বিশ্ব খাদ্য দিবস: ক্ষুধার যন্ত্রণার মাঝে বাস করা

woman selling food

নারী খাবার বিক্রি করছে এই ছবির কিছু অধিকার সংরক্ষিত ছবি #এলকো-এর


বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুসারে সারা বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ প্রতি রাতে অভুক্ত অবস্থায় বিছানায় যায় এবং ক্রমশ বাড়তে থাকা খাদ্যের দাম এই সংখ্যাটিকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। আজ বিশ্ব খাদ্য দিবসে (১৬ অক্টোবর ২০১১) আমরা সেই সমস্ত ক্ষুধার্ত পরিবার এবং তাদের কাহিনী তুলে ধরব।

হাঙ্গার ভিডিও প্রজেক্ট-এর জন্য ভিডিও ধারণ করার লক্ষ্যে ভারতের ভিডিও ভলান্টিয়ার নামক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে হাজির হয়েছে। তারা এই সব ভিডিওতে এই বিষয়টির উপর মনোযোগ প্রদান করেছে যে, কি ভাবে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশটির অনেক লোক এখনো অভুক্ত অবস্থায় বিছানায় যায়

 

বিশ্ব বিপর্যয় প্রতিবেদন-২০১১ (ওয়ার্ল্ড ডিজাস্টার রিপোর্ট-২০১১) উদ্বোধনের জন্য এই সমস্ত ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়েছিল। বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম, জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা, আন্তর্জাতিক রেডক্রস এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছিল। এই প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর বের করা, “যখন বিশ্ব সকলের জন্য যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন করছে তখন কেন সারা বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ প্রতি রাতে অভুক্ত অবস্থায় বিছানায় যায়”।

এই ১২ টি ভিডিওর ক্ষেত্রে যে বিষয়টি হৃদয়গ্রাহী, তা হচ্ছে এই সমস্ত ভিডিও যারা তৈরি করেছে তারা বাইরের কেউ নয়, সেই অভুক্ত সম্প্রদায়ের একজন। ভিডিও ভলান্টিয়ার প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জন্য এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি তৈরি করেছে। সংবাদ তৈরি এবং তা দেখানো, এই বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা, এবং যে সব সমস্যা তাদের এবং তাদের প্রতিবেশীদের উপর প্রভাব বিস্তার করে, এ সব বিষয় এই কর্মসূচির অর্ন্তভুক্ত।

যে সমস্ত সম্প্রদায়ের উপর ভিডিও নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনাসহ ১২ টি ভিডিওর সবকটি তাদের প্রকল্পের সাইটে যুক্ত করা হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় এই ভিডিও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের শিলাচরে ধারণ করা হয়েছে। এটি একটি প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদ সম্পন্ন কৃষি ভিত্তিক জেলা, যেখানে আদিবাসী প্রান্তিক সংখ্যালঘূ জনগোষ্ঠীর বসবাস। এই ভিডিওতে, এক পিতা তার কঠিন সময়ের কথা এবং সন্তানরা ক্ষুধার্ত জেনে ঘুমাতে যাবার মত অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেছেন।

ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের রাজ নন্দগাও-এর এক অনুন্নত কৃষিপ্রধান জেলায় এক নারী পতিতাবৃত্তির মত পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে যাতে সে তার সন্তানদের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারে।

মেদসা সঁ ফ্রন্টিয়ার (সীমান্ত বিহীন চিকিৎসকের দল) নামক প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের অপুষ্ট শিশুদের মুখোমুখি হয়েছে এবং তারা লক্ষ্য করেছে যে, দৃশ্যত তাদের সাহায্য করার মত বিষয়টি আসলে সমস্যাকে আরো জটিল করে তোলে। খাদ্য দানকারী সংস্থা সেই সমস্ত খাবার সরবরাহ করে না, যেগুলোতে যথেষ্ট পুষ্টি আছে, যা খেয়ে দুই বছরের কম বয়স্ক বাচ্চারা টিকে থাকতে পারে। যার ফলে ক্ষুধার্তদের প্রতি মনোযোগ (স্টার্ভড ফর অ্যাটেনশন) নামক প্রচারণা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রাণ হিসেবে খাদ্য বিতরণকারী নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সমূহকে নিম্ন মানের খাবার না পাঠাতে এবং তার বদলে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য যথেষ্ট পুষ্টি সম্পন্ন খাবার পাঠাতে বলবে।

এ বছরের বিশ্ব খাদ্য দিবসের বিষয় হচ্ছে খাবারের “মূল্য; সঙ্কট থেকে স্থায়ী সমাধান”। এই ট্রেলার, হাঙ্গার গেম নামক এক চলচ্চিত্রে বা সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, যা পেরুর ফেলিক্স আলভারেজ তোরেস এর ১৫ মিনিটের এক চলচ্চিত্র। এখানে তিনি এই বিষয়টি প্রমাণ করেছেন যে, খাদ্যের মূল্য যেন ক্ষমতার জুয়া খেলায় একটি চিপ বা প্রধান উপাদান।

বিগত ১০ বছরে সারা বিশ্বে খাদ্যের মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতের শস্য কেনার ব্যাপারে কোটি কোটি ডলার খরচ করছে, তারা এই বিষয়ে ধারণার সৃষ্টি করেছে এবং বর্তমানের জন্য সঙ্কট সৃষ্টি করছে। এখন খাবারের দাম বাড়ছে; যা এমন এক খেলা, যে খেলায় আপনি সব সময় জিতবেন।

এই জুয়ার টেবিলের বাইরে, গরিবদের ও এক খেলা খেলতে হছে, তা হচ্ছে ক্ষুধা লুকানোর জুয়া [অসুস্থ্য]।

আজ, বিশ্বের অনেক নাগরিক খাবার এবং খাদ্য বিষয়ক লেখা পোস্ট করছে, এর জন্য ব্লগ অ্যাকশন ডে- নামক উদ্যোগকে ধন্যবাদ। #বিএডি১১ –এর অধীনে এবং মাইক্রোব্লগিং সাইট এবং ব্লগে তা পোস্ট করা হয়েছে। এই আলোচনাকে গুরুত্ব প্রদান করুন। আর বিশ্বে ক্রমশ খাদ্যের দাম বাড়তে থাকা এবং ক্ষুধার বিষয়ে আপনার ভাবনা বিশ্বকে জানান।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .