আইভরি কোস্ট: বিদেশী হস্তক্ষেপ কি বৈধ?

এই পোস্টটি আইভরি কোস্টের অস্থিরতা ২০১১ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

আইভরি কোস্টের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব হয়ত শীঘ্রই আবিদজানে শেষ হবে, যেখানে আলাসানে ওয়াট্টারার অনুগত বাহিনী রিপাবলিকান ফোর্স (এফআরসিআই) ৪ এপ্রিল, সোমবার লরা গাবাগাবোর বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এই শহরটি দখলের জন্য আক্রমণের সূচনা করে। ২০১০ সালের এক বিতর্কিত নির্বাচনের পর উভয়ে রাষ্ট্রপতি পদের উপর নিজের অধিকার দাবি করে যাচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে ওয়াট্টারাকে বিজয়ী বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গাবাগাবোকে বিতাড়িত করার জন্য যখন আক্রমণ চালানো শুরু হয়, তখন আনুষ্ঠানিক ভাবে সাধারণ নাগরিকদের রক্ষার কারণে বিদেশী শক্তির এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ওয়েবে উঠে আসে এবং সেখানে এই নিয়ে এক লম্বা বিতর্ক শুরু হয়।

Screenshot from video showing bombardment in Abidjan

(নীচের) এক সিটিজেন ভিডিওর স্ক্রিনশট দেখাচ্ছে যে, দুর থেকে আবিদজানের উপর বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে (৪এপ্রিল, ২০১১)

সেদিন সন্ধ্যায় আইভরি কোস্টে নিযুক্ত জাতি সংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত চৌ ইয়ং-জিন, বিবিসিকে জানান, আইভরি কোস্টে অবস্থানরত জাতি সংঘের শান্তি মিশন পরিচালনাকারী দল (ইউনাইটেড নেশনস আপারেশন ইন কোত দ’আইভরি বা ইউএনওসিআই) আবিদজানের এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন:

আমরা এখন আমাদের কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করছি, আমরা রকম সাধারণ নাগরিক এবং ব্লু হেলমেট নামে পরিচিত ভারী অস্ত্রে সজ্জিত জাতি সংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপর তাদের [গাবোগাবোর বাহিনীর] এই রকম বেপরোয়া এবং নির্দয় আক্রমণ সহ্য করব না।

ফরাসী রাষ্ট্রপতির দপ্তরের টুইটার একাউন্ট থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে:

@Elysée: Conformément à son mandat, l'#ONUCI vient d'engager des actions visant à neutraliser les armes lourdes contre les populations civiles.

তাদের প্রতি প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ইউএনওসিআই, সাধারণ নাগরিকদের প্রতি গুলি করতে থাকা ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ব্যক্তিদের নিরস্ত্র করার কাজ শুরু করেছে।

@Elysée: Le Secrétaire général des Nations Unies a demandé le soutien des forces françaises à ces opérations.

এই অভিযানে সাহায্য করার জন্য জাতি সংঘের সভাপতি ফরাসী রাষ্ট্রপতিকে ফরাসী সেনা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।

@Elysée: Le Président #Sarkozy a répondu positivement à la demande & autorisé les forces françaises à participer aux opérations conduites par l'ONUCI.

ফরাসী রাষ্ট্রপতি সারকোজি এই অনুরোধে সাড়া প্রদান করেছেন এবং ইউএনওসিআই-এর নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে অংশ নেবার জন্য ফরাসী সেনাদের অনুমতি প্রদান করেছেন।

হস্তক্ষেপের প্রত্যক্ষদর্শীরা

টুইটারে @লর্ড২২৫ এর মতে এই অভিযান গ্রীনিচ মান সময় বিকেল ৫.২২-এ শুরু হয়:

@Lord225: L'assaut est effectif, 17h22 bombardement de plusieurs positions du camp gbagbo, épaisse fumée dans l'air #civ2010

এই আক্রমণ বেশ কার্যকর হয়েছে, বিকেল ৫.২২-এ, গাবাগাবোর বাহিনীর বেশ কিছু কৌশলগত অবস্থানের উপর বোমা বর্ষণ করা হয়েছে, বাতাস ঘন ধোঁয়ায় ভরে গেছে।

এই অভিযান শুরুর ঘোষণা প্রদান করার পরপরই, আইভরি কোস্টের নেট নাগরিকরা বলছে যে তারা ফরাসী বিশেষ বাহিনী যে ধরনের সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে সেগুলোকে শহরে দেখতে পাচ্ছে ইজরায়েল ইরোবো, আইভরি কোস্টের একজন সাংবাদিক, বর্তমানে আবিদজানে তিনি টিভি৫ মনদ (উচ্চারণ টেভেসাংকমনদে) নামক ফরাসী টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন, তিনি তার টুইটার একাউন্টে পোস্ট করেছেন:

Je confirme que les camps d'Akouédo sont en train d'être pillonés par deux hélico. 1 Puma et 1 Mi 24. Faites le savoir au monde entier

আমি নিশ্চিত করছি যে, পুমা এবং এমআই২৪ নামক দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে আকোয়েডু শিবিরে এখন বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে। আসুন সারা বিশ্বকে এই ঘটনা জানাই।

পুমা হচ্ছে বিশেষ ভাবে আক্রমণের জন্য নির্মিত হেলিকপ্টার যা ফরাসী বিশেষ বাহিনী ব্যবহার করে থাকে, যেমনটা ডেইলিমোশানে পোস্ট করা এই ভিডিওটি প্রদর্শন করছে:

ইয়োরোবা, বর্তমান পরিস্থিতির আবিদজানের নাগরিকদের, তাদের নিজস্ব বর্ণনা তার এই ফেসবুকের পাতায় রেখে যাবার আহ্বান জানিয়েছেন:

Pendant que que la force française bombarde à Abidjan, des populations racontent en direct comment elles vivent ces tirs http://lnp.sn/Zwj

যখন ফরাসী নাগরিকরা আবিদজানের উপর বোমা বর্ষণ করছে, তখন সাধারণ নাগরিকরা সরাসরি আমাদের জানাচ্ছে, কি ভাবে তারা এই গোলাগুলির মাঝে টিকে থাকছে।

এখানে তাদের কিছু প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হল।
সেডরিক নাগোট্টা, যে আবিদজানে বাস করে, সে বলছে:

Je confirme c est pas les rebel mais les blancs qui nous pillone oh mon dieu!

আমি নিশ্চিত যে বিদ্রোহীরা আমাদের উপর বোমা বর্ষণ করছে না, সাদা চামড়ার মানুষেরা আমাদের উপর বোমা বর্ষণ করছে। হে খোদা!

আবিদজানের পিটার জেফরিনি ওয়াহি নিশ্চিত করেছে:

Bombardements des helicos des forces licornes du camp d'akouédo, et l'onuci vient de tirer sur la residence du Chef de l'Etat à cocody et la Présidence au plateau à partir d'helico.

আকোয়েডু শিবিরে ফরাসী বাহিনী বোমা বর্ষণ করছে এবং ইউএনওসিআই কেবলমাত্র কোকোডিতে অবস্থিত রাষ্ট্রপতি বাসভবনে গুলি করা শুরু করলো এবং তারা প্লাটুতে অবস্থিত রাষ্ট্রপতির বাসভবনের উপর হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি ছুড়ছে।

ইউটিউবে আফ্রিকা উইউইশ একটি ভিডিও পোস্ট করেছে, যেখানে, সেই আকোযেডু শিবিরে ইউএনওসিআই এবং ফরাসী বাহিনীর বোমা বর্ষণের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।”:

এমএলডস১, তিনিও আকোয়েডু শিবিরের কাছে তোলা এক ভিডিও আমাদের প্রদর্শন করছে:

এই দ্বন্দ্বে বিদেশী শক্তির অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া

লা মেজোরিটে প্রেসিডেন্টিলে” (গাবাগাবোর রাজনৈতিক দল)-এর ফেসবুকের পাতাটি ৭,২৩১ জন ব্যক্তি পছন্দ করেছে। সেখানে লোকজন বর্ণনা দিচ্ছে, কি ভাবে তারা তাদের দেশের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত।

ভাকাবা দিয়াবে:

j'ai pu me rendre près d'un camp et j'ai suivi et subi les bombardements, mais ma foi en la victoire de la Côte d'Ivoire ne fait que grandir

আমি এই এলাকার খুব কাছে যেতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমাকে অনুসরণ করা হয় এবং বোমার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়, কিন্তু আইভরি কোস্টের বিজয়ের বিষয়ে আমার বিশ্বাস এখন আরো বাড়ছে।

এনিসেট বিদজা যে কিনা ফ্রান্সে বাস করে, সে যোগ করেছে:

Nous devons nous mobiliser ici en France pour interpeller l'opinion publique Française!!! Ce qui se passe est extrêmement grave et le silence assourdissant des autres pays Africains est un crime contre la cote d'ivoire!!!

ফরাসী জনমতের প্রতি মনোযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা ফ্রান্সে একত্রিত হব!!! এখানে যা হচ্ছে তা অত্যন্ত গুরুতর এক বিষয় এবং অন্য সব আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর এই আর্তনাদ কানে না নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকা, আসলে আইভরি কোস্টের প্রতি এক আপরাধ!!!

টুইটার হ্যাশট্যাগ #সিভ২০১০, আইভরি কোস্টের সংবাদের জন্য উৎসর্গকৃত। এখানে কয়েকজন আন্তর্জাতিক বাহিনীর এই দ্বন্দ্বে হস্তক্ষেপ করার সুফল নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছে:

কায়া-মানগান সিসে বলছে:

@freerci: Je suis pour le depart de Gbagbo mais contre l'intervention de la france et de l'ONU.

আমি গাবাগাবোর ক্ষমতা থেকে চলে যাবার বিষয়টিকে সমর্থন করি, কিন্তু আমি এই দ্বন্দ্বে ফ্রান্স এবং ইউএনওসিআই-এর হস্তক্ষেপের বিরোধীতা করি।

এটা কি বৈধ?

ব্রুনো বেন মোউবামবা গ্যাবনের একজন রাজনীতিবীদ। তিনি ২০০৯ সালে সেদেশে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। তিনি ৪ এপ্রিল, ২০১১-এ, তার ব্লগে [ফরাসী ভাষায়] লিখেন, নিকোলাস সরকোজি আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে যুদ্ধে নেমে পড়েছে। অপারেশন ইউনিকর্ন (আপরেশঁ লিক্রনে) নামক শান্তিরক্ষা অভিযানের নামে ফরাসী বাহিনী ২০০২-২০০৭ সাল পর্যন্ত চলা আইভরি কোস্টের গৃহযুদ্ধের শুরু থেকে সেখানে গিয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। মোউবামবা লিখেছে যে জাতি সংঘ গৃহিত দুটি প্রস্তাবের দ্বারা এই বাহিনীদ্বয় সাধারণ নাগরিকের উপর ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে, বিশেষ করে ১ নভেম্বর, ২০০৬,এ গৃহিত জাতি সংঘ প্রস্তাব ১৭২৬ এবং জাতি সংঘ প্রস্তাব ১৯৭৫ (পিডিএফ) যা ৩০ মার্চ, ২০১১-এ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি উপসংহারে বলেন যে ফরাসী সরকার আবিদজানে বোমাবর্ষণ করে অপারেশন ইউনিকর্নের প্রদত্ত ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে:

Il s’agit ni plus, ni moins, de la part de la Présidence de Nicolas Sarkozy, d’UN ACTE GRAVE d’Agression. Cet acte engage à son insu le peuple français

এটা এখন কেবল নিকোলাস সারকোজি প্রশাসনের দ্বারা পরিচালিত সামান্য বা ভয়াবহ গুরুত্বপূর্ণ আক্রমণ নয়, এটা এখন ফরাসী নাগরিকদের দ্বারা সংঘটিত এমন এক কর্ম, যাতে তারা আজান্তে সায় দিয়েছে।

এই পোস্টটি আইভরি কোস্টের অস্থিরতা ২০১১ সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .