সাংবাদিকদের জন্য পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে প্রাণঘাতী রাষ্ট্র

2014 World Press Freedom Index map by Reporters Without Borders.

রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্সের করা ২০১৪ সালের বিশ্ব সংবাদপত্র স্বাধীনতা সূচক মানচিত্র।

রিপোর্টার্স সন ফ্রন্টিয়ার্স নামক সংগঠন সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব সংবাদপত্র স্বাধীনতা সূচক ২০১৪- প্রকাশ করেছে, যেটাতে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে মেক্সিকোর অবস্থান ১৫২ নাম্বারে। বিশ্বের সংবাদপত্র স্বাধীনতা বিষয়ক বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠান সদর দপ্তর ফ্রান্সে, যে প্রতিষ্ঠানটি “সকল ক্ষেত্রে পতন ঘটার” বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরে এ বছরের সংবাদ পত্র স্বাধীনতা বার্ষিক সূচকের প্রথম কিস্তি প্রকাশ করেছে।

ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় গণ মাধ্যম কোম্পানিবিশ্বের সবচেয়ে ধনী টেলিকম ব্যবসায়ীর দেশ মেক্সিকোর, ২০১৩-এর সূচক থেকে এ বছরের সূচকে মাত্র চার ধাপ উত্তরণ ঘটেছে। নিদারুণ এই কম নাম্বার প্রাপ্তি উক্ত বেসরকারি সংস্থাকে মেক্সিকোর সাংবাদিকদের প্রতিদিনের জীবনে যে নির্যাতন এবং অব্যাহতির মত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়, তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদানে বাধ্য করে:

২০১৪ সালে পশ্চিম গোলার্ধের ক্ষেত্রে মেক্সিকো ছিল সাংবাদিকের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতি রাষ্ট্র (এমন সকল খুনের ঘটনা, যার ক্ষেত্রের সরাসরি প্রচার মাধ্যম কর্মীকে মেরে ফেলা হয়েছে)। খুন, অপহরণ, শারীরিক আক্রমণ এবং হুমকি প্রদানকারীরা প্রায় একেবারে কোন ধরনের শাস্তি ছাড়াই পার পেয়ে যায়, যার ফলে তারা যে আতঙ্ক ছড়ায় এবং নিজেরাই যে সেন্সরশীপ তৈরী করে, তাতে এই ধরনের ঘটনা আগুন ঢালে।

মেক্সিকোতে ২০১৪ সালে দুজন পেশাদার সাংবাদিকের, পাশাপাশি এক নাগরিক মিডিয়া কর্মীও খুন হয়। যাদের সরাসরি তাদের লেখার কারণে খুন করা হয়। ২০০৬ সালে মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মেক্সিকো সরকারের তথাকথিত যুদ্ধের সাথে দেশটিতে ক্রমশ বাড়তে থাকা সহিংসতা এবং দূর্নীতির সম্পর্ক রয়েছে, যা ন্যায় বিচার এবং মানবাধিকারকে দুর্বল করার দিকে ঠেলে দিচ্ছে:

সংগঠিত অপরাধ ও সুনির্দিষ্ট রাজনীতিবীদ এবং স্থানীয় কর্মকর্তারা সকল স্তরে সুশাসন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় সৃষ্টি করছে। মানবাধিকার রক্ষায় যারা কাজ করে এবং সাংবাদিকদের রক্ষায় কেন্দ্রীয় যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো বিপন্ন সাংবাদিকদের রক্ষায় কার্যকর নয় অথবা ততটা গতিশীল নয়।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এই শত্রুতাপূর্ণ পরিবেশের কারণ হিসেবে উক্ত সংস্থাটি টেলিভিশনের বহুমাত্রিকতার অভাবের প্রতি নির্দেশ করে, যা দেশটির সংবাদ প্রাপ্তির সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম:

প্রচার মাধ্যমের পটভূমিতে টিভি বহুমাত্রিকতার অভাবে ভুগছে এবং কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলো নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যেগুলোকে প্রায়শ বৈধ তরঙ্গ প্রদানে অস্বীকার করা হয় এবং এগুলো নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।

অন্য যে সমস্ত দেশে সংঘর্ষ চলছে, যেমন আফগানিস্তান (#১২৮) এবং ইউক্রেন (#১২৭), মেক্সিকোর অবস্থান এদের পেছনে এবং প্রতিবেশী কোস্টারিকার (#১৬) চেয়ে এর অবস্থান অনেক নীচে।

যে পদ্ধতিতে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয় প্রায়শ তা বিতর্কের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। এই বছর রিপোটার্স সন ফ্রন্টিয়ার্স “সাংবাদিক, প্রচার মাধ্যম কর্মী এবং ব্লগাররা যে সমস্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়” সে সকল পরিস্থিতি গ্রহণ করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের এই পদ্ধতিতে এক পরিবর্তন এনেছে। এই সংস্থার সংবাদ অনুসারে, এই সূচক তৈরী করা হয়েছে এক প্রশ্নমালার মাধ্যমে, যে সব প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেছে সংবাদদাতা, অংশীদার সংগঠন এবং এমনকি বিচারক ও মানবাধিকার রক্ষাকারী ব্যক্তিবর্গ।

ডয়েচে ভেলে যেমনটা উল্লেখ করেছে, এই বিশেষ মনোভাব গড়ে উঠেছে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে যা হয়ত সকল বিশ্লেষককে সন্তুষ্ট করতে পারবে না, বিশেষ করে যদি এই বিষয়টি বিবেচনা করা হয় যে, তারা যে সমস্ত দেশকে তারা মূল্যায়িত করেছে সে সব দেশের শতকরা ১০ শতাংশ সাংবাদিক ছিল বিদেশী সাংবাদিক।

মেক্সিকোর “মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ দমনে গঠিত বিশেষ বাহিনী” (ফিসকাল এসপেসিয়াল পাররা লা এতেনশিওন ডে ডেলিটোস কমেটিডোস এন সেন্ট্রাল ডে লা লি বা র্টাড ডে এক্সপ্রেশিওন) যা মেক্সিকোর অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের একটি শাখা- সেটি ২০১৪ সালের বিশ্ব সংবাদপত্র স্বাধীনতা সূচক বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন বিবৃতি প্রকাশ করেনি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .