খালেদ সাইদ ২৮ বছর বয়স্ক এক মিশরীয় যে বন্দর নগরী আলেকজান্দ্রিয়ায় বাস করত। অভিযোগে উঠেছে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলে, যারা জরুরি আইনের অধীনে তার দেহ তল্লাশী করতে চেয়েছিল। খালেদ তাদের কাছে গ্রেফতার করার কারণ বা গ্রেফতারী পরোয়ানা দেখতে চেয়েছিল-তার বদলে পুলিশদ্বয় তাকে খুন করে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংঘ (ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস) ব্যাখ্যা করে যে “মিশরে জরুরি আইন, সেদেশের ক্ষমতাবানদের হাতে এমন এক ক্ষমতা তুলে দেয়, যা দেশটির সংবিধান যে সমস্ত মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করে, তার অনেকগুলো সেগুলোকে বিনষ্ট করে দেয়।
ফেসবুকে একটা পাতা খোলা হয়েছে যার নাম আমরা সকলেই খালেদ সাইদ। খালেদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের নিন্দা জানিয়ে এই পাতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এই পাতার সৃষ্টিকর্তা আরবী এবং ইংরেজী উভয় ভাষায় লিখেছে:
شاب مصري عنده 28 سنه من منطقة كليوباترا بالاسكندريه
و صاحب مكتب استيراد و تصدير
كان قاعد في سايبر في وقت متاخر بالليل
و دخل بتوع المباحث بيفتشو كل اللي قاعدين باستخدام قانون الطوارئ
خالد اعترض و قال احنا بنتفتش ليه
كان تمن السؤال البرئ ده ان اتنين مخبرين مسكوه و نزلو في ضرب في المحل و في الشارع و في مدخل عماره جنب السايبر قعدو يرزعو وشه في الرخام بتاع السلم و في مدخل العماره الحديد
و خدو جثته و حطوها في البوكس و بعد 15 دقيقه رجعو رموها ف الشارع و مشيو
كل واحد فينا ممكن يكون خالد
حنسكت ؟
এটি একটি তরুণের বিয়োগান্তক কাহিনী। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কেন? কারণ দুই বর্বর পুলিশের জানোয়ারের মত আচরণকে সে মেনে নেয়নি। উক্ত পুলিশদ্বয় যা করছিল তা করার অধিকার তাদের ছিল না; পুলিশেরা জনতার সাথে ভেড়ার মত আচরণ করে এবং জনতাকে তারা নিম্নশ্রেণীর মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে।
এই কাহিনীর সূত্রপাত ৭ জুন ২০১০-এ, যখন খালেদ সাইদ সিদিগাবের-এ প্রতিদিনের মত ইন্টারনেট ক্যাফেতে যায়….
সেখানে দুই অসভ্য গোয়েন্দা পুলিশ- মাহমুদ আলফালাহ ও আওয়াদ এলমোখাবের/ দুই গোয়েন্দা পুলিশ ক্যাফেতে ওঁৎ পেতে থাকে এবং লোকদের তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বলে। এটি ছিল এমন এক কাজ যা একেবারে তাদের অধিকারের বাইরে। আইনী অনুমতি ছাড়া খালেদ-এই অমানবিক এমন আচরণ মেনে নিতে অস্বীকার করে। ঘটনাক্রমে তাকে ভয়ঙ্কর ভাবে আক্রমণ করা হয়, তার বুকে এবং পেটে ক্রমাগত লাথি মারা হয় এবং সকল লোক এবং ক্যাফের প্রতক্ষ্যদর্শীর সামনে তার মাথা মার্বেলের স্তম্ভে মাথা ঠুকে দেওয়া হয়। খালেদের শরীর থেকে রক্ত পড়তে থাকে। এরপর এই অসভ্য পুলিশেরা খালেদকে জোর করে ধরে নিয়ে যায় এবং পুলিশের যানে উঠিয়ে তাকে সেখান ক্রমাগত তাকে নির্যাতন করতে থাকে এবং পুলিশ স্টেশন নিয়ে মেরে ফেলার আগে পর্যন্ত তার উপর এইভাবে নির্যাতন করা হয়। অবশেষে তার মৃতদেহ রাস্তার উপর ছুঁড়ে ফেলা দেয়। দায়িত্ব এড়ানোর জন্য তারা বলে যে তাকে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির হামলা করেছিল।আমরা এর মাধ্যমে জেনেছি যে তারা নিয়মমাফিক সাক্ষীদের ভয় দেখাচ্ছে এবং ক্যাফেতে তারা যা দেখেছে সেই বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে তাদের বাঁধা দিচ্ছে….
খালেদ এ রকম একটি এবং একমাত্র ঘটনা নয়। এমন অনেক লোক রয়েছে যারা খালেদের মত ভাগ্য বরণ করেছে এবং এ ভাবেই তারা অদৃশ্য হয়ে যায় এবং তারপর তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
জরুরি আইনের দ্বারা যে দমন নীতির মাধ্যমে মুবারক মিশরকে যে ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এটা তারই ফসল। জরুরি আইন হচ্ছে সেই অস্ত্র, যা পুলিশকে ক্ষমতাশালী করে, যার মাধ্যমে তারা জনগণের সাথে দাসের মত আচরণ করে।
এভাবে আমরা, মিশরকে যারা বদলাতে চাই সেই সমস্ত দলের সমর্থকরা আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা এতে হস্তক্ষেপ করুন এবং কর্তৃপক্ষের উপর চাপ প্রয়োগ করুন, যাতে তার জনতার কাছে এই ঘটনার তদন্ত করে ও সেখানে কি ঘটেছিল তা ব্যাখ্যা করে এবং জোরালো ভাষায় এর নিন্দা জানায়।
ওয়াএল নাওয়ারা বলছে যে খালেদ পঁচে হয়ে যাওয়া এক সংবিধানের শিকার:
لم يقتل مخبران خالد
بل قتله دستور معيب
قاتل خالد سيظل طليقاً يضرب ضرباته فيقتل الأبرياء ….
لأننا نظن أن تغيير الدستور من الرفاهيات …
لأننا نظن أن لقمة العيش تستلزم المشي جنب الحيط …
خالد ما كانش في مظاهرة …
خالد كان في كافيه …
واتقتل لما اعترض على طغيان شوية مخبرين كانوا بيقلبوا رواد المقهى …
لأن النظام قاعد بجحافل …
والأمن قاعد بالنظام …
والشعب لا بيجيب ده ولا يعرف يمشي دوكها ولا بيهش ولا بينش …
কোন এক বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাঝ থেকে তাকে ধরা হয়নি। তাকে যখন ধরা হয় তখন সে একটি ইন্টারনেট ক্যাফেতে ছিল। তল্লাশী চালানোর দাবি করার মত এক বিষয়ের কারণে তাকে হত্যা করা হয়।
এই পদ্ধতিকে সুরক্ষিত রেখেছে তস্করেরা যারা আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত… এখন লোকজন না পারে এই সব তস্করদের সাথে লড়াই করতে না পারে আমাদের পদ্ধতি পাল্টাতে।
আমর সালাম- জরুরি আইনের বিরুদ্ধে লড়াই করা এক উৎসাহী নাগরিক- তিনি লিখেছেন:
فتم اقتياده إلى القسم وجرى ما جرى
لنفترض أن خالد أذنب أو اقترف ذنبا ما ، هل هذا يعطى الحق لهؤلاء اشاوس الداخليه بهذا العمل ، أى حق تركوه لهذا الشعب لكى يعترض
আবদেল রহমান ফারেস খালেদের জন্য শোক করছেন, তিনি বলছেন:
كتب ان المواطن ضرب نفسه ؟؟؟
كتب ان جت له أزمة قلبية
ده فجر علني ، مين فاجر ابن فاجر ولا فاجره عمل كده ؟؟؟ انا اعرف ان الضرب عشان ماحدش يمسك حاجة ع الظابط بيكون مؤلم آه بس مش بيسيب أثر ، انما ده مش ضرب دي وحشية ، ده وقع في ايد واحد سادي مجنون ، حد يرد عليا ابوس ايديكم ، الظابط ده لسة بيشتغل ؟؟؟؟ وبرر اللي عمله إزاي ؟؟؟؟؟؟؟؟؟؟
ماحدش يقوللي عيني عينك كده ، مستحيل ، أصلها مالهاش حل ولا ينفع فيها لعب ولا تزوير ، ايه يعني ؟ قال إن فيه قطر دخل القسم وعمل فيه كده ؟؟؟؟ ايه يعني ؟ قال ان قبلة انفجرت في القسم ؟؟؟؟ ياريت الي عند تفاصيل أكتر واسم الحيوان اللي عمل كده يققولنا
في أي بلد محترم كان يجب على الفور أن تستقيل كل الحكومة
وأن تتم محاكمة المسؤلين عن هذه الجريمة النكراء
وعلى رأسهم وزير الداخلية حبيب العادلي
وأن تكون محاكمة الوزير والمسؤلين علنية أمام الشعب
وأن يلقوا أشد العقاب
কোন এক সভ্য দেশে, এ রকম একটি ঘটনাই সরকারের পদত্যাগের যথেষ্ট কারণ হত, যাদের বিরুদ্ধে এই খুনের অভিযোগ উঠেছে তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাত এবং এই কর্মকর্তার অবশ্যই জনতার সামনে বিচারের জন্য উপস্থিত করত। এই অপরাধের জন্য আমি সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
ফেসবুকে ড:আইমান নুর এই ভয়াবহ অপরাধের জন্য শাসকগোষ্ঠীর নিন্দা জানিয়ে একটি লেখা লিখেছেন , তিনি এই বিভৎস ঘটনার বর্ণনা করছেন:
ড: নুর এই ঘটনার শিকার ব্যক্তিটির ছবি এখানে পোস্ট করেছে (সতর্কতা: খুবই নির্মম দৃশ্য এবং হয়ত কোন কোন দর্শকের জন্য আপত্তিকর হতে পারে)।এই পোস্টটি লেখার সময় পর্যন্ত, এই ছবির উপর ৩৪০ টির মত মন্তব্য এসেছে।
অ্যাপ্পি এবং কারিম বেহরিই তাদের ব্লগে মৃতের জন্য শোক প্রকাশ করেছে এবং একই ছবি প্রকাশ করেছে।
প্রিন্সেস সারা শঙ্কিত, সে লিখেছে:
حاطة نفسي مكانه ، وخايفة على اخويا اللي عارفه انه زيه مش هيقبل على كرامته الاهانة 🙁
بجد مش عارفة احنا رايحين على فين 🙁 ومش فاهمة كل دا بيحصل ليه ؟؟؟؟؟؟
الولد ياعيني شكله ابن ناس لا سوابق ولا قليل الأدب 🙁
ربنا يرحمه ويصبر أهله يارب
রামেজ আব্বাস তার জন্য এক গাথা লিখেছে:
والنساء والصبايا ليس بيـــديهم شىء ،،، فماذا يفـــعلون
سيبكونك الجميع فترة من الزمن ثم لكأس العالم يصـقفون
يهللـــون،، يمرحون ،، وبأجساد النساء لـــــــــيلاً يعبثون
تلك الحياة فى مصرنا ،،، لا كـــــــــــرامة لنا ولا يحزنون
يا خالد أرحل إلى الله فقد أنتهي عمرك كما يقول المسلمون
وأنتهي أجلك ونحن أيضاً فى جريمة الداخــــلية مشتركون
صــــــمتنا ونواصل الصمت ونبكي ثم نبكي توسلاً للقانون
وماذا يا مصرياً رحل قبل الآوان تظنـــــــــــــــــــنا فاعلون
فنحن كما وصفنا العالم أجمع خائفون،، مرتــــــــــــــعدون
رجالاً فى الحـــــــــــــــــــــــــــروب الكلامية ضد الآخرون
وضد نظامنا المتوحش نركع خــــــــوفاً ونتحجج بالقانون
فـــــــــــــــــتباً للقانون
أرددها بصــــــــــــــــــــدق ،،،تباً للقانون
এ ছাড়া তারা আর কি করতে পারে?
তারা কিছুক্ষণের জন্য কান্নাকাটি করবে এবং তারপর আবার তাদের নিজের জীবনে ফিরে যাবে;
তারা বিশ্বকপের জন্য উল্লাসধ্বনি দেবে, মজা করবে, যৌন সঙ্গমে মিলিত হবে- প্রিয়ে, এটাই হল মিশর।
আমাদের না আছে আত্মজ্ঞান, না আছে মর্যাদা।
তোমাকে যে সৃষ্টি করেছে তুমি তার কাছে ফিরে যাবে, কিন্তু আমাদের হাতে তোমার রক্তে লাল হয়ে থাকবে;
এ ধরনের অপরাধে আমরাও অংশীদার।
আমরা নিরব রয়েছি এবং আমরা সব সময় নিরব হয়েই থাকব;
অন্ধ এক বিচার ব্যবস্থার সামনে কান্নাকাটি করা এবং বিচার প্রার্থনা করা।
তাতে কি? আমাদের একজন খুন হয়েছে?
সারা বিশ্ব জানে যে আমাদের সাক্ষীরা কতটা ভীত।
আমরা কান্নাকাটিতে এবং মুখে মুখে লড়াই করতে ওস্তাদ।
কিন্তু যখন সে লড়াই আমাদের পদ্ধতি ও অধিকারের জন্য,
তখন আমরা গুটিয়ে যাই আইন ও আমাদের বেআইনী পদ্ধতির সামনে হাঁটু গেড়ে দাঁড়াই।
এ ধরনের আইন গোল্লায় যাক!