সৌদি আরব: নারী গাড়ি চালককে শাস্তি হিসেবে প্রদান করা ১০ বার চাবুক মারার রায় প্রদানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

ছয় মাস আগে সৌদি আরবের নাগরিক সাইমা জাসতানিয়া গ্রেফতার হয়। মূলত জেদ্দার একটি রাস্তায় নিজের গাড়ি চালানোর অপরাধে তাকে আটক করা হয়। সৌদি আরবের মেয়েদের জন্য গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ, এই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করার কারণে সেপ্টেম্বর মাসে সাইমাকে শাস্তি হিসেবে ১০ বার চাবুক মারা মত শাস্তি প্রদানের রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কয়েক দিন পরে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে, স্বয়ং সৌদি বাদশাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে।

যখন তাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় হয়, তখন সে জানায়, সে গাড়ি চালাতে বাধ্য হয়েছিল, কারণ তার গণ পরিবহণ যাওয়ার বাস্তবতা নেই এবং তাঁর নিজস্ব ড্রাইভার রাখার সামর্থ নেই, আর তাকে সেই অবস্থায় হাসপাতালে যেতে হত। গত ৪৮ ঘন্টায় সৌদি টুইটারকারীরা নিশ্চিত করেছে যে, জাসতানিয়ার শাস্তি বহাল রয়েছে এবং সে এই শাস্তির বিরুদ্ধে দরখাস্ত করার জন্য সে ৩০ দিন সময় পাবে। সৌদি আরবের অন্য নারী গাড়ি চালক মানাল এল শারিফ এবং নাজলা হারিরি মত, অনলাইনে পোস্ট করার জন্য জাসতানইয়া তার নিজের গাড়ি চালনার ভিডিও ধারণ করেনি।

সৌদি নাগরিকদের কাছে যে বিষয়টি সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে এসেছে সেটি হছে, ফাঁস হয়ে যাওয়া আল ওয়াতানা নামক সংবাদপত্রকে পাঠানো আদালতের নথি। এই নথিতে জানা যাচ্ছে, দু মাস আগে দুই নারী সাংবাদিককে জাসতানিয়ার এই শাস্তির বিরুদ্ধে প্রবন্ধ লেখার দায়ে তাদের আদালতে হাজির হবার জন্য সমন জারি করা হয়। এই দুই নারী সাংবাদিক হচ্ছে নাসরিন নাজম আল দিন এবং সামইয়া এল এসসা। এখানে একটি লিঙ্ক আছে যেখানে তারা এই চাবুক মারার রায় সম্বন্ধে লিখেছিল, যেখানে তারা প্রথম দুই অক্ষরে জাসতানিয়ার নামে উল্লেখ করেছিল।

সৌদি নারীদের ‘ওমেন টু ড্রাইভ’ নামক প্রচারণার জন্য এমিরাতি ওয়াফা আল মারজুকির তৈরি করা এক পোস্টার চিত্র। এর শিরোনাম ‘আমারও অধিকার রয়েছে গাড়ি চালানোর।’

টুইটারে, সৌদি নাগরিক ফাহাদ (@সলিদাস_ফাহাদ) এই সংবাদে ক্ষুব্ধ, সে টুইট করেছে:

@সলিদাস_ ফাহাদ: শুধুমাত্র গাড়ি চালানোর জন্য যদি একজন নারীকে চাবুক মারার রায় প্রদান করা হয়, তাহলে কল্পনা করুন, যদি সে তার চিন্তাকে জোরালো কণ্ঠে প্রকাশ করে তাহলে কি ঘটতে পারে?

@সলিদাস_ফাহাদ : সৌদি নারী, যে আধুনিক, ধর্ম এবং পুরুষ প্রাধান্যের নামে তাকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা হবে! কারণ সে রাস্তায় গাড়ি চালিয়েছিল!

জেদ্দা থেকে নোয়া আল দাহারি (@এমএসনোহাআলদাহারী) আদালত কর্তৃক দুই নারী সাংবাদিকের প্রতি সমন জারী করার সংবাদ টুইট করেছেন। ভদ্রমহিলা লিখেছেন:

@এমএসনোহাআলদাহারী: #সাইমার বিরুদ্ধে #চাবুক মারার মত শাস্তি প্রদানের সংবাদ তুলে ধারার কারণে #সৌদি আরবের তথ্য মন্ত্রণালয় দুই নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সমন জারী করেছে।

সৌদি মানবাধিকার কর্মী ওয়ালিদ আবু আলখায়িরকে (@আবুলখায়ির) গত সেপ্টেম্বর মাসে আদালতে হাজির হতে হয়। এই দুই নারী কর্মীর বিরুদ্ধে আদালতের সমন জারীর সংবাদ ফাঁস করার কারনের তাকে এই নির্দেশ প্রদান করা হয়:

@আবুলখায়ির: সাইমার বিরুদ্ধে # চাবুক মারার মত শাস্তির সংবাদ প্রদানের কারণে #সৌদি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দুই নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সমন জারী করার নথি।http://twitpic.com/7dzqgi

রিয়াদ থেকে (@আনোয়ার৩৩) আনোয়ার নামক ভদ্রমহিলা সৌদি আরবের দুর্নীতিগ্রস্ত পদ্ধতি সমালোচনা করেছেন [আরবী ভাষায়]:

في السعودية فقط تجلد فتاة لأنها ركبت مركبتها لقصد حاجتها بينما سارقوا المليارات لأمانة جده في قصورهم معززين
আনোয়ার৩৩:কেবল সৌদি আরবেই জরুরী প্রয়োজনে নারীদের গাড়ি চালানোর জন্য চাবুক মারা হয়, এদিকে জেদ্দায় যারা কোটি কোটি টাকা চুরি করছে, তারা শ্রদ্ধার সাথে তাদের প্রাসাদে বাস করছে।

সৌদি-আমেরিকান টুইটারকারী, যার নাম (@আনা৩আরাবিয়া), তিনি যুবরাজ ওয়ালেদ বিন তালাল-এর স্ত্রী যুবরাজ্ঞী আমিরা-আল তাওয়েল-এর কথা উল্লেখ করেছেন। দুই মাস আগে আমিরা এই বলে টুইট করেছিলেন যে সাইমার শাস্তি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে:

@আনা৩আরাবিয়া:কাহিনীর সত্যতা অনুসন্ধান। এই ঘটনা সত্যি ছিল, নাকি ছিল না, আসলে কি বাদশাহ #সাইমার এই শাস্তির ক্ষেত্রে ক্ষমা ঘোষণা করেছিলে, আমিরাহ আল-তাওয়েল “ঝিঁঝিঁপোকা”।

ব্লগার মাজেদ এল এনিজি (@কিউমাজেদ) সৌদি আরবের আইনের সমালোচনা করেছেন [আরবী ভাষায়]:

يحق للمواطن أن يقرأ دستوراً صريحا بلائحة المسموح والممنوع بدلاً من الإعتماد على الحظ في تحديد نوع العقوبة التي سيواجهها
@কিউমাজেদ: যে কোন নাগরিকের অধিকার রয়েছে নিজের শাস্তির জন্য ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেঁড়ে না দিয়ে, সরাসরি সংবিধান পাঠ করার, যা কিনা তাকে এক সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রদান করবে যে, কোন কোন কাজ করা যাবে, কোন কোন কাজ করা যাবে না।

হালা খালাফও (@তাবাইস)) এক পরিবর্তন চায়, ভদ্রমহিলা লিখেছেন [আরবী ভাষায়]:

بعد صدور حكم الجلد على شيماء، أتسائل متى سيتم السماح لطلاب القانون بدخول السلك القضائي وعدم احتكاره على ذوي اللحى
@তাবাইস:সাইমাকে বেত্রাঘাত করা হবে এই সিদ্ধান্তের আমি বিস্মিত ভাবে অপেক্ষা করছি যে কখন তারা বিচারকের পদ বিশেষভাবে “দাড়িওয়ালাদের” দেওয়ার বদলে আইনের ছাত্ররা প্রদান করবে।

ফারাহ আল ইব্রাহিম (@ফারাহ_আলিইব্রাহিম)সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ভিত্তিক এক প্রমীলা টুইটার ব্যবহারকারী। তিনি লিখেছেন [আরবী ভাষায়]:

خلوها تضحي و تنجلد، يمكن جلدها يصحي فينا شي .. وما أبي أضيف أكثر أخاف انجلد انا بعد
@ফারাহ_আলিইব্রাহিম:আসুন আমরা সাইমাকে কোরবানি করি এবং তাকে চাবুক মারার মত শাস্তি পেতে দেই। হয়ত তার পিঠে পড়তে থাকা চাবুক আমাদের জাগিয়ে তুলবে……আমি আর কিছু লিখতে চাই না, যেহেতু এর চেয়ে বেশী কিছু লিখলে আমার পিঠেও চাবুক পড়তে পারে!

বেশ কিছু টুইটার ব্যবহারকারী, যাদের বেশীর ভাগই ছদ্মনামে টুইটার লিখে, তারা এই শাস্তির ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করেছে। তারা বলছে যে যারাই আইন লঙ্ঘন করবে, তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। অন্যরা এই সুযোগে “উদারনৈতিক” ব্যক্তিত্ব এবং যারা দেশটিতে সংস্কার করতে চায় তাদের বাঁশ দিতে চাইছে। এই টুইটার ব্যবহারকারী নারী একটিভিস্ট বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক কার্ড ব্যবহার করেছে [আরবী ভাষায়]:

منال الشريف اصولها مو سعوديه وشيماء كذلك الدليل ابي اشوف واسمع بنت حموله واصل وجذور سعوديه تسوق؟ كان جلدها ابوها قبل الحكومة
রো৭_আলেসালাম : মানাল আল শারিফ এবং সাইমা, কারো পূর্বপুরুষের আদিবাস সৌদি আরবে নয়। এর প্রমাণ হচ্ছে সৌদি বংশোদ্ভুত কোন মেয়ে গাড়ি চালাবে না, কারণ সে ক্ষেত্রে সরকার চাবুক মারার আগে তার পিতা তাকে চাবুক মারবে, এটাই হচ্ছে তার প্রমাণ যে উক্ত দুই নারী সৌদি বংশদ্ভূত নয়।

আবদুলাতিফ মোহাম্মদ (@আবলা৬ইফ) অভিযোগ করেছেন যে জাসতানিয়ার পক্ষে টুইট করা হচ্ছে। সে বলছে যে, সাইমার এই শাস্তি প্রাপ্য। [আরবী ভাষায়] :

ي هوو ي عالم أزعجتونا بشيماء حقتكم ذي هي خالفت القانون ولازم تتعاقب بسكم هياط و كلام فاضي
@আবলা৬ইফ:আপনারা, আপনাদের সাইমাকে নিয়ে আমার মধ্যে বিরক্তি উৎপাদন করছেন। সে আইন ভঙ্গ করেছে এবং তাকে শাস্তি পেতে হবে। এই ধরনের অর্থহীন প্রলাপ বন্ধ করুন।

সে এর সাথে যোগ করেছে:

عزيزتي البنت اذا تبغين تسوقين اطلعي برا السعوديه قسسسسم بالله مو ممنوع يعني عندك كل دول العالم هنا مافي سواقه أفهموا عااد
@আবলা৬ইফ: প্রিয় বালিকারা, যদি আপনাদের গাড়ি চালানোর এতই ইচ্ছে জাগে, তাহলে সৌদি আরব ত্যাগ করে সেই দেশে যান যেখানে এটা নিষিদ্ধ নয়। গাড়ি চলানোর জন্য সারা বিশ্ব পড়ে আছে, কিন্তু এখানে মেয়েদের গাড়ি চালানো নিষেধ, আপনারা কি তা উপলব্ধি করতে পরেছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .