মোবাইল ব্যাংকিং বিপ্লব বাংলাদেশকে বদলে দিচ্ছে

একজন দোকানদার গ্রাহকদের কাছে মোবাইল ফোনের ক্রেডিট বিক্রি করছেন।  ছবি তুলেছেন শফিকুল আলম। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (১৮/০১/২০১৩)।

একজন দোকানদার গ্রাহকদের কাছে মোবাইল ফোনের ক্রেডিট বিক্রি করছেন। ছবি তুলেছেন শফিকুল আলম। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (১৮/০১/২০১৩)।

মোবাইল ব্যাংকিং বাংলাদেশে নতুন হলেও এটি ব্যাংকিং সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩৩৩ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের ৫০টির বেশি ব্যাংক থাকলেও বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনো ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে। এদের বেশিরভাগই হলেন গ্রামীণ জনপদের মানুষ। তাই দেশের স্বল্প আয়ের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা চালুর উদ্যোগ নেয়। এখন পর্যন্ত ২৮টি ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিং করার অনুমোদন দেয়া হলেও বর্তমানে ১৯টি ব্যাংকে এ সেবা চালু হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৯টি ব্যাংকের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৩.৩১ মিলিয়ন। যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ। এটা কম নয়। কারণ বাংলাদেশের মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং সেবা নেয়ার সুযোগ পান। যদিও ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের মোবাইল ফোন রয়েছে।

বাংলাদেশে ১২০ মিলিয়ন মোবাইল ফোন এবং ৪২ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন। আর এটা মোবাইল ব্যাংকিং এবং ইকর্মাসের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণের জন্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার সবচে’ সঠিক পদক্ষেপ।

ঝালমুড়ি ব্লগ বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সার্বিক অবস্থা নিয়ে লিখেছেন:

Mobile Banks are not limited itself with the money transfer service instead continuously introduced various kinds of services for their customers. So far mobile banks come up with buying airtime service, insurance service, bill payment service, money disbursement service etc.

মোবাইল ব্যাংকিং এখন শুধু টাকাপয়সা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠানোর কাজেই সীমাবদ্ধ নেই। দিনে দিনে গ্রাহকদের জন্য নতুন নতুন সেবা নিয়ে আসছে তারা। এখন পর্যন্ত এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের এয়ার টাইম, ইন্স্যুরেন্সের টাকা, বিভিন্ন ধরনের বিল এবং পাওনা পরিশোধ করা যাচ্ছে।

কেবল টাকা পাঠানোই নয়, দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেছে মোবাইল ব্যাংকিং। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ প্রবাসী-আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন অন্যতম পছন্দের মাধ্যম। এই সেবার কারণে বেড়েছে নতুন কর্মসংস্থান।

বাংলাদেশের সাধারণ কর্মজীবী নাগরিকদের মাঝে মোবাইল ব্যাংকিং যে প্রভাব ফেলছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

প্রভাবশালী ব্রিটিশ পত্রিকা দি ইকোনমিস্ট গত ২০-২৬ সেপ্টেম্বর সংখ্যায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় শীর্ষ দেশগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যত টাকা লেনদেন হয়, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশ দেশটির একটি দৈনিকে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিল গেটসও বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন। উল্লেখ্য, বিল গেটস প্রতিষ্ঠিত বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং-এ অর্থ বিনিয়োগে করেছে।

তবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠির কথা ভেবে এই সেবা চালু করা হলেও বিশ্বব্যাংকের জন্য পাই স্ট্র্যাটেজিক কনসালটিং এবং সিজিএপির যৌথ উদ্যোগে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে,মোবাইল ব্যাংকিং-এর গ্রাহকদের ৪৮ শতাংশই শহরের মানুষ। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের করা অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রিকশাচালক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠান। কারণ, এটিকে তারা ঝুঁকিমুক্ত ও অধিক সাশ্রয়ী সেবা বলে মনে করেন।
জন ওয়েন টুইট করেছেন:

ঢাকা শহরের বেশিরভাগ রিক্সাচালক বাড়িতে টাকা পাঠাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন: গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ

ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রিকশাচালক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠান। ছবি মোহাম্মদ আসাদ। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (৬/১১/২০১৩)

ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রিকশাচালক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠান। ছবি মোহাম্মদ আসাদ। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (৬/১১/২০১৩)

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকের ৭০ শতাংশ বিকাশের। তাছাড়া বিকাশ যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তার মাধ্যমে দেশের ৯৮ শতাংশ মোবাইল ব্যবহারকারী বিকাশের সেবা নিতে পারেন। তাই আপনি রাস্তাঘাটে হরহামেশাই শুনতে পাবেন- “আমাকে বিকাশ করেন” শব্দবন্ধগুলো। সিজিএপি টুইটারে লিখেছেন:

“আমাকে বিকাশ করেন!” বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীদের বলা এটি কি তা জানতে ভিডিওটি দেখুন।

বিল অ্যান্ড ম্যালিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে মাইক্রোসেভের এক গবেষণায় জানা গেছে, বাংলাদেশে মোবাইল পেমেন্ট এজেন্ট ব্যবসা বেশ লাভজনক। তাছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং-এর কারণে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পরিমাণও বেড়েছে। অ্যারন অলিভার টুইট করেছেন:

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন থেকে বাংলাদেশে সবচে’ বেশি রেমিট্যান্স পাঠানো হয়। মোবাইল ব্যাংকিং প্রভাবে এটা সম্ভব হয়েছে।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল প্লাটফর্ম হলো বিকাশ। ১ কোটিরও বেশি তাদের গ্রাহক। ইসাবেল উইসসন লিখেছেন:

বিকাশ- বিশ্বের মধ্যে সবচে’ দ্রুত বর্ধনশীল মোবাইল ব্যাংকিং প্লাটফর্ম। এটা বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যবস্থাকেও সহজ করেছে।

মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে এখন শুধু টাকা আদানপ্রদান নয়, কেনাকাটাও করা যাচ্ছে। মারিয়া মে টুইট করেছেন:

বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলার টিকেটও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কেনা যাচ্ছে। এরপরে আর কোনটি কেনা যাবে?

বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করলেও অ্যাকাউন্ট আছে মাত্র ৩ শতাংশ মানুষের। ফলে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সম্পূর্ণ তথ্য থাকে না। সম্পূর্ণ তথ্য না থাকা-টা অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি হতে পারে বলে পিয়াল ইসলাম নামের একজন গবেষক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন। ঝালমুড়ি ব্লগ বিশ্বব্যাংকের জন্য পাই স্ট্র্যাটেজিক কনসালটিং এবং সিজিএপির যৌথ উদ্যোগে করা একটি গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে:

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে ৫২ শতাংশ লেনদেন হয় এজেন্টের বা অন্যের মাধ্যমে। যার মানে হলো যিনি টাকা পাঠাচ্ছেন আর যিনি টাকা পাচ্ছেন, তাদের কারোই মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। মাত্র ৩ শতাংশ লেনদেন হয় পিওর ওয়ালেটের মাধ্যমে। যার মানে হলো টাকা গ্রহণকারী এবং প্রদানকারী উভয়েরই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। তাই মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধার অপব্যবহার বাড়ছে।

1 টি মন্তব্য

  • মোবাইল ব্যাংকিং আসলেই লেনদেন সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রোভাইডারদের গ্রাহক হয়রানি বাড়তেছে 🙁

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .