নেপালে বাজারের মধ্য দিয়ে পালিয়ে যাওয়া এক গন্ডারের উন্মত্ত ছোটাছুটি

Image tweeted by Nepali blogger @janakdangol

নেপালি ব্লগার @জনকদঙ্গল এর টুইট করা ছবি

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ৫০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত একটি শহরে গত ৩০ মার্চ তারিখ সকালে এক শিং বিশিষ্ট একটি গণ্ডার ব্যস্ত বাজার এবং হাসপাতালের কাছ দিয়ে দৌড়ে যায়। সে সময় এটি ৬১ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধা এবং আরও বেশ কয়েকজন লোককে আহত করে। 

সারা বিশ্বের এক শিং বিশিষ্ট বিলুপ্তপ্রায় ৩ হাজার গণ্ডারের মধ্যে ৫৩৪ টির বসবাস নেপালে। যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি দেশটির চিটওয়ান জাতীয় উদ্যান থেকে ৩০ মাইল দূরে অবস্থিত। উদ্যানটিতে ৫০৩ টি এক শিং বিশিষ্ট গণ্ডার রয়েছে।

বিলুপ্তপ্রায় এই প্রজাতিটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য এবং বন্যপ্রাণী আক্রমণ দমন করতে উদ্ভাবনী পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য নেপাল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। চিটওয়ান সংরক্ষিত ভূমিতে এই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক জনসংখ্যা রয়েছে। যার গড় ওজন ৪,০০০-৬,০০০ পাউন্ড। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে শিকারের কারনে অরক্ষিত এই এক-শিং বিশিষ্ট গণ্ডার কমতে কমতে বিলুপ্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। গত কয়েক দশকে কঠোর সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় এদের জনসংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নেপাল উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে নেপালে কোন চোরাশিকারের ঘটনা ঘটেনি। একটিও বাঘ কিংবা গণ্ডার হত্যা করা হয়নি।

একটি নেপালি সংবাদ ওয়েবসাইট পাহিলপোস্টে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, গণ্ডারটি হেতাউদা শহরের মধ্য দিয়ে উত্তেজিত হয়ে এদিকওদিক ছোটাছুটি করেছে। এ শহরটিতে প্রায় ৮৫ হাজার লোক বসবাস করে। হেতাউদা হাসপাতালের কাছাকাছি গণ্ডারটিকে ধরতে পারা গেছে এবং সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে খবর ছড়িয়ে পড়ে। মূলধারার প্রচার মাধ্যমগুলো গণ্ডারটির পালানো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই স্থানীয়রা বাজারের চারপাশে গণ্ডারটির দৌড়াদৌড়ি করার বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও টুইট করেছেন।

হেতাউদা শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকা গণ্ডার। হেতাউদা থেকে কিশান পোদেল ভিডিওটি পাঠিয়েছেন।

কুমার পোদেল টুইট করেছেনঃ

হিতৌদায় শহরের মধ্য দিয়ে গণ্ডারটির ছোটাছুটি বাসিন্দাদের ভীত করে তোলে। 

সাংবাদিক উজ্জ্বল আচার্য টুইট করেছেনঃ

এক শিং বিশিষ্ট একটি গণ্ডার নেপালের হেতাউদাতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতে এসে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।

হেতাউদা থেকে গণ্ডারটির আরও কিছু ছবি টুইটার থেকে নেওয়া হয়েছে। ছবিঃ @লেক্সলিম্বু, @নেপাল২০০৬ এবং @জনকদঙ্গলের থেকে আরদি বজ্রাচার্য

নেপালে জাতীয় উদ্যান এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অঞ্চলের খুব কাছে এই ভয়ানক বন্যপশু আক্রমণের ঘটনাটি ঘটেছে। ২০০৮ সালে করা একটি গবেষণা অনুযায়ী, চিটওয়ান জাতীয় উদ্যানের কাছাকাছি ১৯৭৯ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ৩৬ টি বাঘ ৮৮ জন মানুষকে হত্যার ঘটনা ঘটে।    

সরকার এবং সংরক্ষণ সংস্থাগুলো এ ধরনের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অঞ্চলের খুব কাছে বসবাসকারী সম্প্রদায়গুলোকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালাচ্ছে। এটি প্রতিরোধে সৌর বেড়া, কংক্রিট পোস্টের মতো বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বিলুপ্তপ্রায় সম্প্রদায়ের চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অঞ্চলের কাছাকাছি বসবাস করা সম্প্রদায়গুলো তাদের জমিতে মেন্থা এবং ক্যামোমিল নামক সুগন্ধি ওষধি চাষও করতে শুরু করেছে। এ গাছ থেকে মেন্থল তেল উৎপন্ন হয়। ধারনা করা হয় যে এই গাছগুলোর গন্ধ বন্যপ্রাণীদের দূরে রাখে। সংরক্ষণ অঞ্চলের চারপাশে যে জমিগুলোতে এই গাছগুলো চাষাবাদ করা হয়, সেগুলো নিরাপত্তামূলক বেড়া হিসেবে কাজ করে। এই গাছগুলো আবাদ করার উদ্ভাবনীমূলক চিন্তাধারাকে ২০১১ সালে বিবিসির আন্তর্জাতিক বিশ্ব চ্যালেঞ্জ পুরষ্কারে বিশ্বের সর্বোত্তম ১২ টি উদ্ভাবনীর মাঝে একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।  

স্থানীয় প্রশাসনের মতে, উদ্যান কর্মকর্তা এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল গণ্ডারটিকে সংরক্ষণ অঞ্চলে ফিরিয়ে আনতে ব্যস্ত ছিল। গণ্ডারটির এই বিপদসংকুল যাত্রা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কৌতুকে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গণ্ডারটির পালিয়ে যাওয়া নিয়ে একজন মজা করে টুইট করেছেনঃ

গণ্ডারটির হাসপাতালে ঢুকতে হল কেন, যেন মনে হচ্ছে [এটি] একটি ডাক্তার।

আরেকজন সাংবাদিক ক্রিতি ভুজু টুইট করেছেনঃ

[দেখে মনে হচ্ছে] গণ্ডারটি হেতাউদা বাজারে কেনাকাটা করতে ঢুকেছে। সবগুলো দোকান বন্ধ হয়ে গেলে কি এটি তাঁর জায়গায় ফিরে যাবে?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .