দক্ষিণ কোরিয়া: কষ্টকর অভিজ্ঞতা থেকে তেল পড়াকে বোঝা

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বিপি কোম্পানির তেল পড়ার দুর্ঘটনার খবর যখন দক্ষিণ কোরিয়াতে আসে, অনেক কোরিয়ান ব্লগারদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ২০০৭ সালে কোরিয়ার ইতিহাসের ভয়াবহ তেল দুর্ঘটনার স্মৃতি। তারা তেল পড়া দুর্ঘটনার শিকারদের জন্য তাদের চিন্তা আর সমবেদনা জানাচ্ছেন।

২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ২.৭ মিলিয়ন গ্যালন অশোধিত তেল কোরিয়ার দৃষ্টিনন্দন পশ্চিম সমুদ্রতটে ভেসে আসে যখন পোর্ট অফ দাইশানের কাছে স্যামসাং হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের একটা ক্রেন বার্জ হেবে স্পিরিট নামে হংকং এ রেজিস্টার করা অশোধিত তেলবাহী জাহাজের সাথে ধাক্কা খায় এবং তেল নির্গত হয়। তায়েয়ান কাউন্টির ইয়েলো সমুদ্রের তীরের কাছে এই দুর্ঘটনার ফলে কোরিয়ার পশ্চিম তীর কালো অশোধিত তেলে ভরে যায়।

২০০৭ সালের তায়েয়ান কাউন্টি তেল দুর্ঘটনা

[ছবি একজন ব্লগারের সৌজন্যে যিনি স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে তেল পরিষ্কার করার কাজে ছিলেন]

বিভিন্ন সামাজিক অবস্থান থেকে আসা প্রায় ১২ লাখ লোক স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়ার পশ্চিম তীর পরিষ্কারে অংশগ্রহণ করেন যা বেশ কয়েক মাস ধরে চলেছে। তারকা, রাজনীতিবিদ আর চাকুরিজীবীরা একটা একটা করে তেলে ভরা পাথর হাত দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করেছেন। তারা সাহায্য নিয়েছিলেন শোষক পদার্থের যা পড়ে থাকা তেল শুষে ফেলে।

ঘষে ঘষে তেল পরিষ্কার করা

তায়েয়ান এর তেল পরিষ্কার করায় অংশগ্রহণ করা একজন মহিলা স্বেচ্ছাসেবী তার ব্লগে জানিয়েছেন যে পরিষ্কারের সময়ে আর তার পরের দিনগুলোতে তেলের জোরালো গন্ধের কারনে মৃদু যন্ত্রণা ভোগ করেছেন:

기름을 닦아내도 바닷물이 들어오면 다시 엉망이 되고마는
태안. 기름 냄새에 속이 울렁거리고 머리가 지끈거린다…집에 돌아온 지금도 온 몸이 으실으실하고 속이 메스겁다.

তেল পরিষ্কারের পরেও, তায়েয়ান একটা বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয় যখন পানি ভিতরে ঢুকে পড়ে। তেলের গন্ধে আমার বমি পাচ্ছিল আর মাথা ব্যাথা হয়েছে অনেক…বাড়িতে ফেরার পরেও।

আমি এখনো মাঝে মাঝে অসুস্থতা আর বমি ভাব বোধ করি।

যদিও কোরিয়ার সরকার শত শত জাহাজ, ক্রেন, হেলিকপ্টার আর প্লেন পশ্চিম তীরে পাঠিয়ে দিয়েছিল, বেশীরভাগ পরিষ্কারের কাজ মানুষের হাতের উপরে নির্ভর করছিল যেহেতু তেল তীরের বিস্তৃত জটিল স্থানে গভীর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল, বিশেষ করে বালুতে আর লক্ষ্ লক্ষ পাথরের ফাকে।

একজন ব্লগার তার ডাউম ব্লগে জানিয়েছেন যে বিপির তেলের পরিষ্কারের কাজ দ্রুত হতে পারে যদি আরো লোক আর অর্থ এই প্রক্রিয়াতে দেয়া হয়, আর একই সাথে আমেরিকার তেল পরিষ্কার করার উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যাপারে হিংসা দেখিয়েছেন:

부자 나라답게 장비도 고급이고 대량으로 투입하기 때문에 방제작업을 의외로 싱겁게 끝날지도 모르겠습니다. 앞서도 언급했지만 손으로 일일이 닦아 내던 우리의 현실이 겹쳐집니다. …이번 사태를 대비해서 Oil pollution trust fund(기금)을 조성하여…1건당 사용 가능한 금액은 US$ 1bn (1억 달러)인데 이번 사고를 처리하기에는 턱 없이 적다는 생각이 듭니다. 우리나라처럼 자원봉사자가 많으면 모르겠지만.

যেহেতু আমেরিকা ধনী দেশ, দূর্ঘটনা স্থলে অনেক উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি পাঠানো হয়েছে। সম্ভাবনা আছে যে পরিষ্কারের প্রক্রিয়া মানুষ যা ভেবেছিল তার থেকে সহজ হবে। এটা আমাদের ক্ষেত্রে হাত দিয়ে একটা একটা করে (তেলে আক্রান্ত) পাথর পরিষ্কার থেকে আলাদা.. …আমেরিকা তেল দূষণ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে… (তেল পড়া দায়ী ট্রাস্ট ফান্ড থেকে) প্রত্যেকটা ঘটনার জন্য ১ বিলিয়ন ডলার খরচের একটা মাত্রা দিয়ে। এটা খুব কম যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নেই যেমন কোরিয়াতে ছিল।

স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে যে তায়েয়ান দুর্ঘটনায় তেল পড়ার পরিমান বিপির দুর্ঘটনায় একদিনে যে তেল পড়ে গেছে তার মাত্র দুই তৃতীয়াংশ ছিল। আর এক্সন ভাল্ডেজ এর তেল পরার দুর্ঘটনার মাত্র এক তৃতীয়াংশ। তারপরেও এটা ভয়ঙ্কর ছিল কোরিয়ার সর্ববৃহৎ জলীয় স্থানের সামুদ্রিক জীবন হত্যার মাধ্যমে। এটি মৎস শিল্পকে ধ্বংস করেছে আর ৪৪৫ সামুদ্রিক খামার, পর্যটন শিল্প আর একটি জাতীয় সামুদ্রিক পার্ককে আক্রান্ত করে – ফলে অনেক মানুষের জীবিকা ধ্বংস হয়। কোরিয়ার একটা বৃহৎ বহুজাতিক কর্পোরেশন স্যামসাংকে এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়, খোলা তারের মাধ্যমে বেধে রেখে তাদের বার্জকে নিয়ন্ত্রণবিহীনভাবে ছেড়ে দেয়ার জন্য। মেক্সিকো উপসাগরের তেল পড়ার ঘটনার পরবর্তী খবর যখন জানা যায়, কোরিয়ানরা মনে করেছেন যে স্যামসাং হেভী ইন্ডাস্ট্রিজকে হালকা শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

নেভার প্লাটফর্মের একজন ব্লগার অস্বস্তির ভাব প্রকাশ করেছেন সরকার আর কোম্পানির প্রতি যারা তাদের দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছেন:

지난 2007년 겨울 한국에서 발생했던 서해 태안 기름 유출
사건을 연상케 합니다…우리는 지난 태안 기름 유출 사건때 수많은 자원봉사자들의 덕에 빠르게 정상화를 찾아갔던 기억이 있습니다… 미국 정부도 이번 사건의 늑장대응에 대한 책임을 피하기는 쉽지 않을 것 같습니다. 열심히 BP에 모든
책임을 떠넘기고 있군요. 한국에서 태안 기름 유출을 일으킨 삼성 중공업이 고작 56억원의 손해 배상 책임을 판결 받은 것을 기억하니 무지하게 씁쓸합니다.

এই [বিপি তেল পড়া] আমাকে ২০০৭ সালের কোরিয়াতে তায়েয়ান তেল পড়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা দ্রুত এটা কাটিয়ে উঠেছিলাম অনেক স্বেচ্ছাসেবীর সহায়তায়…মনে হচ্ছে আমেরিকা সরকারের জন্য এটা কষ্টকর হবে এই ঘটনায় দেরীতে সাড়া দেবার পরে সমালোচনা থেকে বের হয়ে আসতে। এখন সরকার বিপির উপরে সব দায়িত্ব দিচ্ছে। এটা আমাকে স্যামসাং হেভী ইন্ডাস্ট্রিজ তায়েয়ান তেল পড়ার দায়িত্বের রায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে স্যামসাং পার পেয়ে যায় মাত্র ৫.৬ বিলিয়ন কোরিয়ান ওন [প্রায় ৪.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার] ক্ষতিপূরণ দিয়ে। এইসব আমার মধ্যে তিক্ততা তৈরি করে।

তাদের ক্ষতিপূরণের মাত্রা ৫.৬ বিলিয়ন কোরিয়ান ওন এ নির্দিষ্ট থাকলেও আদতে স্যামসাংকে মাত্র ৩০ মিলিয়ন কোরিয়ান ওন বা প্রায় ২২,০০০ ডলার জরিমানা দিতে হয়।

কিছু ব্লগার এই ব্যাপারটা বাস্তবতার নিরিখে দেখছেন। নেভার প্লাটফর্মের একজন ব্লগার এই অনুমান করেছেন যে বিপির তেলের দূর্ঘটনা বিশ্বব্যাপী তেলের দামের উপরে প্রভাব ফেলবে। তিনি নিজে এটা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে শীঘ্রই এই বছরে তা ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে প্রতি ব্যারেলে।

ওহমাইনিউজ প্লাটফর্মের একজন ব্লগার জোর দিয়েছেন জরুরীভাবে তেলের দূর্ঘটনা থামানোর পথ খুঁজে বের করার:

궁극적으로 전세게가 하루빨리 원유 의존에서 벗어나 친환경 에너지로 하루빨리 바꿔야 하겠습니다…우리 모두 같은 지구촌 사람인이상 남의 일이 아닙니다.

বিশ্বের দরকার তেলের উপরে অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকে সরে গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পরিবেশ বান্ধব শক্তি ব্যবহার করা শুরু করা…আমরা সবাই একই বিশ্বের অংশ, এটা অন্য লোকের ব্যাপার আর না।

কোরিয়ানরা, তাদের তেল দূর্ঘটনায় ভোগার পরে, তাদের আন্তরিক চিন্তা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে লাগাতার তেল দুর্ঘটনার ব্যাপারে আর বিশ্বে উপরে এর যে প্রভাব পড়বে তা নিয়ে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .