পারিবারিক সহিংসতার শিকার মানুষদের জন্য বারমুডার একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়টি একরকম জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কেননা কেন্দ্রটি পরিচালনার মতো যথেষ্ট অর্থ নেই।
সংবাদ প্রচারকারী ওয়েবসাইট দ্যা রয়েল গেজেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ আশ্রয় কেন্দ্রে গত বছর ৩১ জন নারী এবং শিশুকে আশ্রয় দেয়া হয়। অর্থ অনুদানের অভাব এবং সরকারি বরাদ্দ কমিয়ে দেয়ার কারণে এই “প্রচন্ড” অর্থ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
দেশটির পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ক পরিসংখ্যান বলছে, এটি দেশের উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্ত করছে। ২০১৩ সালে বারমুডা স্বাস্থ্য কাউন্সিলের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অন্যান্য সকল বিষয়ের মধ্যে প্রতি আট জনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন। এদের মাঝে বেশিরভাগই নারী এবং শিশু। এ সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, কমপক্ষে প্রতি পাঁচ জনে একজন বারমুডিয়ান নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।
যদিও সম্প্রতি প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা শতকরা ৭ শতাংশ বেড়েছে। দেশটির সর্বশেষ প্রকাশিত অপরাধ পরিসংখ্যানে বিভিন্ন প্রকারের সহিংস অপরাধকে শ্রেনী বিভক্ত করা হয়নি। তবে এটিকে এমনভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যেন যৌন হামলা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি করা অপরাধকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেয়া হয়। এতে শুধুমাত্র পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি ব্লগার ক্যাচ-আ-ফায়ারকে বেশ নাড়া দিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রটি বন্ধের সিদ্ধান্ত দেশের জন্য কতবড় ক্ষতি বয়ে এনেছে সে সম্পর্কে তাকে লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। বিশেষকরে তিনি সে ঘটনাটিতে আলোকপাত করেছেন, যেখানে একজন প্রখ্যাত নারী আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে তাঁর একজন মক্কেলের সাবেক স্বামী কর্তৃক প্রচন্ড আক্রমণের শিকার হন। তাঁর মুখে প্রচন্ড আঘাত লাগায় তাকে পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়ঃ
পারিবারিক সহিংসতার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচা নারীদের জন্য বারমুডা এখন নিরাপদ আশ্রয় শূন্য হয়ে পড়েছে।
আমরা কিভাবে আমাদের অর্থ খরচ করি সে প্রসঙ্গে বারমুডার অপাত্রে দেয়া অগ্রাধিকারের এই নির্মম সত্যটিই দুঃখজনক নিন্দনীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমাদের একটি সম্পদ বহুল দ্বীপ থাকা সত্ত্বেও এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিতে আমরা অর্থ বরাদ্দ দিতে পারছি না। এটি বেশ হতবাক করার মতো বিষয়। এমন পদক্ষেপ নিয়ে আমরা নারী এবং শিশুদের (যারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন) আক্রমণের শিকার এবং সম্ভবত হত্যার শিকার হতে বাধ্য করছি।
পারিবারিক সহিংসতা এমন একটি অপরাধ যার সম্পর্কে সচরাচর রিপোর্ট করা হয় না। ক্যাচ-আ-ফায়ার উল্লেখ করেছেন যে এটি শুধুমাত্র সহিংসতার শিকার যে ব্যক্তিটি তাকেই শুধু প্রভাবিত করে না। সহিংসতায় আক্রান্ত শিশুরা পরবর্তী জীবনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এসব কারণে প্রায়শই নারীদের দীর্ঘ মেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। এর অর্থ হচ্ছে “আমাদের সবার জন্যই এটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা খরচ” বাড়িয়ে দেয়ঃ
এ ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে পরিচালিত নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রগুলো হয়তো পারিবারিক সহিংসতার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে কোন জাদুর কাঠির মতো কাজ করবে না। তবে এ সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য এবং সহিংসতার চক্র বন্ধ করার জন্য সাহায্য করতে এটি অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে।