চীন: দারুণ ব্যাপার! বাসা ভাড়া মাসে ৭৭ আরএমবি

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি যে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার প্রতি যত্নশীল তা দেখানোর জন্য সিসিটিভি নেটওয়ার্কের সংবাদ প্রচার বিভাগ ৩০শে ডিসেম্বর, ২০১০ তারিখে রাষ্ট্রপতি হু জিয়ানতাও-এর নিম্ন আয়ের মানুষের গৃহ পরিদর্শনের দৃশ্য তুলে ধরে। তবে কম পয়সায় বাড়ী নির্মাণের জন্য গৃহায়ন প্রতিষ্ঠানের নির্মিত ভবনের এক এলাকায় রাষ্ট্রপতি হু এবং এক নিম্ন আয়ের নাগরিক গুয়ো চুনপিং-এর আলোচনা, নতুন বছরে নেট নাগরিকদের মাঝে এক নতুন ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।

প্রতি মাসের ভাড়া ৭৭ আরএমবি

সাংহাইস্টি দ্রুত এই আলোচনাটির ইংরেজী অনুবাদ করেছে:

হু : কতদিন আগে আপনি এই অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছেন?
গুয়ো : পনের দিনের বেশি পার হয়ে গেছ।
হু : ওহ অর্ধেক মাস পার হয়ে গেছে। বেশ। এই অ্যাপার্টমেন্টটি কত বড়?
গুয়াও : সব মিলে প্রায় ৪৫ বর্গ মিটার।
হু : ৪৫ বর্গ মিটার, হু, এটি কি দুই কামরার অ্যাপার্টমেন্ট?
গুয়াও : জ্বি!, দুই কামরার এক অ্যাপার্টমেন্ট।
হু : এই অ্যাপার্টমেন্টের জন্য মাসে আপনি কত টাকা ভাড়া দিচ্ছেন?
গুয়াও : প্রতি মাসে আমি ৭৭ আরএমবি ভাড়া দেই।
হু : প্রতি মাসে আরএমবি ৭৭ টাকা-এই পরিমাণ ভাড়া দেওয়া কি আপনার পক্ষে সম্ভব?
গুয়াও : হ্যাঁ, সেক্রেটারি জেনারেল মহোদয়। আমি দল এবং সরকারকে এর গভীর আন্তরিকতার সাথে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা খুব খুশী যে আমাদের বাস করার জন্য এ রকম একটা অ্যাপার্টমেন্ট প্রদান করা হয়েছে!
হু : দল এবং সরকার জনগণের প্রতিদিনের জীবন যাত্রার বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। আপনাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা যাতে আরো সুন্দর হয় আমরা তার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এখানে যে আপনি উন্নত জীবন যাপন করতে পারছেন; তা দেখে আমরা খু্ব আনন্দিত।
গুয়াও : আপনাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ। দিনে দিনে আমাদের দেশ উন্নতি লাভ করছে। আমরা কখনোই স্বপ্নেও ভাবিনি যে কোন একদিন বাস করার জন্য আমাদের এ রকম একটা অ্যাপার্টমেন্ট প্রদান করা হবে।

যেখানে জনগণ গৃহ নির্মান সামগ্রীর দামের ভয়ানক বৃদ্ধির ব্যাপারে অভিযোগ করছে, সেখানে ৭৭ আরএমবিতে ৪৫ বর্গমিটারের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া পাওয়ার ঘটনা জনতার মাঝে বেশ বড় আকারে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে সেই সমস্ত লোকজনের ভেতরে, যারা শহরের জীবন যাত্রার সাথে টিকে থাকতে হিমসিম খাচ্ছে। এই প্রচারণার প্রতিক্রিয়ায় ‘অনিয়ন কার্টুন’ এক ব্যাঙ্গাত্মক পোস্টার তৈরি করেছে। এই পোস্টারে দেখা যাচ্ছে চীন সরকার একেবারে পানির দরে হোটেল ভাড়ার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে:


সরকারী ভর্তুকি

নেট নাগরিকরাই এ ব্যাপারে প্রথম প্রশ্ন উত্থাপন করে যে, এত কম ভাড়ায় শহরে কোন অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজে পাওয়া সম্ভব কিনা, যেখানে নাগরিককে কেবল বিছানা পাতা যায় এমন একটি কামরার জন্য প্রতিমাসে ২০০ আরএমবি প্রদান করতে হচ্ছে। বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে সরকারে ভর্তুকি প্রদান সংক্রান্ত কিছু নীতি বের করে দেখুন, তাহলে বুঝবেন যে হ্যাঁ, এটি সম্ভব:

如果按照每月40元的政策補貼,45平米的房子政府將補貼 1800元,但最高限額是1500元,所以,政府應該是給郭家補貼了1500元。而45平米廉租房的市場房租標準應該是1577元,郭家自行每月再支付 77元房租。

যদি সরকার প্রতি মিটারে ৪০ আরএমবি ইউয়ান ভর্তুকি প্রদান করে, তাহলে ৪৫ বর্গমিটার একটি বাসার ভর্তুকির পরিমাণ হয় ১৮০০ আরএমবি ইউয়ান। তবে সরকার সর্বোচ্চ ১৫০০ আরএমবি ইউয়ান ভর্তুকি প্রদান করতে পারে। তাহলে আমরা বলতে পারি যে সরকার গুয়ো পরিবারে জন্য মাসে ১৫০০ আরএমবি ইউয়ান প্রদান করে, যেখানে এই অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া হচ্ছে ১৫৭৭ আরএমবি। সরকারের প্রদান করা ভর্তুকি বাদ দিলে গুয়ো পরিবারকে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ ৭৭ আরএমবি প্রদান করতে হয়। .

তাহলে এবার যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়ায়, সেটি হচ্ছে কারা সরকারের কাছ থেকে ভর্তূকি পেতে পারে? এমওপি এর নেট নাগরিক রেনরু (যার পোস্ট মুছে ফেলা হয়েছে) গুয়ো চুনপিং এর সত্যিকারের পরিচয় বের করার চেষ্টা করেছেন এবং আবিষ্কার করেছেন যে তিনি আসলে সরকারি এক কর্মচারি। ভদ্রমহিলা বেইজিং এর চাওইয়াং এলাকার ট্রাফিক পুলিশ বিভাগে কাজ করেন। তার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক, এমনকি গুয়োর পরিবার এই অ্যাপার্টমেন্টে বাস করে না। এমনকি, নেট নাগরিকরা অনলাইনে রাখা গুয়োর কন্যার ছবি খুঁজে বের করেছে (সকল ছবি মুছে ফেলা হয়েছে)। এতে দেখা যাচ্ছে যে তাদের পরিবার বেশ ধনী। ঘটনা হচ্ছে গুয়োর কন্যা চীনের বাইরে অনেক দেশ বেড়াতে গিয়েছিল।

স্থানীয় সংবাদপত্র, সাউদার্ন মেট্রোপলিস এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে এবং তারা দেখাচ্ছে যে গুয়োর পরিবারে মাত্র দুজন ব্যক্তি। মা আর তার মেয়ে মিলে তাদের পরিবার। গুয়োর কন্যা এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। এবং এই ক্ষেত্রে যদি গুয়োর মাসিক আয় ১১৬০ আরএমবির কম হয়, তাহলে সে সরকারের কাছ থেকে এই ভর্তুকি পাবার যোগ্য।

নতুন বছরের শুভেচ্ছাকে সেন্সর করা

যদিও সকল তথ্য ছিল সঠিক, তার পরে এই বিষয়টি ছিল সকল মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপন থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন এক ঘটনা। কাজেই সিসিটিভি যে সত্য তুলে ধরে, তার উপর মানুষ আস্থা রাখতে পারেনি এবং তা ছিল হাস্যকর। ২০১১ সালের জন্য পাঠানো এক বিদ্রুপাত্মক নববর্ষের শুভেচ্ছা মাইক্রো-ব্লগ এবং মোবাইলের মাধ্যমে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।

北京月房租77元, 工资年增长11.2%,大学生就业率99.13%,官员不分昼夜学习八荣八耻, 大学生食堂就餐平均每顿两三元。我有一个梦想,就是能永远活在新闻联播里。

বেইজিং-এ প্রতিমাসের বাসা ভাড়া ৭৭ আরএমবি, তাদের বেতন বৃদ্ধির হার বছরে ১১.২ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের চাকুরী পাবার হার ৯৯.১৩ শতাংশ।।সরকারি কর্মচারীরা এখন দিনরাত” আট সম্মান এবং আট লজ্জার” বিষয়ে শিক্ষা লাভ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গড়ে ২-৩ আরএমবিতে খাবার পাচ্ছে। আমার একটা স্বপ্ন রয়েছে। আমি যেন সিসিটিভির সংবাদের জগতে চিরদিনের মত বাস করতে পারি।

যেমনটা ঝোঙ্গনানাহাই নির্দেশ করছে, নেট নাগরিকদের ক্ষোভ গুয়োর পরিবারের প্রতি নয়।

এটা আসলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদের প্রতি। যখন রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে প্রচার করা সংবাদের উপর নেট নাগরিকরা হাসে এবং পরিহাস করে, তখন তা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য মোটেও ভালো কোন বিষয় নয়, এমনকি যদিও এখন তা কেবল অনলাইনে করা হচ্ছে। সরকারকে আরেকটু ভেবে চিন্তে প্রচারণা চালাতে হবে, বিশেষ করে শিক্ষিত এবং পরস্পরের সাথে যুক্ত নেট নাগরিকদের মাঝে।

তবে চীনা প্রচার যন্ত্র এই ধরনের গণ বিতর্ক এবং নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে তার অনড় অবস্থান বজায় রেখেছে। বর্তমানে “৭৭ টাকায় বাসা ভাড়া” ( (月租 77) নামক বাক্যটি সকল মাইক্রো ব্লগ এবং ফোরামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এই নিয়ে আলোচনা এখনো টুইটারে পাওয়া যাবে:

@৯৯_হিরো:

我妈刚才给我打电话了,“我看新闻联播北京房租才77元,你每月房租跟我说1000多,你钱都上哪去了!”我回答道:“胡说的,你也信?”

এই মাত্র আমার মা আমাকে জিজ্ঞেস করল, “সিসিটিভির সংবাদে বলছে যে বেইজিং-এ বাড়ি ভাড়া মাত্র ৭৭ আরএমবি”, আর তুমি আমাকে বলছো যে, তুমি মাসে ১০০০ আরএমবির বেশি বাসা ভাড়া দাও, এখন বল তুমি বাকী টাকা কোথায় খরচ কর? আমি উত্তর দিলাম, তুমি কি এই সব বাজে কথা বিশ্বাস কর? (উচ্চারণগত ভাবে তা অনেকটা “হু যেমনটা বলেছে”, তার কাছাকাছি)

@স্টারবয়বিন:

人与人的差别太大了:有人房租一个月只需77元,同样的房子,有的人却每天要77元。

জনগণ ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে: কেউ কেউ মাসে বাড়ি ভাড়ার জন্য ৭৭ আরএমবি খরচ করছে, আর কেউ প্রতিদিনের বাসা ভাড়ার জন্য ৭৭ আরএমবি গুণছে।

@উয়ুঝেনইয়াং:

廉租房“月租77元”其实有的,只不过你申请不到,能申请得到的,一般都不住,而是出租,这就是现实,你哭吧。

এটা সত্যি যে মনোমত বাসার “প্রতি মাসে ভাড়া ৭৭ আরএমবি” হতে পারে। তবে তা কেবল তাদের জন্য, যারা সরকার থেকে এ রকম ভর্তুকি সুবিধা লাভ করে। কিন্তু তারা সেখানে বাস করে না। তারা সেই বাসা ভাড়া দিয়ে দেয়। এটাই বাস্তবতা। আপনি এখন যে ভাবে কাঁদতে পারেন, কাঁদুন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .