ইরানঃ ইসলামকে অপমান করার জন্য ব্লগারকে হয়ত মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হতে পারে

ইরানের ৫০ বছর বয়স্ক এক ব্লগার, মোহাম্মদ রেজা পোর সাজারি (ওরফে সিয়ামাক মেহের), ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক রাসুলকে অপমান করার” এবং “ সৃষ্টিকর্তার সাথে শত্রুতার” দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ২১ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে অনুষ্ঠিত তার বিচার কার্য, মাত্র ১৫ মিনিট স্থায়ী।

তাঁর কন্য মিত্রা পোর সারজারি, ডয়েচে ভেলে ফারসীকে জানিয়েছেন যে, তার পিতা বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে তিনি নিজের পক্ষে সাফাইয়ে কিছু বলবেন না, কারণ, তার আইনজীবী, জুরী বোর্ডের সদস্য, এমনকি প্রচার মাধ্যমের কোন কর্মী উপস্থিত ছিল না। আদালতে তিনি বলেন, “একদিন গাদ্দাফির মত, আপনারাও গর্তে গিয়ে লুকাবেন”। এর উত্তরে বিচারকরা বলেন, “এতে কিছু আসে যায় না, যখন আমরা এই আসনে অসীন, এবং আপনি ও আপনার মত লোকেরা, তাদের কৃতকর্মের সাজা ভোগ করবেন”।

সেপ্টেম্বর ২০১০-এ সিয়ামাক মেহেরকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর ব্লগ ইরান ল্যান্ডস রিপোর্ট-এ ইসলামিক প্রজাতন্ত্র এবং ইসলামের শক্তিশালী ভাষায় সমালোচনা করা হত।

৮ সেপ্টম্বর ২০১১ –এ তার করা সর্বশেষ পোস্ট-এ তিনি বলেছিলেন যে শিয়া ধর্মীয় নেতাদের তিনি মাফিয়া দল মনে করেন, যারা ১৯৭৯ সাল [ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের সময় থেকে] ইরানের প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করছে।

এখানে একটি ভিডিওতে, শৃঙ্খলাবদ্ধ সিয়ামাক মেহের-কে দেখা যাচ্ছে, দৃশ্যত আদালতের পথে যাবার সময় এই ভিডিও ধারণ করা হয়:

ইরানের ব্লগার আজারমেহের এই ভিডিও সম্বন্ধে লিখেছে। সে বলছে:

কাকে আপনি শৃঙ্খলাবদ্ধ অবস্থায় আশা করেন, পায়ে এবং হাতে যার শিকল, দৃশ্যত যখন তাকে বিপ্লবী বাহিনীর আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যার প্রহরায় রয়েছে বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী? এক বিপজ্জনক অপরাধী? বাস্তবতা হচ্ছে, হাতে ও পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় যে মানুষটিকে আপনারা নীচের ভিডিও ফুটেজে দেখছেন, তিনি একজন ভদ্রলোক এবং নিপাট মানুষ, জেলখানায় তাঁর উপর সংঘঠিত অত্যাচারের ফলে তার একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে।

মেহদি রাউদ লিখেছে [ফারসী ভাষায়]:

ব্লগারকে ব্লগে তার চিন্তাধারা প্রকাশের জন্য মধ্যযুগীয় আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর পরিবারকে আদালতে উপস্থিত থাকার অনুমতি প্রদান করা হয়নি… একজন রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে হয়ত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হতে পারে।

ফ্রেব্রুয়ারি, ২০১১-এ, বাজাফেরিনজাদে, সিয়ামাক মাহের-এর একটি চিঠি প্রকাশ করেছে, যেখানে তিনি বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে কাজ করার এবং শাসকদের অপমান করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এছাড়াও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে সালমান রুশদীর ( এক বৃটিশ –ভারতীয় লেখক, যার বিরুদ্ধে আয়াতুল্লাহ খোমিনী তাঁর বিখ্যাত ফাতোয়া প্রদান করেন) মত ইসলামের পবিত্রতাকে অপমান করছে।

কন্যাকে লেখা এক চিঠিতে সিয়ামাক মেহের লিখেছেন:

প্রিয় মিত্রা,
স্মরণ রেখ আমি কেবল এক বন্দী নই, আমি একটা জাতিসত্ত্বাও বটে। এমন এক জাতিসত্ত্বা যার শেকড় ইরানীদের অন্তরের গভীরে প্রোথিত। আর আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে অবশেষে এই দুষ্ট, মানবতাহীন ও বাক স্বাধীনতাহীন এবং প্রাণহীন উৎসের চক্রের হাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। আর এই জন্য আমার শরীরের একটি অঙ্গ নষ্ট হয়ে যাবার বিষয়টিকে কখনো জাতির বিকাশের ধ্বংসের সাথে এক করে দেখ না।

সাম্প্রতিক সময়ে ইরান সরকার বেশ কয়েকজন ব্লগারকে কারগারে প্রেরণ করেছে। ২০১০ সালে ব্লগার ওমিদ রেজা মীরসায়াফির মৃত্যু, আমাদের প্রদর্শন করছে যে, যত একজন ব্লগার নিঃসঙ্গ এবং একটি যোগাযোগ ব্যবস্থায় অধিকার বঞ্চিত হতে থাকে, ততই সে বিপদের মুখে পড়ে যায়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .