আফগানিস্তান: ভেঙ্গে পড়ার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে কাবুল ব্যাংক

অর্থনৈতিক সঙ্কট নামক বিলাসী সমস্যাটি এখন আর কেবল ধনী দেশগুলোর ক্ষেত্রে ঘটে না। আফগানিস্তানের কাবুল ব্যাংক ঘটনা সেদেশের দরিদ্রদের সৌভাগ্যের আশায় টাকা জমা দেওয়া এবং টাকা হারানোর গল্প। এই ব্যাংকের আংশিক অংশীদার আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাইয়ের ভাই। ব্যাংকটি ১ বিলিয়ন ডলার সঙ্কটের কারণে ধ্বংস হবার মত এক সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গত সপ্তাহে কয়েক হাজার লোক প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের মত অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেয়, এবং এরপর যারা টাকা তোলার জন্য আসে, সশস্ত্র প্রহরীরা তাদের ব্যাংকে প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়।

কারজাই নামের উপর ব্যাবসা করা

জুয়ান কোল, আমেরিকার একজন ইতিহাসবিদ এবং শিক্ষাবিদ যিনি আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে ব্লগ করে থাকেন। তিনি লিখেছেন::

এই ঘটনার শুরু শেরখান ফারনুদকে নিয়ে, যিনি এক লগ্নীকারক। তিনি তালেবানদের পতনের পর আফগানিস্তানে কাবুল ব্যাংক স্থাপন করেন। দৃশ্যত বছরের পর বছর ধরে তিনি রাজনীতিবীদ এবং তাদের পরিবারদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য এটিকে ব্যবহার করে এসেছেন। ফারনুদ গত গ্রীষ্মে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর জন্য হামিদ কারজাইকে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছেন। অভিযোগ রয়েছে যে নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির মাধ্যমে কারজাই বিজয়ী হন। (সূত্র: আফগানিস্তানে সামান্য টাকায় ভোট কেনা যায় এবং মিলিয়ন ডলার দিয়ে অনেক ভোট ক্রয় করা সম্ভব) এই ব্যাংকের অন্যতম এক নির্বাহী পরিচালক খলিলুল্লাহ ফিরোজি। তিনি নির্বাচনের সময় হামিদ কারজাইয়ের প্রচারণা উপদেষ্টা ছিলেন। হামিদ কারজাইযের ভাই মাহমোদের এই ব্যাংকে ৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে….কারজাই সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত এবং গোড়া থেকে পচে গেছে। এটিকে ঠিক করার জন্য একটিও মার্কিন ডলার খরচ করা উচিত না।

পাইমান মাজিদি একজন আফঘান ব্লগার, যিনি লিখেছেন [ফরাসী ভাষায়] যে রাষ্ট্রপতি কারজাই-এর ভাই মাহমোদ কারজাই এবং আফগানিস্তানের উপরাষ্ট্রপতি হোসাইন ফাহিম উভয়ে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

আমি ব্যাংকে গিয়েছিলাম। এটি ছিল লোকজনের ভীড়ে পরিপূর্ণ। তারা ব্যাংক থেকে তাদের টাকা তুলে নিতে চাচ্ছিল। লম্বা সময় ধরে অপেক্ষার পর আমাকে বলা হল আমি যেন আগামীকাল আসি। যদি আফগান সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্রুত হস্তক্ষেপ না করে তা হলে কাবুল ব্যাংক ধ্বংস হয়ে যাবে।…এই সমস্যা আফগানিস্তানের বেসরকারী ব্যাংকগুলোর বিষয়ে এক উদ্বিগ্ন অবস্থার সৃষ্টি করেছে।

আফগানিস্তান ইকোনমি এমন একটি ব্লগ যা আফগানিস্তানের অর্থনীতির নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। ব্লগটি লিখেছে [ফরাসী ভাষায়]:

কাবুল ব্যাংকের পতন তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ভূমিকাকে ম্রিয়মান কর তুলতে পারে। এই ব্যাংকটির দেউলিয়া হয়ে যাওয়া আফগানিস্তানের বেসরকারি খাত এবং বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বেসকারি খাত থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যায় থেকে ব্যাংকটিকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে…. …

মাহমোদ হাকিমি একজন আফগান ব্লগার এবং সাংবাদিক। তিনি তার ব্লগ তাবারাঘানাক-এ লিখেছেন [ফরাসী ভাষায়]:

…লোকজন জিজ্ঞেস করছে, যদি আফগান সরকার ব্যাংকের জামিনদার হয় তা হলে জনগণের জামিনদার কে হবে? শত শত লোক কাবুল ব্যাংকে যাচ্ছে তাদের টাকা তুলে আনতে.. অসহায় এই সমস্ত লোকেরা অনেক আশা নিয়ে এই ব্যাংকে তাদের টাকা জমা দিয়েছিল। যখন তারা জানতে পারে তাদের দেওয়া টাকায় ব্যাংকের ম্যানেজাররা দুবাইতে বিলাসবহুল বাড়ী কিনছে, তখন তারা আরো বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .