ফিলিপাইনসঃ শপিং মল করার জন্য গাছ সরিয়ে নেবার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

উত্তর ফিলিপাইনের এসএম সিটি বাগুইও শপিং মলের পরিকল্পনা সফল হলে ১০০ টির মত বৃক্ষকে সরিয়ে ফেলতে হবে, মূলত শপিং মলের জন্য একটি গাড়ি রাখার স্থান এবং বিনোদন এলাকা তৈরি করার জন্য এই সব বৃক্ষকে অপসারণ করতে হবে। এই সংবাদে সচেতন নাগরিক সমাজ এবং বিভিন্ন দাবী দাওয়া আদায়কারী কারণ–সংক্রান্ত (কজ-অরিয়েন্টেড) দল প্রচণ্ড প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। এসএম নামক এলাকাটি ফিলিপাইনসের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ীদের এলাকা।

গত ২০ জানুয়ারিতে হাজার হাজার মানুষ বাগুইও সিটির রাস্তায় এক শোভাযাত্রায় অংশ নেয়, যার উদ্দেশ্য ছিল বৃক্ষসমূহকে রক্ষা করা এবং জনতাকে এসএমসিটি বাগুইওকে বয়কট করার আহ্বান জানানো। #প্রটেক্টবাগুইওট্রি ( বাগুইও সিটি নামক এলাকার বৃক্ষসমূহ রক্ষা কর) নামক হ্যাশট্যাগ সেদিন দেশটির টুইটারে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়

“আমাকে দাঙ্গার মাঝখানে নিয়ে যাও”, জনি মিচেল এর গানে ধুয়া তুলি, “তারা গাড়ি রাখার জায়গা তৈরির জন্য এক স্বর্গকে নষ্ট (পাকা) করল”। ভদ্রমহিলার এই বিষয়ের পেছনে লেগে থাকার কারণ:

অবশেষে, মনে হল যে এই পর্বতের পুরো ইতিহাসের বিষয়টি হচ্ছে গাছ উপড়ে ফেলা এবং এক জায়গা থেকে সরিয়ে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া। কানেকানেওয়া, ইগ্রোটস, এবং ইফুগাও নামক আদিবাসীদের শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে সরিয়ে নেওয়া হল এবং তারপর তাদের সরিয়ে আরেকস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন এদের মধ্যে অনেককে, আবার নতুন করে বেঙ্গেয়েট-এর অন্য এলাকায় চলে যেতে হবে।

এই সমস্ত জনতা, যে কোন এসএমবাগুইও, ৭-১১ অথবা সেশন রোডের ম্যাকডোনাল্ড –এর চেয়ে, ওই সমস্ত গাছের মতই পুরোনো। কিন্তু বাণিজ্যকরণ, সব সময়ই শক্তিশালী, যেমনটা এই গাড়ি রাখার জায়গার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। এই বিষয়টি, তাদের জায়গা থেকে উৎখাত বা অন্য এলাকায় সরিয়ে দেবার ক্ষেত্রে যথেষ্ট, যারা উক্ত এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করছে অথবা হয়ত অনেক বেশী সেই এলাকার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসবাস করছে।

Protest in front of SM Baguio. Photo from @KrissyAngela

এসএমবাগুইওর সামনে এক প্রতিবাদ। ছবি @ ক্রিসিএ্যাঞ্জেলার থেকে নেওয়া

এ মমি হু ট্রাইক লিভিং লাইফ টু দি ফুলেস্ট নামক ব্লগার ওয়াল-ই নামক পরিবেশ বান্ধব থ্রি-ডি এ্যানিমেশন চলচ্চিত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত। তিনি গাছ উপড়ে ফেলা এবং সেগুলোকে সরিয়ে নেওয়া এবং কেটে ফেলার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য পার্থক্য নির্দেশ করছেনঃ

প্রতিশ্রুতি প্রদান করা ভাল, যদি না এর আগে সরিয়ে ফেলা গাছের সম্বন্ধে না জেনে থাকেন, যেগুলো মূলত পৃথিবীর বনাঞ্চল ( আর্থ বাল্ড- মূলত পাইন জাতীয় বৃক্ষ সমূহের বন) । ডঃ মিচেল বেঙ্গাওয়ানা (যিনি কোর্ডেলিয়ার ইকোলজিকাল সেন্টার-পাইন ট্রি-এর নির্বাহী পরিচালক) তিনি বলেন, ৪৯৭ টি পাইন গাছ, যেগুলো ১৯৯৪ সালে ক্যাম্প জন হে ডেভলাপমেন্ট কোর্পোরেশন-এর উদ্যোগে বনায়নের জন্য অন্য জায়গা থেকে এখানে এনে নতুন করে লাগানো হয়, তার মাত্র ২০ শতাংশ টিকে যায় এবং যে সমস্ত গাছ এখনো মারা যায়নি, সেগুলোর মাঝেও ক্রমশ প্রাণহীন হয়ে যাবার লক্ষণ ফুটে উঠছে। তার মানে, সেখান থেকে যে ১৮৭টি গাছকে সরিয়ে নতুন জায়গায় আবার স্থাপন করা হবে, তার মাত্র ৩০ শতাংশ টিকে যেতে পারে।

বাগুইও সিটির বাসিন্দারা গণ পরামর্শের অভাবের ঘটনায় জোরে শোরে আওয়াজ তুলেছে এবং সুপার মলকে গাছ সরিয়ে ফেলার অনুমতি দেওয়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেছে। ছাত্র লেখকরা, এই বিশাল ব্যবসায় সরকারে সম্মতির বিষয়টির সমালোচনা করেছে :

সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, বর্তমান প্রশাসন এই একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আগ্রহকে রক্ষা করতে অস্বীকার করেছে। দেখা যাচ্ছে, শহরের কর্মকর্তাদের মত রাষ্ট্রপতি একুইনোও এই পরিকল্পনা বাতিলের কোন লক্ষণ প্রকাশ করেননি এবং ডিইএনআর এই প্রকল্পের অনুমোদন প্রদান করেছে।

ব্লগ স্ট্রেচিং দি সিম্বলিক উপসংহার টানেন এভাবে যে, যে এই বিষয়টি অনিবার্য ভাবে “বিশ্ব পুঁজিবাদের বিপক্ষে”:

এটা কেবল গাছের জন্য লড়াই বা এসএম কর্পোরেশন বা তাদের বাণিজ্যিক লোভের বিরুদ্ধে লড়াই নয়; এটা আমাদের জনতার লড়াই , বাগুইও শহর এবং দেশের জন্য। এক বিশাল সিস্টেমের বিরুদ্ধে, যেখানে গাছ কাটার এ রকম এক প্রকল্প, সেই সিস্টেমের অজস্র বাজে কাজের একটি। আমাদের এই লড়াই এক সিস্টেমের বিরুদ্ধে, যেখানে মাত্র কয়েকজনের সুবিধার জন্য এবং অনেকের ক্ষতির বিনিময়ে এই ধরণের কার্য সমাধা করা হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .