মিশর: তারকাদের ধর্মে আচ্ছন্ন হওয়া

লেবাননের অভিনেত্রী নুর গত দশ বছর ধরে মিশরের চলচ্চিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছে। তাকে সব সময় তার সময়ের সবচেয়ে সুন্দরী অভিনেত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সম্প্রতি মিশরের সংবাদপত্র এল ইয়োম এল সাবি (সাত দিন) সংবাদ প্রকাশ করে যে [আরবী ভাষায়] নুরের একটি শিশু সন্তান জন্ম হয়েছে যার নাম রাখা হযেছে ‘লিওনার্দো’। শিশুর নাম অভিনেত্রীর ধর্ম কি তা প্রকাশ করে ফেলে, বিষয়টি তাদের অনেককে ধাক্কা দেয় যারা এই প্রবন্ধে তাদের মন্তব্য রেখে যায়।

এক অজানা পাঠক সেখানে মাসদুম (বিস্মিত) নামে নীচের মন্তব্যটি করেছে:

هى مسيحة!
সে খ্রিস্টান!

অন্য এক পাঠক মাসদুমের মন্তব্যের প্রতিউত্তর করেছে:

شكلها مسيحيه بس انا مش عارف اتمنى انها تاسلم يوما ما
মনে হচ্ছে সে খ্রিস্টান। আমি ঠিক নিশ্চিত নই। আমি আশা করি একদিন সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে।

তৃতীয় এক পাঠিকা যার নাম “আসমা” বলছে:

انا كنت بحبها لكن بعد ما عرفت انها مسيحية كرهتها
আমি তাকে পছন্দ করতাম। কিন্তু যখন জানলাম সে খ্রিস্টান, তখন থেকে আমি তাকে ঘৃণা করি।

এই প্রবন্ধের নীচে পাঠকরা প্রায় ১০০ টির মত মন্তব্য রেখে গেছে। এদের অনেকে এতে বিস্মিত এবং অন্যরা নীচের পাঠকের মত জনতাকে আরো দায়িত্বশীল হবার আবেদন জানাচ্ছে:

وفيها ايه لما تبقى مسيحيه وفيها ايه لما اتفرج على ممثل مسيحى ده سيدنا محمد عليه الصلاة والسلام تزوج من مسيحيه واوصى بهم خيرا
সে ধর্মে খ্রিস্টান তাতে সমস্যা কি, অথবা খ্রিস্টান অভিনেতা অভিনেত্রীর অভিনয় দেখার মধ্যে সমস্যা কোথায়! এমনকি নবী মুহাম্মদ (তার উপর শান্তি বর্ষিত হউক) একজন খ্রিস্টান মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন এবং খ্রিস্টানদের প্রতি আমাদের ভালো আচরণ করার আদেশ দিয়েছেন।

মোহামেদ এল দাহশান (ভেতরে এক পর্যটক) নুরের ধর্মীয় পরিচয় জানার পর লোকজনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তাদের উপহাস করে নীচের টুইটটি লিখেছেন:

@TravellerW: الناس المتضايقة ان نور مسيحية كان عندهم أمل يروحوا يتجوزوها مثلا و دلوقتي الموضوع فركش بسبب الدين؟ 🙂
@ট্রাভেলারডাব্লিউ: সে খ্রিস্টান হওয়ায় কেন অনেকে বেদনার্ত। এই সমস্ত লোকগুলো কি তাকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিল। এখন তার ধর্মের কারণে তারা তাকে বিয়ে করতে পারছে না? :):)

বাস্তবতা হল, নুর নিজেই এই বিষয়ে সচেতন। নুরের আসল নাম “মারিয়ান্নে ফিলিপ আবি হাবিব” হয় সে অথবা তার পরিচালক তাকে অভিনেত্রী হিসেবে এক নতুন নাম দেবার সিদ্ধান্ত নেয়, যা তার ধর্মীয় পরিচয়কে প্রকাশ করে না।

কেবল নুর নয়, আরেকজন মিশরীয় অভিনেত্রী বাসমা কিছুদিন আগে এক গুজবের শিকার হয় যে তার দাদা ও দাদী ইহুদি ছিল। এই সংবাদে লোকজন মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।

ব্লগার আহমেদ সামির তার ব্লগ “দি ইজিপশিয়ান সাইলেন্ট মেজোরিটি”-তে এক ঘটনার কথা লেখেন যা কিছুদিন আগে তার ক্ষেত্রে ঘটেছিল এবং এই বিষয়টি তাকে উপলব্ধি করায় যে লোকজন অন্য ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় জানার পর কতটা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

সে লিখেছে:

سألتني زوجتي فجأة:
“هو المذيع………..مسلم و لا مسيحي”؟؟
(المذيع المقصود مذيع اذاعي بصوت مميز يقدم احد البرامج العاطفية على محطة من محطات ال FM)
جاويتها….(لا طبعااا…مسلم…..مســــــــــــــــــــــــــــــــلم طبعا…..دايما بيستشهد بالدين في برنامجه….لا و كمااااااااان ايه..دة دايما يهنىء المسيحيين بأعيادهم بقوله “اخواننا المسيحيين”)
لا…مسيحي ازاي…..؟؟ لا ممكن ابدااا
عموما نتأكد من الإنترنت….حتما و لابد عنده معلومة في هذا الشأن
و لســـــــــة بكتب إسم الرجل على جوجل لأفاجأ ان (جوجل) بيكمل لي السؤال
“……………مسلم أو مسيحي؟”
لأكتشف ان السؤال دة لا يشغلها هي وحدها انما شغل ناس كتيـــــــــــــر قبلها على الإنترنت!!!
আমার স্ত্রী কোন ধরনের সূত্র ছাড়াই প্রশ্ন করে, রেডিওর উপস্থাপক কি মুসলমান নাকি সে খ্রিস্টান।
(এখানে আমি অন্যতম এফএম রেডিও স্টেশনের আলাদা এক কণ্ঠের অধিকারী উপস্থাপকের কথা বলছি যে সম্পর্কের উপর নানা উপদেশ প্রদান করে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে)
আমি আমার স্ত্রীকে বললাম: সে কোনভাবেই খ্রিস্টান হতে পারে না, সে একজন মুসলমান। সে যে এক মুসলমান তা আমি নিশ্চিত। সে তার অনুষ্ঠানে সাধারণত ইসলামিক মূল্যবোধ এবং আইনের কথা উল্লেখ করে এবং যখন সে খ্রিস্টানদের কথা উল্লেখ করে, তখন সে তাদের বলে “আমাদের খ্রিস্টান ভাই/বোনেরা”। সে কোনভাবেই খ্রিস্টান হতে পারে না, নিশ্চিত ভাবেই নয়। যাই হোক, চল আমরা দেখি ইন্টারনেট এই তথ্যকে নিশ্চিত করতে পারে কি না।
আমি উক্ত ব্যক্তির নাম গুগল লেখে অনুসন্ধান চালালাম, দেখি গুগল এমনিতেই আমার প্রশ্নের উত্তর পূরণ করে দিয়েছে এবং সেখানে যোগ করেছে “সে কি মুসলমান নাকি খ্রিস্টান”?
আমি উপলব্ধি করলাম যে কেবল আমার স্ত্রী নয়, অনেকেই আমাদের আগে এই একই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য ইন্টারনেটে প্রবেশ করেছে।

সে বলেই চলেছে:

لقد اكتشفت اننا شعب مهوووس بالديانات….بتفرق معاه قوي الشخص دة مسلم و لا مسيحي…..؟

علامات استفهام رهيبة و مثلها من علامات التعجب عن المغزى من هذه الأسئلة…و هل تنال ديانة المشهور من شعبيته و شهرته؟؟؟
و ما سبب هذه الطائفية الرهيبة التي تحملها هذه النوعية من الأسئلة..؟؟؟
و هل وصلت مجتمعاتنا الى درجة رهيبة من التطرف لدرجة ان تحكم على الشخص من خلال ديانته…لا من خلال اخلاقه او أعماله؟؟
و إذا كانت كل هذه الأسئلة تتم بدافع (الفضول) و ليس ال(التطرف) فهل وصل (الفضول) الى هذه الدرجـــــــة؟!!

فلقد ضبطت نفسي (متلبسا) بتهمة (التفاهة) و (السطحية) و الأمر اني قد اكتشفت اني لست بمفردي على هذه الشاكلة بل ان أمري يهون بجانب الكثيرين قبلي قد قرروا ان يفتشوا في ضمائر الناس و دياناتهم و ان يبنوا قناعاتهم و مدى حبهم لهذا النجم او ذاك بديانته و يقرروا مدى تعلقهم به و حبهم له بذهابه للجامع أم للكنيسة؟؟!!
আমি উপলব্ধি করলাম যে আমরা ধর্মের দ্বারা আচ্ছন্ন এবং কোন এক বিশেষ ব্যক্তি মুসলমান নাকি খ্রিস্টান তা আমাদের কাছে আসলেই একটি বিষয়।

অনেক প্রশ্ন এবং বিস্ময়সূচক চিহ্ন এখন আমার মাথায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরছে। একজন ব্যক্তির ধর্ম কি তার খ্যাতি এবং জনপ্রিয়তার উপর প্রভাব তৈরি করে? এই আলাদা ধর্মীয় পথে ভাগ হয়ে যাওয়ার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে, যার ফলে তা আমাদের ভেতরে এ রকম প্রশ্ন করে?
আমাদের সমাজ কি এ রকম একটি চরম ধর্মীয় বিভক্তিতে পৌঁছেছে যে আমরা এখানে নৈতিকতা এবং কর্মের বদলে ধর্মের ভিত্তিতে লোকজনকে বিচার করব? এই প্রশ্ন যদি কেবল কৌতুহলের কারণে তৈরি হয় এবং তা ধর্মীয় বিভক্তির কারণে নয়, তাহলে কেন আমরা তা জানতে ইচ্ছুক?

…..
আমি নিজে এক অগভীর ভাবনা এবং বিচিত্রতার মধ্যে আটকে পড়লাম, কিন্তু কেবল আমি একই নই অথবা যদি তা সহজ হয়, আমার আগে অনেকে অন্য লোকের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসন্ধান করছে এবং তারকাদের প্রতি (সেলিব্রিটিদের) ভালবাসা এবং ঘৃণার ভিত্তি তৈরি হয় তাদের ধর্মের ভিত্তিতে এবং জনতা তাদের ভালবাসবে না ঘৃণা করবে তা নির্ধারিত হয় তারা সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে মসজিদে নাকি চার্চে যায় তার উপরে।

চারাফানতাহ ১৫টি প্রশ্নের একটি তালিকা তৈরি করেছে [আরবী ভাষায়], যার প্রত্যেকটি নিজেকে করতে হবে এই বিষয়টি বোঝার জন্য যে আমি নিজে কি বর্ণবাদী, নাকি বর্ণবাদী নই। এবং এ সব প্রশ্নের মধ্যে একটি অন্যতম প্রশ্ন হচ্ছে, যখন কেউ একজন তার ধর্ম পরিবর্তন করে তখন আপনার অভিমত কি।

انطباعك عن حد بيتغير لما تعرف دينه؟
কোন ব্যক্তির ধর্ম কি তা জানার পর তার প্রতি কি আপনার অভিমত পাল্টে যায়?

সবশেষে আসা যাক সামির আহমেদের কথায়, যেমনটা তিনি তার পোস্টে বলেন, এটা সবসময় বর্ণবাদ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীবাদ নয়, কিন্তু কখনো কেবল তা এক কৌতুহল যা অন্য লোকের ধর্মীয় পরিচয় জানতে আগ্রহী করে তোলে, তারপরে আমরা অন্যের ধর্মীয় পরিচয় জানতে এতটা উৎসুক কেন? এ ধরনের কোন তথ্য কি আমাদের কাছে আলাদা কোন গুরুত্ব বহন করে?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .