নেপালঃ ব্লগাররা ভূমিকম্পের সময় তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছে

রোববার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১ তারিখ সন্ধ্যাবেলা রিখটার স্কেলে ৬.৮ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে নেপাল কেঁপে উঠে। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল নেপালের সীমান্ত এলাকা তাপাল জুং এবং ভারতের অঙ্গরাজ্য সিকিম-এর কাছে। এই ভূমিকম্পে কাঠমান্ডু, পোখরা, ধারমা সহ নেপালের আরো অনেক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির বেশ কিছু ব্লগার ভূমিকম্পের সময়কার নিজস্ব অভিজ্ঞতা, সংবাদ এবং ঘটনার সরাসরি বর্ণনা প্রদান করেছে।

যখন এই লেখাটি শেষ করা হয়, সে পর্যন্ত নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে এই ভূমিকম্পে ৯ জন নিহত এবং ২৪ জন গুরুতর আহত হয়েছে। ভূমিকম্পে নেপালে অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসের দেওয়াল ধ্বসে তিনজন ব্যক্তি নিহত হয়েছে; উক্ত ব্যক্তিদের নিহত হবার ঘটনায় ব্রিটিশ দূতাবাস সংবাদপত্রে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে এবং তারা বলছে যে স্থানীয় জনতা এবং নেপালের জন্য দূতাবাস সব সময় তাদের যথাসাধ্য করে যাবে। এই ভূমিকম্পের ঘটনায় সারা দেশে ৫০ টির মত বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

People stand next to a collapsed wall, following the powerful earthquake which rattled Nepal. Image by Gagan Thapa, copyright Demotix (18/09/2011).

ভূমিকম্পে ধ্বসে পড়া একটা দেওয়ালের সমানে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে, এক শক্তিশালী ভূমিকম্প যা নেপালকে কাঁপিয়ে দিয়ে যায়, তার পরে এই ঘটনা ঘটে। ছবি গগন থাপার, কপিরাইট ডেমোটিক্সের (১৮/০৯/২০১১)।

ব্লগারদের কেউ কেউ রাস্তা, কেউ তাদের কর্মক্ষেত্র এবং কেউ কেউ নিজেদের বাসা থেকে- তাদের অভিজ্ঞতার কথা ব্লগ করেছে (বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ঘটনাস্থল থেকে তারা ব্লগ করে)। সামাজিক প্রচার মাধ্যম সাইট এই ঘটনায় টুইট এবং ফেসবুক পোস্টে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন জায়গায় থেকে টুইটার ব্যবহারকারীরা ক্ষয়ক্ষতি এবং আহত হবার সংবাদ প্রদান করেছে। অজস্র ফোন করার কারণে সবগুলো ফোন লাইন ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আকার পোস্ট-এ অনিল পি ঘিমির [ নেপালী ভাষায় ] এই ঘটনার উপর তার সরাসরি অর্জন করা অভিজ্ঞতা এক পোস্টের মাধ্যমে আমাদের জানাচ্ছে। ভূমিকম্পের ঘটনার সময় তিনি কাঠমান্ডুর রাস্তায় ছিলেনঃ

सम्भवत पहिलोपटक भुँइचालो को आभास गर्दै थियौँ । सडक को बिचमा उभिएको हुँदा यता र उता कुद्नुपर्ने कुनै जरुरी थिएन । याद आयो अरु केही नभएपनि ट्विट गरिहाल्नुपर्छ । मोवाइलमा ब्राउजर मा ट्विटर नै खुलिरहेको थियो, हतार हतार भुकम्प आएको कुरा ट्विट गरियो, आफू मुनि को जमिन हल्लिनै रहेजस्तो लागिरहेथ्यो । तर त्यो ट्विट प्रकाशित हुन सकेन, जिपीआरएस चलेन।

সম্ভবত এই প্রথম আমরা ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা লাভ করলাম। যেহেতু আমরা রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তাই আমাদের অন্য কোথাও দৌঁড়ে যাবার কোন প্রয়োজন দেখা দেয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার মনে হল, যদি আর কিছু করার না থাকে তাহলে আমি টুইট করতে পারি। দ্রুত আমি ভূমিকম্প সম্বন্ধে টুইট করার চেষ্টা করলাম যা আমি টুইটারের আমার ফোনের টুইটার ব্রাউজিং-এর মাধ্যমে পেয়েছিলাম, মাটি কাঁপছিল কিন্তু যেহেতু আর জিপিআরসি সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছিল না, টুইটটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

প্রাথমিক সংবাদে জানা যায় যে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬-এর বেশী, আর এর কেন্দ্র ছিল ভারতের সিকিম অঙ্গরাজ্যে, এবং কাঠমান্ডু ছিল এর থেকে ৭২ কিলোমিটার দুরে [পূর্বে]। অজস্র সংখ্যক ফোন কল হবার কারনে ফোন সেবা ব্যহত হয়ে পড়ে, আর এ কারণে মানুষের হতাহতের ঘটনার সংবাদ পেতে আধা ঘন্টা সময় লাগে।

মাই সানসার-এ [নেপালী ভাষায়] সালোকিয়া ঘটনার প্রাথমিক অবস্থা এবং তার অভিজ্ঞতা আমাদের জানিয়েছেন।

म बसेको ठाउँमा केही समय हल्लिएर मानिसहरु सडकमा निस्किएका थिए। कम्प्युटर चलाइरहेको म पनि हतारहतार लुगा लगाएर तल झर्दासम्म भूकम्प जारी थियो। हल्लँदै गर्दा मोबाइल बिर्सेर फेरि मोबाइल लिएर सडकमा आउँदा धेरै मानिस बाहिर आइसकेका थिए। श्रीमतीले पनि भूकम्प हुँदै गर्दा फोन गरेर- म त मर्न लागेँ कि क्या हो, यही अन्तिम फोन होला भनेर गरेको भनिन्।

যে ভবনে আমি ছিলাম সেটি কয়েকবার কেঁপে ওঠার পর পর অনেকে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। যে কম্পিউটারটি আমি ব্যবহার করছিলাম, যখন আমি সেটি বন্ধ করতে এবং কিছু কাপড় সহ বের হতে সক্ষম হলাম, তখন ভূমিকম্প হচ্ছিল। আমি আমার মোবাইল ফোনটা নেবার জন্য আবার সেখানে প্রবেশ করি এবং রাস্তায় সেই সমস্ত লোকদের সাথে যোগদান করি, যারা তাদের বাসস্থান ত্যাগ করে রাস্তায় নেমে এসেছে। আমার স্ত্রী সে সময় আমাকে ফোন করে এবং জানায় যে তার মনে হচ্ছে সে মারা যাচ্ছে, আর এটাই তার শেষ ফোন কল।
People in Kathmandu rush into the open space of New Road after an earthquake jolted the city. Image by Sunil Sharma, copyright Demotix (18/09/2011).

এক ভূমিকম্প যখন কাঠ্মান্ডু শহরটিকে কাঁপিয়ে দেয়, জনতা তখন দ্রুত ফাঁকা জায়গার খোঁজে নিউ রোডন নামক এলাকায় নেমে আসে। ছবি সুনীল শর্মার। কপিরাইট ডেমোটিক্সের (১৮/০৯/২০১১)।

আরেকজন নেপালী ব্লগার দিনেশ ওয়াগলে তার জার্নালে জানাচ্ছেন ভূমিকম্পের সময় কর্মক্ষেত্রে তার অভিজ্ঞতার কথাঃ

যখন আমি আমার ছয়তলা অফিস ভবনের তৃতীয় তলার একটি টেবিলের নীচে আশ্রয় নিলাম, সে সময় হাইতির ভূমিকম্পে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছিল (এবং পাকিস্তান ও চীনেও) তা আমার কল্পনায় চলে এলো। এছাড়াও আমি কাঠমান্ডুর বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় এলাকার কথা চিন্তা করলাম, বিশেষ করে আসন এলাকার কথা। আমি এমন তাকে (স্ত্রী) ফোন করার কথা ভাবলাম, বাস্তবতা হচ্ছে তা করার চেষ্টাও করলাম, এবং এমনকি আমি ভূমিকম্পের যে অভিজ্ঞতা লাভ করলাম, তার সম্বন্ধে একটা টুইট পোস্ট করলাম।

নেপালের আরেকজন ব্লগার কেটি “সিকিমে ভূমিকম্প আর কাঁপছি আমরা” শিরোনামে একটি লেখা পোস্ট করেছে, সেখানে সে লিখেছেঃ

কিন্তু, প্রথমে আজকের এই ঘটনা সম্বন্ধে কিছু কথা; এক ভূমিকম্প যা কিনা সিকিমকে আঘাত করেছে, এবং নেপালের নয়নের মণিকে (অবশ্যই তা কাঠমান্ডু) শিরদাঁড়ায় ঠাণ্ডা স্রোত সৃষ্টি করার মত করে কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে। এই বিষয়ে ব্লগ লেখার জন্য আমার প্রস্তুতি ছিল খুব সামান্য, কারণ প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্বন্ধে আমার ধারনা খুব সামান্য। কিন্তু কাঠমান্ডুর প্রত্যেকটি নাগরিকের মত এই ঘটনায় আমারও একটা নিজস্ব কাহিনী আছে।

ভূমিকম্পের পরপরই নেপাল সরকার এই ঘটনার শিকার পরিবারগুলোর জন্য ২৫,০০০ রুপি বরাদ্দ দেবার ঘোষণা প্রদান করে। নেপাল এখনো ভূমিকম্প প্রবন এলাকা হিসেবে রয়ে গেছে এবং অনিয়ন্ত্রিত শহরায়ণ এবং ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য যথাযথ প্রস্তুতির অভাব, দেশটির জীবন এবং সম্পদের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .