সার্বিয়া: সার্বিয়ার কোচ রাদোমির এন্টিচের উপর ফিফার নিষেধাজ্ঞা আরোপে সমর্থকদের ক্ষোভ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক ক্রীড়াযজ্ঞ বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় রেফারিদের বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং তাদের খেলা পরিচালনা পদ্ধতি, সমর্থক, ব্লগার [ইংরেজী ভাষায়], সাংবাদিক [ইংরেজী ভাষায়], এবং বেশ কিছু দেশের জাতীয় ফুটবল সংস্থার প্রশ্নের মুখে পড়ে। যদিও ফিফার সভাপতি সেপ ব্লাটার বাজে এবং অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের জন্য প্রকাশ্যে মেক্সিকো এবং ফ্রান্সের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, তবে তাতে ওই সমস্ত দলের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হয়নি, ফিফা রেফারিদের সিদ্ধান্তসমূহকে এবং সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সম্প্রতি প্রদান করা সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে, যা সারা জায়গায় অন্যায় এবং রূঢ় বলে বিবেচিত হয়েছে। বিষয়টি কেবল পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করেছে।

সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং এমনকি স্পেন ও ব্রাজিলের ব্লগাররা ফিফার শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত ও রূঢ়তায় বিস্মিত, যে কমিটি সার্বিয়ার কোচ রাদোমির এন্টিচ [ইংরেজী ভাষায়] এবং পর্তুগীজ খেলোয়াড় রিকার্ডো কোস্টার উপর শাস্তি জারী করেছে। এতে তাদের উভয়কে জরিমানা করা হয়েছে এবং প্রথম জনের ক্ষেত্রে ৩ এবং দ্বিতীয় জনের ক্ষেত্রে ৪ খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সার্বিয়ার কোচ এন্টিচের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা নিষেধাজ্ঞার উপর ফিফা কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেনি। কমিটি ২০১০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া বনাম সার্বিয়া খেলায় রেফারি জর্জ লারিয়ানডোর প্রতি এন্টিচের আচরণ “যথাযথ ছিল না” এই বিষয়টি তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২-১ গোলে পরাজয়ের ফলে সার্বিয়াকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়।

যেমনটা সার্বিয়ার প্রেসঅনলাইন.আরএস সংবাদ প্রকাশ করেছে [ সার্বিয়ান ভাষায়] সার্বিয়ার ফুটবল সংস্থা ফিফার কাছ থেকে পাওয়া এই শাস্তির সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হবার পর এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি জানান, প্রশ্ন করা হলে এন্টিচ স্বীকার করেছেন তিনি রেফারিকে অপমান করেছেন:

আমাদের জাতীয় দলের প্রধান কোচ, যিনি ঘটনাক্রমে স্পেনে বাস করেন, তিনি নিজের মাতৃভাষায় রেফারিকে বেশ কিছু কঠোর বাক্য বলেছিলেন। কোচের বেলগ্রেডে আগমনের পর, অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা ব্যাক্তিগত ভাবে জানান যে তিনি লারিয়ানডোকে অপমান করেছেন, এবং এটি তিনি করেছেন রেফারির অন্যায় এবং দুর্বল আচরণের কারণে।

“এই সময় এন্টিচ স্বীকার করেন, আমি রেফারির অভিশাপ দিয়েছি, কারণ সে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের খেলার গুরুত্বকে সে সঠিক ভাবে নেয়নি”।

গত কয়েক দিন ধরে সার্বিয়ার অনেক ব্লগার এবং প্রচার মাধ্যম এই ঘটনা এবং ফিফার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। স্টা সাম টি রেকাও (আমি তোমাদের কি বলেছি) ব্লগ বলছে [সার্বিয়ান ভাষায়]::

প্রত্যক্ষদর্শীদের মত অনুসারে এন্টিচ রেফারি লারিয়োনডার খেলার একেবারে প্রায় শেষ মূহূর্তে সার্বিয়ার পক্ষে পেনাল্টি না দেওয়ায় সেই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেন, সে সময় টিম কাহিল হাত দিয়ে বল ধরেছিল। এটি এমন এক সময় ঘটে যখন খেলার ফলাফল ছিল সার্বিয়া১ -অস্ট্রেলিয়া২, এবং এই সময় সার্বিয়া যদি একটি গোল দিতে পারত তাহলে তা দেশটিকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যেতে পারত।

ব্লগ এবং প্রচার মাধ্যম সম্প্রতি বিশ্বকাপের এই ঘটনার উপর ফিফার নিষেধাজ্ঞার সাথে অতীতের নিষেধাজ্ঞার তুলনা করে দেখছে, তারা ফিফা ও এবং ইউয়েফার (ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা) উভয়ের নিষেধাজ্ঞার তুলনা করে দেখছে। অনেকে যেমন উপরে উল্লেখিত ব্লগার স্টা সাম টি রেকাও এই সিদ্ধান্তে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছে, যেমনটা তারা স্মরণ করছে পর্তুগাল দলের প্রাক্তন কোচ লুইস ফিলিপ স্কোলারীর বিপক্ষে প্রদান করা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি। ইউরো ২০০৮ প্রতিযোগিতার বাছাইপর্বে সার্বিয়া বনাম পর্তুগালের খেলায় সার্বিয়ার খেলোয়াড় ইভকা ড্রাগোটিনোভিচকে শারিরীক ভাবে আক্রমণ করার কারণে ২০০৮ সালে ফিলিপ স্কোলারীর উপর একই সমান নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়।যদি ফুটবলের দুটি একেবারে আলাদা সংস্থা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে, তবে সমর্থকরা মনে করছে মৌখিকভাবে রেফারিকে অপমান করার কারণে এন্টিচকে যে চার খেলার নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি কঠোর, যদি তা প্রাথমিকভাবে যদি স্কোলারীর শারীরিকভাবে আক্রমণের কারণে তার চার খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদানের সাথে তুলনা করে দেখা হয়, আমাদের স্মরণ রাখতে হবে পর্তুগালের ফুটল সংস্থা এই আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করার পর ইউয়েফা এই নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে দুই খেলায় নিয়ে আসে। সার্বিয়ার ফুটবল সংস্থাও বর্তমানে অবশ্য এই আদেশের বিরুদ্ধে ফিফার কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে আবেদন জানিয়েছে। যদি কেউ বিশ্বকাপ এবং সম্প্রতি প্রদান করা ফিফার সিদ্ধান্ত এবং প্রতিক্রিয়াকে বিবেচনা করে, তাহলে বলা যায় ফিফা যে এন্টিচের শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে আনবে সে সম্ভবনা অনেক কম।

সারা বিশ্বের ব্লগার এবং ক্রীড়া সাংবাদিক দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সময় ক্রমাগতভাবে কেবল রেফারির সিদ্ধান্তের ও আচরণের সমালোচনা করে গেছে তাই নয়, তার সাথে তারা এই বিষয়টির সমালোচনা করেছেন যাকে প্রায়শই বর্ণনা করা হয় স্বৈরশাসন পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ফিফার সভপতি সেপ ব্লাটার ফুটবলের এই বিশ্ব সংস্থা এবং বিশ্বকাপ ফুটবল পরিচালনা করে থাকেন। ডয়েচে ভেলের ক্রীড়া সাংবাদিক সারাহ ফউপেল লিখেছে [ইংরেজী ভাষায়] বিশ্বকাপ চলার সময় ফিফার “সবচেয়ে উপরের স্তরে” এক চমৎকার গোছানোর বিষয় ঘটেছে:

আনুষ্ঠানিকভাবে ফিফা সুইজারল্যান্ডে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন করেছে, যদিও তা ২০০৯ সালে এটি ১৫৭ মিলিয়ন ইউরো (১৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) লাভ করেছে। তবে এই ফিফার বার্ষিক আয় এর চেয়ে অনেক বেশি। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ২০১০ বিশ্বকাপের সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি ১.৬ বিলিয়ন ইউরো অর্জন করেছে। এবং তার বিপণন ও আতিথেয়তার মাধ্যমে সে একই পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছে।

উদ্বৃত্ত অর্থ প্রধানত খেলা, এই সংস্থার যারা সদস্য এবং ফিফার অন্য সব পরিকল্পনার জন্য বিনিয়োগ করা হয়। কিন্তু এর একটা বড় অংশ-যতটা প্রয়োজন তারচেয়ে বেশি-ফিফার যারা কার্যকারী সংস্থায় কাজ করে তাদের পকেটে চলে যায়। অবশিষ্ট অর্থ জুরিখে অবস্থিত সংস্থার প্রধান ভবনের পেছনে ব্যয় হয়, যার পরিমাণ ১৩০ মিলিয়ন ইউরো।

যখন কোন একজন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ পাঠ করে জানবে যে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে কোন এক একক ব্যক্তির উপর কঠোর শাস্তি প্রয়োগ করা হয়েছে, যেমন সার্বিয়ার কোচ রাদোমির এন্টিচ, যার কিনা “পরিষ্কার ভাবমূর্তি” রয়েছে, কোন একজন এক্ষেত্রে বিস্মিত না হয়ে পারে না- যখন ফিফা কোন কিছুর পরিমাপ করে, কাউকে ক্ষমা করা এবং/অথবা এই সমস্ত দল বা কোন ব্যক্তির অক্রীড়াসুলভ মনোভাবের নিন্দা করে- তাহলে কে ফিফার আচরণ ও অক্রীড়াসুলভ মনোভাবের বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .