জাপান, চিন এবং কোরিয়াকে “সুখী” দেখতে চায় কিয়োটোর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী

Video of "Japan China Korea Happy"

“জাপান চিন কোরিয়া হ্যাপি” ভিডিও'র স্ক্রিনশট। ১৮ জুলাই ২০১৪ তারিখে ইউটিউব থেকে নেয়া হয়েছে।

মার্কিন সংগীতশিল্পী ফ্যারেল উইলিয়ামের “হ্যাপি” গানে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাপানের কিয়োটোর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী চিন এবং কোরিয়ার তরুনদের সাথে নিয়ে শান্তি ও বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে একটি ভিডিও বানিয়েছেন। উল্লেখ্য, এই তিন দেশের সরকার শান্তি ও বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছেন।

জাপান চিন কোরিয়া হ্যাপি” ভিডিও'র বানানোর নেপথ্যে মূল ভুমিকা রেখেছেন সুমিরেকো তোমিতা। তিনি হাফিংটন পোস্ট জাপানকে জানিয়েছেন, একবার ওসাকা শহরে স্কুলে যাওয়ার পথে বর্ণবৈষম্যের কুৎসিক দিক স্বচক্ষে দেখেছিলেন। আর তাই পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বের সুবাতাস বইয়ে দিতেই তিনি এই ভিডিও বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ভিডিওটি ইউটিউবে আপলোড করা হয়। ইতোমধ্যে এটি ১ লাখ ৬১ হাজার বারের বেশি দেখা হয়েছে।

ইউটিউবে ভিডিও'টি সম্পর্কে বলা হয়েছে:

“Japan-China-Korea HAPPY” was made by Japanese university students wishing for the peace between the three countries. These three countries may have sensitive historical relations, but younger generations are willing to work on to fix and have better relations for the better future. The ‘HAPPY’ music video makes people smile and happy. That's why we made this video with young people from the three countries. This video was mainly filmed in Japan, but also some clips were filmed in South Korea and China. We hope that this video helps to spread smiles and encourages ever bettering futures for these three countries.

জাপানের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল তরুণ “জাপান চিন কোরিয়া হ্যাপি” ভিডিও'টি বানিয়েছে দেশ তিনটির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে। এই তিনটি দেশের মধ্যে স্পর্শকাতর ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে তরুণ প্রজন্ম এই রেশারেশির সম্পর্কের মূলোত্পাদন করে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল দিগন্ত রচনা করতে চায়। এই হ্যাপি মিউজিক ভিডিও দেশগুলোর মানুষগুলোকে খুশি এবং সুখী করবে। আর এই কারণেই আমরা ভিডিও নির্মাণে তিন দেশের তরুণদের নিয়েছি। ভিডিওটির বেশিরভাগ চিত্রায়ন হয়েছে জাপানে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া এবং চিনেরও কিছু দৃশ্য রয়েছে। আমরা আশা করি, এই ভিডিও তিন দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে উত্সাহিত করবে।

জাপানে যেসব দেশের বিদেশিরা আছেন, তাদের মধ্যে সবচে’ বেশি আছে কোরিয়ানরা। তাদের বেশিরভাগ-ই বাস করেন ওসাকা এবং কিয়োটো শহরে। তাছাড়া এই শহর দু'টিও পর্যটকদের কাছে সমান জনপ্রিয়। গত বছর এক মিলিয়নের বেশি পর্যটক কিয়োটেতে এসেছিলেন। তাই কিয়োটো কখনোই চাইবে না বর্ণবৈষম্য উত্সাহ পাক।

ভিডিওটি বানাতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের সাহায্য নেয়া হয়েছে। প্রায় ১০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী এতে অংশ নিয়েছেন। এদের বেশিরভাগই কিয়োটোতে পড়াশোনা করেন। কিছুজন অবশ্য বিদেশেও পড়াশোনা করেন।

প্রবাসী জাপানিজ মুয়া ইয়ামাদা নিউ ইয়র্ক শহরে থাকেন। তিনি ইউটিউবে ভিডিও'টি দেখে মন্তব্য করেছেন:

Those college kids showing us that we have a constructive positive way to deal with the many issues we have. I think the bottom line is that we're all breathing the same air.

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই তরুণগুলি দেখিয়ে দিল, আমাদের অনেক ইস্যু আছে, যেগুলি নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে সামনের দিকে এগুনো দরকার। তবে সবচে’ মূল বিষয় হলো, আমরা একই বাতাসে বাঁচি।

গত দুই বছর ধরে জাপান, চিন এবং কোরিয়ার সরকারের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। (তবে এই সপ্তাহে সবচে’ বড়ো ঘটনা ঘটেছে। কোরিয়াতে তিন দেশের মন্ত্রীরা সম্পর্ক উন্নয়নে একসাথে বসেছিলেন)। সীমান্ত বিরোধ আর ঐতিহাসিক কারণে তিন দেশের সম্পর্কে মাঝে মাঝে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সেনকাকু দ্বীপ কাদের হাতে থাকবে, তা নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক উঠে। এদিকে টেকশিমা দ্বীপ নিয়ে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যেও ঝগড়া লাগে। জাপান বিরোধী এবং কোরিয়া বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ দুই দেশকে বাজে ভাবে উপস্থাপন করে।

ইউটিউব ব্যবহারকারী ইয়াগামি হারুকি তরুণরা যে পার্থক্য তৈরি করতে পারে, সেটা নিয়ে মন্তব্য করেছেন:

みんな政府からの影響ですぎでしょ。
若い世代がhappyになれば、”政府の”友好関係も変わるんじゃない?
それを変えようとせずいがみ合うだけなら解決はないと思う。
自分達でやる前に否定はよくないな。

দেখে মনে হয়, সবাই নিজ নিজ দেশের সরকার দিয়ে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। দেশ তিনটির সরকারের মনমানসিকতায় যদি পরিবর্তন আসে তাহলে তরুণরা খুব খুশি হবে। প্রত্যেকে যদি দোষারোপে ব্যস্ত থাকে, তাহলে কোনো সমাধান বের হয়ে আসবে না। কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু সমালোচনা করলে কোনো কাজ হবে না।

ভিডিওতে বন্ধুত্বের আহবান জানানোর পাশাপাশি ক্রটিপূর্ণ সমালোচনাকে আক্রমণ করা হয়েছে। তবে ভিডিও-তে মন্তব্য করতে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষই দেশগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক এবং কুটনৈতিক সমস্যাগুলো সামনে এনেছেন। এতে করে খুশির ভাব অনেকটাই চলে গেছে।

ইউটিউব ব্যবহারকারী দেস মুরের জন্ম আমেরিকাতে হলেও তিনি বেড়ে উঠেছেন জাপানে। তিনি লিখেছেন, রাজনীতিকে টেনে এনে একে অর্থহীন করার চেষ্টা করা হয়েছে:

日中韓の一般市民レベルの交流を促進してる動画なのに、外交問題や歴史問題を持ち出してる人は何事? 本質を見失ってるような。向こうの国で普通に生きてる人は、そんな反日に燃えた人でもないだろうよ。こっちにニュースとして届いてるってことは、そういった活動は向こうの目から見てもイレギュラーな事態ってことだし、全員が全員反日じゃないっつうの。肩の力抜けよみんな。

তাদের মতলব বুঝতে পারলাম না। তারা কেন কুটনৈতিক এবং ঐতিহাসিক ইস্যুগুলো সামনে আনছেন। ভিডিওতে তো জাপান, চিন এবং কোরিয়ার নাগরিকদের এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার বিষয়টি তুলে আনা হয়েছে। কোরিয়া এবং চিনের বেশিরভাগ মানুষ সাধারণ জীবনযাপন করেন। তারা চরমমাত্রায় জাপান বিরোধী নন। ঘটনা হলো জাপান বিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ পত্রিকার পাতায় স্থান করে নেয়। যদিও এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। তাছাড়া এর মানে এ-ও না, প্রত্যেকে জাপান বিরোধী। ভাইসব, শান্ত হোন।

আসছে নভেম্বরে বেইজিং-এ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার(এপেক) সম্মেলন এবং মিয়ানমারে জাপান, চিন, কোরিয়া-সহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে এশিয়ান সামিট অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে এইসব দেশের সরকাররা আলোচনার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে আরো সহজ করে নিতে পারেন।

পোস্টটি লিখতে অপর্না রায় এবং লরেন ফিঞ্চ সহযোগিতা করেছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .