চীনঃ লি নার শিরোপা জয়, জাতীয় গর্ব?

চীনের টেনিস খেলোয়াড় লি না প্রথম চীনা খেলোয়াড় হিসেবে টেনিসের কোন গ্র্যান্ডস্লাম প্রতিযেগিতায় বিজয়ী হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে কোন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চীনের যে কোন খেলোয়াড়ের জয় জাতীয় গৌরবের সাথে তা উদযাপন করা হয়। তবে লি নার ক্ষেত্রে নেট নাগরিকরা এই জয়কে ব্যক্তির জয় হিসেবে উদযাপন করছে এবং তারা দেশটির ক্রীড়া নীতি সম্বন্ধে প্রশ্ন করছে।

যেমনটা চায়না মিডিয়া প্রজেক্ট খেয়াল করেছে, পিপলস ডেইলি ৫ জুন, ২০১১ তারিখে প্রকাশিত সংখ্যায় লি নার এই জয়ের সংবাদটিকে শিরোনাম করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে এমনকি লি নার শিরোপা জয়ের আগে সিনা. কমের ক্রীড়া চ্যানেল [ চীনা ভাষায়] এই টেনিস ম্যাচটিকে ঘিরে জাতীয় গৌরবের অলংকার প্রদানের চেষ্টা করে এই সংবাদটি আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয় এবং তা সিনা ওয়েবও–তে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। ৩ জুন, ২০১১ তারিখের সংবাদ পড়ুন:

【李娜带着13亿人的冠军梦前进】2011年,@李娜 注定感动中国!从年初闯入澳网决赛,到战胜莎拉波娃闯入法网决赛的瞬间,李娜带着13亿中国人的大满贯梦想再一次站在国际舞台上!当之无愧成为中国体坛代表人物,亚洲体坛的No.1!两天之后,李娜将在法网冲击冠军,让我们为娜姐加油!http://t.cn/aoKYNQ

লি না ১৩০ কোটি চীনা নাগরিকের স্বপ্নের মধ্যে দিয়া শিরোপা জেতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে] @লি না চীনকে অনুপ্রাণিত করছে! অস্ট্রেলিয়া ওপেন থেকে ফ্রেঞ্চ ওপেন, লি না আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এগিয়ে যাচ্ছে চীনের ১৩০ কোটি জনতার স্বপ্ন পুরনের মধ্যে দিয়ে। সে চীনা ক্রীড়া অঙ্গনের একজন প্রতিনিধি এবং এশিয়ার ১ নম্বর টেনিস তারকা! দুইদিন পরে সে ফ্রান্সে ফরাসী ওপেন টেনিস প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয়ের জন্য লড়বেন, আসুন আমরা ভগ্নি লি নার জন্য তৈল মর্দন করি।http://t.cn/aoKYNQ
Li Na wins the 2011 Grand Slam Final. Photo by Flickr user Lucian_ge (CC BY 2.0).

এর মন্তব্য বিভাগে প্রায়, ৯০০ এর মত মন্তব্য এসেছে, তবে তার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মন্তব্য তা জাতীয়তাবাদী যে আবেগীয় বর্ণনা, তার মধ্যে পানি ঢেলে দিয়েছে:

Zaraki_ 李娜只代表她自己,别用13亿这个数字来被代表 (6月4日 21:13)

广州滔仔 确实如此,WTA职业联赛又不是奥运会,这纯粹是个人职业赛事,跟国家屁关系没有,说什么带着13亿人的梦前进简直让人笑话,WTA的双打比赛经常是两个不同国家的运动员组合参赛的,那如果这样岂不是要带着A国家的人口+B国家的人口的梦前进了?(6月4日 17:12)

上官雪小耶 新浪煽情无处不在,你又知道13亿人的梦想是啥?至少我的梦想是能住上好房子,吃上安全吃的,看病不要钱,上学不要钱,交的税都用去照顾孤儿寡妇弱势群体,谁想去国际舞台了啊?人家娜姐的梦想大家祝福她就是了,非得搞那么大顶帽子,好像输了就要自绝与江东父老一样。(6月4日 11:37)

新疆老黄牛 也是为自己挣钱,与工人农民没有任何关系。(6月3日 12:47)

জারকি_, লি না কেবল তার নিজেকে প্রতিনিধিত্ব করে, তার ১৩০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার দরকার নেই। (জুন ৪ ২১.১৩)

广州滔仔 ডাব্লিউটিএ (ওয়ার্ল্ড টেনিস এসোসিয়েশন) অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় নয়, এটা নিছকই একটা ব্যক্তিগত পেশাদার ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং এর সাথে রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই। সে ১৩০ কোটি জনতার স্বপ্নকে বহন করছে এই কথাটা বলা এক ধরনের রসিকতা। ডাব্লিউটিএ নামক প্রতিযোগিতায় এমনকি ভিন্ন ভিন্ন দেশের খেলোয়াড়রা এক সাথে দ্বৈত প্রতিযোগিতায় জুটি বেঁধে খেলায় অবতীর্ণ হয়। তাহলে কি আমরা বলতে পারি যে এই দুই খোলোয়াড় কি অমুক বা তমুক দেশের সকল মানুষের স্বপ্নকে ধারণ করে? (জুন ৪ ১৭:১২)

新疆老黄牛, সে এর মাধ্যমে তার জীবিকা নির্বাহ করে। শ্রমিক বা কৃষকের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। (জুন ৩ ১২.৪৭)

যে কারনে নেটিজেনরা লি নাকে জাতীয় গর্বের সাথে সম্পৃক্ত করছে না, তা হল তার ব্যক্তিগত ইতিহাস। লি নার জন্ম ১৯৮২ সালে, হুবেই প্রদেশে, তার পিতা লি সেংপাং ছিলেন এক ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ের, কিন্তু চীনে সংঘটিত সংস্কৃতিক বিপ্লবের কারণে তিনি অল্প বয়েসে তার ক্রীড়া জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাইতে বাধ্য হন। লি নার বয়স যখন ১৪ বছর, তখন তিনি মারা যান। ছয় বছর বয়স থেকে লি না ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করে তবে যখন তার বয়স ৯ বছর তখন সে ব্যাডমিন্টন ছেড়ে টেনিস খেলা শুরু করে। ১৯৯৭ সালে সে জাতীয় দলে প্রবেশ করে এবং ১৯৯৯ সালে পুরোপুরি জতীয় দলের অংশ হয়। ২০০২ সালে সে জাতীয় দল ত্যাগ করে এবং ২০০৪ সালে জাতীয় দলে ফিরে আসে। ২০০৮ সালে সে আবার জতীয় দল ত্যাগ করে। ২০০৫ সালে জাতীয় দল এবং চীনা ক্রীড়া নীতির সাথে তার বিরোধ প্রকাশ্যে উঠে আসে [চীনা ভাষায়]। সে সময় চীনা টেনিস ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা এই বলে লি নার সমালোচনা করেন যে সে খুবই আত্মকেন্দ্রিক এবং ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে লি না চীনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে না।

মাইক্রোব্লগার আনউনাকি সিনা ওয়েবও–তে তার অনুসরণকারীদের লি নার সাথে রাষ্ট্রের ক্রীড়া নীতির দ্বন্দের বিষয়টির কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং সে সাথে দারুন এক বিতর্কিত প্রশ্ন ছুড়ে দেন, চীন, লি নার শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দাবী করার জন্য তুমি কি করেছ? [চীনা ভাষায়]:

#李娜威武#【中国,你凭什么为李娜夺冠而骄傲?】她曾经效力国家队,对中国僵化的体制彻底失望,比赛奖金也大部分被上层拿走。08年,她脱离体制,开始参加世界大赛,所有费用自理,每年依然上缴12%的广告费和8%的奖金。成绩不好,批评非议,夺得冠军,猪狗都赶来沾光。中国,你凭什么?

#লি না অদম্য, # [চীনা, লি নার শিরোপা জয়ের কৃতিত্বের দাবিদার চীন, তুমি তার জন্য কি করেছো] সে জাতীয় দলে যোগ দেয় এবং এর অনঢ় পদ্ধতিতে পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়ে। যে সমস্ত খেলাগুলোতে সে জয়লাভ করেছে, সে সব খেলায় জেতা অর্থের একটা বড় অংশ তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে [ ক্রীড়া নীতির মাধ্যমে], কাজেই সে ২০০৮ সালে এই নীতিকে বিদায় জানায় এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে নিজে নিজেই অনুশীলন করা শুরু করে। এখনো প্রতি বছর এই নীতিতে তাকে তার বিজ্ঞাপনী আয়ের ১২ শতাংশ এবং জয়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের ৮ শতাংশ সরকারকে প্রদান করতে হয়, যখন সে হেরে যায় তখন সে সব ধরনের সমালোচনার মুখে পড়ে, আর যখন সে জেতে তখন কুত্তা বেড়াল সবাই সেই জয়ের কৃতিত্বের দাবী করে শুরু করে। চীন, এ রকম এক কৃতিত্ব দাবী করার জন্য তুমি কি করেছ?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .