আজারবাইযানঃ নওরোজ বাইরামি

নওরোজ একটি উৎসব যা ইরান,আফগানিস্তান এবং অন্যান্য দেশে পালিত হয়। এবার ২১ মার্চ তারিখে আজারবাইযানে এই উৎসব উদযাপিত হল। সপ্তাহব্যাপী বর্ণাঢ্য এ উৎসব গত সপ্তাহে শুরু হয়েছে, যার প্রতিবেদন গ্লোবাল ভয়েসেস-এ দেওয়া হয়েছে, এবার বিস্তারিত প্রতিবেদনএখানে এবং এখানে প্রদান করা হল। গত বছরের মত এ বছরও প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পিস কোর ভলান্টিয়ারগণ ( পিসিভি বা শান্তি রক্ষী) এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আবারো মন্তব্য করেছেন। লারকান শহর ভিত্তিক পিসিভি-এর কর্মীরা আলোইনক ইন আজারবাইযান-এ, তাঁদের পাঠকদের জন্য নওরোজকে উপস্থাপন করেছেন

প্রত্যেককে নওরোজের শুভেচ্ছা ! মার্চের ২০ এবং ২১ তারিখ এ দুই দিন সরকারিভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নওরোজ উদযাপন করা হয়। বন্ধের এ দিনগুলোতে একাধিক ঐতিহ্যকে পালন করা হয়। অনেক পরিবার প্রতি বছর অঙ্কুরিত ঘাস গজায় এবং তা তাঁদের বাড়ীর উঠোনে নববর্ষের শুরুতে রোপণ করে […] ঘাসগুলো চিয়া পেটের [ বিশেষ উদ্ভিদ, যা অনেকটা প্রাণীর চেহারা নেয়] মত বেড়ে উঠে। অঙ্কুরিত না হওয়া পর্যন্ত বীজগুলোকে একটি তেল মাখানো পাত্রে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। প্রধান পার্থক্য হল ঘাসগুলো কোন প্রাণীর আদলে বেড়ে উঠে না। ঘাসগুলো অনেকটা থালার আকৃতিতে গোলাকার ভাবে বেড়ে উঠে।

আরেকটি ঐতিহ্য হচ্ছে খাবার। লাভাংগি নামে পরিচিত লানকারানদের একটি খাবার এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। খাবারটি মুরগী বা মাছ দিয়ে তৈরি করা হয়। এটা খুবই সুস্বাদু এবং আমার একটি অন্যতম প্রিয় খাবার। লানকারানরা ভাত আর মিষ্টি কিসমিস দিয়ে লাভাংগি মাছ বা মুরগী পরিবেশন করে এবং নাম না জানা আরো নানারকম খাবার পরিবেশন করে। খাবারগুলো সবই ভালো। সাধারণতঃ মাছের বিকল্প থাকলে আমি সেটাই পছন্দ করি। এটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দ। তাঁরা অনেক ভাল মিষ্টি আর পিঠা বানায়, আর আমি পাগলের মত মুরগী, ভাত ও মিষ্টি খাই।

[…]

এ দিনগুলো অন্যতম বড় ছুটির দিন হিসেবে বিবেচ্য এবং এ ছুটি উদযাপনের জন্য আনন্দে মেতে ওঠার জন্য সবাই উদগ্রীব হয়ে থাকে। এ চার দিন আমরা কোন কাজ করি না। আর বলুন এমন দিনগুলো-কে না উপভোগ করতে চায়?[…]

নওরোজে আজ়েরি শিশুদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক © অননিক ক্রিকোরিয়ান।

দি লেবার অফ আদার ম্যান জানাচ্ছেন তিনি তার স্বদেশের উৎসবের সাথে এ দেশের উৎসবের কিছু মিল দেখতে পাচ্ছেন, এ দিন লোকেরা বাড়ীতে ইস্টারের মত চালাকি এবং হ্যালোউইনের মত কৌশল গ্রহন করে থাকে।

আজারি ছুটির দিনগুলো জোরাস্ট্রিয়ান সংস্কৃতির মূল থেকে আগত- জল,আগুন,মাটি আর বাতাসের পূজার মাধ্যমে নব জীবন উদযাপন। অনানুষ্ঠানিক ভাবে মার্চের প্রথম মঙ্গলবার পোলভ ( পোলাও/ভাত- জাতীয় খাবার হিসেবে বিবেচিত) খাওয়া এবং আগুনের উপর ঝাঁপ দেওয়ার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নওরোজ শুরু হয়।এ অনুষ্ঠান চলে প্রতি মঙ্গলবার চতুর্থ সপ্তাহ( ২০-২৮) পর্যন্ত। এ সময় জুড়ে প্রত্যেকেই কাজ থেকে ছুটি নেয় এবং পরিবার ও প্রতিবেশীদের সাথে উৎসবে মেতে উঠে। নওরোজের কিছু বৈশিষ্ট্য হল: নওরোজে সামানি(গম) লাগানো হয়-এটা বসন্তের নব জীবনের প্রতীক। “বসন্ত” পুরোনোকে মুছে ফেলে নতুনকে সাজায়। ডিম রং করা-এ খেলায় দু’জন তাঁদের সিদ্ধ রং করা ডিম দিয়ে পরস্পরের ডিমকে আঘাত করে যার রং করা ডিম ফেটে যায় সে হেরে যায়। বাড়ী বাড়ী গিয়ে চকলেট সংগ্রহ- ছেলেরা প্রতিবেশীদের বাড়ীতে যেয়ে মাথার টুপি খুলে বাড়ীর দরজায় কড়া নেড়ে পালায়… প্রতিবেশীরা তাদের টুপিতে চকলেটে ভরে দিয়ে দরজা বন্ধ করলে, ছেলেরা আবার এসে তা সংগ্রহ করে- অনেকটা আইরিশদের উত্সবের মত শোনাচ্ছে? আমি নিশ্চিত যে আরো অনেক কিছু বলার আছে। আপনাদের জন্য কিছু ছবি দিয়ে আমি এখন যাচ্ছি…

ইস্ট মিটস ওয়েস্ট মিটস গার্লস এর প্রস্তুতির বিষয়টি তুলে ধরেছে।

যখন আবহাওয়া খুব বাজে থাকে, সেই সময় বিদ্যুত যখন মুর্হূতের নোটিশে আসা যাওয়া করতে থাকে। বিদ্যুৎ-এর এই আসা যাওয়া শহুরে মহিলাদের এক আতঙ্কের মধ্যে রাখে, কারণ তারা আগত ছুটির দিনটির, যা নওরোজের দিন তার জন্য কেক প্রস্তুত করার চেষ্টা করতে থাকে। নওরোজ নতুন বছর/বসন্তকাল হিসেবে উদযাপন করা হয়। নওরোজ হচ্ছে একটা সপ্তাহ; এবং একটি ছুটির দিন যাকে আপনি উপেক্ষা করতে পারেন না বা উপেক্ষা করতে চান না। নওরোজ আজারবাইযানের সকল সংস্কৃতির সম্মেলন এবং সেগুলোকে খোঞ্চার মাঝে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়। খোঞ্চা হচ্ছে নওরোজ টেবিলে একটা মাঝখানের এক অংশ […]। খোঞ্চার মাঝে যা রয়েছে তার একটা অর্থ আছে এবং তা যতই ভিন্ন বা পরস্পর বিপরীত হোক না কেন, তারা এক ভাবে এক সাথে থাকার উপায় খুঁজে বের করে । আজারবাইযানী সংস্কৃতিতে পরিবার সবকিছুর কেন্দ্রে অবস্থান করে। তারা একে অন্যের যত্ন নেয়, আর যদি একবার আজারবাইযানী পরিবারের অংশ হয়ে যাওয়া যায়, তাহলে আপনি সব সময় পরিবারের অংশ হয়ে থাকবেন। আজারবাইযানিদের মতে, যে নওরোজ ঘরে আসার উপলক্ষ্য, সে সময় যারা ঘরে আসবে না, তারা সাত বছরের জন্য গৃহহীন হয়ে থাকবে। বাড়তে থাকা ঘাস এবং রঙ করা ডিম আজারবাইযানের জোরাস্ট্ররিয়ান অতীতকে নির্দেশ করে। আগুনের সামনে দিয়ে সাতবার লাফিয়ে যাওয়া ইসলামিক ঐতিহ্য থেকে এসেছে। মিষ্টি রান্না আশে পাশের সকল এলাকার এক বিশেষ কর্মকাণ্ড, যেখানে মেয়েরা ঘন্টার পর ঘন্টা একে অন্যকে সাহায্যের মাধ্যম শত শত মিষ্টি তৈরি করে। বাদাম, যা ভাঙ্গা এক অদ্ভুত কঠিন বিষয়, তা সময় সময় জীবন যে কঠিন তার এক প্রতীক, কিন্তু ধারাবাহিকতার একটা পুরষ্কার রযেছে এবং অবশ্যই কঠোর পরিশ্রমী আজারবাইযানের নারী এবং কিশোরীরা এই সকল প্রস্তুতির কাজের বেশির ভাগই সম্পন্ন করে থাকে।.

এটা কেবল আজারবাইযানে বসবাসরত আজারবাইযানিদের মাঝে ছুটির দিন নয়, যেখানে নওরোজ পালন করা হয়। আর ইয়ু দেয়ার মেরিনা? ইটস মি জেফারসন? ছুটির দিনের বিষয়ে মন্তব্য করেছে মূলত জর্জিয়ার এক আজ়েরি শহর মারনেউলিতে তার বাস। এই শহরে এই দিনটি ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয়।

কাজেই সোমবার হচ্ছে নওরোজ বাইরামির দিন । এই দিনটি আজেরিরা বসন্ত এবং নববর্ষ হিসেবে পালন করে। […] জর্জিয়া এবং আজারবাইযানের রাষ্ট্রপতি সহ বিখ্যাত এক আজ়েরি গায়ক মানানা, আমার শহরে এসেছে! তারা নতুন এক স্পোর্টস কমপ্লেক্সে-এর প্রকাশ্য উদ্বধোন করেন। আজারি সরকারের অর্থ সাহায্য এই কমপ্লেক্স তরি করা হয়েছে। তারা সকল গাছগুলোকে নতুনভাবে সাজিয়েছে, রাস্তার সকল চিহ্ন নতুন করে সাজিয়েছে করেছে এবং যদি কোন কিছুর রং প্রযোজন হলে পরে তার রং করেছে এবং সেটিকে পরিস্কার করেছে ফেলেছে। ধীরে ধীরে আমার শহর সামান্য সুবিধা পাওয়া শুরু করেছে । আমি আমার এক ছাত্রের সাথে কথা বললাম এবং আমি এই নতুন জিমের (ব্যায়ামাগারের) সদস্য হবার জন্য আগ্রহী, যদি তা আর্থিক ভাবে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।

[…]

একটি দিনে আসলে এতটা সামান্য সময় থাকে এবং আমি আনন্দের সাথে বলতে চাই যে আমি অনুভব করছি যে আমি তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করছি। সকলকে নওরোজের শুভেচ্ছা!!

গ্লোবাল ভয়েসেস-এরএর ককেসাস এলাকার সম্পাদক মারনেউলি এলাকা ভ্রমণ করার সময় আতিথিয়তা এবং নওরোজের ছবির জন্য সর্ব শেষ ব্লগারকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .