পরিবর্তন না ধারাবাহিকতা, কোন পক্ষে যাবেন সিঙ্গাপুরের ভোটাররা?

Opposition candidates from the Workers' Party hold an election rally. Photo from the Facebook page of Workers' Party

বিরোধীদল ওয়াকার্স পার্টির প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী শোভাযাত্রা। ছবিটি ওয়াকার্স পার্টির ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া হয়েছে।

গত মাসেই সিঙ্গাপুর প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছে। এখন দেশটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এ নির্বাচনে সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৮৯টি আসনেই ভোট হচ্ছে। এর মানে ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকারি দল পিপলস অ্যাকশন পার্টিকে (পিএপি) বেশ দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। গত ৫০ বছর ধরে পিএপি ক্ষমতায় রয়েছে। কোনো নির্বাচনেই দলটি পরাজিত হয়নি। যদিও ২০১১ সালের নির্বাচনে বেশ ভালো ভোটের ব্যবধানে জিতেছিল।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী স্লোগান হলো, “আপনার সাথে, আপনার জন্য, সিঙ্গাপুরের জন্য”। এই স্লোগানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতাসীন পিএপি সবাইকে গত ৫০ বছরের অর্জন মনে করিয়ে চায়। অন্যদিকে বিরোধী দল সরকারে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠা করার জন্য পরিবর্তনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। তাদের নির্বাচনী থিম হচ্ছে, “আপনার ভবিষ্যৎকে শক্তিশালী করুন”। অন্য আরেকটি বিরোধী দল সিঙ্গাপুরিয়ান ফার্স্ট পার্টির থিম হচ্ছে, “সিঙ্গাপুরকে পুনরুদ্ধার করুন”।

পিএপি’র নেতৃত্বে সিঙ্গাপুরের উন্নতি নিয়ে কথা বলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তবে সিঙ্গাপুরে ক্রমবর্ধমান একটি প্রজন্ম রয়েছে, যারা আয় বৈষম্য, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, বিদেশী শ্রমিকের আগমন নিয়ে পিএপি’র সমালোচনা করছে। তাদের সবচে’ বেশি অভিযোগ বিদেশী শ্রমিকের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি নিয়ে। বিদেশী শ্রমিকরা নাকি শহরের জীবনযাত্রার মানকে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে ১০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে।

Singapore Prime Minister Lee Hsien Loong meets with constituents. Photo from the Facebook page of People's Action Party

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং সংগঠকদের সাথে কথা বলছেন। পিপলস্ অ্যাকশন পার্টির ফেসবুক পেইজ থেকে ছবিটি নেয়া হয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারণার জন্য চলতি সপ্তাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রচারণা কৌশল, প্রার্থীদের রাজনৈতিক দল ও প্লাটফর্ম নিয়ে অনেক নাগরিকই তাদের মতামত দিচ্ছেন।

অনিল বলচন্দানি বিকল্প সংবাদমাধ্যম দ্য অনলাইন সিটিজেন-এ নির্বাচনী প্রচারণার জন্য স্বল্প সময় বরাদ্দ রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন:

If the Prime Minister thinks this is a watershed election, then it puzzles me that the electorate is only given eight days to decide on this. How is it that the Prime Minister expects the electorate to comprehend all the issues canvassed by his party and the opposition for years to come in eight days?

প্রধানমন্ত্রী যদি ভেবে থাকেন এটা একতরফা ইলেকশন, তাহলে আমি খুবই বিভ্রান্তিতে পড়বো। কারণ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ভোটাররা মাত্র আটদিন সময় পাবেন। প্রধানমন্ত্রী কীভাবে আশা করেন তার ও বিরোধী দলের নির্বাচনী প্রচারণার সবকিছু ভোটারটা মাত্র আটদিনেই বুঝতে পারবেন?

ব্লগার বেলিন্ডা ইয়েক লিখেছেন, কোন দল থেকে মনোনয়ন পেলেন তার উপর নয়, দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচিত হবেন, তিনি কী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তার ভিত্তিতে:

I wouldn't want to have a situation where time and resources are wasted and unsatisfactory compromises made just because of the increased opposition seats and their veto power in parliament. Instead, when voting for the opposition, vote based on the election promises and programs they will implement, and judge them with the same fervour that we judge the incumbent as they have had 4 years since GE2011 to deliver on their promises and programs.

আমি এমন অবস্থা দেখতে চাই না যেখানে সংসদে বিরোধী দলের আসন ও ভোট দানের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অযোগ্য প্রার্থীর প্রতিও সহানুভূতি তৈরি হোক। এর পরিবর্তে বিরোধী দলকে ভোটকে ভোট দিবো তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও প্রকল্প দেখে, যা তারা বাস্তবায়ন করবে। একইভাবে বর্তমানদের বিচার করবো চার বছর আগে তারা যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেটা কতটা বাস্তবায়ন করেছেন তার উপর ভিত্তি করে।

তরুণ লেখক কাসান্দ্রা চিয়া একটি নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানকার পর্যবেক্ষণ নিয়ে তিনি লিখেছেন:

I sat down on the grass patch with the rest of the crowds. What I initially expected was a rock concert style environment with many die-hard roaring fans, just that the singers singing were now replaced with candidates speaking for their political party. However, the atmosphere was not as “electrifying” as I imagined.

আর সবার সাথে আমি ঘাসের উপর বসে ছিলাম। আমার প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল, বোধহয় রক কনসার্ট হবে। তেমনই পরিবেশ ছিল চারদিকে। ভক্তদের চিৎকারে কান পাতা দায় হয়ে পড়েছিল। কিন্তু গায়কের পরিবর্তে সেখানে এলেন রাজনৈতিক দলের একজন প্রার্থী। তিনি উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিলেন। যদিও আমি যেমন কল্পনা করেছিলাম, পরিবেশ তেমন নির্বাচনী আবহপূর্ণ ছিল না।

সি ইং নামের আরেকজন তরুণ লেখক কয়েকজন বয়স্ক ভোটারের সাক্ষাৎকার নেন। তারা সবাই স্থিতিশীলতার পক্ষে ভোট দিবেন বলে জানিয়েছেন:

“Stability” and “assurance” are common factors to account for why most of the elderly citizens would rather stick with the familiar than to risk change.

বয়স্ক ভোটারদের কাছে “স্থিতিশীলতা” এবং “আশ্বাস” গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক। তারা এগুলোই ধরে রাখতে চান। পরিবর্তনের ঝুঁকি নিতে চান না।

তবে তরুণদের একটি বড় অংশ দেশটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট। এজন্য তারা পরিবর্তনের পক্ষে সোচ্চার:

…we’re also seeing a significant slice of the younger generation who feel that change is necessary, alternative/new voices are needed, being-satisfied wouldn’t suffice and that Singapore has far greater potential to improve and succeed.

আমরা তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে দেখতে পাচ্ছি, যারা পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করেন। মনে করেন নতুন বা বিকল্প কোনো কণ্ঠস্বর আসা উচিত। এই তরুণরা সিঙ্গাপুরের উন্নতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। তারা মনে করেন, দেশটির আরো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে পিএপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। এরমধ্যে অবশ্য টুইটারের জিই২০১৫ হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .