মায়ানমার: রাষ্ট্রপতি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করেছে

মায়ানমার সরকার দেশটির উত্তরে ইরাবতী নদীর উপর বিতর্কিত যে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের নিমিত্তে বাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা করেছিল তা বাতিল করেছে। রাষ্ট্রপতি থিয়েন সিয়েন সংসদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তাদের জানাচ্ছেন যে জন স্বার্থে এ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করা হল।

চীন মায়ানমারে যে সকল কাঠামোগত বিনিয়োগ করেছে, এই প্রকল্প তার মধ্যে অন্যতম। এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ চীনে রপ্তানী করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

গত মাসে, বিদ্যুৎ মন্ত্রী জাও মিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, এই বাঁধের ব্যাপারে কয়েকটি দলের আশঙ্কা বৃদ্ধি সত্ত্বেও সরকার এই প্রকল্প বাতিল করবে না। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে গণ মানুষের কিছু কার্যক্রম যেমন দরখাস্তে স্বাক্ষর করা, বাঁধ নির্মাণ বন্ধের ব্যাপারে সরকারে কাছে আবেদন জানানোর জন্য কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এমনকি এ ক্ষেত্রে জনতার সাথে কণ্ঠ মিলিয়েছিল প্রচার মাধ্যমসমূহ, যার মধ্যে কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ছিল, যারা রাষ্ট্রপতিকে এই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার আহ্বান জানান।

মায়ানমারের ইরাবতী নদী।

মায়ানমারের ইরাবতী নদী। ছবি ফ্লিকার-এর ডামিয়েনএইচআর-এর ফ্লিকার পাতা থেকে নেওয়া। সিসি লাইসেন্স এট্রিবিউশন-শেয়ারএলাইক২.০ জেনেরিক (সিসি বাই–এসএ ২.০)-এর অধীনে তা ব্যবহার করা হয়েছে।

সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মায়ানমারের নেট নাগরিকরা তার প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছে। হেইনহেলইয়ান৫২৮, মায়ানমারের অন্যতম প্রচার মাধ্যম ইলেভেন মিডিয়া গ্রুপে মন্তব্য করেছে:

এই বাঁধ প্রকল্প বন্ধ করার জন্য সবার আগে আমি রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যারা মায়ানমারের বিষয়ে আগ্রহী তারা জানবে যে, এখানে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা কঠিন। চীনের দীর্ঘ সময়ের বিদ্যুৎ- চাহিদার উপর প্রভাব পড়া, এবং ইতোমধ্যে চীনের সাথে স্বাক্ষরিত যে আইনী চুক্তি তা ভঙ্গ করার মত বাস্তবতা সত্বেও, যে চীনের দ্বারা এই দেশ নিরাপত্তা পরিষদ ও জাতিসংঘে সুরক্ষিত, সে দেশের স্বার্থের বদলে দেশের জনতার চাওয়াকে পুরণ করার মত সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি আপনাকে অন্তরিক ভাবে থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটা একটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। মায়ানমারের একজন নাগরিক হিসেবে আমি জানতে আগ্রহী যে আমাদের প্রিয় বন্ধু রাষ্ট্র চীনের প্রতিক্রিয়া এই বিষয়ে কি হবে।

আরেকজন মন্তব্যকারী বেবীমিলো, উল্লেখ করেছে:

বন্ধ করা থেকে ধ্বংস করা পর্যন্ত, আমাদের একসাথে শোভাযাত্রা চালিয়ে যেতে থাকা উচিত।

ইলেভেন মিডিয়া জনতার প্রতিক্রিয়া একত্রিত করেছে। মিয়িৎকিনার এক ৬০ বছরের বৃদ্ধা এই প্রকল্প বাতিল করার বিষয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।

আসলেই কি সরকার এই প্রকল্প বাতিল করেছে? এতে আমি দারুণ আনন্দিত। এটা উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই যে এই প্রকল্প নিয়ে আমি কতটা শঙ্কিত ছিলাম। কেবল আমি নয়, সারা শহর উদ্বিগ্ন ছিল। এই বাঁধ এখানকার প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দেব। সকলেই বিপদে পড়ব। এই সংবাদ শোনার পর আমি দারুণ আনন্দিত।

এদিকে মায়ানমারের আরেকটি জনপ্রিয় সংবাদপত্র ভয়েস উইকলির ফেসবুকের পাতায় নাইয়োপিপল এই মন্তব্য পোস্ট করেছে

দারুণ!!!! এটা হচ্ছে ডিএএসএসকে, বার্মার নাগরিক, আদিবাসী জনতা এবং বর্তমান সরকারের মধ্যে সফলতার সাথে আত্মবিশ্বাস নির্মাণের শুরুর এক প্রক্রিয়া। !!

তবে দেশটির সকল নাগরিক বিশ্বাস করে না যে বাঁধের প্রকল্প বাতিল করা, দেশটির ক্ষেত্রে পরিবর্তনের এক চিহ্ন। ইরাওয়াদ্দি সংবাদ ব্লগে ছদ্মনামের এক ব্লগার এই মন্তব্য করেছে

এখন তারা যথারীতি নিজেদের জনতার সরকার বলে ঘোষণা দিতে পারে, কিন্তু তারা বিষয়টি উল্লেখ করত না , যদি তা ভালোর জন্য স্থগিত করা হত। তারা এর মধ্যে থেকে ফায়দা তুলে নেবে। এমনকি, যদি তারা তা না করতে পারে, তাহলে তারা আর মাত্র পাঁচ বছর অপেক্ষা করবে। এটা বলা যায় যাবে না যে, এটা জনতার ভালোর জন্য করা হয়েছে, এটাও বলা যাবে না যে, মায়ানমারের পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে।

টিন্ট কীওয়াক নাইং-ও এই ঘটনায় এত আগে উদযাপন করার বিষয়ে সতর্ক:

এর মানে কি এই, যদি গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে তা চলতে না পারে [বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি] , তাহলে কি তা ভবিষ্যতে সামরিক সরকারের অধীনে প্রয়োগ করা হবে? যদি তাই হয়, তা হলে তা চলতেই থাকবে!

ইরাবতী সংবাদপত্রও উল্লেখ করেছে বিশ্বের গণতন্ত্রের প্রতীক অং সান সুচি, মন্ত্রী অং কি এর সাথে এক আলোচনার সময় রাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .