কেনিয়াঃ শান্তিতে ঘুমাও, স্যামুয়েল ওয়ানজিরু

পৃথিবী আজ সকালে বিশ্বের অন্যতম সেরা এক ম্যারাথন দৌড়বিদের মৃত্যুর খবরে জেগে উঠে। কেনিয়ার স্যামুয়েল ওয়ানজিরু যিনি তার দেশের হয়ে প্রথম বেইজিং অলিম্পিক প্রতিযোগিতার ম্যারাথন দৌড়ে স্বর্ণপদক জিতেছিল এবং শিকাগো আর লন্ডনের মত প্রধান সব ম্যারথন দৌড়ে রাজত্ব করেছে, সে তার বাড়ীর দোতালার বারান্দা থেকে লাফ দেবার সময় পড়ে গিয়ে নিহত হয়।

লাইকস পোর একটা ক্রীড়া ব্লগ, তারা সংবাদ প্রদান করছে:

কেনিয়ার স্থানীয় পর্যায় থেকে প্রাপ্ত সংবাদ অনুসারে অলিম্পিক ম্যারাথন বিজয়ী স্যামুয়েল ওয়ানজিরু তার বারান্দা থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মারা গেছেন। পরে কেনিয়ার সামরিক বাহিনী ধারণা দেয় যে, তার স্ত্রীর সাক্ষ্য অনুসারে, ২৪ বছর বয়স্ক এই দৌড়বিদ রোববার রাত ১১ টার সামান্য পরে, বাড়ীর বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়ার ফলে মারা যায়।

Samuel Wanjiru - Beijing Olympics 2008 (courtesy of www.mzungofire.blogspot.com).

স্যামুয়েল ওয়ানজিরু- ২০০৮-এর বেইজিং অলিম্পিকে (www.mzungofire.blogspot.com-এর সৌজন্যে)

এই পোস্টে অন্য সব ম্যারাথন দৌড়বিদ-ও মন্তব্য করেছে, যারা তার মৃত্যু নিয়ে টুইট করেছে। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে রায়াহ হাল। সে লিখেছেঃ

স্যামি ওয়ানজিরুর ঘটনা শুনে খুব মন খারাপ হয়ে গেল। সে ছিল এক প্রবাদ প্রতিম দৌড়বিদ এবং বয়সে ছিল তরুণ।

ব্রিটেনের দুরপাল্লার দৌড়বিদ মো ফারাহ টুইট করেছেঃ

স্যামি ওয়ানজিরুর খবর শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। সে ছিল এক খ্যাতনামা দৌড়বিদ এবং এখনো যথেষ্ট তরুণ।

নীরজ ভুষন, ভারতের একজন ব্লগার এবং সাংবাদিক, তার যেন এই কথা গুলো বলার ছিল:

আহ! যদি সে বুঝতে পারত জীবনটাও একটা ম্যারাথন দৌড় এবং তাকে এই দৌড়ে জিততে হবে, শান্তিতে ঘুমাও, হে তরুণ।

Samuel Wanjiru 2008 SOYA Winner - (courtesy of SOYA).

সোয়া ২০০৮ বিজয়ী স্যামুয়েল ওয়ানজিরু- (সোয়ার সৌজন্যে প্রাপ্ত)

স্পোর্স্টস কেনিয়া স্যামুয়েলের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে। স্যামুয়েলের প্রধান প্রধান যে সব অর্জন করেছে, তার এক বিস্তারিত এক বর্ণনা করছেঃ

তার জীবনের বিস্তারিত সব অর্জন আমাদের প্রদর্শন করে যে, সে কেনিয়ার অন্যতম এক সেরা ম্যারাথন দৌড়বিদ পরিণত হতে যাচ্ছিল, যার ফলে ২০০৫ সালে বছরের সবচেয়ে সেরা প্রতিশ্রুতিশীল দৌড়বিদের পুরষ্কার সে লাভ করে। একই বছর রটারডামের হাফ ম্যারাথন নামে পরিচিত দৌড় প্রতিযোগিতায় রেকর্ড গড়ে সে বিজয়ী হয়। সে প্রথম কেনিয়ার নাগরিক, যে বেইজিং অলিম্পিক প্রতিযোগিতার ম্যারাথন দৌড়ে স্বর্ণ পদক লাভ করে এবং একই বছরে লন্ডন ম্যারাথনে ২য় স্থান অধিকার করে সে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য এক সতর্ক বার্তা পাঠায়।
অন্যতম প্রধান যে প্রতিযোগিতায় সর্বশেষ সে শিরোপা জিতেছিল সেটি ছিল শিকাগো ম্যারাথন, যেখানে সে বিশেষ ভাবে এই প্রতিযোগিতা জয় লাভ করে, কারণ শেষ কয়েক মাইল তার ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছিল ইথিওপিয়ার দৌড়বিদ তাসেগায়ের কেদাবে। অন্য যে সমস্ত প্রধান প্রতিযোগিতা সে জিতেছে, সেগুলো হল
২০০৮ সালে কেনিয়ার সেরা ক্রীড়াবিদের পুরষ্কার;
২০০৮ সালে এইমস/এসাআইসিএস-এর বিশ্বের ক্রীড়াবিদের পুরষ্কার (পুরষ্কার এসাআইসি-এর সৌজন্যে)
২০০৯ সালে লন্ডন এবং শিকাগো ম্যারাথন
২০১০ সালে শিকাগো ম্যারাথন
তার এই সব অর্জনের ফলে জাপান থেকে তাকে স্পন্সর করা হয় এবং প্রতি দৌড়ে অংশ নেবার জন্য তার অর্থের পরিমাণ ৫০,০০০ -থেকে ১০০,০০০ মার্কিন ডলার করা হয়। এর আগের এক পোস্টে স্পোর্টস কেনিয়া তাকে ২০১০ সালের অন্যতম সেরা অর্থ উপার্জনকারী ক্রীড়াবিদ হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা এইসব বিষয় সম্বন্ধে খুব সামান্য জানতাম।

কেনিয়ান ব্লগার মোম্বাসা৪১১ সংবাদ প্রদান করেছে যে প্রাথমিক তদন্ত নির্দেশ করছে যে তার আত্মহত্যার কারণ তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া:

ওমবাতি বলছে, যে ক্রীড়াবিদের স্ত্রী ত্রিজা নেজেরি বাসায় ঢুকে তাদের বিছানায় ক্রীড়াবিদকে অন্য নারীর সাথে আবিষ্কার করে। নেজেরি এরপর বেডরুমের দরজায় তালা লাগিয়ে দুজনকে সেখানে আটকে রাখে এবং বাসা থেকে নিজে দৌড়ে বের হয়ে যায়। এর পরপরই ওয়ানজিরু বাড়ীর বারান্দা থেকে লাফ দেয়। ওমবাতি বলেন, নেজেরি এবং ওয়ানজিরু সঙ্গিনী এই মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশকে সহায়তা করছে। একই সূত্র নির্দেশ করছে যে ওয়ানজিরু কেনিয়ার রিফট ভ্যালি প্রভিন্স নামক প্রদেশের নাকুরু- নামক এলাকার এক পানশালায় মদ্যপান করে এবং পরে নায়াহুরুহুরু-তে তার বাসায় ফিরে আসেন। সুত্র আরো জানাচ্ছে উক্ত ক্রীড়াবিদ তার জীবনের শেষ আহার শহরের ‘টাস’ নামক জায়গার গ্রহণ করে, এরপর সে মার্থা নামের পতিতা-কে তার বাসায় নিয়ে যায়। এর সাথে এ রকম আলোচনা হচ্ছে, যখন তার স্ত্রী উভয়কে হাতেনাতে পাকড়াও করে, সে সময় তার স্ত্রী এবং উক্ত পতিতার মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়।

এই সংবাদটি টুইটারের শিরোনামে পরিণত হয়েছে, #স্যামুয়েলওয়ানজিরু হ্যাশট্যাগ এর মাধ্যমে তা সহজেই এক আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়।
এই বিষয়ে ইথিওপিয়ার প্রবাদ প্রতিম দৌড়বিদ হাইলে গেব্রেলসেলেসির প্রতিক্রিয়া:

স্যামি ওয়ানজিরুর মৃত্যুতে আমি একেবারে হতবাক হয়ে গেছি।

এই বিষয়ে অন্য সব টুইটার ব্যবহারকারীরাও মন্তব্য করেছে:

@গিগিথুঃ : পড়ে গিয়ে অলিম্পিক বিজয়ী ওয়ানজিরু মারা গেছে……খুব বেদনাদায়ক এক ঘটনা, শান্তিতে ঘুমাও স্যামি, আমার তোমার অভাব অনুভব করব।

@মোনেসিলিওঃ ওয়ানজিরুর ঘটনায় হতবাক… সে ছিল ভবিষ্যৎ, ম্যারাথনে বিশ্ব রেকর্ডধারী শান্তিতে ঘুমাও।

@লাকিকিমঃ শান্তিতে ঘুমাও#স্যামুয়েল ওয়ানজিরু। এক অসময়োচিত, অপ্রয়োজনীয়, খুবই খারাপ ধরনের এক মৃত্যু।

ক্যাপিটালএফএম_কেনিয়াঃ যে মেয়েটি#স্যামুয়েলওয়ানজিরুর সাথে তার বাসায় গিয়েছিল সে এক মদ সরবরাহকারী বালিকা, সে বাকী ১৩,০০০ শিলিং নিয়ে আসার জন্য ওয়ানজিরুর সাথে গিয়েছিল-পুলিশ

@ডার্টিলাক্সারি (ভিভিয়ান): তার ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা সত্বেও #স্যামুয়েলওয়ানজিরু অভাব অনূভুত হতে থাকবে, সে তার কাজের মাধ্যমে সুন্দরভাবে কেনিয়াকে উপস্থাপন করত। শান্তিতে ঘুমাও।

@এনিগমাহ_ডিজেঃ যখন সকলে কথা বলে এবং সকলে শুনে, তখন সব সময় সত্য হারিয়ে যায় #স্যামুয়েলওয়ানজিরু

@ওয়ামাথাইঃ শান্তিতে ঘুমাও #স্যামুয়েলওয়ানজিরু, তুমি নিখুঁত ছিলে না, কিন্তু তুমি ছিল অবিশ্বাস্য এক দৌড়বিদ

@মাইকয়াওয়াম্: কেবল এক ভাবনা মাত্র, আমরা এই সপ্তাহে সকল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এক মিনিট নিরবতা পালন করে #স্যামুয়েলওয়ানজিরুকে সম্মানিত করব।

শান্তিতে ঘুমাও স্যামুয়েল ওয়ানজিরু

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .