এই প্রবন্ধটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।
সকলেই বাসার আল আসাদকে ঘৃণা করে। সিরীয় নাগরিকরা তাকে ঘৃণা করে। সিরিয়ার নারীরা তাকে ঘৃণা করে। এমনকি এক মধ্য বয়সী আমেরিকান নাগরিক যে নিজেকে এক সমকামী সিরীয় নারী হিসেবে উপস্থাপন করেছে, সেও বাসারকে ঘৃণা করে। কিন্তু এটা কি সম্ভব নয় যে কিছু সিরীয় নাগরিক সত্যি তাকে ঘৃণা করে না যতটা আমরা ধারণা করি? আমি কখনো ধারণা করিনি যে নেট নাগরিকদের আল আসাদের প্রতি সমর্থন করে থাকতে পারে, কিছুদিন আগে একজন সিরীয় নাগরিক যিনি কানাডায় থাকে তিনি আমাদের প্রতি এই অভিযোগ করেন যে সিরিয়ার ক্ষেত্রে সংবাদ প্রদানের গ্লোবাল ভয়েসেস একপেশে সংবাদ প্রদান করছে, আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমের সাথে মিশে (নত হয়ে) আসাদ বিরোধী শিবিরে যোগ দিয়েছে। তিনি আমাদের বলেন যে আমরা যেন সিরিয়ার আরেকটি দিক তুলে ধরি, যা সাধারণ প্রচার মাধ্যম উপেক্ষা করে থাকে এবং আমরা যেন সেই সব লোকদের কণ্ঠস্বর প্রকাশ করি, বিপ্লবের ক্ষেত্রে যাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। এমনকি তিনি বিনয়ের সাথে সেই সমস্ত টুইটার ব্যবহারকারীর সন্ধান দেন যারা আমাদের থেকে ছয় মাত্রার এক বিছিন্নতার মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে”.
ঘটনাক্রমে, ২০ জুন ছিল বাসার আল আসাদের ভাষণ দেবার দিন। আল আসাদের প্রদান করা ভাষণের পর সিরিয়ার নাগরিকদের আবেগের মাত্রা পরিমাপ করার চেয়ে আর ভালো কোন সময় ভাবা যায় না। কাজেই আমরা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করলাম যারা বাসারকে সমর্থন তারা কি বলছে।
দিনা জাফরি একজন সিরীয় নাগরিক, ভদ্রমহিলা বাসারের ভাষণের ব্যপারে তার মন্তব্য প্রদান করেছে:
@দিনা জেফ: তার এই ভাষণ আমার পছন্দ হয়েছে, খুবই স্বাভাবিক, যৌক্তিক এবং স্বচ্ছ, এর চেয়ে কম বা বেশী কিছু আশা করিনি।
@ দিনা জেফ : তাদের জন্য বলছি, যারা একটি ভাষণে দেশটির সবকিছু বদলে যাবার আশা করে, তাদের টুইটার থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত, তাদের প্রায়শ বাস্তবের মানুষদের সাথে চলা উচিত।
শাহদি হিজাজি, যিনি ব্যবসা প্রশাসনে পিএইচডি করছেন, তিনি ের সাথে যোগ করেন যে আসাদের সমর্থনে লক্ষ লক্ষ লোক রাস্তায় নেমে এসেছে। যখন রাষ্ট্রপতি আসাদ অজস্র নাগরিকদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে, তার আগে ও পরে তার সমর্থনে এই সোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
@ শাহদি: রাষ্ট্রপতি আসাদের সমর্থনে #সিরিয়ায় লক্ষ লক্ষ লোক রাস্তায় নেমে পড়েছে, আর যারা ২০/৬/২০১১ এর আগে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাদের সকলের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।
সাতে হামজা সেই সমস্ত বিদেশীদের প্রতি সন্তুষ্ট নয়, যারা সিরিয়ার নাগরিকদের জন্য কথা বলে এবং আসাদের ভাষণের প্রতি জটিল মনোভাব প্রদর্শন করে থাকে।
@সাতে৩: যদি আপনি সিরিয়ার কোন নাগরিক না হয়ে থাকেন এবং #আসাদের ভাষণের ক্ষেত্রে ভালো কিছু খুঁজে না পান, তাহলে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন দরকার নেই, এটা আপনাদের কারো মাথা ঘামানোর বিষয় নয়।
হামজার টুইট সামাজিক প্রচার মাধ্যম এবং প্রচলিত প্রচার মাধ্যমে একটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, সেটি হচ্ছে তারা হয়ত মাঝে মাঝে সংবাদ উৎসের ভৌগলিক অবস্থানকে উপেক্ষা করেছে এবং অন্য কয়েকজনের কণ্ঠকে উপেক্ষা করে কারো কারো কন্ঠকে আরো জোরালো করেছে।
@মোশেবলি: আমার বন্ধুদের মধ্যে ৫ জনের সিরিয়ার বিপ্লবের পাতা পছন্দ করেছে…। তাদের চারজন লেবাননের এবং একজন সিরিয়ার :S ( আমার অজস্র সিরিয়ার বন্ধু রয়েছে)
@দিনা জেফ: যারা মনে করে যে টুইটার হচ্ছে আসল জায়গা এবং সকল সংবাদের উৎস…ছো, তাহলে তার এর বাইরে যাবার এবং একটা বাস্তব জীবনে প্রবেশ করার দরকার! একটা সত্যিকারের জীবনে!
আর প্রচলিত প্রচার মাধ্যমের বেলায় বলা যায়, আল জাজিরা এবং আল আরাবিয়া হচ্ছে এই এলাকার সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদ টিভি চ্যানেল এবং তাদের সংবাদ প্রচারের কারণে তাদের উপর অভিযোগ করা হচ্ছে। মোহাম্মেদ সাবিব, অউলাবি এবং নাই-এর মতে, তারাও একপেশে খবর প্রচার করে থাকে:
@মহাম্মেদ_সাবিব: যখন লক্ষ লোকের এইসব শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় তখন @আলজাজিরা এবং @আলআরাবিয়া, তোমরা কোথায় থাক??? সিরিয়া নিরাপদ রয়েছে এবং সবসময় থাকবে 🙂
@নাইয়ি৩০: আল জাজিরা সেই সমস্ত লক্ষ লক্ষ লোকের কথা প্রচার করে না যারা বর্তমান রাষ্ট্রপতি চায়, তার বদলে তারা সেই সব শত শত লোকের কথা বলছে, যারা তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে চায় না?! লেক তেফ। [কি নির্বোধ!]
@অউলবি: এটা এখন পরিষ্কার যে সিরিয়া “বিপ্লব” সিরিয়ার জনগণ নয়, কিছু প্রচার মাধ্যমের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। #সিরিয়া #আলজাজিরা
এছাড়া বিদেশী প্রচার মাধ্যমের উপরও অভিযোগ করা হয়েছে।
@মোশেবিলি: আপনার বিদেশী সংবাদ মাধ্যম ও আল জাজিরা দেখার দরকার নেই এবং এই যদি দেখেন, তবে বিশ্বাস করবেন না যে জনতা যা চায় তারা তাই বলছে। কারণ তারা একপেশে সংবাদ প্রকাশ করে#সিরিয়া
ঘাসান, চিকিৎতসা বিজ্ঞানের এক ছাত্র, যে লেবাননে বাস করে। সে বিশ্বাস করে যে সমগ্র আরবের এই বসন্ত (বিপ্লব) পশ্চিমের এক উদ্ভাবন।
দিনা – যে আকস্মিক ঘটনায় বিশ্বাস করে না – এবং আরকে বিশ্বাস করে যে এই অঞ্চলে বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য এক পরিকল্পনা করা হয়েছে
@৩প্লাস১ টুইটার: সকলেই পরিবর্তন চায়। কেউ কেউ চায় নৈরাজ্য। এবং “কেউ কেউ” “সকলের” নামে এই কাজ করছে ।
দিক এল-জেন এর সাথে যোগ করেছে এই ষড়যন্ত্রে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগ দিয়েছে।
@দিকেলজেন৯৬৩: ইরাকী বন্ধু: আমি বাসার আল আসাদের ভক্ত নই, কিন্তু সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়াকে অন্য এক পরিকল্পনার কারণে তাকে জোর করে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অপসারণের পক্ষপাতি নই।
তবে অউলাবি তাদের সাথে সামান্য ভিন্ন মত পোষণ করে, যেহেতু সে সিরিয়ার পরিস্থিতির সাথে মিশর এবং তিউনিশিয়ার পরিস্থিতির পার্থক্য দেখতে পাচ্ছে।
@ অউলাবি : মিশর/তিউনিশিয়ার বিপ্লবের সাথে সিরিয়ার বিপ্লবের পার্থক্য হচ্ছে, #সিরিয়ার বেশিরভাগ জনতা পরিবর্তন সমর্থন করে না।
এবং যেহেতু সিরিয়ার শাসকদের সাথে ইরানের এক ধরনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে, সে কারনে এই অঞ্চলে অস্থিরতার জন্য ইরানের নাগরিকদেরও দায়ী করা হচ্ছে, এবং যে সমস্ত সিরীয় নাগরিক বাসার আল আসাদকে সমর্থন করে, তারা ইরানীদের বিশ্বাস ঘাতক হিসেবে অভিযুক্ত করছে, যদি এই সমস্ত অভিযোগ বিষয়ক কিছু শব্দ ইতিহাসের পাতা থেকে ধার করা হয়েছে।
@অউলাবি: এই সব ঘটনার সাথে ইরানী নাগরিক বা কোন হেজবুল্লাহ যোদ্ধাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এটা যে কোন সময়ের সবচেয়ে সেরা রসিকতা।
এবং সবশেষে, মোশেবলি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছে যেন তারা সিরিয়াকে নিজের হাতে ছেড়ে দেয়।
@ মোশেবলি : বিশ্বের মানুষদের কাছে একটা বার্তা। সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা তাদের রাষ্ট্রপতির প্রতি আস্থাশীল, কাজে আমাদেরকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিন!
এই প্রবন্ধটি সিরিয়া বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ।