মিশর: ছাদ থেকে টুইটার করা

এই পোস্টটি ২০১১ সালে মিশরের প্রতিবাদ বিপ্লব সম্পর্কে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

মিশরীয় টুইটারস্ফেয়ার #জান২৫-এ, চলতে থাকা বিক্ষোভের সংবাদে ভরে গিয়েছিল। পর্যবেক্ষকদের মতে বিক্ষোভ পর্যবেক্ষণ করার জন্য ছাদ ছিল সবার প্রিয় এক জায়গা। সুয়েজ থেকে ইয়ান লি @ইয়ানইনইজিপ্ট বিক্ষোভের অনুভুতি ধারন করেছে:

আমি ছাদ থেকে ভিডিও ধারণ করছিলাম। রাস্তায় এই কাজটি করা বিদেশীদের জন্য খুব বিপজ্জনক। সংখ্যায় সহস্র।#জান২৫,#সুয়েজ

#জান২৫-এর উপর আসা প্রচুর টুইটার সংবাদ ছিল ইংরেজীতে লেখা। এর কারণ ছিল, বিক্ষোভকে সংগঠিত করার বদলে, এই বিক্ষোভকে আরো ছড়িয়ে দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রদান করা। একই সাথে প্রতীকি অর্থে, সামাজিক প্রচার মাধ্যম ছাদের উপর থেকে তোলা দৃশ্যাবলি উপস্থাপন করেছে।

জয়লান এল রাফিকির টুইট এই আবেগটিকে ধারণ করেছে। ভদ্রমহিলা তার ইংরেজী সংস্করণে চলচ্চিত্রকার আমর সালামার একটি বর্ণনামূলক প্রবন্ধের ব্যাপারে টুইট করেছে।

http://on.fb.me/g7OWvM, এটি @আমরএমসালামার প্রবন্ধের ইংরেজী অনুবাদ। দয়া করে এটিকে পুনরায় টুইট করুন, যাতে আরো অনেক লোক এই প্রবন্ধটি পড়তে পারে#মিশর,#জান২৫

যে ভাবে তাকে পুলিশ প্রহার করেছে এবং একজন পর্যবেক্ষক এবং বিক্ষোভকারী হিসেবে বিক্ষোভে তার উপস্থিতির কারণে, সালামার ঘটনা স্বয়ং প্রচার মাধ্যমের একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। তিনি তার কাহিনীর শুরু করেছেন একটি ভূমিকায় নিজেকে রেখে::

সে সময় পুরো রাস্তায় কোন মানুষ ছিল না। অনেক দুরে, আমি বেশ কয়েক জন ব্যক্তির এক গণ জমায়েত দেখতে পেলাম। প্রথমে আমি ভাবলাম যে তারা বিক্ষোভকারী, কিন্তু সে সময় আমি খেয়াল করলাম, তাদের সকলের পরনে কালো পোশাক। তারা আমাদের দিকে আসছিল এবং তাদের হাতে ছিল কালো লাঠি। পুরোনো সব যুদ্ধের চলচ্চিত্রের দৃশ্যের কথা আমার মনে পড়ে গেল, যেমন ব্রেভহার্ট এবং গ্লাডিয়েটর। আমার মনে হচ্ছিল আমরা ঠিক যেন পুরোনো সময়ের কোন এক যুদ্ধ ক্ষেত্রে রয়েছি। পুলিশ যে লাইন বরাবর দাঁড়িয়ে আছে, সেই দিকে দৌড়ানোর ক্ষেত্রে আমি নিজেকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আবিষ্কার করলাম।

শিঘ্রই সালামার কাহিনী বেদনায় পরিণত হয়। এই গল্পে তার ভূমিকা পাল্টে যায়। যুদ্ধের একজন সাহসী বীর থেকে সালামা ঘটনার শিকারে পরিণত হয়:

আমার হাতে ছিল আমার প্রিয় আইফোনটি। আমি সে সময় ছবি তোলার বা ভিডিও রেকর্ড করার চেষ্টা করছিলাম। এই অবস্থায় সংখ্যায় বিশাল একদল সৈনিক আমাকে ঘিরে ফেলে। যারা আমাকে তাদের লাঠি দিয়ে ভয়াবহভাবে পেটাতে থাকে। আমার মাথায়, মুখে, পেটে এবং পায়ে প্রচণ্ড আঘাত করতে থাকে।

সালামার উপর আঘাত করা চলতেই থাকে, তাকে রাস্তা থেকে টেনে বাইরে নিয়ে আসা হয় এবং সেখানে কয়েকবার পেটানো হয়:

এরপর তারা আমাকে নিয়ে একটি ভবনে নিয়ে প্রবেশ করে। সুন্দর এই সব সেনারা আমাকে ঘিরে রাখে। একজন সেনা প্রবেশ করার গেটটি বন্ধ করে দেয়। সে আমার পা বেঁধে ফেলে এবং আমাকে মেঝেতে ফেলে দেয়, তারপর তারা নির্দয়ভাবে আমাকে পেটাতে শুরু করে।

তিনি জানাচ্ছে, সে সময় তিনি ভাবতে শুরু করেন যে, তিনি বোধহয় সামাজিক প্রচার মাধ্যমের এক শহীদে পরিণত হতে যাচ্ছেন:

আমি আমার পরিবারের কথা ভাবতে শুরু করলাম, এই বিষয়টি তাদের উপর কি ভাবে প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে, সেই চলচ্চিত্রটির কথা, যা আমি এখনো শেষ করতে পারিনি, আমার জন্য ফেসবুকে যে পাতাটা খোলা হবে তার কথা, সে সময় আমি বিস্ময়ের সাথে ভাবছিলাম, সেই পাতার নাম, “আমরা সকলেই আমর সালামা” হবে কিনা। এছাড়াও আমার মনে হল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-এ ক্ষেত্রে কি বিবৃতি প্রদান করবে। তারা হয়ত বলবে যে, দুর্ঘটনাক্রমে আইফোন পেটে চলে যাবার কারণে আমার মৃত্যু ঘটেছে

পরে কয়েকজন সৈনিক তাকে রক্ষা করে, তাদের সহায়তা তিনি এখান থেকে পালাতে সক্ষম হন। এরপর তিনি তার লক্ষ্যকে সুনির্দিষ্ট করেন।

আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আবিষ্কার করলাম তা হচ্ছে, এই সমস্ত বিষয় উপলব্ধি করা যে, জানলাম কেন আমাকে পেটানো হল, কেন আমি প্রতিবাদ করছি, আমি জানলাম যে কোন বিশেষ চিহ্ন বা জটিল কোন রাজনৈতিক দাবী দাওয়া ছাড়াই, কেন আমি এই ভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। আমি এইসব কাজ করছি কারণ, আমি এক সুন্দর মিশরকে দেখতে চাই। একটি সুন্দর মিশর, যেখানে সরকারের উপর করো একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকবে না। এবং এক উন্নত মিশর, যেখানে সামাজিক কাঠামোতে কোন বিশাল ফাঁক থাকবে না।

নোরা শালাবাই, ফ্লিকারের একগাদা ছবি প্রদর্শন করছে, যা বিক্ষোভের বিভিন্ন অবস্থার দৃশ্য তুলে ধরছে। রাতের বেলায় প্রাণশক্তিতে ভরপুর বিক্ষোভকারী এবং তাদের উদযাপনের দৃশ্য।

মুবারককে (তার প্রতীক হিসেবে একটি পুতুলকে) একটি খুঁটিতে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে” নোরা শালাবাই। ২০১০, সকল অধিকার সংরক্ষিত, অনুমতির মাধ্যমে তা ব্যবহার করা হয়েছে।

আল জাজিরা একসাথে কিছু আবেগময় ভিডিওর সংকলন তৈরি করেছে যা “রাস্তার অপেশাদার ব্যক্তিদের ভিডিও”। এইসব ভিডিও ছাদের উপর থেকে ধারণ করা হয়েছে” যার মধ্যে এক নাটকীয় ভিডিও রয়েছে, যা তুলেছে, মালাকএনদাউদ। এটি দেখাচ্ছে জল কামান পরিবাহী গাড়ির ছিটানো পানিতে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছে।

http://www.youtube.com/watch?v=OoKQLr439Ww&feature=player_embedded

এমএফএমএজেইস এর ভিডিও, যেগুলো ছাদের উপর থেকে তোলা হয়েছে, সম্ভবত সেগুলো বিখ্যাত এই বিক্ষোভ চিত্রের বড় প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছে। ২৫ জানুয়ারি এই ভিডিওর চিত্রটি মিশরের তিয়ানআনমেন স্কোয়ারের মুহূর্তকে প্রদর্শন করছে। একই রকম ক্যামেরা দৃষ্টিকোন থেকে:

এমএফএমএজেইস-এর ইউটিউবের স্ক্রিনশট। একজন প্রতিবাদকারী জল কামান পরিবাহী গাড়ির ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

উইকিপিডিয়ার একটি প্রবন্ধের স্ক্রিনশট। যা তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের “ট্যাঙ্ক ম্যান” নামে পরিচিত বিক্ষোভকারীর, ট্যাঙ্কের সামনে দাঁড়ানোর দৃশ্যটি তুলে ধরছে।

এই পোস্টটি ২০১১ সালে মিশরের প্রতিবাদ বিপ্লব সম্পর্কে আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .