কিরগিজস্তান: রাষ্ট্রপতি নিবার্চনের জন্য ৮৩ জন প্রার্থী নাম নিবন্ধন করেছে

মধ্যে এশিয়ার ক্ষুদ্র রাষ্ট্র কিরগিজস্তান, তার রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য বিখ্যাত, এখন দেশটিতে এবছর অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিরগিজস্তানের আবার সুযোগ এসেছে বিখ্যাত হবার। দেশটির শূন্য রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য ৮৩ জন কিরগিজ নাগরিক নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছে।

রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে নাম নিবন্ধনকারীদের এই তালিকাটি বেশ মনোমুগ্ধকর। এই তালিকায় আইনজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, পিএইচডি ডিগ্রীধারী, রাজনীতিবীদ, এবং এমনকি বেশ কয়েকজন বেকার রয়েছে। এদের মধ্যে ১৬ জন রাজনৈতিক দলের, ৬৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে ছয় জন নারী এবং সাতাত্তর জন পুরুষ। এদের সকলকে ৩০,০০০ সমর্থকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে এবং নির্বাচনী জামানত (প্রায় ২,২০০ ডলার) জমা করতে হবে। এর সাথে তাদের কিরগিজ ভাষায় পাশ করতে হবে।

কিরগিজস্তানের রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল ছয় বছর। দেশটিতে এক ব্যক্তি একবারের বেশী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারে না। কেবল কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের নাগরিক এবং যার কোন বিদেশী নাগরিকত্ব নেই, যার বয়স ৩৫ থেকে ৭০ বছর, তিনি কিরগিজ আইনে রাষ্ট্রপতি হবার যোগ্য। তবে তাকে ১৫ বছরের বেশী সময় ধরে কিরগিজস্তানের বাসিন্দা হতে হবে।

Kyrgyz parliament. Image by Flickr user benpaarmann (CC BY 2.0).

কিরগিজস্তানের সংসদ ভবন। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী বেনাপারমান-এর, (সিসি বাই ২.০)।

৮৩ জন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী নাগরিক

ভার্চুয়াল কিরগিজস্তান, বৈচিত্র্যময় রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর তালিকা নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করেছে [রুশ ভাষায় করা সকল টুইট অনুবাদ করা হয়েছে]

@ ইজাতএম : তিরাশি জন প্রার্থী!!! এটা নিছক মজাদার এক বিষয়!!! যাই হোক, আমি ভালো কিছুর আশা করছি!!! …

@চিঙ্গিজ__কেজি: রাষ্ট্রপতি পদে তিরাশি জন প্রার্থী একটা বিস্ময়কর সংখ্যা।

@ইলিয়ালুকশা: তাতে কি, রাষ্ট্র? এই তিরাশি জন প্রার্থীর প্রতি আমার অভিনন্দন।

ডিজেল ফোরাম ব্যবহারকারীরা আরো বাস্তব সম্মত চিন্তা ব্যক্ত করেছে, তারা কৌতূহলী, এ ক্ষেত্রে ব্যালট পেপারটি দেখতে কেমন হবে [রুশ ভাষায়]:

স্কাইমের: ব্যালট পেপারটা কি একটা মোড়ানো কাগজের [রোল] মত দেখাবে? ))

ইলেনা: এর সকল সরকারী বিজ্ঞপ্তি অবশ্যই হতে হবে একটা মোড়ানো টয়লেট পেপারের কাগজে। এটা একটা অর্থ তৈরি করে।

ইলিচ: জার্মানি তার গাড়ীর জন্য, জাপান তার প্রকৌশলবিদ্যার জন্য, চায়না তার পণ্যের জন্য বিখ্যাত, আর কিরগিজস্তান রাষ্ট্রপতি তৈরির জন্য বিখ্যাত!

৮৩ জন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর ঘটনায় কিরগিজস্তানের নাগরিকরা তাদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থীদের গুণাবলির বিষয় নিয়ে ভাবছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের একাউন্ট খুলেছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের আবার ব্লগ রয়েছে।

নেট নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া

ভার্চুয়াল কিরগিজস্তান জানে যে প্রায় সকল রাজনীতিবীদ কেবল মাত্র বড় আকারের কোন কর্মকাণ্ডের আগে ইন্টারনেটে সক্রিয় হয়ে উঠে (কোন র‍্যালি, নির্বাচন, ইত্যাদি)। এর বাইরে অন্য সময়ে তাদের নেট ভিত্তিক কর্মকাণ্ড প্রায় শূন্যের কোঠায়। আর এই বিষয়টি ফেসবুকে একটি অনুষ্ঠানের জন্ম দিয়েছে “ যার নাম ‘ডাউন ডেড পলিটিশিয়ান’ বা মৃত রাজনীতিবিদেরা নিপাত যাক”! [রুশ ভাষায়]:

এই অনুষ্ঠানের সৃষ্টিকর্তা আজমাত ইমানালিয়াভে। তিনি সবচেয়ে বড় সংবাদ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান একেআই-এর সম্পাদক এবং তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক সক্রিয় কর্মী। এই ঘটনায় কিরগিজস্তানের সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে কিরগিজ রাজনীতিবিদদের বন্ধুত্বের তালিকা থেকে নাম কেটে দিতে এবং তাদের অনুসরণ করা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। উক্ত দিনটিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হবার কথা।

@আজ্জিক: আমি বিস্মিত হব, যদি আমরা বন্ধুত্বের তালিকা থেকে গণহারে নাম কেটে দেবার বিষয়টি ঘটাতে পারি। তারা কেবল মাত্র নির্বাচনের সময় আমাদের স্মরণ করে। আরটি!

@আজ্জিক: আসুন উক্ত নির্দিষ্ট দিনে আমরা তাদের নাম বন্ধুত্বের তালিকা থেকে মুছে ফেলি। এতে যে তার উন্মাদ হয়ে পড়বে আসুন সেই বিষয়টি কল্পনা করি। একদিনে তারা বিশাল এক শ্রোতা হারাবে। তারা তাদের সাহস হারিয়ে ফেলবে। ))

এই আহ্বান দ্বৈত সাড়া পেয়েছে। একদিকে যখন অনেকে এই বিষয়টি স্বাগত জানিয়েছে, তেমনি অন্যদিকে অনেকে জিজ্ঞেস করছে যে, এই বিষয়টি কি আদৌও কোন অর্থ বহন করে।

আলিয়া আকমাতোভা উক্ত ফেসবুক পাতার ওয়ালে লিখেছে [রুশ ভাষায়]:

জনগণ, কেন আপনারা এত উদ্বিগ্ন? এটার কোন মানে হয় না। সামাজিক প্রচার মাধ্যমে এই প্রচারণাটা শুরু হয়েছে ছুটির দিনের আগে, আর এ কারণে এটি প্রচুর পাঠক তৈরি করেছে এবং তাদের পাতাকে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। মানুষ তখনি সক্রিয় হয়ে ওঠে যখন তাদের প্রয়োজন দেখা দেয়। এটা একেবারে স্বাভাবিক এক ঘটনা। বিশ্বের সবক্ষেত্রে এই একই ঘটনা ঘটে।

পেরি আদানোভা বলছে [রুশ ভাষায়]:

যদি তাদের নাম মুছেই ফেলতে হয়, তাহলে তাদের বন্ধুর তালিকায় যুক্ত করলাম কেন। তারা তো কাউকে বিরক্ত করছে না। আমি মনে করি যে রাজনীতিবিদেরাই কেবল জন সংযোগের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার করে না।

ডিজেল ফোরাম ব্যবহারকারী ড্রাইভ২.কেজি এটি পোস্ট করেছে[রুশ ভাষায়]:

রাজনীতিবিদদের বন্ধুত্বের তালিকা থেকে অপসারিত করার মধ্যে আমি কোন অর্থ খুঁজে পাই না। তাদের যদি তালিকা থেকে বাদ দিতে হয় তাহলে তাদের সেই তালিকায় যুক্ত করলাম কেন? তারা আমাকে বিরক্ত করছে না। যখন তারা কিছু লেখে তখন আমি জানি যে তাদের জীবনে কি ঘটছে, এমনকি যদিও তারা নিজেরা তা লিখে না। তবে তাদের অনেকে নিজেদের নিয়ে লিখে থাকে, আপনি তা দেখতে পাবেন। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কোন অর্থ নেই।

তবে যাই হোক রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর সংখ্যা, সুনির্দিষ্ট ভাবে কমে এসেছে। এদের অনেকে নির্বাচনী জামানত প্রদান করতে পারেনি। কয়েকজন কিরগিজ ভাষায় উর্ত্তীণ হতে পারেনি এবং সমর্থকদের যথেষ্ট স্বাক্ষর যোগাড় করতে পারেনি।

রাষ্ট্রপতি পদের জন্য নাম নিবন্ধের শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১, এবং নির্বাচনী প্রচারণা সেপ্টেম্বরের ২৫ থেকে শুরু হয়ে তা ৩০ অক্টোবর, ২০১১ পর্যন্ত চলবে।

২৫ সেপ্টেম্বরে আমরা কিরগিজ রাজনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাব (যদি তারা তা প্রদর্শন করে)। কিন্তু অনেক ব্যবহারকারী এতে হতাশ। যেমনটা দেশের রুশ ভাষায় প্রকাশিত মূল সংবাদপত্র, রোসিভিস্কিয়া গেজেত্তা, সেখানে ইগর সেস্তাকোয়া বলেছে [রুশ ভাষায়]:

এটা অনেকটা আমাদের ভবিষ্যতের একটা ই-গর্ভমেন্ট অনুরূপ বিষয়। এমনকি আপনি জন্য আপনার একটা প্রশ্ন পাঠাতে পারেন অথবা মন্তব্য প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কখনোই আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবে না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইটে যাদের একাউন্ট আছে নীচে তাদের তালিকা তুলে ধরা হল। ( এর জন্য ডিজেল ফোরাম ব্যবহারকারী আফিনাকে ধন্যবাদ) :

কামচিবেক তাশিয়েভ (ফেসবুক)

রোজ অউটানবায়েভা (ফেসবুক)

ওমরবেক বাবানোভ (ফেসবুক)

তারসুনাবাই বাকির উলুলু (ফেসবুক)

তেমির সারিয়েভ (ফেসবুক)

ইসহাক প্রিমাতভ

শিরিন এইতোমাতোভা (ফেসবুক)

দাস্তান বাকেশেভ (ফেসবুক)

ফেলিক্স কুলভ (ফেসবুক)

এমিল উমেতালিয়েভ (ফেসবুক)

জুমরাত সাপ্রাবায়েভ (ফেসবুক)

উলান চোলপোনাবায়েভ (ফেসবুক)

আইদা সালইয়ানোভা

উমরবেক তাকাবায়েভ (ফেসবুক)

নারিমান তুলিভ (ফেসবুক, ফোরাম)

এদিল বাইসালভ (ফেসবুক)

আকইয়ালবেক জাপারভ (ফেসবুক)

আসিয়া সাসইয়াকবায়েভা (ফেসবুক)

আদাখান মাদুমারভ (ফেসবুক)

রাভশান জেনবেকভ (ফেসবুক)

আলিকবেক জেকশেনকুলভ (ফেসবুক)

ইসমাইল ইসয়াকভ (ফেসবুক)

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .