ব্যাংককের সংঘর্ষ: ছবি, ভিডিও এবং টুইটার সংবাদ

ওয়াসাইস এর টুইটপিক পাতা থেকে নেওয়া

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অভিশিৎ ভেজ্জাজিভা যে পিছু হটবেন না, তা প্রমাণিত হয় যখন তিনি সামরিক বাহিনীকে রেড শার্ট (লাল জামা) নামক প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাবার নির্দেশ প্রদান করেন। রাজধানীতে স্থিরতা ফিরিয়ে আনার যৌক্তিকতা হিসেবে অভিশিৎ প্রতিবাদকারীদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে উৎসাহ প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি রেড শার্টদের একটি সংখ্যালঘু অংশের বিরুদ্ধে “সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের” অভিযোগ এনেছেন, যারা দেশটিতে আরো হানাহানি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।

ইতোমধ্যে গত দুই মাস ধরে রেড শার্টরা রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবাদ করছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছে, যার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, তিনি অবৈধ এবং অগণতান্ত্রিক। এছাড়াও তারা চায়, যেন প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভেঙ্গে দেয় এবং নতুন নির্বাচনের সময় ঘোষণা করে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার জন্য চুক্তি করেছিল, কিন্তু কয়েকদিন আগে তারা এক পাঁকে আটকে যায়।

শুরুতে রেড শার্ট নামধারী আন্দোলনের সদস্যরা ছিল দেশ থেকে বিতাড়িত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থক। কিন্তু বর্তমানে রেড শার্ট প্রতিবাদকারীরা এমন এক দল ও ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে, যারা থাই সমাজে গণতান্ত্রিক সংস্কার চাইছে।

গত ২৪ ঘন্টায় থাইল্যান্ডে কি ঘটেছিল? এখানে থাই রিপোর্টের প্রদান করা সময়সূচি উপস্থাপন করা হল।

১১.০০- রেড লিডার (লাল শার্টধারীদের নেতা): সংঘর্ষ এমন এক রূপ ধারণ করেছে যে তা নিয়ে আর আলোচনা সম্ভব নয়…
১১.৪৫-দুরপাল্লার বন্দুকের গুলি (স্নাইপার) সাধারণ নাগরিকদের দেহে আঘাত হানছে।
১২.০০-ব্যাংকক টপসে “লোকজন পাগলের মত খাবার সামগ্রী তুলে নিচ্ছে”
১২.১৫-গুম খুনের গুজব ছড়িয়ে পড়ছে
১২.১৫-সামরিক বাহিনী আরেকটি মৃতদেহ টেনে তুলল..
১২.১৫-লুম্পিনি উদ্যানে দূরপাল্লার বন্দুকের ভারী গোলাগুলি হচ্ছে…
১২.৩০-মৃতদেহ উধাও হয়ে গেছে…
১২.৪৫-মৃত্যুর আগে ব্যক্তিটি ৩০ মিনিট আহত অবস্থায় পড়ে ছিল…
১৪.০০-ফ্লাশ ক্যামেরায় (অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে ছবি তোলার ক্যামেরা) বন্দুকের গুলির ছবি তোলা হয়েছে…
১৪.১৫-প্রতিবাদকারীরা একটি প্রতিরক্ষা দেওয়াল তৈরি করেছে..
১৪.৩০-সংঘর্ষ চলছে যে এলাকায়, সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে
১৫.১৫-প্রতিবাদকারীরা চার নম্বর রামা এলাকার দিকে এগুচ্ছে
১৫.১৫-জাপানী দূতাবাসের কর্মী এই এলাকায় আটকা পড়ে রয়েছে
১৫.৪৫- হোটেলের বাইরে সাতটি প্রাণহীন দেহ চিহ্নিত করা হয়েছে
১৬.২০-রাজপ্রাসাদ এলাকায় প্রচুর গোলাগুলি হচ্ছে
১৬.৩০- হোটেলে অস্ট্রেলিয়ার পর্যটকরা আটকা পড়ে রয়েছে
১৬.৩০ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, তার কর্মচারীদের পরিবারসহ এলাকা ত্যাগ করার সুযোগ প্রদান করেছে
১৬.৩৫- বন কাই এলাকায় এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ, এলাকাটিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে
১৭.০০-সিআরইএস অভিযোগ করছে, “আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমের বিকৃতির” বিরুদ্ধে
১৭.০৫- আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে গিয়ে একজন মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে
১৭.১০- চার নম্বর রামা এলাকায় ১০০০ জন শান্তিপ্রিয় রেড শার্ট সমর্থক হেঁটে যাবেন
১৮.৪৫- আমাদের উপর অভিযোগ আনবেন না-সরকার
১৮.৪৫- রেড শার্টরা গুলিবর্ষণ বন্ধের দাবি জানিয়েছে
১৮.৫০-“সামরিক বাহিনীর লোকেরা তাদের খেলনাগুলো সরিয়ে নেবে না এবং বাড়িতে ফিরে যাবে না”
২৩.০০- মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২২ জনে দাঁড়িয়েছে..
২৩.১৫- আমার জানালার বাইরে প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে
২৩.৪৫- নতুন অস্ত্র, মর্টার শেল
২৩.৫০ সিলম এলাকা থেকে প্রচার মাধ্যমের লোকজনদের সরে যেতে বলা হয়েছে, এখানে সামরিক অভিযান আসন্ন বলে মনে হচ্ছে
০০.১০-পুলিশের সংবাদে সেনাদের লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে…
০০.৫০- ভিক্টরি মনুমেন্ট (বিজয় স্তম্ভ) নামক এলাকায় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা প্রার্থনা করছে
১.০০- আরো সেনার সমাবেশ ঘটেছে
১.৪০- দূরপাল্লার বন্দুকের গুলির শব্দ এখনো শোনা যাচ্ছে…
০২.০৫-পুলিশ বলছে সেনারা এক আক্রমণের জন্য তৈরি হচ্ছে..
৩.০০-২৪ জন মৃত, ১৮০ জন আহত এবং এদের বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক
৩.৪৫- প্রধানমন্ত্রী অভিজিৎ, “পিছু হটবো না”

ডিনআইটের টুইটপিক পাতা থেকে নেওয়া

জলন্ত গাড়ীর চাকা এবং গ্রেনেড রেড শার্ট প্রতিবাদকারীরা যে এলাকায় রয়েছে তা কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এখানে এক নাগরিক সাংবাদিকের তোলা সেই ঘটনার ভিডিও দৃশ্য।

প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের দেখা ঘটনা ওয়েবে প্রকাশ করছে। যেমন যেখানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় নিক নোসটিটজ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ভাইটর এবং রাইডিং আউট দি ইকোনমি-ও এই সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের পর্যবেক্ষণের কথা পোস্ট করেছেন। একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী এই শিরোনামে একটি লেখা পোস্ট করেছে, “আমার অনুভূতি কি রকম হতে পারে যখন আমি একদিন জেগে উঠে দেখি আমার বাসার সামনে অজস্র মৃতদেহ পড়ে রয়েছে”? তবে নেটিজেন বা নেট নাগরিকরা এই দৃশ্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এগুলো কি ভূয়া মৃতদেহ?

এলিয়েটহেড-এর মাধ্যমে পাওয়া টুইটছবি

নিউ মান্দালয় থেকে লেখেন কিষেন, যিনি চলমান এই সংঘর্ষের ফলে থাইল্যান্ডে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক যে প্রচণ্ড প্রভাব তৈরি হতে যাচ্ছে তাতে শঙ্কিত:

কিন্তু সকলেই লড়াই করছে, থাইল্যান্ড নামক দেশটির সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ধ্বংসের বিষয়টি বিবেচনা না করেই, যদি এই অবস্থা চলতেই থাকে তা হলে থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাজে ভাবে বাধাগ্রস্ত হবে, বিশেষ করে যেখানে এ বছরের খরা দেশটির কৃষি পণ্য রপ্তানির উপর প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে।

যেমনটা বলা যায়, এই ক্ষত পরবর্তী কয়েকদিন থাইল্যান্ডের চৈতন্য এবং ভাবমূর্তির উপর আঘাত হানবে যা অদূর ভবিষ্যতে একটি একক জাতি হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির উপর প্রভাব তৈরি করবে। বড় এক ক্ষত, যা গ্রেনেড, .০৩৮ বুলেট এবং সাঁজোয়া যান থাই জনতার উপর আঘাত হানতে পারে।

সেনা ও প্রতিবাদকারীদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের উপর তোলা আরেকটি নাগরিক ভিডিও।

নিউজ ইন ব্যাংকক ধারণা করছে যে ইচ্ছে করে সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে স্নাইপার বা দূরপাল্লার বন্দুকের গুলি ছোড়া হচ্ছে।
আমার সন্দেহ সাংবাদিকদের উপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুলি ভাবে ছোঁড়া হচ্ছে।

আমার সন্দেহ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার উদ্দেশ্য, এই হত্যাযজ্ঞের চলচ্চিত্র দৃশ্য তোলা থেকে তাদের বিরত রাখা। এখন আমি এই বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী যে আমার অনুভূতি সঠিক।

"Peaceful protesters, not terrorists." Twitpic by bretonbkk

গ্রেগ টু ডিফার-এর মাধ্যমে জন, ব্যাংককের এই সংঘর্ষ পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে সামাজিক প্রচার মাধ্যমের ভূমিকার (সোশাল মিডিয়া) কথা লিখেছেন।

ব্যাংককের প্রতিবাদের কথা বিস্তারিতভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার ক্ষেত্রে সামাজিক প্রচার মাধ্যম এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শক্তিশালী ছবি, ভিডিওর দৃশ্য সংরক্ষণ করা, ব্যাক্তিগত পাতা এবং মতামত; টুইটার, ফেসবুক এবং ব্লগের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, এমন এক অবস্থায়, যেখানে সামাজিক প্রচার মাধ্যম সংবাদ প্রদানের ক্ষেত্রে মূল্যবান সহযোগী হিসেবে অবস্থান তৈরি করেছে।

নায়েলকুং-এর তোলা টুইটছবি

ব্যাংককের একটি রাস্তার দৃশ্য দেখাচ্ছে যে লাল জামা পড়া প্রতিবাদকারীরা তাদের কাজে নেমে পড়েছে।

ব্যাংককের নাগরিকদের লড়াইয়ের ব্যাপারে টুইটারের প্রতিক্রিয়া:

এলিমেডান: সিএনএন-এ #থাইল্যান্ডের বিষয়ে যা দেখছেন, দয়া করে তাতে বিশ্বাস করবেন না। তারা #রেড শার্টদের মত করে সংবাদ তৈরি করেছে, যারা দাবি আদায়ের জন্য ব্যাংকক শহরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
সুতাতিপ_বি: আরটি@ব্যাংককবিল: গতকাল রাতের আলোয় আমি যা ভেবেছি, তা এখন এ কথা ঠিক হবে, এখানে #রেড শার্টদের প্রতিবাদ এবং বিদ্রোহ চলছে।
সিকোরো: কেউ কি সত্যিকার অর্থে নিজের চোখে দেখেছে যে একজন #রেডশার্ট প্রতিবাদকারী বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে অথবা কাউকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে?
টুলপিন: আমার ধারণা#রেডশার্ট-এর নেতারা লোকদের এভাবে জিম্মি করবে এবং যখন তাদের সুযোগ ঘটবে তখনই তারা দৃশ্য থেকে পালিয়ে যাবে।

টুইটছবি এলিয়েটহেডের

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .