পাকিস্তান: বালুচিস্তান – বিস্ফোরণের অপেক্ষায়

Beauty of Balochistan. Image by Flickr User NotMicroButSoft. CC BY-NC-SA

পাকিস্তানের সব থেকে বড় প্রদেশ (দেশের ৪৩% ভূমি সমৃদ্ধ) বালুচিস্তান এখন অরাজকতাপূর্ণ এক উত্তপ্ত ভূমিতে পরিণত হয়েছে। মঈন খাজা তার ভ্রমনগাঁথা নিও মারশিয়ানস নোটসএকজন বালুচির উদ্ধৃতি দিয়েছেন বালুচিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য:

“একটা প্রদেশের কথা চিন্তা করেন যেটি প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ কিন্তু তারপরেও প্রচন্ড দারিদ্রের সম্মুখীন। একটা সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে ভরপুর সভ্যতা ক্রমাগত নীচে নেমে যাচ্ছে। একটা জাতি যারা নিজের মূল্যবোধ আর ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত কিন্তু বর্তমানে তাদের পরিচিতি নিয়ে ভুগছে। একজন শ্রমিক যিনি ধৈর্য সহকারে কঠোর পরিশ্রম করছেন কিন্তু বেতন পাবার সময়ে দমনের শিকার হচ্ছেন। আর অদ্ভুত, যে গরু দুধ দিতে বাধ্য হচ্ছে তার কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের অভাবে হচ্ছে।“

এমন পরিস্থিতি হওয়ার কারণ খুঁজতে পাকিস্তানের স্বাধীনতার সময় ফিরে যেতে হবে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে বালুচিদের নিপীড়ন করেছে তাদের জাতীয়তাবাদী মনোভাবের জন্য, এখনো তাদের প্রত্যয়ে বোঝা যায় যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় নি। ফাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব ছাত্র আলী নাতিক বালুচিস্তানে গিয়েছিলেন বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সরাসরি জানার জন্য। তিনি তার ব্লগে লিখেছেন:

“বিভিন্ন মতাদর্শের আর বিশ্বাসের মানুষের সাথে পরের দিন আমাদের মিটিং হয়েছে- ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার, রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, সাধারণ নাগরিক, কর্মী আর একজন বুদ্ধিজীবী। (বালুচ ছাত্র সংস্থা-আজাদ) বিএসও- আজাদের একজন ভূতপূর্ব সদস্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো নিয়ে আমাদেরকে জানিয়েছেন। অদ্ভুত ব্যাপার হল পাকিস্তানের স্বাধীনতার পূর্বে বালুচিস্তান অনেক বছর পর্যন্ত স্বাধীন ছিল আর তারা কখনো পাকিস্তানের অংশ হতে চায়নি। তিনি বলেছেন যে জিন্নাহ নিজে তখনকার স্বাধীন বালুচিস্তানের শাসক কালাত এর খানের একজন উকিল ছিলেন, যিনি বালুচিস্তানের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক মামলায় লড়েছেন। পাকিস্তান গঠনের পরে, জিন্নাহ যখন তাদেরকে আহ্বান জানালো পাকিস্তানের অংশ হতে, বালুচিস্তানের সংসদের দুই কক্ষ (হাউস অফ লর্ডস আর হাউস অফ কমন্স) পাকিস্তানের সাথে একত্র হতে অমত জানায়। তাই ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সেনা এই এলাকা দখল করে আর জোর করে পাকিস্তানের মধ্যে নিয়ে নেয় আর তখন থেকে তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত।“

পাকিস্তানের সাথে কালাতের ’দখলের শর্তাবলী সম্বলিত দলিল’ যদিও বেশীরভাগ বালুচি মানুষের অমতে স্বাক্ষরিত হয়, তাতে পরিষ্কার লেখা ছিল অন্যান্য জিনিষের মধ্যে পাকিস্তানের সাংবিধানিক ব্যবস্থা বালুচিস্তানে প্রয়োগ করা হবে না খান আর তার লোকের সম্মতি ছাড়া” -এমনটিই উরুজ জিয়া জানিয়েছেন বাজম-এ- রিন্দান ব্লগে এক অতিথি পোস্টে

দু:খের ব্যাপার হল যে এখন বালুচিস্তানকে না আঞ্চলিক স্বার্বভৌমত্ব দেয়া হচ্ছে না দেয়া হচ্ছে তাদের বিশাল সম্পদের ন্যায্য ভাগ যার পুরোটাই কেন্দ্রীয় সরকার কয়েক দশক ধরে লুট করছে। প্রাকৃতিক গ্যাস বালুচিস্তানে ১৯৫৩ সালে প্রথম পাওয়া যায় আর তা এখন পাঞ্জাব আর সিন্ধের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো হলেও বালুচিস্তানের ২৪টির মধ্যে মাত্র ৪টি জেলায় সরবরাহ করা হয়। উরুজ বলেছেন:

“বালুচিস্তানের উন্নয়নের মাত্রা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে কম, যদিও এই প্রদেশ খনিজ আর সামুদ্রিক সম্পদে ভরপুর। যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস বালুচিস্তান থেকে উত্তোলন করা হয় আর দেশের বাকি অংশে পাঠানো হয়, আর বালুচরা সিন্ধ থেকে আনা কাঠ পোড়ায় জ্বালানীর জন্যে।“

তবে শুধু এটাই সব না। এ ধরণের দমন নীতি প্রায়ই বিক্ষোভ ও গোলোযোগের কারণ হয়েছে আর প্রতিবারই সেনারা সেগুলো কঠোর হাতে দমন করেছে। এর ফলে আজকে এই অঞ্চলে সেনা শব্দটির মানে হচ্ছে বিচার বহির্ভূত হত্যা, অপহরণ আর এলাকার মানুষকে হারান।

শেহেরিয়ার আলি তার ব্লগে ভীতিগুলো তুলে ধরেছেন:

“বালুচিস্তানে যা ঘটছে তা অবিশ্বাস্য। পাকিস্তান সেনা দ্বারা মানুষকে ‘জীবন্ত পোড়ানো’ হয়েছে গলা পিচ এর মধ্যে। হাজার হাজার বালুচ ছাত্র, পণ্ডিত আর রাজনৈতিক কর্মী ‘গায়েব’ হয়ে গেছে। পাকিস্তানী গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো এর জন্য অনেকটা দায়ী বলে মনে করা হয়।“

এইসব দাবির পক্ষে স্বাধীন মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট আছে যা ২০০৫ সাল থেকে প্রায় ৮০০০ লোকের গায়েব হওয়ার খবর দেয়

আঞ্চলিক সরকারের পূর্বেকার অক্ষমতা আর আঞ্চলিক ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচন্ড নিয়ন্ত্রণ বালুচিদের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ব্যাপারে অনেকটা হতাশ করেছে। আর তরুণরা ক্রমশ: সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। পাকিস্তান যদি ১৯৭১ সালের মতো আর একটা ভাগ না চায়, তাহলে ফেডারেল সরকারের উচিত বালুচিস্তানের প্রতি নমনীয় নীতি নেয়া।

উরুজ তার লেখা শেষ করেছেন এই বলে:

“পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার দরকার তাদের কাজের গুরুত্ব ঠিক করা: কল্পিত জাতীয়তাবাদ আর নকল ম্যাপের ধারণার থেকে একজন নিপীড়িত মানুষের প্রতি সাহায্য বেশী জরুরী। দমনের মুখে নিস্তব্ধতা বা নিরপেক্ষতাও দমনকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করা। আর ইন্টারনেট ও নতুন মিডিয়ার যুগে, বালুচিস্তানের ব্যাপারে ‘আমি জানতাম না’ – এটি কোন উত্তর হতে পারে না।“

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .