ব্রুনাই: আত্মহত্যার প্রচেষ্টা অনলাইন গুঞ্জনকে তীব্র করে তুলেছে

এ মাসের শুরুতে ব্রুনাইয়ের বন্দর সেরি বেগওয়ানের এক সরকারী ভবনে ২১ বছর বয়স্ক এক মহিলার আত্মহত্যার প্রচেষ্টার ঘটনা অনলাইনে, বিশেষ করে টুইটার এবং ফেসবুকে এক গুঞ্জনের সৃষ্টি করে। বোর্নিও বুলেটিন নামক এক স্থানীয় পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করেছে কি ভাবে ব্রুনাইয়ের নেট নাগরিকরা ঠিক যেমনটা ঘটেছিল সে ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই নাটকীয় ঘটনার এবং তাকে উদ্ধারের প্রতিটি মুর্হূতের বর্ণনা পোস্ট করেছে”।

স্কেয়ারিসোল-কোয়েস্ট এই আত্মহত্যার ঘটনা এবং আশেপাশের এলাকায় যান চলাচলের উপর তার প্রভাব নিয়ে তথ্য সরবরাহ করেছে। নেটের মধ্যে সে আলোচনা করেছে যে আত্মহত্যার এই গল্প কি আসলে মজার, নাকি একে সত্যিকার অর্থে গুরুত্বের সাথে নেওয়া প্রয়োজন। হাজি খায়রিল আনোয়ার এ কারণে বিস্মিত যে, ব্রুনাইতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।

এখানে মানসিকভাবে ধাক্কা খাওয়ার মত এক বিষয় হচ্ছে, যে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলে সে এক তরুণী..। সে বেশ সাহসের সাথে যুব সংস্কৃতি এবং ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ভবনের চূড়ায় উঠে যায়…। রাস্তা থেকে তাকে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছিল..। কাজ থেকে ফেরার সময় অনেক যাত্রী এবং যান সে সময় এখানে আটকে পড়ে, যার ফলে ভয়াবহ এক যানজটের সৃষ্টি হয়..।

এনএফজেডব্র্র্রোকেনরেইনবো তথ্য প্রদান করছে যে অনেক নেটিজেন এই আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা নিয়ে মজার করার মধ্যে দিয়ে অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছে।

তারা আপনাকে ঘিরে এমন এক বিষয় নিয়ে মজা করবে, যাকে আমি হাসির বিষয় বলে মনে করি না। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একটি মেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছিল। এক্ষেত্রে আপনি আপনার কল্পনা শক্তি ব্যবহার করে দেখুন কেন? একবার কল্পনা করুন, সে এমন একজন যে আপনার ঘনিষ্ঠ কেউ, সম্ভবত আপনার বোন। তাহলে কি আপনি এ রকম অলস বসে থাকবেন আর ফিক ফিক করে হাসবেন এবং আপনার হাতের ফোন ব্যবহার করে টুইটার বা ফেসবুকে আপনার নির্বোধ রসিকতা দিয়ে সকলকে বিনোদন প্রদান করতে থাকবেন? আপনি কি তখন রাগান্বিত হয়ে উঠেন না, যখন লোকজন এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলে, যা সেই ঘটনার বিষযে মোটেও সত্য নয়?

তিয়াহ তার পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দেন যে আত্মহত্যা মোটেও মজার কোন বিষয় নয়। সে তার এক বন্ধু সম্বন্ধে ব্লগে লিখেছে, যে কিনা প্রায় আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিল।

আমি টুইটারে মানুষের সবচেয়ে খারাপ যে কাজটি পেয়েছি তা হচ্ছে তারা এই মেয়েটিকে নিয়ে মজা করছে। এটা সবচেয়ে কম সমবেদনা শীল প্রতিক্রিয়া, যা আমি দেখেছি, বিশেষ করে যখন তা এক আত্মহত্যার প্রচেষ্টা। এ কাজে তাদের অজুহাত যতই বিচিত্র হোক না কেন, যারা এ রকম প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে যায় তাদের নিয়ে আপনি মজা করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে আপনি তাদের সাহায্য করবেন। কৌতুক আসলে এক ধরনের মানসিক পীড়ন। যত বেশি তাকে পীড়ন করা হবে তত বেশী সে একদিন নিজেকে হত্যা করার চেষ্টা করবে’।

সে তার পোস্টে সামাজিক প্রচার মাধ্যমে আচরণের ব্যাপারে সে তার দৃষ্টি ভঙ্গি বর্ণনা করেছে; যার শিরোনাম “ অন্যের আবেগের সাথে একাত্ম হবার উপরে লোকপ্রিয়তা”:

আত্মহত্যার ছবি একসাথে করা এবং সেগুলোকে ফেসবুকে তুলে দেওয়া একটা বাজে বিষয়, কারণ তাতে বোঝা যাচ্ছে যে আপনি মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাওয়া এক পতিতা, এবং ফেসবুকে কোন কিছু জানানো, মানব সম্প্রদায়ের কাছে আপনার সমবেদনা এবং করুনার চেয়ে বড় কোন বিষয়”…. যে ভবনের উপর থাক লাফ দিতে যাচ্ছিল… সে যদি আপনার বোন হত…, তাহলে আপনি লোকজনকে সেই সব ছবি এবং তথ্য ধারণ করতে দিতেন না, সেগুলোকে ফেসবুকে প্রকাশ হতে দিতেন না। অন্তত আপনার ফেসবুকে সবাইকে জানানোর জায়গাটি একটি বিশেষ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই কারণে তা আমার হৃদয়কে চূর্ণ করেছে যে, অবশেষে সমবেদনার জন্য ব্রুনাইবাসীদের ক্ষেত্রে সত্যিকারের এক ব্যক্তিগত বিয়োগান্তক ঘটনার দরকার হয়েছে।

তিয়াহর দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মেইনদিডিপ একমত:

আমি এই বক্তব্যকে সমর্থন করি। আত্মহত্যার প্রচেষ্টা কখনো এবং কোন দিনই হাসির কোন বিষয় নয়, এর কারণ যাই হোক না কেন। তারা এমন এক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায়, যা কেবল তারাই বুঝতে পারবে।

তিয়াহর পোস্টের জবাবে সোলকোনেকশেন এর সাথে যোগ করেছে:

“কিছু লোক কখনোই জানে না তাদের সবাই কতটা ভালোবাসা কতটা, কারণ আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে সবাই সাধারণভাবে আবেগ প্রকাশ করে না, যতক্ষণ তার প্রয়োজন দেখা দেয়। সকলেই একভাবে বা অন্য কোন ভাবে হতাশার মধ্যে দিয়ে যায়। কেউ বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, অন্যদিকে অনেকে এতে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যায়। সম্ভবত আমাদের একবারের জন্য হলে সময় বের করে আমাদের ভালোবাসার মানুষদের বলা উচিত যে আমরা স্রষ্টার কতটা অনুগ্রহ লাভ করেছি, যার ফলে আমাদের চারপাশে এত সব চমৎকার মানুষ রয়েছে। তবে কখনোই তাদেরকে অবধারিত বলে মনে করা উচিত নয়। জীবনে অনেক প্রাপ্য পাওনা না পাওয়ার কারণে কখনোই নিজের জীবন নিয়ে নেওয়া উচিত নয়”।

পোস্টেরাস (ব্লগ করার বিশেষ সাইট) নামক সাইটে সোলকোনেকশেন আত্মহত্যার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে মজা করে যা লেখা হয়েছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

আজকের আত্মহত্যার ঘটনার মজার দিক বের করার চেষ্টা করতে দেখে, যেমনটা আমি ধারণা করেছিলাম, অনেক লোককে তা হতাশ করেছে। আমি সত্যিকার অর্থে আমি অনুতপ্ত। আমি আশা করছি আমার এই ক্ষমা প্রার্থনাকে সবাই গ্রহণ করবে এবং ভবিষ্যৎ-এ আমাকে তা চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে। সর্বোপরি আমরা সকলেই মানুষ এবং মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে”।

লিলিসেভেনও এই আত্মহত্যার ঘটনায় অন্য নেট নাগরিকদের রসিকতা করা নিয়ে তার শঙ্কা প্রকাশ করেছে।

“হে জনতা, আত্মহত্যা কোন কৌতুকের বিষয় নয়। আপনারা জানেন না, যখন কেউ আত্মহত্যার চিন্তা করে তখন আসলে সে কেমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায়। এটা ভয়ঙ্কর, হতাশার এবং সে সময় আপনি অনুভব করবেন যে মানবিক কোন কিছু আর অবশিষ্ট নেই”।

কোন সন্দেহ নেই যে ব্রুনাইয়ের মত ছোট একটা দেশে এ ধরনের ঘটনা খুবই দুর্লভ, কিন্তু এটা সকলের জন্য এক শিক্ষা, এটা নেট নাগরিকদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আত্মহত্যার মত সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্য করার আগে আরো বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .