মাদাগাস্কার: এক তরুণী ব্লগার ও অনুবাদকের কণ্ঠস্বর

চিলিতে অনুষ্ঠিত ২০১০ সালের গ্লোবাল ভয়েসেস সম্মেলন চলার সময়, মাদাগাস্কার থেকে আসা একটি ছোট্ট মেয়ে আমাকে প্রশ্ন করল, আমি সত্যি জাপান থেকে এসেছি কি না। জাপান নামক দেশটার সবকিছু যেমন ভাষা, সংস্কৃতি বিশেষভাবে সুশি (এক ধরণের খাবার) সম্বন্ধে জানতে সে প্রচন্ড আগ্রহী। আমাকে যে বিষয়টা অভিভূত করেছিল, সেটা হলো, আমি জাপান-এ দুই বছর থাকা সত্ত্বেও সে আমার চেয়ে ভাল জাপানী ভাষা বলতে পারে।

তার নাম রাদিফেরা ফেলানা ক্যান্ডি। গ্লোবাল ভয়েস লিঙ্গুয়া মালাগাসীর সে এক অনুবাদক। তার বয়স কেবল ১৫ বছর। ক্যান্ডি সম্ভবত গ্লোবাল ভয়েসেস দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। গ্লোবাল ভয়েসেস-এ তার অংশগ্রহণে, কেবল তার ভাষার দক্ষতা বেড়েছে তাই নয়, এটি তার রাষ্ট্র ভাষা মালাগাসীকে সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ক্যান্ডি, বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী, এবং ভবিষ্যৎ-এ, কলেজে সে ইনফো-গ্রাফিক্স (লেখ চিত্রের তথ্য, ডাটা ও জ্ঞানকে প্রকাশিত করা) সম্বন্ধে আরও বেশি জানার ইচ্ছা রাখে এবং সে সামাজিক পরিবর্তনের জন্য তার ব্লগকে একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। ব্লগ জগৎের মাধ্যমে এই কণ্ঠস্বর তুলে ধরাকে আরও জোরাল করা সম্ভব।

পিতা মামিনিরিরা রাদিফেরা রানাইভসন (বামে);, গ্লোবাল ভয়েস লিঙ্গুয়ার পরিচালক লিওনার্দো চিয়েন এবং অন্যতম এক ব্রেকিং বর্ডার পুরস্কার বিজয়ী উগান্ডার আর্চবিশপ জন ব্যাপ্টিস্ট ওডামার সঙ্গে ক্যান্ডি।

আমি ই-মেইল সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ক্যান্ডির ব্যাক্তিগত জীবন এবং ব্লগিং কার্যকলাপ সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিলাম:

১। নিজের সম্বন্ধে আমাদেরকে আরও কিছু বল:

আমি রাদিফেরা ফেলানা ক্যান্ডি। আমার বয়স ১৫ বছর এবং আমার জন্ম মাদাগাস্কারে। আমি এখন উচ্চবিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্রী (সফোমোর হাই স্কুল স্টুডেন্ট – চার বছর ব্যাপী শিক্ষা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র)। উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় আমি জাপানী ভাষা শিখেছিলাম, সেই সময়টিতে আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখান-ওখান থেকে জাপানী ভাষা শিখেছি। এক বছর পর আমি পর আমি সিদ্ধান্ত নেই যে ভাষা বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করব।

২। কতদিন ধরে ব্লগিং করছ? কেন?

আমি ব্লগিং সম্বন্ধে প্রথম জানতে পারি “ফোকো মাদাগাস্কার” প্রকল্পের মধ্য দিয়ে । তাদের আয়োজিত একটি ব্লগ প্রশিক্ষণে আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম । ২০০৭ সাল থেকে আমি ব্লগিং করে আসছি। কিন্তু সেই সময় আমি খুব বেশি সক্রিয় ছিলাম না। সে সময় আমার বাড়িতে ইন্টারনেট ছিল না এবং কি বিষয়ে লিখবো তাও ঠিক করতে পারছিলাম না। তারপরেও আমি ব্লগিং শুরু করেছিলাম, কারণ আমি অনেক ছোট্টবেলা থেকে গল্প লিখতে খুব ভালোবাসতাম।

৩।কি ধরনের লেখার মাধ্যমে তুমি ব্লগিং শুরু করেছিলে?

আমি দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা নিয়ে লিখতে শুরু করি। যে বিষয়গুলো আমাকে অভিভূত করে, আমার আগ্রহ বাড়ায় অথবা আমাকে ক্রুদ্ধ করে, সে সব বিষয়ে লিখি।

৪। তোমার পরিবারে নতুন প্রযুক্তিকে কি ভাবে গ্রহণ করে ? তোমার অনলাইনের কর্মকাণ্ডে তারা কি সহযোগিতা করে?

হ্যাঁ, আমার বাবা মা দুজনেই কম্পিউটার নিয়ে কাজ করে, বিশেষ করে আমার বাবা, যার ফটোগ্রাফিতে প্রচন্ড আগ্রহ। আমার বাবা খুব সক্রিয় একজন ব্লগার । যতক্ষণ রাজনীতির সম্বন্ধে কথা না বলি, ততই তা ভাল, কারণ মাদাগাস্কারে, বিশেষ করে এই সঙ্কটের সময় রাজনীতি খুব স্পর্শকাতর একটি আলোচ্য বিষয়।

৫। ব্লগিং এর কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি পছন্দ কর?

ব্লগিং এর মাধ্যমে আমি আমার মতামত অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করতে পারি, তারা আমার জীবন এবং আমার সম্প্রদায়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সম্বন্ধে জানতে পারে। আমি নিজেকে উপস্থাপন করার এবং পাঠকের সাথে মতামত ভাগাভাগির সুযোগ প্রদান করাকে মূল্য দিই। এইটি অন্যদের সাথে যোগাযোগ করার একটা মাধ্যম। লেখালেখি ছাড়াও আমি আমার নিজের ব্লগ ব্যানার তৈরি করতে ও ছবি সম্পাদনা করতে ভালোবাসি, যদিও আমি এখনও এসবে খুব দক্ষ নই।

৬। মাদাগাস্কারে ব্লগিং করার সম্বন্ধে তুমি কি ভাব?

মাদাগাস্কারে খুব সীমিত সংখ্যক মানুষের ব্লগে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। ইন্টারনেটের উচ্চ মূল্যের কারণে কেবল ১ থেকে ২ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। আমার জানামতে অনেকে রয়েছে যারা সত্যি ব্লগিং করতে চায়। যদি আমরা ওয়েব প্রবেশের সুবিধাকে উন্নত করতে পারি, আমার দৃঢ়বিশ্বাস মালাগাসীর মানুষগুলোর জীবন ধারা পরির্বতন/উন্নত করার একটা মাধ্যম হিসেবে ব্লগিং কাজ করবে।

৭। ব্লগিং থেকে তুমি নিজের এবং তোমার সম্প্রদায়ের জন্য কি আশা কর?

আমি ব্লগিং-এ আরও বেশি মানুষ আকর্ষণ করার ইচ্ছা রাখি, অথবা আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করার মধ্যমে তাদেরটা পরিবর্তন করতে পারি। আমার এখনও মনে আছে, যখন আমি আমার বন্ধুদের ব্লগিং করার সম্বন্ধে বলেছিলাম, তারা এটাকে সময়ের অপচয় বলে ব্যাখ্যা করে।

৮। গ্লোবাল ভয়েসেস লিঙ্গুয়া মালাগাসীর তুমি একজন অনুবাদক। গ্লোবাল ভয়েসেস-এ নিজের এই ভূমিকাকে কিভাবে দেখছ?

গ্লোবাল ভয়েসেস একটি বড় সম্প্রদায়, আবার একটি বিশাল ওয়েবসাইটও বটে, এবং মালাগাসী ভাষায় অনুবাদ করা এই ধরনের ওয়েব সাইটের জন্য ব্যতিক্রম বিষয়। মালাগাসী বিস্তীর্ণ ভাবে পরিচিত কোনো ভাষা নয়, এবং গ্লোবাল ভয়েসেস-এর প্রবন্ধগুলো আমার ভাষায় অনুবাদ করতে পারা আমার জন্য একটি সম্মানের বিষয়। এছাড়াও এটি আমার ইংরেজী এবং মালাগাসী ভাষায় দক্ষতা বাড়ানোর একটি পথ। এবং সম্মেলনে এ অংশগ্রহনের পর থেকে আমি অনুবাদ করতে আরও বেশি অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। আমি এটা করতে ভালবাসি। গ্লোবাল ভয়েসেস আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্লোবাল ভয়েসেস সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসেবে আমি গর্বিত।

৯। ভবিষ্যৎ-এ নিজেকে কিভাবে দেখতে চাও?

উচ্চ বিদ্যালয় শেষে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি ) অথবা ইনফো-গ্রাফিক্স বিষয়ে পড়তে চাই এবং আশা করি সামনে গ্লোবাল ভয়েসেস এর কর্মকাণ্ডে আরো সক্রিয় হব।

https://bn.globalvoicesonline.org/wp-admin/post.php?action=edit&post=11166

১০। দেশের তরুণদের উদ্দেশ্য তুমি কি বলতে চাও?

আরও বেশি উন্মুক্ত হও। ব্লগিং মত প্রকাশের একটি সহজ রাস্তা। এটি কখনই সময়ের অপচয় না, বিশেষ করে যদি কেউ কিছু উৎসাহজনক এবং কার্যকর জিনিস লেখে। ব্লগিং করার মধ্য দিয়ে, আমরা হয়ত বিশ্বে অন্যান্য ব্লগারদের খুঁজে পাব যাদের সাথে আমাদের মতামত ভাগাভাগি করতে পারি, এবং যে আমাদের জীবন ধারা বুঝতে পারবে এবং তা উন্নত করতে আমাদেরকে সাহায্য করবে। ফোকো আয়োজিত আমার প্রথম ব্লগ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সময় আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, যে আমি একটি ব্লগে কি লিখতে পারি। উত্তরগুলোর মাঝে একটি ছিল, আমি ব্লগকে ডায়েরি বা দিনপঞ্জি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এটা সত্যি, তবে অবশ্যই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন কেউ একান্ত গোপনীয় কোনো কিছু ব্লগে না লিখে, কারণ কেউ এটা তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে (তাকে আক্রমণ করার জন্য)।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .