এই প্রবন্ধটি মিশর বিপ্লব-২০১১ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।
যখন বিপ্লব পরবর্তী মিশরে ইসলামপন্থীদের উত্থান দেখা দিচ্ছে, তখন তরুণ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং নারীদের মাঝে ধর্মীয় পন্থায় দমনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি মিশরের একদল নারী ফেসবুকে আরবীতে এক প্রচারণা চালু করেছে, যার নাম ইকোইং স্ক্রিম (আর্তনাদের প্রতিধ্বনি)। এতে তারা, তাদের সমাজে যৌনতা এবং দমনের মত বিষয় নির্দেশ করছে, যা হয়ত ইসলামপন্থী দলগুলোর ক্ষমতায় আসার আগমনে বেড়ে যেতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে আগামীতে মিশরে ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে। একই সাথে এই দল একটি কার্যক্রমের সূত্রপাত করেছে যার নাম, “নারীদের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে হিজাব (অবগুণ্ঠন) ধারণ” (আরবী ভাষায়)। তারা নিজেদের কার্যক্রমের বিষয়ে বলছে এভাবে:
এই দলটি তাদের এই প্রচারণার পাতায় হিজাব পড়া কয়েকজন পুরুষের ছবি পোস্ট করেছে, এর মধ্যে একটি ছবি দুই বছর আগে ইরানের এক অনলাইন এক প্রচারণা থেকে নেওয়া। ইরানের এই প্রচারণা এক ছাত্রের সমর্থনে শুরু হয়েছিল, যখন কর্তৃপক্ষ দাবী করে যে উক্ত ছাত্র তেহরান থেকে পালানোর সময় মেয়েদের পোশাক (বোরখা) পরেছিল। তিউনিশিয়ার নেট নাগরিকরাও এই কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করে এবং তারা হাস্যরসের মাধ্যমে এই পাতায় নানা ধরনের মন্তব্য করে। সেখানে এননাহাদ নামক দল এবং দলটির প্রধান রাচেদ ঘানোচি সম্বন্ধে ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য করে, যে দলটি কিনা গত মাসে অনুষ্ঠিত তিউনিশিয়ার সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে।
ঘানোচির প্রতি সমালোচনা মূলক মন্তব্য করে আবদেলহাদি বেন সেঘির এই কার্যক্রমের উপর মন্তব্য করেছেন [ফারসী ভাষায়] :
je suis pour le droit des frérots de porter le hijab.solidarité avec ghanoucha qui préfère le tchadri
ইনেস বেন হামিদা এই প্রচারণার বিষয়ে ঠিক আশাবাদী নন, তিনি তার মন্তব্যে এই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন [ফরাসী ভাষায়] :
Les hommes est ce que vous pouvez mettre le voile pour nous je défie que vous seriez minorité minimine malheureusement 🙁
ফেসবুক ব্যবহারকারী এমাদ বাস্তা এই কার্যক্রমের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে এর পাতায় লিখেছে:
আমি এর সাথে একমত হতে পারছি না, মেয়েরা নিজেদের মুখ ঢেকে রাখবে না, মেয়েরা কোন ফালতু কিছু নয়, পুরুষের মত তাদের সমান অধিকার রয়েছে, তাদের যেন আর কোন অধিকারের প্রয়োজন নেই। এক সময় কেবল মানব প্রজাতির জন্য সন্তান জন্মদান করাই ছিল তাদের কাজ, তারা বিশ্বের রাণী। যে সমস্ত নাগরিকরা নারীদের ঢেকে রাখার কথা বলে, তা এক ধরনের বৈষম্য এবং ঘৃণার কাজ, আর তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। যদি মেয়েরা অসম্মানের বস্তু হয়, তাহলে কেন তাদের এ ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তাদের এই ভাবে ঢেকে রাখার ধারণা কিছু পুরুষের চিন্তা থেকে এসেছে। মেয়েদের মাথার চুল হচ্ছে তার সৌন্দর্য, তা কোন আওরাহ নয়। যে সমস্ত পুরুষরা মেয়েদের ঢেকে রাখতে চায়, তাদের আসলে তাদের কামনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, এবং সমাজকে দূষিত করার দায়ে তাদেরই বিচার হওয়া উচিত।
لا للرجعية والتطرف (পশ্চাৎপদতা এবং উগ্রবাদকে না বলুন) নামক এক মিশরীয় টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছে [আরবী ভাষায়], সে রাজনীতির নামে ধর্মের অপব্যবহারের বিপক্ষে:
আরেকজন মিশরীয় নাগরিক, আমরে এল আবিয়াদ, তাঁর এক মন্তব্য লিখেছেন যে, নারীর ক্ষমতায়নে আরব বিপ্লবের ভুমিকা রাখা উচিত:
আরব বিপ্লব কেবল স্বৈরাচারের উৎখাতের জন্য নয়। গণতন্ত্র মানসিক চেতনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়। আমাদের সেই সমস্ত ট্যাবু বা নিষিদ্ধ চিন্তা সমূহকে উৎখাত করতে হবে, যা সমাজের সৃষ্টিশীল সম্ভাবনাকে পশ্চাৎপদে ঠেলে দেয়, এগুলো হচ্ছে পিতৃতন্ত্র, ধর্মকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা, যৌন চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকা। হিজাব হচ্ছে প্রাচীন এক সেমেটিক প্রথা- এক সময়ে অজস্র সংস্কৃতি যার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। যদিও মনে হচ্ছিল ২০ শতাব্দীতে এটি প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাবার পথে, কিন্তু তা এখনো টিকে আছে এবং আমাদের এই সময়ে তা সমগ্র আরব বিশ্বে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছে। এটি পরিষ্কার এক নির্দেশক যে বিপ্লবকে সংস্কৃতিক এবং মানসিক পর্যায়ে সাধন করা অতি জরুরী।
একটি মাত্র যে পুরুষ এখানে ছবি পোস্ট করেছে তার নাম মাগদি আবদেলরাহিম। সে জানাচ্ছে যে সে এই কার্যক্রমের সাথে একাত্মতা প্রদর্শন করছে:
সা নেব এই বিষয়ে আলোচনা করছেন [আরবী ভাষায়] যে, হিজাব ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা, কি না:
এই প্রবন্ধটি মিশর বিপ্লব-২০১১ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।