ইউক্রেন: স্ট্যালিন চা এক বিতর্ক উসকে দিয়েছে

সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা যাচ্ছে [ ইউক্রেনীয় ভাষায়], ৪৬ শতাংশ ইউক্রেনের নাগরিক সোভিয়েত শাসনামলের প্রতি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন, তবে এদের বেশির ভাগই পেনশনভোগী নাগরিক, এবং তারা একই সাথে দেশটির পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা। এদিকে পশ্চিম ইউক্রেনের ১৮ শতাংশ বাসিন্দা এবং ১৯ শতাংশ তরুণ নাগরিক একই ধরনের আবেগকে ধারণ করে থাকে।

অল্প সময় আগে শেষ হয়ে যাওয়া কমিউনিস্ট অতীতের প্রতি এ রকম ঝাপসা হয়ে টিকে থাকা মনোভাবের বিষয়টি বিভিন্ন ধরনের পণ্য প্রস্তুতকারীরা আগ্রহভরে গ্রহণ করেছে, যারা বছরের পর বছর ধরে তাদের পণ্যকে বাজারে বিক্রি করা জন্য সোভিয়েত আমলের প্রতীককে ব্যবহার করে আসছে। তবে সম্প্রতি ইউক্রেনের নিজস্ব উৎপাদিত চায়ের প্রচারণার জন্য পণ্যের নাম সমালোচিত সোভিয়েত স্বৈরশাসক জোসেফ স্ট্যালিনের নামে রাখা হয়, যা ইউক্রেনের নেট নাগরিকদের মাঝে এক উত্তপ্ত আলোচনার সৃষ্টি করে, যাদের অনেকে মনে করে যে এবার এই পণ্যের বিপণন ব্যবস্থাপকেরা সীমা পার করে ফেলেছে।

ফ্রেব্রুয়ারি মাসে, দিনোপ্রোপেট্রোভস্ক শহরের ইন্টারেনট ফোরাম ব্যবহারকারী ভোতোরই বিলবোর্ড বিজ্ঞাপনের বেশ কিছু ছবি প্রদর্শন করছে, যা “স্ট্যালিন” নামক চায়ের বিজ্ঞাপন। সে এখানে এই কথাগুলো লিখেছে [রুশ ভাষায়]:

Впервые вживую вижу наружную полиграфию с изображением Сталина.

এই প্রথম আমি [বাইরে এক বিজ্ঞাপন] দেখতে পেলাম, কোথাও স্ট্যালিনের সত্যিকারের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে কয়েকজন ব্লগার খেয়াল করেছেন যে এই পণ্যটি তিন বছর ধরে মাঝে মাঝে বাজারে পাওয়া যায়, আবার মাঝে মাঝে পাওয়া যায় না। ২০০৮ সালে যখন প্রথম এই পণ্যটি দেখা যায়, তখন এলজে ব্যবহারকারী স্প্যারো_হক এই কথাগুলো লিখেছিল [ইউক্রেনের ভাষায়]:

спосіб заварювання: на крові. і поміцніше

যে ভাবে এটি ফেনিয়ে ওঠে: রক্তে গরম করে তোলে, এবং প্রচণ্ডভাবে

এলজে ব্যবহারকারী বুলাভেক, ডোনেৎস্ক এলজে কমিউনিটিতে একটি স্টোরের তাকে রাখা স্ট্যালিন চা-এর ছবি পোস্ট করেছে এবং লিখেছে [ইউক্রেনীয় ভাষায়] যে ২০০৯ সাল থেকে আবার তা ডোনেৎস্ক এবং দিনোপ্রোপেট্রোভস্ক-এ, এই চায়ের বিক্রি শুরু হয়েছে। সে সময় ক্রিমিয়ার এলজে ব্যবহারকারী তামিলা তাসেভা (তামিলা_তাসেভা) লিখেছিল [ইউক্রেনীয় ভাষায়] যে তার এলাকায় এই চা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না:

দৃশ্যত, এ বছর “স্ট্যালিন” চা আবার ইউক্রেনের বাজারে ফিরে এসেছে। কয়েকদিন আগে ফেসবুক ব্যবহারকারী ফাদার নিকোনার স্কিপিন এই চায়ের বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডের আরেকটি ছবি আমাদের প্রদর্শন করে, যে ছবিটি সম্প্রতি দিনোপ্রোপেট্রোভস্ক এলাকা থেকে নেওয়া হয়েছে:

ইউক্রেনের দিনোপ্রোপেট্রোভস্ক-এ, স্ট্যালিন চায়ের বিজ্ঞাপন। ছবি নিকানোর স্কিপিন-এর।

এই ছবির নীচে, সে নীচের প্রশ্নটি পোস্ট করেছে [ইউক্রেনীয় ভাষায়]:

ЯК ВАМ ПОДОБАЄТЬСЯ ТАКА ОСЬ ДУРНЯ ???

কি ভাবে আপনারা এই ধরনের নির্বুদ্ধিতা পছন্দ করেন???

ব্যবহারকারী ত্যায়াখোলাজ ইগোর একমত [ইউক্রেনীয় ভাষায়]:

дурня…

নির্বোধ…

ব্যবহারকারী ভ্লাদ পুপিয়েচ লিখেছে [ইউক্রেনীয় ভাষায়]:

боюсь, отруюсь.

[আমি] শঙ্কিত, যে আমি হয়ত বিষাক্রান্ত হতে পারি।

ব্যবহারকারী আলিনা লুকাশেভিচ লিখেছে [রুশ ভাষায়]:

хорошее чувство юмора у производителя))))))))))

এই পণ্য প্রস্তুতকারীরা উত্তম রসিক)))

এছাড়াও ব্যবহারকারী সের্গে বাচা মন্তব্য করেছে [রুশ ভাষায়]:

Этот чай судя по всему рассчитан на пожилых и очень пожилых людей, вот поэтому портрет Сталина взяли а основу. […]

যে কোন ভাবেই হোক, এই চা [বয়স্ক] নাগরিকদের জন্য, যে কারণে তারা এর প্রতীক হিসেবে স্ট্যালিনের ছবি বেছে নিয়েছে […][…]

ব্যবহারকারী ভ্যালেরি কোলাসিইয়ুক এর জবাব দিয়েছেন [ইউক্রেনীয় ভাষায়]:

Моїй бабці 89-ий рік. Не помічав у неї прихильності до Сталіна.

আমার দাদির বয়স ৮৯ বছর। আমি দেখিনি যে সে কখনো স্ট্যালিনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল।

বেলারুশের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী, এলেস রেজনিকভ লিখেছে [বেলারুশের ভাষায়]:

беларусау гэтым ня здзiвiш

এই বিষয়টি বেলারুশের নাগরিকদের তেমন বিস্মিত করেনি।

সোভিয়েত উত্তর যুগে আরেকটি দেশে বিপণনের জন্য স্ট্যালিনের ছবি ব্যবহার করা হয়, তার উদাহরণ আমাদের সামনে তুলে ধরে কিয়েভ ভিত্তিক এলজে ব্যবহারকারী এবং ফটোগ্রাফার বোগা৪ ২০১০ -এর কিছু ছবি পোস্ট করেছে। এই ছবিগুলো হচ্ছে মদের বোতলের যেগুলো জর্জিয়ার এক উপহারের দোকান থেকে নেওয়া। [জর্জিয়া জোসেফ স্ট্যালিনের জন্মভূমি]

জর্জিয়ার এক উপহারের দোকানে স্ট্যালিন নামক মদের বোতল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ছবি এলজে ব্যবহারকারী বোগা৪-এর।

যদিও ২০০৭ সালে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভিক্টর ইয়ুশচেঙ্কো হলোডোমোর (১৯৩২-৩৩ সালে সংঘটিত ইউক্রেনের কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের নাম)-এর জন্য যারা দায়ী তাদের সকল প্রতীক এবং মূর্তি নিষিদ্ধ করার এক আদেশ জারি করে (এই আদেশের মধ্যে সকল সোভিয়েত নেতা অর্ন্তভুক্ত রয়েছে), তবে এই নির্দেশ খুব কমই পালন করা হয়। ২০১০ সালের জাপোরিঝাঝিয়ায় স্ট্যালিনের মূর্তি ভাঙ্গার দায়ে তরুণ একটিভিস্টদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিচার করা হয়, এই বাস্তবতা বর্তমান প্রশাসনের মনোভাব তুলে ধরছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .