মরোক্কোঃ ভিডিওতে বাদশাহকে অপমান করার কারণে ছাত্রের জেল

এই প্রবন্ধটি মরোক্কো বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।
সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২-এ মরোক্কো তাজা শহরের এক আদালত ইউটিউবে পোস্ট করা এক ভিডিওতে [আরবী ভাষায়] বাদশাহকে সমালোচনা করার দায়ে ২৪ বছর বয়স্ক ছাত্র আবদেল সামাদ হাইদুরকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ১,২০০ ডলার জরিমানা করে। সরকারী রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা [ফারসী ভাষায়] –এর সূত্র মতে জনাব. হাইদুরকে “ জাতীর পবিত্র ভাবমূর্তিতে আঘাত করার” দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মরোক্কোর একটি সংবাদপত্র বিষয়ক ওয়েবসাইট-এর সূত্র মতে জনাব হাইদুর শুনানির সময় আইনগত কোন সহায়তা পায়নি এবং আদালত তাকে মরোক্কোর আইন অনুসারে নিজেকে রক্ষার জন্য আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়নি। মরোক্কোর আইন অনুসারে,বাদশাহ সকল সমালোচনার উপরে, কিন্তু মরোক্কোর আইন সংবিধান (২৫ তম অনুচ্ছেদ)-একই সাথে” সকল প্রকারে চিন্তার, মত এবং অভিব্যক্তি প্রকাশের স্বাধীনতা” প্রদান করে।

চার মিনিটের এই ভিডিও, যার কারণে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেটি জানুয়ারি মাসের শুরুতে পোস্ট করা হয়। মূলত তাজা নামক শহরের এক সপ্তাহ ধরে চলা সামাজিক অস্থিরতা এবং বেকারদের এক ধর্মঘটের সময় বিক্ষোভকারীদের সাথে দাঙ্গা পুলিশের ভয়াবহ সংঘর্ষের সময় তা পোস্ট করা হয়। এই ভিডিওতে জনাব হাইদুরকে রাস্তার একদল লোকের সাথে কথা বলতে দেখা যায়, যারা বাদশাহ এবং তার সহকারীদের কঠোর সমালোচনা করছে। (ভিডিও পোস্ট করেছে জাওয়ালি ৬৬):

রাজধানী রাবাতের এক আদালত, ফেসবুকে বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ-এর ব্যঙ্গাত্মক ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করার ফলে রাজকীয় অপমান (লে ম্যাজেস্টিক) নামক আইনে ১৮ বছরের যুবককে আদালত অভিযুক্ত করার আরেক ঘটনার সপ্তাহের মধ্যে, এই রায়ের ঘটনা ঘটল

জনাব হাইদুর-এর সাজার সংবাদ সামাজিক প্রচার মাধ্যমে প্রচণ্ড কয়েকটি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
রাস্তা বাস্তা টুইট করেছে:

@বাস্তা:কেবল একটা চিন্তা মাত্র, মরোক্কোয় স্রষ্টার নামে নিন্দা করলেও কারো জেল হয় না, কিন্তু বাদশাহ-এর নামে নিন্দা করলে হয়: তিন বছরের জেল। কোন উপসংহার? #এইচআর# আরবস্প্রিং

সামিয়া এরাজ্জুকি টুইট করেছে:

@চারাকোয়াইয়া:যখন থেকে নতুন সংবিধান এবং নির্বাচন হয়েছে, তারপর থেকে কেউ শব্দ দিয়ে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করার কারণে কতজন লোক জেলে গেছে, আমি তা গণনা করতে অক্ষম।

বারিট্টো টুইট করেছে:

@বারিট্টো_এসবি: , কেবল নিজেদের মতামত প্রকাশ করার দায়ে যতজন লোক জেলে গেছে, তাতে আমাদের উপলব্ধি করা উচিত যে আদতে কিছুই পাল্টায়নি। #মরোক্কো#মারোক

টেকসই প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও মরক্কোর বেকারত্বের হার অনেক বেশী, বিশেষ করে তরুণদের মাঝে, যাদের মধ্যে এক চতুর্থাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী চাকুরি পেতে অসমর্থ হয়।

মরোক্কোর অনেক শহরে এখন প্রায় প্রতিদিন বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে যা প্রায়শই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত হয়, যারা সরকারী চাকুরিতে নিজেদের দেখতে চায়। গত মাসে রাজধানী রাবাতে চারজন প্রতিবাদকারী নিজেদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়, এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু ঘটে।

কিন্তু তাজা নামক শহরে সামাজিক অস্থিরতা প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। শহরে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভকারীদের সাথে দাঙ্গা পুলিশের সংঘর্ষ ঘটেছে। ১ ফেব্রুয়ারিতে তা চরম অবস্থায় পৌঁছে, সেদিন পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালায় এবং বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে।

স্থানীয় সংবাদপত্র জানাচ্ছে যে মঙ্গলবার-এ, তাজা শহরের ১৭ জন নাগরিককে সরকারী সম্পত্তি ধবংস এবং ক্ষতি সাধনের জন্য সর্বোচ্চ আট মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

এই প্রবন্ধটি মরোক্কো বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .