পাকিস্তান: প্রেসিডেন্টের উদাসীনতার কারণে ক্ষোভ বাড়ছে

পাকিস্তানে বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণ

পাকিস্তানে বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণ, ২রা আগষ্ট, ২০১০। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী গ্লোবোভিশনের সৌজন্যে, সিসি বাই-এনসি

সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি আর তাতে সৃষ্ট বন্যার ফলে পাকিস্তানব্যাপী ১৫০০র বেশী মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ গৃহহারা হয়ে পড়েছে আর অনেকেই পালাচ্ছে ক্ষুধা আর মৃত্যুর ভয়ে। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে সাম্প্রতিক দুর্যোগে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেবন্যা পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে, আর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আর জাতিগত সহিংসতা করাচি শহরকে সমস্যাবহুল করে রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে করাচিতে অন্তত ৬২ জন নিহত হয়েছে, একজন রাজনীতিবিদের হত্যার পরবর্তী তিন দিনে। জনগণের এই শোক ক্ষোভে পরিণত হয় যখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বিদেশ ভ্রমণ শুরু করেন দেশের বিভ্রান্ত পরিস্থিতি আর বিরোধী দলের কঠোর প্রতিবাদ সত্ত্বেও।

রাজনীতিবিদসহ অনেকেই টুইটার ব্যবহার করেছেন প্রেসিডেন্টের ইউরোপ ভ্রমণের সমালোচনা করতে:

@ইজাজুলহক: প্রেসিডেন্ট তার ব্যক্তিগত ছুটি কাটাচ্ছেন মানুষ যেখানে ভুগছে। নেতারা ছবির সুযোগের আশায় ঘুরছেন।

@নাইম৭০৫: স্বাগতম পাকিস্তানে <জারদারি প্রাইভেট লিমিটেড>! আমরা সীমিত দায়ের কোম্পানি! (@১০% কর আরোপিত হয়)।

@আমনা সাইদ: বিশ্বাস হচ্ছে না জারদারি ইউরোপে হাওয়া খাচ্ছেন আর দেশের মানুষ বন্যাতে মারা যাচ্ছে। তিনি ঘুমান কি করে?

@বেন্তাসম্যান: দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস, টেলিগ্রাফ, দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট, দ্যা সান, দ্যা ডেইলি মিরর + অন্যরা আসিফ জারদারিকে দেশে ফেরার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে #লজ্জা# পাকবন্যা

@এফভুট্টো: এমপির হত্যাকাণ্ড নিয়ে করাচিতে ৩২ জন নিহত। ২৫ লক্ষ বন্যাতে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্র হাওয়া খাচ্ছেন আর ভিক্ষা করছেন। বেশ ভয়ানক!

বলাই বাহুল্য যে পাকিস্থান ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন মৃত্যুহার বাড়ছে আর বিপর্যয় সামলানোর উন্নত কৌশল জরুরি হয়ে পড়েছে, তা প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অভ্যন্তরীণ সমস্যা হোক। তবে, প্রেসিডেন্ট খারাপ হতে থাকা পরিস্থিতির ব্যাপারে খেয়াল না করায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

“শাসনের সময়” নামক পোস্টে, নাভিন নাকভি সুষ্ঠু শাসনের প্রয়োজনীয়তার উপরে গুরুত্ব দিয়েছেন, কিছুটা ক্ষোভসহ:

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক রাজধানী ভুতের নগরে পরিণত হয়েছে ফাঁকা রাস্তা, ব্যবসা থেমে যাওয়া আর পেট্রোল পাম্প, অফিস আর দোকান সব বন্ধ থেকে। এমন না যে সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটি আমরা আগে থেকে আঁচ করতে পারিনি। কারণ এমকিউএম আর এনপি কর্মীদের লক্ষ্য করে হত্যা বা মুহাজির আর পাঠানদের মধ্যে যে সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে তা কোন বাধা ছাড়া বেশ কয়েক মাস ধরে চলছে। যেখানে বেশীরভাগ পাকিস্তানী শাসনের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার কথা বলছেন, এখানে আর একটা সুযোগ হারানো হল। বাড়তে থাকা মানুষ এরই মধ্যে অজনপ্রিয় নেতা আসিফ আলি জারদারির সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রেসিডেন্ট ইউরোপে তার ভ্রমণ কেন বাতিল করবেন? কেন তার মানুষের সাথে প্রয়োজনের সময়ে থাকবেন আর তাদের সাথে বিপদের মোকাবেলা করবেন? যে উত্তর সহজে আসে সেটা হল যে তিনি আসলে গ্রাহ্য করেন না।

কালসুম লাখানি তার চুপ – চেন্জিং আপ পাকিস্তান ব্লগে প্রেসিডেন্টের প্রতি রাগ আর হতাশা পুনর্ব্যক্ত করেছেন:

বিশাল এই ক্ষতির মুহূর্তে, [আর করাচিতে রাজনৈতিক হত্যার ছড়াছড়ি যার ফলে এই পর্যন্ত ৪৭ জন নিহত হয়েছেন এমকিউএম এর রাজা হায়দারের হত্যার পরে], এটা বিস্ময়কর না যে দেশ ক্ষেপে আছে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির উপরে, যিনি পাকিস্তান যখন ডুবে যাচ্ছে তখন ইউরোপে বেড়াচ্ছেন। এটি নয় যে বিপদের সময়ে ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় জারদারির সিদ্ধান্তের প্রয়োজন আছে বা উনি কেবলমাত্র একজন পথপ্রদর্শক, কিন্তু তার বেড়ানোর সিদ্ধান্তে অটল থাকা অনুভুতি শুন্য আর যোগসূত্রহীন হিসাবে দেখা যায়, আর তার এরই মধ্যে তার খারাপ জনপ্রিয়তার হারের সাথে ভালোভাবে যায়না।

পোস্টের শেষের দিকে কালসুম যথাযথ একটা কথা বলেছেন:

যদিও এটা আমাদের নেতৃত্বের প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়ার সময়, বা তার অভাব, এখন সময় দুর্গত মানুষকে সাহায্যের সময়।

হয়ত পাকিস্তানের যেটা সব থেকে বেশী প্রয়োজন সেটা হল এখন যারা বন্যাতে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের সাহায্যে মনোনিবেশ করা আর জনগনের মধ্যে বাড়তে থাকা অশান্তি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা। কালসুমের পোস্টের শিরোনাম একেবারে ঠিক- পাকিস্তানের দরকার তার শোককে কাজে পরিণত করা

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .