পেরু: জেনেটিক্যালি মডিফাইড খামার নিয়ে বিতর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে

এই প্রতিবেদনটি আমাদের বিশ্ব উন্নয়ন ২০১১ সংক্রান্ত বিশেষ কাভারেজের অংশ

maiz transgenico gmo corn food

পৃথিবীব্যাপী জেনেটিক্যালি মডিফাইড বীজ হিসাবে ভুট্টার ব্যবহার অন্যতম (ফটো: পিটার ব্ল্যাঙ্কচার্ড/ ফ্লিকার, লাইসেন্সিয়া সিসি বিওয়াই-এসএ ২.০)

[নোট: সব লিংকের তথ্য স্প্যানিশ ভাষায়]

পেরুতে ১৫ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত জেনেটিক্যালি মডিফাইড (জিএম) বীজ আমদানির অনুমতি সংক্রান্ত সনদ ০০৩ জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম (জিএমও) ব্যাপকভাবে ব্যবহারের পক্ষের লোকজন এবং দেশের জীববৈচিত্র ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই আশংকায় এর বিপক্ষ শিবিরের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

অধিকন্তু, জিএম বীজ অনুমোদনের পক্ষে কিছু বিশেষজ্ঞ এ বীজের বৈশিষ্ট্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম কৃষি বর্জ্য সৃষ্টি করবে এই মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেছেন, অন্যদিকে জিএম ফসল থেকে উৎপাদিত খাদ্য অক্ষতিকর হিসাবে বিবেচনা করাকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং জিএম ফসলের পরাগ রেণু জংলী ও দেশীয় ফসলকে পর পরাগায়িত করার সম্ভাবনা উচ্চ এই মর্মে জনগণকে সর্তক করেছেন, ফলে স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সম্পদের অংশবিশেষ প্রচলিত ফসল ও ফলের প্রজাতির একমুখী পরিবর্তন ঘটছে

জনপ্রিয় পেরুভিয়ান পাচক গ্যাষ্টন একুরিও নিশ্চিত যে, জিএম খাবার পেরুভিয়ান জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ। একুরিও তথাকথিত অর্থনৈতিক কারণে সুপারিশকারী দল যারা সনদ ০০৩ অনুমোদনের জন্য প্রচারণা করেছিল, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন এবং বর্তমানে ঐ সমস্ত [গুটিকতক] ব্যক্তির নয় বরং পেরুর স্বার্থের অগ্রাধিকারের বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

এই বিষয়টি ভূতপূর্ব কৃষি মন্ত্রী, রাফায়েল কুভেদো, এর পদত্যাগ তরান্বিত করে যখন প্রকাশ পায় তিনি এমন একটি কোম্পানির সিনিয়র এক্সিউটিভ যা জিএম উৎপাদ ব্যবহার করছে, যখন এটি সাংবাদিক জ্যাকি ফক্স তার ব্লগ নোটাস ডেস্ড লিনোভো তে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

যদিও পেরুতে জেনেটিক্যালি মডিফাইড শস্য উৎপাদনের জন্য একনিষ্ঠ কর্মী কুভেদো এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তদুপরি, তার উপদেষ্টাদের একজন, জিএম বীজ বিপননকারী কোম্পানির কর্ণধার আলেকজান্ডার গ্রোবম্যানকে বর্তমান মন্ত্রী জর্জ ভিলাসান্তে অতিসম্প্রতি অপসারণ করেন।

ছবি: গ্যাসটোন একুরিও ফেসবুক ফ্যান পেজ

হ্যানকো পরিবারের সাথে সেফ গ্যাষ্টন একুরিও। এই কৃষি পরিবারটি ২০০ জাতের আলু তাদের ৫০০০ বর্গমিটার জমিতে উৎপাদন করেন। (ছবি: গ্যাসটোন একুরিও ফেসবুক ফ্যান পেজ)

একইসঙ্গে পরিবেশ মন্ত্রী এনটোনিও ব্রাক এগ জাতিকে স্মরণ করতে বলেন যে, ৬৫% পেরুর কৃষি দেশের জীববৈচিত্রের উপর নির্ভরশীল, রপ্তানীযোগ্য উৎপাদন ও পর্যটন খাত থেকে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার আসে।

পেরুতে, পশুখাদ্য অথবা খাদ্যে মিশ্রণের জন্য যেমন তেল অথবা সয়া মিল্ক এ ব্যবহারের জন্য জিএম ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানির অনুমতি দেয়া হয়।

হিসাব করে দেখা গেছে যে, একজন পেরুবাসী বছরে ৬৩ কেজি জিএম ভুট্টা খান। এটি সত্য যে, পেরুর আইন খাদ্য পণ্যের লেবেলে কি তথ্য থাকবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে না, বিশেষত খাদ্য পণ্যে জেনেটিক্যালি মডিফাইড উৎপাদ অতিরিক্ত সমস্যার সৃষ্টি করে কি না।

বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন সনদ ০০৩ স্থগিত করার দাবী তুলেছে। কৃষিমন্ত্রীর মতে, প্রস্তাবিত স্থগিত করণ পাঁচ বছরের জন্য হওয়া উচিত, এই লক্ষ্যে যে, এই ইস্যুতে জাতীয় ঐকমতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বৃহত্তর জনগণের মধ্যে মতামত গ্রহণ করা এবং জিএম বীজ চাষাবাদ সম্পর্কিত বিষয়ে পেরুবাসীকে অবহিত করা।

পেরুর কৃষির জাতীয় কনভেনশন, বিশেষজ্ঞ, খাদ্য পরামর্শক এবং নাগরিক সংগঠন এই সনদ স্থগিতের পরিবর্তে অবিলম্বে বাতিলের দাবী জানিয়েছে। স্থানীয় আলুর জাতসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য বেশকিছু স্থানীয় সরকার (কাহামার্কা, হুয়ানুকো, কুসকো, আয়াকুচো, সান মার্টিন, ল্যামবায়িকে এবং লিমা মেট্রোপলিটানা) ”জিএম মুক্ত” অধ্যাদেশ তৈরি করেছে।

স্থানীয় আলু।

স্থানীয় আলু। পেরুতে ৩০০০ জাতের আলু জন্মে। (ফটো: ফুডকালচুরা/ফ্লিকার, লাইনেসসিয়া সিসি বিওয়াই-এনসি-এনডি ২.০)

এই বিষয়ে মন্ত্রীদের প্রেসিডেন্সি কাউন্সিল বায়োসেফটি রেগুলেশনের প্রস্তাব সর্বশেষ ১ জুন, ২০১১ তারিখের মধ্যে এবং সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রণয়নের লক্ষ্যে মাল্টিসেক্টর কমিশন গঠন করেছেন।

এই বিতর্ক জনগণের মধ্যে অধিক গুরুত্ব পায়, যখন বিখ্যাত পাচক গ্যাষ্টন একুরিও এই বিষয়ে যুক্ত হন, আর তার ফেসবুক ওয়ালে তাকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করা হয়:

No estamos en contra de los transgénicos. Estamos en contra de que las semillas transgénicas puedan contaminar nuestra agricultura y que sean los vendedores de estas semillas los que nos quieran imponer este camino a traves de normas que ellos mismos redactan. La agricultura peruana es y sera una potencia mundial.

আমরা জিএম উৎপাদের বিরুদ্ধে নই। জিএম বীজ আমাদের কৃষিকে কলুষিত করতে পারে এবং যারা এই বীজ বিক্রয় করে, তারা তাদের তৈরিকৃত আইন আমাদের উপরে চাপিয়ে দিতে চায়, আমরা এর বিরুদ্ধে। পেরুর কৃষি বর্তমানে পৃথিবীতে স্বীকৃতি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও পাবে।

এই বিষয়ে গণসচেতনতার জন্য বিভিন্ন দিক তুলে ধরে পেরুর নেট নাগরিকরা কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। পেরুতে জিএম ফার্মিং স্থাপনের কিছু ঝুঁকির বিষয়ে টাউসটোডো এর ব্লগে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:

Sabemos lo que está detrás de todo esto, como también sabemos las consecuencias ambientales que acarrearía; no solo son los inmensos intereses financieros y económicos que se solapan tras un manto de progreso, más aún sabiendo que de implementarse esta tecnología el Perú sería arrastrado a la inopia más brutal cuando solo cuenta con el 3.81 % de suelos aptos para cultivos en limpio y 37 % de suelo forestal.

আমরা জানি এর পেছনে কি আছে, পরিবেশের উপর প্রভাবই হচ্ছে এর ফলাফল। উন্নয়নের চাদরে অর্থনৈতিক আগ্রহ লুকায়িত থাকছে, বিশেষত যখন আমরা জানি, এই জাতীয় প্রযুক্তির প্রয়োগ পেরুকে এমন একটা বিপদজনক অবস্থার মধ্যে নিয়ে যাবে, যখন ৩.৮১% জমি থাকবে কৃষিতে পুনঃ ব্যবহারযোগ্য এবং ৩৭% বনভূমি।

টাউসটোডোতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে:

Por lo tanto, existen dos alternativas. La primera talar bosques y convertir el área en suelos cultivables, aún a costa de que sabe que son forestales; las consecuencias ecológicas, ambientales y económicas serán desastrosas. Segundo, comprar las tierras de los pobres, generando con esto caos social, desempleo, penurias…

এক্ষেত্রে দুটি বিকল্প রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, বন কেটে চাষযোগ্য জমি সৃষ্টি করা যদিও প্রতিবেশ, পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি বিপদজনক। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, গরীবদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করা এবং এভাবে সামাজিক অস্থিরতা, বেকারত্ব, দারিদ্রতা প্রভৃতি সৃষ্টি করা।

ফ্রান্সিসকো এসট্রাডা গুরুত্বসহ উল্লেখ করেছেন জিএম বীজের অনুমোদন প্রান্তিক চাষীদের জন্য বিপদজনক:

…pasemos al punto más maligno del asunto (…) Las semillas transgénicas tienen una patente. Es decir que los campesinos están obligados a pagar por esa semilla cada vez que quieran cultivar.

…এই ইস্যুর সবচেয়ে খারাপ দিকে যাওয়া যাক (…) জিএম বীজের প্যাটেন্ট রয়েছে। চাষীরা যে বীজ জন্মাতে চায়, তার জন্য তাকে প্রতিবার মূল্য পরিশোধে বাধ্য করা হয়।
ভুট্টার ১৫০টি জাত চাষযোগ্য করার জন্য কেচোয়া কালচারের বিশেষ অবদান রয়েছে।

ভুট্টার ১৫০টি জাত চাষযোগ্য করার জন্য কেচুয়া সংস্কৃতির বিশেষ অবদান রয়েছে। (ছবি: ডাব্লিউএইচএল.ট্রাভেল/ফ্লিকার, সিসি বাই-এনসি-এসএ ২.০)

এনা মারিয়া কুস্প তার ব্লগ, কিউয়িচিটায় উল্লেখ করেছেন যেহেতু গ্রামের চিরায়ত খাদ্য ও খামারের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে, তাই জিএম শস্যের বিস্তার দারিদ্র, অপুষ্টি এবং সরকারী সহায়তার উপর অধিক পরিমাণে নির্ভরশীল করে তোলে।

কাডা প্লেটো এস উনা ফিয়েষ্টা ব্লগে আলবারটো এবং ক্যাথি সরাসরি দায়ী করেন সবচেয়ে বেশী জেনেটিক্যালি মডিফাইড বীজ উৎপাদনকারী কোম্পানি মনসান্টোকে এবং এই জাতীয় বীজ উৎপাদনের ফলে পরিবেশগত, পরিচ্ছন্নতা এবং অর্থনৈতিক সংকট যা এর সাথে যুক্ত বলে ধারনা করা হয়

এনটোনিও ভেলারডি তার ব্লগে উল্লেখ করেন যে জনস্বাস্থ্যের উপর ধারণাকৃত এসব ক্ষতিসমূহের ঝুঁকি এখনো পরীক্ষা করে দেখা হয় নি।

En lo personal no consumiría estos productos sobre todo por precaución debido a que no estoy informado referente a los posibles efectos en la salud de las personas que consumen estos productos (…) es una vergüenza que viviendo en un territorio rico en recursos naturales y marinos nuestros gobernantes y los peruanos que están ligados a la agricultura, agropecuaria, pesca no sepan administrar estos recursos y lleguemos al extremo de importar productos de laboratorio que no estamos seguros de su peligrosidad.

ব্যক্তিগতভাবে, আমি এই জাতীয় দ্রব্যাদি ব্যবহার করব না, এই দ্রব্যগুলি ব্যবহারের ফলে ব্যক্তি স্বাস্থ্যের উপর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে আমি অবগত নই (…) এটি অমর্যাদাকর যে প্রাকৃতিক ও সামুদ্রিক সম্পদের প্রাচুর্যময় স্থানে বাস করার পরেও, মন্ত্রী ও পেরুবাসী যারা কৃষি, মৎস্য ও খামারের সাথে জড়িত, তারা জানেন না এই প্রাকৃতিক সম্পদ কিভাবে রক্ষা করবেন এবং তার পরিবর্তে সমাধান হিসাবে এমন দ্রব্য আমদানি করা যা গবেষণাগারে উৎপন্ন এবং যার নিরাপত্তা সম্পর্কে আমরা অবগত নই।

সামাজিক নেটওয়ার্কসমূহ এই বিষয়ে যুক্ত। এই বিষয়ে উপর গুরুত্ব দিয়ে কিছু ফেসবুকের পেজ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা জিএম উৎপাদের সরাসরি বিরোধিতা করে।

টুইটারে, মারিয়া জিমিনেজ (@antitaurinahej) লিখেছেন:

No a los transgénicos en el Perú o sino que se los coma todos Alan Garcia [el Presidente] http://tinyurl.com/3ejf3t3

পেরুতে আর কোন জিএম উৎপাদ নয়। না হলে, (প্রেসিডেন্ট) এলান গার্সিয়ার সব খাওয়া উচিত http://tinyurl.com/3ejf3t3

ডা. ক্যালেট (@ecoilora) একইসঙ্গে বলেন:

O.o recórcholis!! En Huaral (INIA) se estarían preparando parcelas para cultivo de transgénicos http://bit.ly/kmyVo1 NO #transgénicos #perú

হে ঈশ্বর!! জিএম দ্রব্য উৎপাদনের জন্য হুয়ারেল এ (কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জাতীয় প্রতিষ্ঠান) জমি প্রস্তুত করা হয়েছে  http://bit.ly/kmyVo1 NO #transgénicos #perú

ফ্রান্সিসকো ড্রাকের্ম (@Drakerm) চিলিতে একই সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন:

PERU DILE NO A LOS TRANSGENICOS La guerra de las semillas transgénicas toma fuerza en Chile http://bbc.in/kdtqoL

পেরু জিএম কে না বলেছে জিএম বীজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চিলিতে ঘাটি গেড়েছে http://bbc.in/kdtqoL

এই বিতর্ক পেরুতে সামাজিক নেটওয়ার্কসমূহে অগ্নি প্রজ্বলন করেছে এবং এটি নিশ্চিত যে, জুন মাসে আরও সংবাদ পাওয়া যাবে যখন এই বিষয়ের সরকারী কমিশন জৈব নিরাপত্তা রেগুলেশন পুনরায় নিরীক্ষা করবে এবং সংশোধনীর পরামর্শ প্রদান করবে।

এই প্রতিবেদনটি আমাদের বিশ্ব উন্নয়ন ২০১১ সংক্রান্ত বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .