তিউনিশিয়াঃ নাগরিক প্রচার মাধ্যমের ছবিতে ২০১১ সাল

এই পোস্টটি তিউনিশিয়া বিপ্লব ২০১১ –এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

২০১১ সালটি ছিল তিউনিশিয়ার জন্য এক অবিস্মরণীয় বছর- এক ঐতিহাসিক বছর যা তিউনিশিয়ার প্রতিটি নাগরিকের স্মৃতিতে গ্রথিত থাকবে। যার শুরুটা হয়েছিল প্রায় বিস্মৃত এবং প্রান্তিক এক প্রদেশের এক এক স্বতঃস্ফূর্ত হতাশার বাস্তবতায়, যা পরে এক জনপ্রিয় গণ জাগরণে পরিণত হয়ে সারা দেশকে এক গণজোয়ারে সৃষ্টির মাধ্যমে দেশটির ২৩ বছরের শাসক জিনে এল আবেদিন বেন আলীর শাসনকে উৎখাত করে ফেলে এবং পুরো এলাকার চেহারা পাল্টে ফেলে, একটি আরব রাষ্ট্রে বিপ্লব জ্বরে আক্রান্ত হবার মাধ্যমে।
বছরের এক রক্তাক্ত প্রারম্ভ

Dead young Tunisian man in Tala (central-west of Tunisia), January 10, 2011. Photo from Nawaat.

তালায় মৃত এক তিউনিশীয় নাগরিক ( মধ্য-পশ্চিম তিউনিশিয়ায় অবস্থিত), ১০ জানুয়ারি, ২০১১। ছবি নাওয়াত-এর।

বছরটার শুরু হয়েছিল রক্তপাত এবং সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে। বিক্ষোভকারীদের চাকুরির স্বাধীনতা এবং জাতীয় মর্যাদার দাবীর প্রতি কর্তৃপক্ষ সাড়া দিয়েছিল তাজা বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে, ৩০০ জন বিক্ষোভকারীকে নিহত এবং আরো অনেককে আহত করে।

যেদিন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সৌদি আরবে পালিয়ে গেলেন

Photo by Talel Nacer, copyright Demotix (14/01/2011).

ছবি তালেল নাচের-এর, কপিরাইট ডেমোটিক্স-এর (১৪/০১/ ২০১১)

১৪ জানুযারি, ২০১১ তারিখে দেশটির রাজধানী তিউনিশের স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনের সামনে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমাবেত হয়। এই সমস্ত বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে থাকে; “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সন্ত্রাসী মন্ত্রণালয়” এবং “বেন আলি কেটে পড়” ( বেন আলি দেগেদে)। । এই বিক্ষোভ যা শান্তিপূর্ণ ভাবে শুরু হয়, তা শেষ হয় পুলিশের ভায়াবহ হামলার মধ্যে দিয়ে, যারা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছিল। পরে একই দিনে বেন আলি সৌদি আরবের জেদ্দায় পালিয়ে যায়।

Police use tear gas to disperse protesters outside the Interior Ministry on January 14. Photo by Wassim Ben Rhouma via Flickr (CC BY-NC-ND 2.0).

১৪ জানুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভরত জনতার প্রতি পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করছে। ছবি ফ্লিকারের ওয়াসিম বেন রোহমার-এর ( সিসি বাই এনসি–এনডি ২.০)

স্বৈরশাসক চলে গেছে, কিন্তু স্বৈরতন্ত্রের কি হবে?

Protest against interim government presided by Mohamed Ghannouchi, a close ally of Ben Ali, on February 25. One day later, Ghannouchi resigned. Photo by Kahled Nciri.

অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান মোহাম্মদ ঘানুচির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ঘানুচি, বেন আলীর এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। এর একদিন পর ২৫ ফ্রেব্রুয়ারিতে ঘানুচি পদত্যাগ করে। ছবি খালেদ নাচিরি-এর।

তিউনিশিয়া, অতীতের সাথে তার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য অধীর হয়ে ছিল এবং বেন আলীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরেও গণতন্ত্রের জন্য তাদের আন্দোলন থেমে যায়নি। সংসদ ভবন যেখানে অবস্থিত ছিল, সেই কাসবা স্কোয়ার ছিল অবস্থান ধর্মঘট এবং বিক্ষোভের প্রাণকেন্দ্র, যা সংসদের এই অতি ঘৃণিত প্রাক্তন শাসক দলকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার উপায় বের করা উচিত ছিল ( এই দলটিকে বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে)। সেই দলটির নাম ছিল আরসিডি ( ফরাসী ভাষায় এর নাম ছিল লে রাজম্বলেমেন্ত, কনস্টিটিউশনালে ডেমোক্রেটিক, নামের আদ্যক্ষর নিয়ে তাকে আরসিডি নামে ডাকা হত, এর অর্থ সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক শোভাযাত্রাকারীর দল)। দূর্নীতি এবং দমনের সাথে সে দলটি যুক্ত ছিল।

প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন

Voters lining up to vote. Photo by Erik (@kefteji).

ভোট দেবার জন্য ভোটারদের লম্বা লাইন। ছবি এরিক-এর (@কেফেতেজি)।

২৩ অক্টোবর, ২০১১ দিবসটি ছিল তিউনিশিয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, নিজ নিজ সংসদীয় প্রতিনিধি নির্বাচন করার জন্য ভোটাররা লম্বা সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। এই নির্বাচন ছিল তথাকথিত আরব বসন্তের পর এক মুক্ত এবং স্বাধীন নির্বাচন।

ইসলামপন্থী দলের উত্থান

Banner reads: "Equality and justice for all Tunisians". November 21, 2011, in a protest outside the assembly. Photo by Soukaina W Ajbetni Rouhi via Facebook.

ব্যানারের শিরোনাম: তিউনিশিয়ার সকল নাগরিকদের জন্য সাম্য এবং ন্যায়বিচার” ২১ নভেম্বর, ২০১১-এ সংসদ ভবনের সামনে এক বিক্ষোভে এই ব্যানার বহন করা হয়। ছবি সোউকাইনা ডাব্লিউ আজবেতনি রুহির ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া

ইসলামপন্থী দল এননাহাদা প্রাপ্ত ভোটের ৪১ শতাংশ লাভ করে এবং তারা সংসদের সর্বমোট ২১৭ টি আসনের মধ্যে ৮৯টি আসন লাভ করে। আরব অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা একটি রাষ্ট্র হিসেবে, দেশটির উদারনৈতিকদের মতে, তিউনিশয়ায় ইসলামপন্থীদের উত্থান, দেশটির ধর্ম নিরপেক্ষ মূল্যবোধ এবং নারী অধিকারে জন্য এক হুমকি।

মনচেফ মারজোকি– প্রজাতন্ত্রের নতুন রাষ্ট্রপতি।

Moncef Marzouki, new president of Tunisia. Image by Hamideddine Bouali, copyright Demotix (13/12/11)

মনচেফ মারজোকি, তিউনিশিয়ার নতুন রাষ্ট্রপতি। ছবি হামিদদ্দেদিন বোয়ালি, কপিরাইট ডেমোটিক্সের (১৩/১২/২০১১)।

১২ ডিসেম্বর, ২০১১-এ জাতীয় সংসদ, মানবাধিকার কর্মী মনচেফ মারজোকিকে প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করে। যিনি এর আগে বেন আলীর শাসনের সময়, প্রথম কারাগারে এবং পরে নির্বাসনে কাটিয়েছে।

বছর যত শেষের দিকে গড়িয়ে আসতে, গণতন্ত্র এবং চাকুরীর জন্য প্রতিবাদ এবং অবস্থান ঘর্মঘট বাড়তে থাকে, এবং তিউনিশিয়ার ভাবগম্ভীর অবস্থা চলতে থাকে, যখন উত্তপ্ত বিতর্ক জাতীয় সংসদে শুরু হয়, এবং (এননাহাদা দলের ) হামাদি জেবালি অর্ন্তবর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে।
২০১২ সালে তিউনিশিয়ার ঘটনাবলী জানতে আমাদের সাথে থাকুন।

এই পোস্টটি তিউনিশিয়া বিপ্লব ২০১১ –এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .