দামাস্কাসের রাস্তায় সমাধান হিসেবে বাইসাইকেল

অব্যক্ত সিরিয়া থেকে এই পোস্টটি পুনরায় পোস্ট করা হয়েছে।  

ইদানীং আপনি যদি দামাস্কাসের রাস্তাগুলোতে হাঁটেন তবে অপ্রত্যাশিতভাবে বাইসাইকেল চালনারত তরুন তরুণীদের সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে। দেখা যাবে একজন তরুণ কিংবা তরুণী শহরে মহামারীর মতো বসানো অফুরন্ত চেকপয়েন্টের ফাঁদে পড়া কোন গাড়িকে খুশি মনে সাইকেল চালিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে। “শি ওয়ান্টস এ্যা বাইসাইকেল নাউ” শিরোনামের প্রচারাভিযানের একটি অংশ হিসেবে দামাস্কাসে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নেতৃত্বে বাইসাইকেলের বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই কলেজের প্রকৌশল অনুষদের ছাত্র।

Young participants of the She Wants a Bike campaign. Source: Syria Untold

সে একটি বাই সাইকেল চায় প্রচারাভিযানের তরুণ অংশগ্রহণকারীরা। সূত্রঃ অব্যক্ত সিরিয়া 

সিরিয়ার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, বাইসাইকেলকে নিচু-শ্রেনীর যানবাহন বলে মনে করা হয়। যারা মোটর যান কেনার সামর্থ রাখে না, তারাই শুধুমাত্র এটি ব্যবহার করে থাকে। মনে করা হয় শুধুমাত্র পুরুষেরাই বাইসাইকেল চালাতে পারে। এই গৎবাঁধা ধারণা ভাঙ্গতে এবং চেকপয়েন্টের কারণে সৃষ্ট যানজট সমস্যার সমাধান করতে একদল তরুণ-তরুণী শহরের চারপাশে সাইকেল চালিয়ে প্রদক্ষিণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শহর প্রদক্ষিণ করার মাধ্যমে তারা সাইকেল চালনার সূচনা করেছে এবং অন্যান্যদের ও এটি অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

এই প্রচারাভিযানের আয়োজকেরা তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে অব্যক্ত সিরিয়াকে বলেছে, “সম্প্রদায়টির অভ্যাস পরিবর্তন করতে এবং ব্যতিক্রমধর্মী যানবাহনের ব্যবহার বাড়াতে” কাজ করছি। তারা সাইকেল চালানোর সংস্কৃতিকে জ্বালানী বাঁচান এবং দূষণ কমানোর মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নের একটি ভালো পন্থা বলে মনে করে।

“এটি সিরিয়ার নাগরিকদের জন্য প্রথা ভাঙ্গার, ভয় ভাঙ্গানোর একটি পন্থাও বটে। এই ভয় অনেককেই সাইকেল চালনা থেকে বিরত রেখেছে। লোকে কি বলবে, এ ধরনের উদ্বেগ অনেক বছর ধরেই নারীদের সাইকেল চালনা থামিয়ে রেখেছে। বিশেষকরে, যেসব নারীরা হিজাব পরে তাদেরকে সাইকেল চালনা থেকে এই ধারণাটি দূরে সরিয়ে রেখেছে”।  

Girl riding a bike in Damascus. Source: She Wants a Bike´s campaign´s facebook page

দামাস্কাসের রাস্তায় যুবতি মেয়ে সাইকেল চালাচ্ছে। সূত্রঃ সে একটি বাইসাইকেল চাই প্রচারাভিযানের ফেসবুক পাতা। 

প্রচারাভিযানটিতে যোগ দিতে আগ্রহী সবাইকে আয়োজকেরা এই প্রচারাভিযানের শেষে একটি প্রতীকী ইঙ্গিত হিসেবে তাদের সাইকেলটিকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক করে রাখতে আহ্বান জানিয়েছে। কেননা, সিরিয়ার ক্যাম্পাসগুলোতে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সাইকেল রাখার অনুমতি দেয়া হয় না।

উদ্যোগটি খুব ফলপ্রসূ ছিল। গত ৪ অক্টোবর তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলোতে কয়েক শত বাইসাইকেল রাখতে দেখা গেছে। এর পরপরেই এই কর্মসূচীর বিভিন্ন ছবি ফেসবুকের মাধ্যমে শেয়ার করা হয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তোলা ছবিগুলো যারা শেয়ার করেছে, তাদের মাঝে অনেক অল্পবয়স্ক মেয়েও ছিল। তাদের মাঝ থেকে একজন মেয়ে বলেছেঃ

“আমি হিজাব এবং মানটেউ (গাঢ় রঙের কোট, যা সাধারনত রক্ষণশীল পরিবার থেকে আসা মুসলিম নারীরা পরিধান করে থাকে) পরি”। এই প্রথম আমি সাইকেল চালিয়েছি। আমি আমার ভাইয়ের সাথে মাশরু দামারে আমার বাড়ি থেকে সকাল ৭ টায় বের হয়েছি। আমার ভাই আমাকে এটা করতে উৎসাহ দিয়েছে। আমি নিচে রাবয়ইতে গেলাম এবং মাজ্জেহ সড়কেও যেতে থাকলাম। সেখানে যাওয়ার পর আমি এবং আমার ভাই আলাদা হয়ে গেলাম। কেননা, আমার ভাইকে অন্য কোথাও যেতে হবে। সে আমাকে বললো, “তুমি তোমার নিজের মতো করে করতে পারো। তোমার ভয় পাওয়ার বাঁধাকে ভেঙ্গে ফেল এবং এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করোনা”।

সেখানেই আমার দুঃসাহসিক অভিযান শুরু হল। আমি সাইকেল চালাতে থাকলাম এবং রাস্তায় অনেকগুলো চেকপয়েন্ট পেলাম। কিন্তু আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, সবাই খুব আন্তরিক ছিল। এমনকি কেউ কেউ আমাকে দেখে হেসেছে এবং দোয়া করেছে। এটি খুবই মজার এবং মুক্তিদায়ক একটি অভিজ্ঞতা। আমি প্রত্যেকটি মেয়েকে উদ্বুদ্ধ করবো, তারা যেন একই কাজ করে। শুরুতে একটু বিব্রতকর মনে হলেও খুব তাড়াতাড়ি আপনি এতে অভ্যস্ত হয়ে পরবেন।

দেশটিতে বাইসাইকেলের ব্যবহারকে ছড়িয়ে দেয়ার পথে যেসব বাধাবিপত্তি আছে তাঁর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, একটি গড়পরতা সিরিয় পরিবারের জন্য সাধারনত সাইকেল কেনাটা বেশ ব্যয়বহুল। সাম্প্রতিক সময়ের এই নাটকীয় পরিস্থিতি স্বত্বে ও বাইসাইকেলের দাম কমেনি। রক্ষণশীল এলাকাগুলোতে এখনো নারীদের সাইকেল চালাতে দেখলে লোকজন ভ্রূকুটি করে।

যাইহোক, এই প্রচারাভিযানের আয়োজকেরা প্যাডালের পর প্যাডাল মেরে ভেতর থেকে দেশের উন্নতির জন্য সমাধান বের করে এই বাধাবিপত্তিগুলো প্রতিহত করতে বদ্ধ পরিকর।

অব্যক্ত সিরিয়া থেকে এই পোস্টটি পুনরায় পোস্ট করা হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .