সিঙ্গাপুর: বয়স্ক রোগীর প্রতি দুর্ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ

প্রতিষ্ঠানটির নাম নাইটিংগেল নার্সিং হোম কিন্তু মনে হয় এর কিছু নার্স ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন।

সিঙ্গাপুরবাসীরা অবাক হয়েছেন ও কষ্ট পেয়েছেন ওই নার্সিং হোমে ৭৫ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধার প্রতি দুর্ব্যবহার সচক্ষে দেখে যা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউটিউবে তুলে দেয়া একটা লুকানো ভিডিওতে ধরা পড়েছে। ঐ ভিডিওতে একজন নার্সকে বিছানায় শুয়ে থাকা বয়স্ক একজন রোগীকে চড় মারতে দেখা যাচ্ছে:

http://www.youtube.com/watch?v=c7kkJ2Glxko&feature=related

অনেক সিঙ্গাপুরবাসী দুর্ব্যবহার করা নার্সদের শাস্তি চাচ্ছেন। জ্যাভার্টস ওয়ার্ল্ড লিখেছে:

জনগণের জানা প্রয়োজন যে কর্মীদেরকে কি শাস্তি দেয়া হয়, হয়তো মৌখিকভাবে সাবধান করা সম্ভব? নার্সিং হোমের প্রধানকেও শাস্তি দেয়া উচিত আর নিগৃহীত ও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত।

এটা যে কারো সাথেই হতে পারে আর আমি হতাশ যে এটা সিঙ্গাপুরে ঘটেছে।

রুবেন চান জানিয়েছেন যে খুব কম সিঙ্গাপুরবাসী তাদের বয়স্ক আত্মীয়ের সেবা করতে চায়:

আপনি কি আশা করতে পারেন যখন বৃদ্ধদের সেবা আমরা দিয়ে দেই এমন শ্রমিকদের হাতে যে ধরনের কাজ সিঙ্গাপুরবাসীরা করতে চায়না। নার্সিং চাকচিক্যময় কোন পেশা না আর সিঙ্গাপুরবাসী এটা করতে চায়না। ধনী ডাক্তার হতে তারা চান। রোগীর পশ্চাদ্দেশ মোছার জন্য নার্স হতে চাননা। নার্সদের খিটখিটে বৃদ্ধদের সাথে কাজ করতে হয় যাদেরকে তাদের সন্তানরা দেখতে চাননা। যদি তারা জানে যে রোগীর নিজের সন্তানরা তাদের সম্মানের সাথে ব্যবহার করবে না, তাহলে তারাও বা কেন করবে। সবাই তো আর ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল বা মাদার তেরেসা নন।

লো এন্ড বিহোল্ড সন্দেহ করেন যে অন্যান্য নার্সিং হোমেও এই ধরনের নির্যাতন হয়ে থাকে:

নাইটিংগেল নার্সিং হোমের পিছনের বিকলাঙ্গদের সনাক্ত করা উচিত, যেভাবে ওই বেচারী বৃদ্ধাকে বিছানায় ফেলা হয়েছে সেভাবেই তাদের জেলে ভরা উচিত আর উচিত চাবিটা স্থায়ীভাবে ফেলে দেয়া।

আর কতো নির্যাতনের সংবাদ সামনে আসতে হবে যখন এই ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে?

এই ধরনের নার্সিং হোমে, বিশেষ করে ডিমেন্সিয়া থাকা অশিক্ষিত বাসিন্দাদের নিয়ে, আমি কেবল ভিতরের বিভীষিকা কল্পনা করতে পারি।

আমি নিশ্চিত নির্যাতনের আরো ঘটনা আছে যা সম্পর্কে জনগণ কিছু জানে না।

এটা জানা গেছে যে ভিডিওতে দেখানো বয়স্ক রোগীর ছেলে এই ঘটনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তিন মাসেরও বেশী সময় আগে। কিছু লেখক মনে করছেন যে গত মাস নির্বাচনী প্রচারনার সময় ছিল বলে সরকার এই ব্যাপারটা ‘চেপে’ গেছেন।

সাম্প্রতিক একটা অগ্রগতিতে, সরকার এই নার্সিং হোমকে নতুন রোগী নেয়ার ব্যাপারে নিষেধাঞ্জা দিয়েছে। মি: ব্রাউন.কম এটা অদ্ভুত হিসেবে ভাবছেন যে এই নার্সিং হোমকে কেবলমাত্র শাস্তি হিসাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে:

কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি, কারো মাথা কাটা যায়নি, আর নার্সিং হোমকে কেবলমাত্র নতুন রোগী নিতে মানা করা হয়েছে। ভয়াবহ।

টুইটার আর ফেসবুকের কিছু মন্তব্য:

@ইভান লিবি: নাইটিংগেল নার্সিং হোম নতুন সিঙ্গাপুর কুস্তিগির তৈরি করছেন? বৃদ্ধদের বিছানায় আছড়িয়ে ফেলে, মুখে চড় মেরে…

চ্যান সিএল: স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উচিত এই নার্সিং হোমকে বন্ধ করে দেয়া। হোমের নাম তাদের জন্য লজ্জার বিষয়।

এই ব্যাপারটা সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান নিয়ে আলোচনা শুরু করিয়েছে। থেরেসা লুয়াং আর সুমাত্রা মেনন কিছু পদক্ষেপের কথা আলোচনা করেছেন সিঙ্গাপুরের বয়স্কদের ভালো স্বাস্থ্য সেবার জন্য:

দীর্ঘ সময়ের জন্য, সিঙ্গাপুরের দরকার স্থানীয় কর্মীদের জন্য সুবিধা বের করা দীর্ঘ সময়ের সেবার সেক্টরে যাতে বিদেশী কর্মীদের উপরে আমাদের নির্ভরতা কমে যায়। আমরা কিছু অবকাঠামগত পরিবর্তনের সমন্বয় প্রস্তাব করছি এই সকল কাজে বেতন, কর্ম জীবনের উন্নয়ন আর দেখাশোনার সমন্বয়ে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে বেতনের স্তর বৃদ্ধি করলে দীর্ঘ মেয়াদী সেবার কর্মক্ষেত্রে স্থানীয় কর্মীদের আকর্ষিত হওয়ার আর টিকে থাকার প্রবণতা বাড়বে। বেতন বৃদ্ধি একবারের বোনাস হিসাবে না দেখে ধাপে ধাপে পে স্কেলের মধ্যে ফেলতে হবে যা অনেক বছরের অভিজ্ঞতার পুরষ্কার হবে।

লেখকদের মত অনুসারে, আজকে সিঙ্গাপুরের বার জনের মধ্যে একজন সিঙ্গাপুরবাসী অন্তর ৬৫ বছর বয়স্ক কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচ জনের মধ্যে একজন বয়স্ক নাগরিক হবেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .