কেন দেয়ালে লেখা আরবী অক্ষরগুলো ঢাকায় গণ মূত্রত্যাগ রোধ নাও করতে পারে

The photo shows  Arabic sign on the sidewall of Panthakunja Park at the Karwan Bazar in Dhaka. Image by Sk. Hasan Ali. Copyright Demotix (7/5/2015)

ছবিতে ঢাকার কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ উদ্যানের পার্শদেয়ালে আরবী চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। ছবি সে. হাসান আলীর সৌজনে। স্বত্ব ডেমোটিক্স (৭/৫/২০১৫)

গণশৌচাগারের ঘাটতি থাকায় প্রধানত বাংলাদেশে গণ মূত্রত্যাগ একটি সমস্যা হিসেবে দাড়িয়েছে। পৌর কর্মকর্তারা রাজধানী ঢাকায় প্রকাশ্যে পুরষদেরকে মূত্রত্যাগ করা থেকে বিরত রাখার বৃথা লড়াই করেছে কারণ বাংলা ভাষায় লেখা চিহ্ন এবং শাস্তির ও জরিমানার সর্তকবানী ব্যবহার করার পরও কোন লক্ষণীয় ফলাফল আসে নি।

এখন সরকার ভাবছে যে একটি সৃজনশীল ধারণা এই অভ্যেসের ইতি টানবে। সম্প্রতি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘ভাষা একটি ব্যাপার’ নামে তাদের একটি প্রচারণামূলক ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে মূত্রত্যাগ না করার জন্য লেখা বাংলা চিহ্নগুলোকে পরিবর্তন করে বাংলাদেশীদের জন্য পবিত্র ভাষা আরবী চিহ্নতে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

এই ধারণাটি তারা হয়তো পেয়েছে একই সমস্যা নিয়ে লড়াই করা প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে যেখানে দেয়ালে আঁকা হিন্দু দেব-দেবীর ছবিও একই প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হয়েছে।

যদিও অনেকেই একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাটি সমাধানে রাষ্ট্রের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে, অন্যান্যরা আবার সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছে যে এই প্রচারণা অন্ধ বিশ্বাসকে সমর্থন করে এবং ভ্রান্তধারণার প্রসার ঘটায়।

সুফি ফারুক ইউটিউবে মন্তব্য করেছে:

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দারুণ একটা ক্যাম্পেইন !!! (..)

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মুসলিম আরবি ভাষা না বুঝলেও এই ধরনের অক্ষরকে পবিত্র মনে করে। তাই ওই স্ক্রিপ্টে লেখা যে কোনকিছু অপবিত্র করতে ভয় পায়। এই ভয়টার বেশিরভাগ সময় ধর্ম ব্যবসায়ীরা অপব্যবহার করতো। এবার একটা দারুণ কাজে ব্যাবহার হল।

ভিডিওটির মধ্যে ঢাকার ১০,০০০ মসজিদের বেশীরভাগেই শৌচাগার আছে বলে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবী সত্ত্বেও প্রায় ১.৫ কোটি লোকের শহরে গণ শৌচাগারের সাধারণ অনুপস্থিতি একটি সত্যিকার চ্যালেঞ্জ। শহরের গৃহহীন একটি বিশাল জনসংখ্যা এই সল্পতার কারণে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আলাল ও দুলাল ব্লগের আদনান আর আমিন মনে করেন যে এই ভিডিওটি সমস্যার মূলে প্রবেশ করে নি বরং তার পরিবর্তে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে:

The using of a religious misconception (“Arabic is a holy language”), to prevent a social evil, is clever. But it also reinforces and lends credence to that misconception, instead of dispelling it. One would think that for a ministry for religious affairs, dispelling religious misconceptions would outweigh protecting city-walls. If there were funds available to the government, Dhaka’s City Corporations could’ve used them to create better facilities for women. While it is difficult to discern from boardrooms, the 36 public toilets with facilities for women are now being used by men. Judging from the tactic and tone of  this video, a reexamining of both government bodies’ priorities seems to be in order.

ধর্মীয় ভ্রান্ত ধারণা (‘আরবী একটি পবিত্র ভাষা’) ব্যবহার করে একটি সামাজিক অশুভকে রোধ করা চতুরতার পরিচয়। কিন্তু ঐ ভ্রান্ত ধারণাকে দূর না করে বরং এটিকে আরও জোরদার করা হচ্ছে এবং এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা হচ্ছে। একজন হয়তো ভাবতে পারে যে একটি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য শহুরে-দেয়ালগুলোকে রক্ষা করার থেকে ধর্মীয় ভ্রান্তধারণাগুলোকে অপসরণ করার গুরুত্ব বেশী হওয়া উচিত। যদি সরকারের কাছে তহবিল থেকে থাকে, তবে ঢাকার সিটি করপোরেশনগুলো মহিলাদের জন্য আরও বেশী শৌচাগার নির্মাণ করতে পারতো। সুসজ্জিত অফিসে বসে থেকে উপলব্ধি করা কঠিন, কিন্তু মহিলাদের জন্য ব্যবস্থাযুক্ত ৩৬টি গণ শৌচাগার এখন পুরুষরা ব্যবহার করছে। এই ভিডিওটির কৌশল ও স্বরভঙ্গি থেকে প্রতিয়মান হয় উভয় সরকারী সংস্থাগুলোর অগ্রাধিকারকে পুনর্নিরীক্ষা করার সময় এসেছে।

‘এখানে প্রস্রাব করবেন না’ আরবীতে অনুবাদ করার মাধ্যমে ঢাকায় গণ মূত্রত্যাগ হ্রাস পেয়েছে

এছাড়াও, একজন প্রভাবশালী ইমাম ফরিদউদ্দিন মাসুদ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেছেন

বেশীরভাগ মসজিদে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার থাকলেও মসজিদগুলোতো আর ‘গণ শৌচাগার নয়’, তিনি বলেন, সাথে যোগ দেন ‘কোরান-এর ভাষাকে এই ধরনের প্রচারণায় ব্যবহার করার অধিকার কারো নেই।’

ব্লগার আইরিন সুলতানা এই প্রচারণকে নিয়ে নারী অধ্যায় ব্লগে ‘আরবী নয়, বরং গণশৌচাগার দরকারি’ শীর্ষক একটি পোষ্টের মাধ্যমে তার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন:

ঢাকা শহরের প্রতি দেড় লাখ নাগরিকের জন্য শৌচাগার রয়েছে মাত্র একটি। [..] অধিকাংশ পাবলিক টয়লেটই ব্যবহার অনুপযোগী। [..] পাবলিক টয়লেটহীন নগরীতে পথচারীদের অধিকাংশই তাই ফুটপাতকেই বেছে নিচ্ছেন ’হালকা’ হতে।

না বুঝে কেবল আরবি লেখা থাকলে সালাম করা হলো এ দেশের মানুষের ধর্মীয় অন্ধত্ব। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল মানুষকে এসব অশিক্ষা থেকে বের করে শিক্ষিত, সচেতন করা, তার বদলে মানুষের সেই অজ্ঞতাকে ব্যবহার করে ’সমাধানের’ নামে মূলত একটি মশকরা করলো!

সুলতানা ভারতীয় প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্পতিক প্রচেষ্টারও উদাহরণ দিয়েছেন যিনি তার মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনে মন্দিরগুলোর সামনে শৌচাগার নির্মাণ করেছেন এবং ৫২লক্ষ শৌচাগার নির্মাণ কাজ অর্জিত হয়েছে।

বাংলাদেশ এই বিষয়ে অনেক পিছনে রয়েছে।

যখন ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় ধর্ম বিষয়ক কর্মকর্তারা তাদের সাফল্যের ঢোল পিটানো শুরু করেছে, তখন এই প্রচারণাটিকে দেখে মনে হয় যে এই বিষয়টিকে খুব ভালভাবে ভেবে চিন্তে করা হয় নি। যদি সম্পূর্ণভাবে একে বাস্তবায়িত করা হয়, তবে ঢাকার দেয়ালগুলো আরবী লেখায় ভরে যাবে কিন্তু মানুষের জন্য তবুও মূত্রত্যাগের কোন জায়গা থাকবে না।

এছাড়াও, ভারতে মদী তার শৌচাগার নির্মাণের হিরিক শুরু করার আগে, দেয়ালে দেবতা'র প্রচারণার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে: মানুষ তখন উপায় না পেয়ে দেবতাদের মুখের উপর প্রস্রাব করতে শুরু করে দেয়। গণ গ্লানি অন্তর্ভূক্ত করা সৃজনশীল প্রচারণা যেমন দ্যা পিসিং ট্যাঙ্কার‘ও কোন ফলাফল আনতে পারে নি।

এ কারণে আদনান আর আমিনের মন্তব্য, যে প্রচারণার জন্য অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে — ‘একটি পরোক্ষ সমাধান যার মাধ্যমে লক্ষণের চিকিৎসা করা হচ্ছে কিন্তু কারণ-এর নয়’ — তা দিয়ে ঢাকায় আরো ভালভাবে নতুন নতুন গণ শৌচাগার তৈরীর ব্যবহার করা যেত, তার একটি ভাল ভিত্তি আছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .