যুক্তরাজ্যঃ লন্ডন জ্বলছে (ভিডিও)

৪ আগস্ট,২০১১ তারিখে উত্তর লন্ডনের টটেনহাম এলাকায় পুলিশ ২৯ বছরের এক যুবককে খুন করে, এই ঘটনা বর্ণবাদী উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে তরুণরা সারা লন্ডন এবং যুক্তরাজ্যের অন্য সব শহর জুড়ে দাঙ্গা এবং লুটপাটের মত ঘটনার সৃষ্টি করে।

টুইটারে #লন্ডনরায়ট নামক হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে সর্বদা তাজা সংবাদ প্রদান করা হতে থাকে, যার সাথে মন্তব্য, লিঙ্ক, গুজব এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সংবাদ যুক্ত করা হতে থাকে। এখানে এই আশাবাদ প্রদর্শন করা হতে থাকে যে, শীঘ্রই দাঙ্গার সমাপ্তি ঘটবে। যে সমস্ত নাগরিকরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রাস্তা পরিষ্কার করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা #রায়টক্লিনাআপ নামক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছে।

এই দাঙ্গার সূত্রপাত শনিবার ৬ আগস্ট-এ, যখন টটেনহামের পুলিশ স্টেশনের বাইরে একদল বিক্ষোভকারী ঘটনার শিকার মার্ক ডুগান এর জন্য বিচার চাইতে শুরু করে। বিবিসির সময়সূচী অনুসারে এই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ভাবে শুরু হয়েছিল, কিন্তু তা শেষ হয় গাড়ি, ভবন এবং একটি দোতালা বাসে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে।

প্রোকপি কন্সটান্টাইনুর একটানা ধারণ করা একটি ভিডিও প্রদর্শন করছে ৭ আগস্ট ভোরবেলা, উত্তর লন্ডন জুড়ে আগুনের লেলিহান শিখা আর ছড়িয়ে পড়তে থাকা ধোয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। ( এই ভিডিওতে যে সঙ্গীত ব্যবহার করা হয়েছে তা ডগটানিওনের):

যখন রোববার ও সোমবার-এ লন্ডনের এনফিল্ড, ডালস্টোন এবং ব্রিক্সটোন-এ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, তখন সাংবাদিক কেসি ওয়াইল্ডমুন গল্পের মত করে ঘটনার সরাসরি বর্ণনা প্রদানের জন্য লাইভব্লগ করতে থাকে

রেডিও ফিউচারলজিস্ট-এর জেমস ক্রিডল্যান্ড (@জেমসক্রিডল্যান্ড)-এর এই মানচিত্র প্রদর্শন করছে দাঙ্গা আসলে কতদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এই মানচিত্রের পুরো তালিকা প্রদর্শন করছে যে এই ঘটনা বার্মিংহাম এবং লিভারপুলে ছড়িয়ে পড়ছে।


View London riots / UK riots: verified areas in a larger map

ভিডিও, ছবি এবং মানচিত্রের মাধ্যমে নাগরিকরা এই সংঘর্ষ কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে তা চিহ্নিত করছে, আর এর মধ্যে দিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম সমাধা করছে।

সোমবার সকালে, গ্লোবাল ভয়েসেস-এর ব্লগার জ্যানেট গুন্টার উশাহিদির ক্রাউডম্যাপ.কম ব্যবহার করে ব্রিক্সটন-এর ঘটনাবলী সংক্রান্ত মানচিত্র স্থাপন করেছে, যাতে তার দক্ষিণ লন্ডনের আশেপাশের এলাকার দাঙ্গার সংবাদ চিহ্নিত করা যায়।

দিনের শেষে ওয়েবসাইটে ২২ টি লুটপাটের ঘটনা পাওয়া যায় এবং একটি মাত্র ভালো সংবাদ আসে, এই ভালো সংবাদ হচ্ছে স্থানীয় এক বেকারী সবাইকে বিনে পয়সায় কাপকেক খাওয়ানোর উদ্যোগ নেয়। এই সাইটে পোস্ট করা ভিডিওর মধ্যে @সাবএডিট এবং @এমমারেয়ান-এর ভিডিও একটি টি-মোবাইলের দোকান লুট হবার ঘটনা প্রদর্শন করছে (মূল বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তায়)। প্রথম থেকে ঘটনার শেষ পর্যন্ত ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। এর ঠিক পরের দোকানটি হচ্ছে এইচএন্ডএম-এর, লুটেরার এখন থেকে দুই হাত ভর্তি করে কাপড় নিয়ে বের হয়।

পূর্ব লন্ডনের কেন্দ্রীয় এলাকা বেথনাল গ্রীন-এর একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তরুণরা বোতল এবং দোকানের সামনের জানালা ভাংচুর করছে এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঢাল হাতে তাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

নাগরিক সংবাদ ওয়েবসাইট ব্লটর.কম সারা যুক্তরাজ্যের ক্রাউড সোর্স (অজস্র সংবাদের মাঝে মুল ঘটনা) সংবাদ এবং ছবি প্রদান করেছে।

কিন্তু কেন?

যখন ভাঙচুর চলছিল, তখন দাঙ্গাকারীদের প্রতি জনতার সহানুভূতি ছিল খুব সামান্য।

@অক্সফোর্ড গার্ল যার টুইট অনেকের মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছে, সে বলেছে:

@অক্সফোর্ডগার্ল, এখানে কোন দাঙ্গা নেই, কোন বিক্ষোভ নেই, কোন দাবী দাওয়া নেই অথবা কোন স্লোগান নেই, এটা কেবল সবকিছু লুট হচ্ছে এবং লন্ডন শহরকে ধ্বংস করা হচ্ছে। স্রষ্টা আমাদের সাহায্য করুন# লন্ডনরায়ট

গীত রচয়িতা এবং এমসি (মাস্টার অফ সিরিমনি বা উপস্থাপক) ক্যাসি রেইন, বার্মিংহাম-এর দাঙ্গার ক্ষেত্রে একটি টাম্বলার ব্লগ স্থাপন করেছে, যেখান ছবি এবং তাজা সংবাদ প্রদান করা হচ্ছে। সোমবারে সে এক ব্যক্তিগত মন্তব্য পোস্ট করেছে, যেখানে সে আহ্বান জানায়, জনতা যেন দাঙ্গাকারীদের প্রতি খানিকটা সহানুভূতি প্রদর্শন করে:

এই ধারণা তৈরি করা খুব সহজ যে, দাঙ্গাকারীদের কিছু করার না, তাই তারা দাঙ্গা করছে। এই বলে তাদের বাতিল করে দেবার বিষয়টি খুব সহজ। কিন্তু এখানে যে সমস্যা রয়েছে তা আরো অনেক গভীরে গ্রথিত। এক তরুণ, পুরুষ, সংখ্যালঘু জাতির একজন যে আমার এই শহরের বাসিন্দা, এ রকম সম্ভাবনা রয়েছে যে, তাদের অনেককে সম্ভবত আমি চিনি। আমি এই অনুভূতিকে অসহায়ত্বের সাথে যুক্ত করতে পারি। আমি সৌভাগ্যবান যে সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে আমি সফল হয়েছি এবং আমি এক উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু যে সব তরুণরা দাঙ্গায় লিপ্ত, তারা তাদের নিজেদের আদৌও কোন ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না। সামগ্রিক ভাবে একটি সমাজের দ্বারা তারা ব্যর্থ নাগরিকে পরিণত হয়েছে। সরকারের কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছে, যে সরকার তাদের শিল্পের তহবিল কমিয়ে এনেছে এবং তরুণ সংঘ নামক কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। বেকারত্ব এখন সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে, যেখানে প্রাণপণে চেষ্টা করেও তারা কেউ কোন কাজ জোগাড় করতে পারছে না এবং এই সকল ঘটনার উত্তাপের ( মার্ক ডুগান) ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা একেবারে বাস্তব।

গার্ডিয়ান নিউজ ব্লগ পুরো ঘটনার তাজা সংবাদ প্রদান করে যাচ্ছে। ফেসবুকের বেশ কিছু গ্রুপ দাঙ্গার সংবাদ চিহ্নিত করে যাচ্ছে, যার মধ্যে লন্ডন রায়ট ২০১১ এবং লন্ডন রায়ট অন্যতম।

সিলভিয়া প্রেসলি (@প্রেসলিসিলভিয়া) এবং এস্টেরিস মাসোউরাস (@এস্টেরিস) গবেষণা এবং লিঙ্ক-এর ব্যাপারে সাহায্য করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .