দুবাই: রাস্তায় স্টান্ট প্রদর্শন ব্লগারদের ক্ষিপ্ত করে তুলেছে

কিছুদিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্লগাররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে যখন ইউটিউবে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে একদল তরুণকে প্রকাশ্যে দিবালোকে দুবাইয়ের ব্যস্ত রাস্তায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ী চালাতে দেখা যায়।

এই ভিডিও, যা পরে ইউটিউব-এর নীতি ভঙ্গের কারণে সেখান থেকে অপসারিত করা হয়, সেখানে একদল তরুণকে দেখা যায়, যারা বেপরোয়া গাড়ী চালানোর মাধ্যমে উল্লাস ধ্বনি দিচ্ছে, সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে সর্বোচ্চ গতিতে রাস্তায় এলোপাতাড়িভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল, গাড়ী নিয়ে ডোনাটস- (ডোনাটস এর মানে হচ্ছে গাড়িকে একচক্কর ঘোরানো বা চক্কর তৈরি করা, মূলত গোল এক ধরনের মিস্টি রুটির চেহারায় গাড়িকে দ্রুত গতিতে ঘোরানো) সৃষ্টি করছিল এবং হুইলিং বা চাকাকে রাস্তা থেকে শুন্যে উঠিয়ে নিয়ে চমক তৈরি করছিল। ভিডিওতে একটি চার চাকার গাড়িকে রাস্তায় কিছুক্ষণ দুই চাকার উপর চলতে দেখা যায়, যাকে একটি পিকআপকে বা ছোট ট্রাক রাস্তায় থামাতে বাধ্য করে যেটিকে আবার সড়কের উপর লাটিমের মত ঘুরতে দেখা যায়।
একই দৃশ্য সম্বলিত একটি নতুন ভিডিও দেখতে পারেন, যা এখানে পাওয়া যাবে।

পাঠকেরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি দৈনিক পত্রিকা দি ন্যাশনাল এ ক্ষোভ প্রকাশ করে চিঠি লিখেছে এই ঘটনাটিকে তুলে ধরে। আবু ধাবি থেকে একজন পাঠক রশিদ আলফালাসি অভিযোগ করেছেন এই সমস্ত চমক বা স্টান্টের প্রদর্শনীর স্থানের অভাবের কারণে ওই সমস্ত তরুণেরা এই ধরনের রাস্তায় এ সমস্ত ঘটনা ঘটাচ্ছে:

আমি মনে করি এই সমস্ত ছেলেদের যদি বিশেষ কোন জায়গায় এই রকম চমক বা স্টান্টের প্রদর্শনীর সুযোগ দেওয়া হত, যেমনটা কাতারে রয়েছে, তাহলে তারা এ রকম গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উপর এ রকম প্রদর্শন করত না এবং তাদের জীবনকে এর ঝুঁকিতে ফেলে দিত না। কাতারে এই ধরনের কাজের জন্য বিশেষ এক এলাকা রয়েছে, যেখানে তরুণ চালকেরা গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নীতি গ্রহণের মাধ্যমে তারা তাদের চমক বা স্টান্ট প্রদর্শন করতে পারে। সেখানে এ ধরনের কাজের সময় অ্যাম্বুলেন্সের উপস্থিতি থাকে এবং এই এলাকাটি সপ্তাহের ছুটির দিনে খোলা থাকে এবং বিশেষ দিবস, যেমন ঈদের ছুটি এবং ফুটবল দল কোন খেলায় জিতলে, ইত্যাদি দিনে তারা এই সমস্ত চমক বা স্টান্টবাজী প্রদর্শন করে।

আবু ধাবির আরেকজন পাঠক টিম ক্রেইগ, তিনি পোস্ট করেছেন:

এরাই আবুধাবির ভবিষ্যৎ নেতা। কাজেই প্রশ্ন আমিরাত কোন দিকে এগুচ্ছে? যদি আপনি আপনার জীবনকে মূল্যবান ভাবেন, তাহলে দুবাইয়ের রাস্তায় গাড়ি চালাবেন না।

আপনি যতটা কল্পনা করছেন এটি তারচেয়েও খারাপ এবং স্থানীয়রা এই ধরনের বিপদ এবং ভয়ের ক্ষেত্রে ঠাট্টার সাথে অট্টহাসি সরল মানুষদের উপর চাপিয়ে।

ব্লগে আসা যাক, সানডিয়ের পেসচার্স-এ ব্লগ করা গ্রেস তার সামান্য মতামত এখানে যোগ করেছেন:

দুবাইয়ের রাস্তা গাড়ি চালানোর বিষয়টি যে আমার অপছন্দের, এর আগে আমি সে কথা লিখেছিলাম, ক্ষ্যাপাটে গাড়ি চালকদের সাথে যাওয়া কঠিন, বেদনাদায়ক ভাবে তারা এখানে সংখ্যায় প্রচুর। আর আজকের সংবাদে এই অপছন্দের বিষয়টিকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেল। ইউটিউবে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে দুবাইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাত সারির এক রাস্তা শেখ জায়েদ নামক সড়কে তরুণ চালকেরা স্টান্ট বা চমক দেখানো দৃশ্য প্রদর্শন করেছে। একটি পিকআপ ট্রাক (ছোট আকারের ট্রাক) ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুরে এবং পিছলে রাস্তার একপাশে চলে গেল। এদিকে একটি চার চাকার গাড়ি ছয় সারির এক রাস্তায় এঁকেবেঁকে চলতে থাকল (এটি ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলছিল), যে গাড়িটি কেবল এর দুই চাকার উপর ভারসাম্য বজায় রেখেছিল। এই ঘটনা কোন বিশেষ প্রদর্শনীতে অনুষ্ঠিত হয়নি।

তিনি বলেই চলেছেন:

অন্তত বলা যায় এই ছবি দেখে চমকে উঠতে হয় এবং এই সব কথা লেখার পরেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। কারণ সকলেই জানে এই সমস্ত বেপরোয়া গাড়ী চালকদের জাতীয়তা কি।

তারা এখন কোথায়? মানুষ খুন করার জন্য তারা দুবাইয়ের কোন এক জায়গায় রয়ে গেছে! পুরো উন্মাদনার গল্পটি দেখুন… দি ন্যাশনালের মাধ্যমে।

ওই দুটি গাড়ির চালকেরা: তোমরা নির্বোধ, অবিশ্বাস্য রকমের স্বার্থপর, অসহনীয়, বখে যাওয়া বিশ্রী মানুষ!

লাইফ ইন দুবাইতে ব্লগ করেন সীবি, তিনি এই চমক বা স্টান্টবাজীকে “জীবন নেওয়ার মত পাগলামি” বলে অভিহিত করেছেন

তিনি এর সাথে যোগ করেন:

ইউটিউবে একটি নতুন চলচ্চিত্র প্রদর্শন করছে যে, নিষ্পাপ গাড়ী চালকদের জীবন কিভাবে একদল ঘিলুহীন নির্বোধের জন্য বিপদগ্রস্ত হয়ে ওঠে।

সীবি, এই ভিডিও থেকে বেশ কিছু স্থির দৃশ্য পোস্ট করেছেন, যার মধ্যে নীচের ছবিটিও রয়েছ, যেখানে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তি চার চাকার এই গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে উঁকি দিচ্ছে এবং অন্য আরেকটি চার চাকার গাড়ি দুই চাকার উপর ভারসাম্য বাজায় রখে ছয় সারির এক প্রধান সড়কের উপর ভীড়ের মধ্যে চালানো হচ্ছে!

দুবাইয়ের গাড়ি চালানোর সময় স্টান্টবাজী অনেক ব্লগারকে ক্ষুব্ধ করেছে

অনেক ব্লগারের মত তিনি বিস্মিত:

দুবাই পুলিশ পূর্ব ইউরোপীয় রাম-রেইড (সাধারণত চুরি বা ডাকাতির সময় লুণ্ঠিত দ্রব্যাদি বহন করার জন্য ব্যবহৃত বাহন ও তার দলবল) গুন্ডার দলকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে এবং হামাস নেতা মাহমোদ আল মাবোয়াহকে যে ঘাতক দল হত্যা করেছে তাদের বেলায় ব্যাপক তথ্য পেয়ে যায়। এ ব্যাপারে তারা দক্ষ।

এই ভিডিওতে যে নির্বোধকে দেখা যাচ্ছে, তাকে চিহ্নিত করতে পুলিশের পাঁচ মিনিট লাগার কথা।

ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেবার কারণে তারা আজীবন গাড়ি চালানোর মত নিষেধাজ্ঞা নামক সাজার যোগ্য। তাদের আজীবন কোন যানের মালিকানা পাওয়ার যোগ্য নয় এবং তাদের লম্বা সময়ের জন্য জেলে যাওয়া উচিত। এবং আমি এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের কথা বোঝাতে চাইছি।

এখানে যে প্রশ্নটি এখন আবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে তা হল, তাদের কি গ্রেফতার করা হবে। সংশয়বাদীরা এই বিষয়ে দ্বিধান্বিত এবং তার ওয়াস্তার (প্রভাবের ) কথা বলছে…

দুবাই পুলিশ সাথে সাথে এই ঘটনার উপর নজর দিতে শুরু করে এবং সংবাদ প্রতিবেদনে জানা গেছে যে ওই দুই চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের উপর অন্যের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। দি ন্যাশনাল সংবাদ প্রদান করছে যে আমিরাতের এই দুই নাগরিক যাদের বয়স কেবল ২০ এর উপরে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের তিন বছরের জেল এবং জরিমানা উভয় শাস্তি প্রদান করা হতে পারে।

এই সংবাদের উপর প্রতিক্রিয়া প্রদান করতে গিয়ে সীবি ব্যাখ্যা করছে:

এটা কেবল শুরু, এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে কি ভাবে ন্যায়বিচার প্রয়োগ করা হয়।

আমি এর আগের পোস্টে বলেছিলাম, আমি মনে করি তাদের উপর আজীবন গাড়ির মালিকানা না দেওয়া ও তাদের গাড়ী চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা উচিত এবং এর সাথে লম্বা সময় জেল প্রদান করা কথা বলেছিলাম। বিশেষ ইচ্ছাকৃত ভাবে জীবন বিপন্ন করার শাস্তি হিসেবে তাদের এই শাস্তি দেওয়া উচিত।

তবে আমি এক মুহূর্তের জন্য মনে করি না, এমনটা ঘটবে।

এই সমস্ত চালক, যারা এই সব স্টান্ট প্রদর্শন করছিল, তারা ছাড়াও হ্যাঙ্গার এর এক গাড়ী বহর তাদের অনুসরণ করছিল, এই কাজে তাদের জন্য উল্লাসধ্বনি প্রদর্শন করছিল এবং তাদের ঘটনাটিকে চিত্রায়িত করছিল। এই কাজে সাহায্য করা এবং সমর্থন করার জন্য এই অনুসরণকারী গাড়িটিকেও গ্রেফতার কর উচিত।

এর ফলাফল আমাদের দেখাতে পারে যে কর্তৃপক্ষ কতটা গুরুত্বের সাথে বিপদকে দমন করা হবে, দায়িত্বহীন গাড়ি চালানো এবং রাস্তার নিরাপত্তা নামক বিষয়টির প্রচারণার জন্য কাজ করছে।

যতদুর মনে হচ্ছে এটা এক হতাশ করা প্রচারণা, যার খুব কমই সাফল্য রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে এখানে সেখানে বিশেষ কিছু বিষযের উপর জোর দেওয়া, যেমন গায়ে গা ঘেষে গাড়ি চালানো বা টেইলগেটিং, শিশুদের আসন অথবা মোবাইল ফোনের ব্যবহার। আমি নিজে এই সমস্ত অপকর্ম কমে আসার কোন লক্ষণ দেখতে পারছি না, ঘটনা হচ্ছে আমার কাছে মনে হচ্ছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ছে।)

কাজেই এই ঘটনাকে অনুসরণ করা এক কৌতূহলজনক বিষয় হবে এ রকম এক গুরুত্বপূর্ণ ইচ্ছাকৃত ভাসমান আইন যা এক বিপর্যয়কর প্রভাব তৈরি করবে নিষ্পাপ গাড়ি চালকদের পাগলামিতে পেয়ে বসবে।

এবং ফেক প্লাস্টিক সুকস এই বিতর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে- তা হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্ধ করা সাইট নিয়ে। আলেকজান্ডার ম্যাকনাব সংবাদ প্রদান করছে:

এটা দৃশ্যমান যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (ইউএই টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথরিটি বা আপনার বা আমার জন্য টিআরএ) ইউটিউবের বয়স নির্ধারণী পাতা (এজ ভেরিফিকেশন স্ক্রীন) বন্ধ করে দিয়েছে।

গতকাল টুইটারে এই সমস্যাটাকে বেশ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করা হয়, যখন বিখ্যাত শেখ জায়েদ সড়কের উন্মত্ততার ভিডিও একটি লিঙ্কের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়- এই লিঙ্ক বা সংযোগ ইটিসালাত ও ডু নেটওয়ার্কে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাতার চেহারা নিয়ে ফিরে আসে। বিটিডাব্লিউএর এক সুন্দর লিঙ্ক এখানে রয়েছে।

যদিও প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল এর উপাদানের কারণে সাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যেখানে একদল মূর্খ দুবাইয়ের ব্যস্ত রস্তার ডোনাটস বা গাড়িকে জোরে এক চক্কর ঘুরিয়ে বা এ রকম কাজ করে অন্য গাড়িচালকদের জীবনকে বিপন্ন করে, ঠিক এ কারণে তা বন্ধ করা হয়নি।

তাহলে আসলে কি ঘটেছিল? ব্লগার-এর মতে:

এই ভিডিওর ক্ষেত্রে যা ঘটেছিল তা হচ্ছে এতে বয়সের নিষেধাজ্ঞার জন্য এখানে পতাকা চিহ্ন বসানো হয়েছিল (ফ্লাগ বসানো- বাস্তবে পোস্ট করার সময় বিশেষ বয়সের জন্য কেবল দেখা যাবে এমন চিহ্ন হিসেবে পতাকা বসিয়ে ইউটিউবে ভিডিও যুক্ত করা যায় না। কোন একজন দর্শক এখানে পতাকা বসাবে এবং ইউটিউব-এর কর্মীরা বিষয়টি পর্যালোচনা করবে এবং তারপর তারা বয়স ভিত্তিক প্রতিবন্ধকতার চিহ্ন হিসেবে সেখানে পতাকা যুক্ত করে।) এবং এর পর ইউটিউব দর্শকদের কাছে বয়স যাচাই করার পাতাটি পাঠায়।

এ ভাবে এটিকে বন্ধ করা হয়েছে। কেউ একজন ধারণা করতে পারে যে, ‘যদি কারো প্রশ্ন করার প্রয়োজন থাকে, তাহলে এই স্থানের নীতিমালা অনুসারে তার উত্তর হবে না’।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .