর থেকে জলীয় উপাদান বের হওয়া) নিয়ে কথা বলছিল। ডাক্তার তার তার প্রাক নাটাল চেক নিয়ে কথা বলছিল, আর সে বার বার উত্তর দিচ্ছিল ‘আমি জানি না।। অপারেশনের দিন আমি এক ডাক্তারের সময় সূচি দেখলাম। প্রতিদিন সকালে তাদের পাঁচটি করে অপারেশন করতে হয়। সরকারি হাসপাতালের অভিজ্ঞ ডাক্তাররা যে এখন পদত্যাগ করছে, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। পোস্ট নাটাল ওয়ার্ডে (শিশু জন্মের পর সেখানে মা এবং শিশুকে রাখা হয়) বেশ কিছু মা-কে দেখতে পেলাম, যারা স্থানীয় নয়। আমি তিন দিন দুই রাত হাসপাতালে অবস্থান করেছিলাম। দুজন ম্যান্ডারিন ভাষী মেডিকেল স্টাফদের সাথে চিৎকার করছিল। এর মধ্যে একজন বলছিল যে সেনজেনে তাঁর একটা শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে অনুরোধ করছিলেন, যেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্মী তাকে বলল যে নাটাল আইসিইউ-তে কোন আসন এখন খালি নেই আর ডাক্তাররা সব ব্যস্ত, কিন্তু তিনি বার বার অনুরোধ জানাতে থাকল। আমি আর সহ্য করতে পারলাম না এবং উক্ত ভদ্রমহিলাকে বললাম, যেন তিনি হাসপাতাল কর্মীকে বিরক্তি না করে। যখন উক্ত কর্মী, যে আমার ক্ষত পরিষ্কার করছিল সে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে, উক্ত মহিলা কর্মীটি আমাকে বলে যে মূল চীনা ভূখণ্ড থেকে আসা ওই সমস্ত মায়েরা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। তারা এখানে ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বলেছে, যেন এখানকার কর্মীরা চীনে কাজ করেছে…উক্ত কর্মী আমাকে আরো বলে যে আমি সৌভাগ্যবান, কারণ একদিন আগে আমার অপারেশন হয়ে গেছে, পরের দিন এমন একজন গর্ভবতী মায়ের অপারেশন ছিল যাকে অতি দ্রুত জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। তার জরুরী ভিত্তিতে অপারেশনের প্রয়োজন ছিল যার ফলে সেদিন হাসপাতাল তাদের সকল নির্ধারিত কাজ স্থগিত করতে বাধ্য হয়।

The advertisement depicting the invasion of Hong Kong by a gigantic locust

বিজ্ঞাপনে বিশাল এক পঙ্গপালের মাধ্যমে হংকং-কে ক্রমশ গ্রাস করার দৃশ্য,

গণ অসন্তোষের কারণে, হংকং-এর প্রশাসন অবশেষে সরকারি হাসপাতালে সমূহে মূল ভূখণ্ডের নাগরিকদের অগ্রিম প্রসূতি সেবার ব্যবস্থা বাতিল করেছে । তবে অনেকে বিশ্বাস করে যে চীনা ভূখণ্ড থেকে আগত নাগরিকদের সন্তান জন্মদানের বিষয়টি হংকং –এর সামাজিক জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করবে।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, বেবি কিংডম এবং গোল্ডেন ডিসকাশন ফোরাম–এর নেট নাগরিকরা যৌথ ভাবে একটি জনপ্রিয় সংবাদপত্রে এক বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে এক বিশাল পঙ্গপাল ক্রমশ হংকংকে গ্রাস করছে, যা মূলত হংকং-এ মূল চীনের নাগরিকদের ক্রমশ প্রবেশের মাধ্যমে হংকংকে গ্রাস করার এক রূপক চিত্র।

মার্গারেট নগ এক ব্যারিস্টার, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক দল সিভিক পার্টির সদস্য, তিনি দেখিয়েছেন যে ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক নামক চুক্তির ( ক্লোজার ইকোনমিক পার্টানারশিপ এগ্রিমেন্ট বা সেপা) কারণে স্থানীয় প্রশাসন সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়টি, মূল চীনা ভূখণ্ড থেকে সন্তান প্রসবের জন্য নাগরিকদের হংকং-এ পাড়ি জমানোর মূল কারণ। সেপা হচ্ছে হংকং এবং চীনের মধ্যে এক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, যা কিনা চীনে হংকং-এ পণ্য এবং সেবার বাজার খুলে দিয়েছে।

একটি সেমিনারে নগ, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের বাস্তবতায় হংকং-এর অভিবাসন ইতিহাসের বিষয়টির পর্যালোচনা করেছেন [চীনা ভাষায়]:

香港是一個移民的社會,殖民地成立直至中共建國,中港兩地的人是可以自由往來,直至五十年代才出現分隔中港的政策,即便如此,港府也採取抵壘政策,讓抵達市區的內地人取得身份證,這政策直至七十年代末才取消。…
從兩地封關開始,出入境設有嚴格的關卡,互為分隔。而八十年代到內地娶妻生子的一群,其子女就受到影響,很難來港。當時兩地政府便就兩地的出入境限制協商,結果出現「配額」這種東西。在這個背景下訂立的《中英聯合聲明》,成為日後《基本法》的依據。…直至 2001 年,內地人要來香港仍然十分困難。但自從 2003 年七一後開放自由行,至去年全年共有一千四百萬內地人來港,僅有四萬雙非孕婦數量算少。

হংকং-এর ইতিহাস হচ্ছে অভিবাসনের ইতিহাস, উপনিবেশের শুরু থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের শাসন স্থাপনের পরেও অভিবাসন চলছে। ১৯৫০ সালের পূর্ব পর্যন্ত উপনিবেশিক সরকার এখানে সফল ভাবে বসতি গড়া নাগরিকদের জন্য ‘টাচ বেসড পলিসি” ( হংকং-এর মধ্যে অবস্থান করতে থাকা) এবং আইডেন্টিটি কার্ড প্রদান করার আগে পর্যন্ত,-এর নাগরিকরা বিনা বাঁধায় যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারত। ১৯৭০-এর দশকে এই নীতি বিলুপ্ত করা হয়… সে সময় সীমান্তে প্রচণ্ড কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ৮০-এর দশকে মূল চীনা ভূখণ্ডে বাস করা নাগরিকদের সন্তানরা খুব একটা সহজে হংকং-এ প্রবেশ করতে পারত না। এরপর উভয় ভূখণ্ডের প্রশাসন “কোটা পদ্ধতির প্রচলন করে”। চায়না—ব্রিটিশ যৌথ ঘোষণা এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে স্বাক্ষরিত হয়… হংকং-এর একটা খসড়া মৌলিক নীতি তৈরী করার ক্ষেত্রে এটাকেই মূল নীতি বিবেচনা করা হয়… যা ২০১০ সাল পর্যন্ত বলবত ছিল। এখনো চীনের মূল ভুখণ্ডে নাগরিকদের হংকং- এ প্রবেশ করার প্রক্রিয়া জটিল। কিন্তু ১ জুলাই ২০০৩ সাল থেকে ব্যক্তিগত ভিসা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং এর ফলে কেবল গত বছর মূল চীনা ভূখণ্ড থেকে ১০ লক্ষ ৪০ হাজার নাগরিক হংকং-এ ভ্রমণ করেছে। কিন্তু গত বছর ৪০ হাজার সন্তান জন্মদাতা পর্যটক-এর আগমন ঘটে, যা আগত মোট পর্যটকের তুলনায় সামান্য।

এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ফেসবুক ব্যবহারকারী এডুইউন চৌ বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে, নীতির ফাঁক দিয়ে হংকং-এর নাগরিকত্ব সহ প্রসূতি সেবা বিক্রয় করার নিন্দা জানিয়েছে। সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য আগত বেশীর ভাগ চীনের পর্যটকরা বেসরকারি হাসপাতালের যথাযথ অগ্রিম বুকিং নিয়ে হংকং-এ হাজির হয়:

因為實情是,那3萬多個,佔96%的雙非個案,全部都是有政府認可的預約。即是,他們都是經政府人口/商業政策許可之下入境的,In the name of 「發展醫療產業」。……簡單來說,販賣居港權,才是要堵塞的漏洞。

বাস্তবতা হচ্ছে, মূল চীনা ভূখণ্ডের ৩০,০০০ সন্তানসম্ভবা মা ইতোমধ্যে প্রসূতি বিভাগে আসনের জন্য অগ্রিম ভাড়া প্রদান করে রেখেছে, আর তারা তা করেছে সরকারের প্রদান করা সুযোগ গ্রহণ করে। যার মানে হচ্ছে তারা বিদ্যমান নীতির আওতায় “চিকিৎসা শিল্পে উন্নয়নের নামে” বৈধ ভাবে হংকং-এ প্রবেশ করতে পারে। খুব সাধারণ ভাবে বলতে গেলে তারা নিজেদের অধিকার বিক্রি করে দিচ্ছে। এবং এই [সরকারের] এই ত্রুটি বন্ধ করতে হবে।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু সামাজিক এবং রাজনৈতিক দল সাংবিধানিক সংশোধনের আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে মূল যে আইন তা সংশোধন করার জন্য ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটিতে উপস্থাপন করতে হলে, তার জন্য হংকং আইন সভার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য এবং হংকং পিপলস কংগ্রেস (এনপিএ)-এর ডেপুটিদের দুই-তৃতীয়াংশের অনুমোদনের প্রয়োজন। দৃশ্যত এটা আরেকটা অসম্ভব কার্য।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .