ভারতের বিজেপি নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশী হ্যাকারদের ভারতীয় ওয়েবসাইট হ্যাক

সুব্রামানিয়ান স্বামী ম্যাঙ্গালোরে বক্তৃতা দিচ্ছেন। ছবি তুলেছেন আর কে ভাট। সর্বস্বত্ব ডেমটিক্স (১৭/১২/২০১৩)

বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সাধারণ নির্বাচন- লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৮ টি রাজ্যজুড়ে চলমান এ নির্বাচনে ইতোমধ্যেই ২১ টি রাজ্যে ১০৪ টি আসনের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের  বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য অন্য দলের দূর্বল দিকগুলো যেমনঃ বোফর্স কেলেংকারী, গুজরাতের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, বিপক্ষ রাজনীতিবীদদের দূর্নীতি কে জনগণের সামনে উপস্থাপন করছেন তেমনি একইভাবে ক্ষমতায় গেলে কি কি বাস্তবায়ন করবেন সে সম্পর্কেও নানা পরিকল্পনা তুলে ধরছেন।

সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা সুব্রাহ্মনিয়ম স্বামী বাংলাদেশের কাছে এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড দাবি করে নির্বাচনী বিতর্কে নতুন ঝড় তোলেন।  তিনি বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চল  খুলনা থেকে সিলেট পর্যন্ত সমান্তরাল রেখা টেনে এই জমি ভারতের হাতে ছেড়ে দেবার দাবী জানান। ভারতের কট্টর দক্ষিনপন্থী  দল বিজেপির এই শীর্ষ নেতার যুক্তি হলো, দেশ ভাগের পর অধুনা বাংলাদেশ থেকে এক তৃতীয়াংশ মুসলমান ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে বাংলাদেশকে। অন্যথায় এসব মুসলমানের সংস্থাপনের জন্য এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড জমি ছাড়তে হবে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে কত লোক অভিগমন করেছে তার কোন সঠিক উপাত্ত নেই। তবে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর লোক ভারত যাওয়া আসা করে পরিবারের সাথে দেখা করার জন্যে, কাজ করার জন্যে অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবকিছু হারানোর পর একটু ঠাই পাবার জন্যে। গত দশকে প্রচুর বাংলাদেশি ভারত গিয়েছে যার জন্যে ভারত সীমান্ত বরাবর তাদের টহল জোরদার করেছে এবং অনেক স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে।

১৯ এপ্রিল ২০১৪ শনিবার আসামের শিলচর থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ – এর বরাত দিয়ে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান দৈনিকগুলো এ সংবাদ প্রকাশ করে। বাংলাদেশসহ ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান ও চীনের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের চোখ এখন এই লোকসভা নির্বাচনের দিকে, কারন নির্বাচনে কোন দল বিজয়ী হবে তাঁর উপরে নির্ধারিত হবে আন্ত রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ধরণ।

খবরটি ছড়িয়ে পরার সাথে সাথেই দেশজুড়ে অনলাইনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। ফোরাম প্রজন্ম.কম এ ভেজা বেড়াল মন্তব্য করেছেন:

বিজেপি বাংলাদেশ বিদ্বেষী দল। এরা এইবার ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশিদের কপালে শনি আছে। [..] তিস্তা, সীমান্ত কিছুতো হবেই না বরং যেইসব চুক্তি বাস্তবায়নাধীন সেই সব বন্ধ করতে কাজ করবে মোদি সরকার।

এই ব্লগার আরও জানিএছে:

ভারতে কিছু অবৈধ বাংলাদেশি আছে এটা সবাই জানে কিন্তু সেটা ৫ কোটি (বিজেপির দাবি) এটা বিশ্বাসযোগ্য না। হয়তো ৫ লাখকে ৫ কোটি বলে প্রচার করে ভোট পাওয়ার জন্য।

শব্দনীড় ব্লগে শামিম সুজাত লিখেছেন:

বাংলাদেশ যেন খেলার পুতুল! যা খুশী ভাবতে পারো!

এদিকে বিজেপি নেতা সুব্রাহ্মনিয়ম স্বামীর বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশের একটি হ্যাকার গ্রুপ ‘ সাইবার ৭১’ ভারতীয় জনতা পার্টির ১১ টি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে। সোমবার মধ্যরাত থেকে গ্রুপটি এ-পর্যন্ত তিন শতাধিক ভারতীয় সাইট হ্যাক করার দাবি করেছে। গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিম আল ফাহিম এবং বাংলাদেশ সাইবার ৭১-এর অ্যাডমিন রেডফক্স বুধবার বাংলানিউজকে জানান, বিজেপি তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হ্যাকড হওয়া সাইটগুলো পূণরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

স্ক্রিনশটে হ্যাকারদের মন্তব্য

স্ক্রিনশটে হ্যাকারদের মন্তব্য

এর প্রতিবাদে ভারতীয় হ্যাকাররা বাংলাদেশ মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের হ্যাক করে।

ওদিকে বিজেপির মনোনীত প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে একটি সমাবেশে বলেছেনঃ

You can write it down. After May 16, these Bangladeshis better be prepared with their bags packed.

আপনারা লিখে নিতে পারেন। ১৬ই মে'র পর বাংলাদেশিরা যাতে ব্যাগ নিয়ে ফেরত যাবার জন্যে তৈরি থাকে।

বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের নিয়ে বিজেপির এজেন্ডা বহু পুরনো এবং তারা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে যে এদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যাবহার করে তারা। তবে মোদির কথায় বোঝা যায় যে তাদের দল ক্ষমতায় এলে এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করা হবে।

তবে এই অভিবাসন একতরফা নয় মোটেই। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হলে ভারত তার পঞ্চম বৃহৎ পণ্যের বাজার হারাবে। এ ছাড়াও প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় বাংলাদেশ এ কাজ করে এবং তারা গত বছর ৩৭ লক্ষ আমেরিকান ডলার তাদের দেশে পাঠিয়েছে।

এই পোস্টে সহযোগিতা করেছেন আব্দুল আলীম খান

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .