এপ্রিল ২০০৮-এ, মিশরের বাক স্বাধীনতা ও সৃষ্টিশীলতার ভাবনা একেবারে তার মূলে আক্রান্ত হয়, যখন মাগদি এল শাফির লেখা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য লেখা সচিত্র (গ্রাফিক নভেল-চিত্রের মাধ্যমে উপন্যাসের কাহিনী বর্ণনা করা) উপন্যাস-মেট্রো বাজেয়াপ্ত করা হয়।এই ঘটনায় বইয়ের লেখক ও প্রকাশক আদালতের দারস্থ হন, কিন্তু তারা মামলায় হেরে যান। অন্যদিকে ড: ইউসুফ জিদানের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের প্রতি নিন্দা এবং খ্রিস্টান ধর্মের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়। এটি করা হয় তার উপন্যাস আজাজিল (বেলজেবাব)-এর কারণে। এই অভিযোগে জিদানের পাঁচ বছরের জেল হতে পারে। আজ ১০০১ আরব্য রজনীর শেহেরজাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক ছাড়ানোর কারণে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং কয়েকজন আইনজীবী তার মৃত্যু চান-তারা এই বইটিকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন!
দি ক্রনিকলার লিখেছে:
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একটি দল যারা নিজেদের স্বয়ং (পরিহাসের বিষয়টি বাদ দিয়ে বলা যায়) নিজেদের আইনজীবী বলে দাবি করে, যারা শিকল ছাড়াই মিশরীয় পাঠকদের পাঠ্যাভ্যাস শিকল পড়াতে চাইছে। তারা নতুনভাবে প্রকাশিত চিরায়ত গ্রন্থ এক হাজার এক আরব্য রজনী নামক মহাকাব্যটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছে। এই গ্রন্থ, যার মধ্যে রয়েছে সামগ্রিক ভাবে জনপ্রিয় এবং চিরায়ত সব চরিত্র, বইয়ের ভেতরে রয়েছে আলাদিন, আলি বাবা, এবং সিন্দাবাদ এর মত নায়কেরা, তারা সেই বইটিকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে। তাদের দাবির পেছনে কারণ? তাদের মতে শতাব্দি পুরোনো এই গল্পগ্রন্থ “অশ্লীল” এবং এটি হয়ত জনগণকে “অনাচার এবং পাপের” দিকে ঠেলে দেবে।
সৌভাগ্যবশত মিশরীয় বুদ্ধিজীবীরা এই চিরায়ত গল্পগ্রন্থ রক্ষার জন্য এক শোভাযাত্রা বের করে, তারা মিশরীয় সংস্কৃতিতে ক্রমাগত বাড়তে থাকে “বেদুইনীকরণ”-এর (রক্ষণশীলতার) বিরুদ্ধে সতর্কতা উচ্চারণ করেন। এই ব্যাপারে যে ধারা তৈরি হয়েছে, এটি সম্ভবত তার সবচেয়ে বিচিত্র উদাহরণ, যাকে আমি বলি প্রকাশিত কাজের ক্ষেত্রে অতীত ইতিহাস টেনে এনে তার নিন্দা জানানো।
জেইনোবিয়া মনে করেন যে শেহেরজাদি ১০০১ টি রাতের মাধ্যমে তার স্বামীকে জীবন, বিশেষ করে রাজনীতি এবং শাসন করার নীতি সম্বন্ধে শিক্ষা প্রদান করেছিল, এ কারণেই অনেকেই তার মৃত্যু চায়।
বেচারি শেহেরজাদি, সে এই কাজটি করতে সমর্থ হয়েছিল এবং অতীতের সেই দিনে, সে তার গল্পের মাধ্যমে নিজের জীবন বাঁচিয়েছিল। সেখানে বর্তমান এই সময়ে কেউ কেউ তার গল্পকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে, যা তার নিজের এবং জাতির মেয়েদের জীবন বাঁচিয়েছিল ১০০০ ও ১ টি রাতের জন্য!!
জেইনোবিয়া আমাদের বলছে যে:
তবে এই বইটিকে নিষিদ্ধ করার এ ধরনের দাবি এই প্রথম নয়, ১৯৮৫ সালে বেশ কয়েকজন আইনজীবী এই বইয়ের উক্ত সংস্করণ নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়।
প্রথমত তারা যে সংস্করণের কথা বলছে তা আধুনিক মিশরে প্রকাশিত ‘হাজার এক আরব্য রজনীর’ সবচেয়ে পুরোনো সংস্করণ। এটি মোহামেদ আলি পাশার সময় বিখ্যাত ইমবাবা প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয় এবং আল আজাহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতি নিয়ে ও তাদের পুনরায় পাঠের পরই তা প্রকাশ করা হয়; হ্যাঁ ১৯ শতকে আল আজাহার-এর অনুমতি নিয়ে এই বইয়ে সেই সমস্ত অশ্লীল শব্দ (সবার পড়ার উপযুক্ত নয়) এবং ছবি ছাপা হয়!!! ১৯৩৫ সালে ইমবাবা প্রকাশনা থেকে শেষবারের মত ছাপা এই বইয়ের যে সংস্করণটি এখনো বিশ্বে টিকে আছে তা কায়রোতে নয়, এমনকি আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিতে নয়, সেটি রয়েছে টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে!! আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না, কি ভাবে এবং কেন সেটি সেখানে!!
যাকে বলা যেতে পারে সেন্সর বা কাঁটছাট না করা সংস্করণ- সেই মূল খণ্ডটি পড়ার পর জেইনোবিয়া বলছে:
এই বই সম্বন্ধে আমার নিজস্ব বিচার হচ্ছে গল্পের ভেতরে গল্প বলা এই বইটি অসাধারণ, পুরোপুরি এক ভিন্ন জগৎ এবং হ্যাঁ এই বইয়ের প্রচুর যৌনতার বিষয় রয়েছে, এমনকি অন্য জাতির প্রতি বৈষম্যমূলক বাক্য রয়েছে, যা আমাকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। কিন্তু এইসব বিষয় বাদ দিলে এটি একটি চমৎকার গ্রন্থ, সত্যিই অসাধারণ এবং এর কবিতা, প্রবচন এবং এমনকি ঐতিহাসিক যে সমস্ত ঘটনার কথা এই বইয়ে উল্লেখ রয়েছে তাতে আপনি বিস্মিত হবেন,
এবং অনৈতিকতার বিষয়ে ভদ্রমহিলা লিখেছেন:
হাজার এক আরব্য রজনী একমাত্র পুস্তক নয় যেখানে পরিপূর্ণভাবে ছবি ছাপা হয়েছে, কোন এক কারণে কেবল এই বিষয়টি স্মরণ করা হচ্ছে। ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে বলতে পারি টিভিতে আমরা যা দেখি সেগুলো এই বইয়ের ছবির চেয়ে জঘন্য। একবার মেলডি টিভি দেখুন, তা হলে বুঝবেন আমি কি বোঝাতে চাইছি।
যে ভাবে মিশর মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে তাতে মেকানিকাল ক্রাউড অসন্তষ্ট:
চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা এমন একটি বিষয় যার কারণে মিশর পিছনে পড়ে রয়েছে। এই খোলস থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে এবং নিজেদের মুক্ত করতে হবে। আপনি কি কখনো মিশরীয় গানের কথার সাথে বিদেশী গানের কথার তুলনা করে দেখেছেন? মিশরীয় গানের কথা কি হতে পারে সে সম্পর্কে আপনি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন এবং সেগুলো অগভীর বাণীতে পূর্ণ এবং তার শতকরা ৯০ ভাগই ভালোবাসার কথা বলে। ছেলেদের জীবনে কেবল মেয়েদের ভালোবাসার চেয়ে আরো কিছু রয়েছে! অন্য দেশের গানের দিকে তাকান এবং আপনি দেখবেন সেগুলোতে প্রচুর সৃষ্টিশীলতা এবং কল্পনাশক্তি রয়েছে।
৯ জুন, আদালত এই বইয়ের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খারিজ করে দেয়; বানাত জায়েদ বলছে:
من جهة اخرى، قال النائب العام ان التحقيقات في قضية رواية “عزازيل” التي اعتبرتها الكنيسة القبطية مسيئة للمسيحية، ستعلن خلال الايام القليلة المقبلة.
ইতোমধ্যে সরকারি আইনজীবী বলেন, উপন্যাস আজাজিল এর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রদান করা হবে। মিশরের কপ্ট চার্চ এই বইটিকে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় মনোভাবে আঘাত হেনেছে বলে বিবেচনা করছে।
এদিকে ব্লগার আহমেদ আল সাব্বাঘ একটি লিঙ্ক পোস্ট করেছে যেখান থেকে আপনি এই বইটি নামিয়ে পড়তে পারবেন।